বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির অগ্রসরতার যুগে সোশ্যাল মিডিয়া বিনোদন ও যোগাযোগের মাধ্যম কে করেছে সহজ ও সহজলভ্য। অবসর সময় কাটানোর একমাত্র সঙ্গী সোশ্যাল মিডিয়া। টিকটক অ্যাপ (tiktok app) ও এমন একটি সোশ্যাল মিডিয়া যার মাধ্যমে শর্ট ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করা যায় ।বলতে গেলে এটা কিছুটা ইউটিউব এর মতো।
পরিচিত ফিল্মী ডায়লগ বা গানের সঙ্গে নিজেরা অভিনয় করে মজার মজার ভিডিও বানানো যায় । তবে ১৫ সেকেন্ডের থেকে বড় ভিডিও বানানো যায় না এই অ্যাপে, আর নিজের স্বর ব্যবহার করতে পারবেন না, যাকে বলা হয় ‘লিপ সিঙ্ক, অর্থাৎ ঠোঁট নাড়া।
এসব ভিডিওতে মান কিংবা বক্তব্য কিছুই মূখ্য নয়,কিন্তু বর্তমানে তারকাখ্যাতি পাওয়ার জন্য উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের ভিডিও তে প্রাধান্য পাচ্ছে যৌনতা সহিংসতার মত ভয়ংকর বিষয়।
টিকটক লাইকির প্রতিযোগীতায় আছেন চিত্রনায়িকা থেকে শুরু করে সাধারন শিক্ষার্থী সহ সব বয়সের নারী পুরুষ।সব মিলিয়ে এ এক অন্য জগত।যেসব কিশোর কিশোরীরা রাতারাতি তারকা খ্যাতি পেতে চান তাদের জন্য এসব এপ যেন আলাদিনের চেরাগ।
এই ভিডিও গুলো শ্যুট করা হয় গ্রুপ করে যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে কিশোর গ্যাং।প্রতিদ্বন্দী গ্রুপগুলোকে টেক্কা দিতে দল ভারি করছে গ্রুপগুলো,গ্রুপে ফলোয়ার বাড়ানোর নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দ্বন্দ্বে।ঢাকার রাস্তায় বা বিভিন্ন পিকনিক স্পটে গ্যাং নিয়ে করছে শ্যুটিং।দর্শনার্থীরা কোন অভিযোগ করলে উলটো ঝামেলার সৃষ্টি করে বলে এমন অভিযোগ পেয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।তারকা হবার নেশায় অপরাধের অন্ধকারে ডুবসাঁতার কাটছে কিশোর কিশোরীরা।
যদিও ১৩ বছরের বেশি বয়সীদেরই এই অ্যাপ ব্যবহার করার কথা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এর থেকে কমবয়সীরাও টিকটক ব্যবহার করছে এবং তাদের সংখ্যাটা বেশ বড়।রাতারাতি তারকা হওয়ার নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মকান্ডে।
পুলপার্টি সহ নানা ধরনের আয়োজন করা হয় বিভিন্ন টিকটক লাইকি গ্রুপ গুলোর উদ্যোগে।পুলপার্টির আড়ালে চলে দেহ ব্যবসা।টার্গেট করা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর কিশোরী ,এছাড়াও চলে মাদক ব্যবসা, নারী পাচার এবং ধর্ষনের মত অপরাধ।বর্তমানের আলোচিত ঘটনাগুলর বেশিরভাগ এর সূত্রপাত ঘটছে টিকটকারদের কেন্দ্র করে।
ফেসবুক বা টুইটারে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টগুলোতে যেমন নীল টিক চিহ্ন দেওয়া থাকে, টিকটকের ক্ষেত্রে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টগুলিতে কমলা চিহ্ন দেওয়া হয়।যার ফলোয়ার যত বেশি ফলোয়ার টাকাও পাচ্ছে তত বেশি।জনপ্রিয়তা ও টাকার লোভে কিশোর কিশোরীরা আকর্ষিত হচ্ছে খুব সহজেই।
প্রাইভেসির একটা সমস্যা রয়েছে এই অ্যাপে। মাত্র দুই ধরণের প্রাইভেসি সেটিং আছে আপনার বানানো ভিডিও হয় শুধু আপনি দেখতে পাবেন, অথবা তা সব অ্যাপ ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। মাঝামাঝি কোনো জায়গা নেই।এই অ্যাপটির মাধ্যমে যে কেউ আপনাকে ফলো করতে বা মেসেজ করতে পারে।এর ফলে বন্ধু বানানোও সহজ হয়ে যাচ্ছে,পরিচিতি বাড়ছে অসামাজিক মনোবৃত্তির মানুষরা তাই সহজেই কমবয়সী ব্যবহারকারী, বিশেষ করে ছোট মেয়েদের প্রলোভন দেখাতে পারে।
তথ্য-প্রযুক্তি পত্রিকা ‘গ্যজেট ব্রিজ’এর সম্পাদক সুলভ পুরি মনে করেন, অ্যাপটি তো অন্তত এটুকু করাই উচিত, যাতে ১৬ বছরের কম বয়সী কেউ টিকটক ব্যবহার না করতে পারে, তা সুনিশ্চিত করা।
এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি ও গ্যাজেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই ধরণের বেশিরভাগ অ্যাপই আজকাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে কাজ করে। তাই একবার এইসব অ্যাপে নিজের যে কোনও তথ্য আপনি দেবেন, সেগুলো চিরকালের মতো তাদের কাছে থেকে যাবে।
সমাজ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন টিকটক লাইকির মত এপ গুলো নতুন প্রজন্মের কিশোর কিশোরীদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বড় কারন যার পরিনতি হতে পারে ভয়াবহ। এই ধরনের সংস্কৃতির সাথে যদি তারা অভ্যস্ত হয় তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের নেতৃত্ব বড় হয়ে উঠবে অসুস্থ প্রজন্ম হিসেবে,এই গোষ্ঠী কিভাবে দেশের বা বিশ্বের নেতৃত্বে যাবে তা নিয়ে সংকিত।অনেকদূর এগুলোও টিকটক কালচার এখনও প্রাথমিক অবস্থায় আছে বাংলাদেশে।সরকার যদি এখনও ব্যবস্থা না নেয় তবে এটি একটি বড় ধরনের আচরন গত অসুস্থতা হিসেবে পরিনত হবে
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন পর্নগ্রাফি এপগুলো সফলভাবে বন্ধ হলেও সেক্সচুয়াল ইন্টারেকটিভ এপগুলোর ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা স্পষ্ট।
ব্যক্তিগত সচেতনতা,পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান,প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরি এবং কঠোর আইন এর প্রয়োগ এর কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশী আইনে অবৈধ,সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে তার বিরুদ্ধে আইন নেয়া অত্যাবশকীয়। সার্বভৌমত্ত ,অখন্ডতা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা তিন বিষয় বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত বন্ধ করেছে এসব এপ।
দেশের নিরাপত্তা কিশোরদের সুস্থ মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য,পরিবারের সকল সদস্যদের উচিত কিশোরদের দিকে বিশেষ নজর দেয়া এছাড়াও রাষ্ট্রের দায়িত্ব এসকল বিদেশী এপ এর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশের আইনে অবৈধ,সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। নতুন প্রজন্মের সুস্থ মানসিকতা ও নিরাপত্তার সাথে বেড়ে উঠার অঙ্গীকার হোক আমাদের সকলের।