বগুড়া প্রতিনিধিঃ ২৫ মে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় কথিত ছিনতাইয়ের অযুহাতে অসহায় এজেন্টদের প্রায় ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে কোম্পানির “ডিএসও” পদবির এক সদস্য। এ ঘটনার পর থেকেই নানা তালবাহানা দিয়ে কালক্ষেপণ করছেন কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তারা। এতে করে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় আসা প্রতিবন্ধিসহ অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। টাকাগুলো কোম্পনির কর্মকর্তারা নিজেদের পকেটে রেখেছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
কথিত ছিনতাই ঘটনায় নগদ কোম্পানির বগুড়া অফিস বাদি হয়ে সোনাতলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। এঘটনায় বিভিন্ন এজেন্টরাও থানায় জিডি করেছে, কিন্তু এখনো কোন সুরহা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সিনিয়র ম্যানেজার গোলাম সিদ্দিক রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এলোমেলো কথাবার্তা বলেন। প্রথমের দিকে তিনি বলেন দু-তিনদিনের মধ্যেই এজেন্টদের টাকা ফিরে দেয়া হবে। ২য় দফায় বলেন ছিনতাই ঘটনায় খোয়া যাওয়া সিম ও মোবাইলটি থানায় জমা রয়েছে যার কারনে টাকাগুলো দেয়া যাচ্ছে না। ৩য় দফায় বলেন ৪-৫ দিনের মধ্যে যদি টাকা না দেয়া যায় তখন আমিই বুদ্ধি শিখিয়ে দেবো কিভাবে টাকা উদ্ধার করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগি এজেন্টদের সাথে কথা বললে তারা বলেন- ২৫ মে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও আমাদের জানানো হয়নি, যেই সিমটিতে টাকা দেয়া হচ্ছিলো সেটাতে না দিতে। বরং ঐ সিমেই আমরা প্রতিনিয়ত টাকা দিয়ে থাকি। তাদের দাবি সিমটি এখোনো চলমান। যেহেতু ঐ সিমেই কোম্পানির সাথে আমাদের লেনদেন হচ্ছে তাহলে আমাদের দেয়া টাকা তারা আটকিয়ে রেখেছে কেনো। আমাদের টাকা বগুড়া অফিসের কর্মকর্তাদের কাছেই আছে মিছেমিছি এটি নিয়ে তালাবাহানা করে আমাদের ক্ষতি করছে।
সোনাতলা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের কালাইহাটা বাজারের প্রতিবন্ধি এজেন্ট দেলোহার এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ২৫ তারিখে ডাকাতির ঘটনা জানতাম না। ২৬ তারিখে ৫১ হাজার টাকা উল্লেখিত সিমেই দেই কিন্তু প্রায় আড়াই মাস পার হলেও এখনো কোন টাকা কিংবা ভরসা কিছুই পাইনি। আমি সর্বশান্ত।
সিমটি এখনো চলমান আছে এমন বিষয় জানতে চাইলে বগুড়া জোনের ম্যানেজার সিদ্দিক প্রথমে বলেন ওই সিমেতো বন্ধ। সিমে কল ঢুকছে এবং নগদ কোম্পানির লোক রিসিভ করে কথাও বলেছে বললে তিনি বলে, ওই সিমেতো কল ঢোকার কথা নয়। অনেক ঘোরানো প্যাচানো কথার পরে বলেন ২৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ঐ সিমটির ট্রানজেকসন ব্লকড করে রেখেছে প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন তাদের ওই সিম আমাদের কাছে নেই এবং আমরা ব্লকড করেও রাখিনি। বিষয়টি নিয়ে আবারো সিদ্দিকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন এটা আমরাই ব্লকড করে রেখেছি।
এ বিষয়ে নগদ কোম্পানির ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের হেড অব অপারেশন আলমগীর কবিরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এজেন্টদের টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব নয়।
উল্লেখিত ঘটনার কথা বিভিন্ন মহলে আলোচনা হলে অনেকেই মনে করছেন উক্ত ছিনতাই কান্ডের সাথে ম্যানেজার গোলাম সিদ্দিক সাহেব জড়িত আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
প্রসংগত, গত ২৫ মে দুপুরে সোনাতলা উপজেলার কর্পূর বালুয়াহাট রোডের পাঁচকুরো ব্রীজের নিকট এই কথিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে, ছিনতাই ঘটনার সাথে কোন বহিরাগতরা ছিলো না। বরং নগদ কোম্পানির সোনাতলা উপজেলার দায়িত্বে থাকা ডিএসও আবুল কালাম আজাদ ছিনতাইয়ের অভিনয় করে নিজেই টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। আজাদ সোনাতলা উপজেলার জোরগাছা ইউনিয়নের মধ্য দিঘলকান্দী গ্রামের সাকু আকন্দের পুত্র।