সুরাইয়া ইয়াসমিন তিথি করোনা মহামারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত বেকারত্ব সমাজ। নিরবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে গ্রাজুয়েটধারী ও উচ্চ শিক্ষা অর্জনকারী বেকাররা। এমনকি অনেক বেকার দেউলিয়া হয়ে ঘুরে ফিরে সুইসাইডকে বেছে নিয়েছে। কাজ না পাওয়ার হতাশা আর দুর্ভাবনায় কেউ আত্মঘাতী হতে চাইলে তাকে বাঁচিয়ে রাখাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বেকার যারা এখন তাদের চাকরির খুব প্রয়োজন, তাদের জীবনটা এই মহামারির কারণে একটা অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কোন কাজ নেই, যতদিন যাচ্ছে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের মলিন চেহারা সেই হতাশা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে। করোনার কারণে এখন অনেকই চাকরিচ্যুত হওয়া শুরু করেছে। করোনার কারণে কতদিন কারখানা বন্ধ থাকবে, তা কেউ বলতে পারে না। আর যারা পরিবহন শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক, দোকানের শ্রমিক বা অন্যান্য ইনফরমাল খাতের শ্রমিক, তারা তো বেকার হয়ে বসে আছে। খোদ রাজধানীতেই কয়েক লাখ বাস শ্রমিক এখন বেকার।
মহামারির কারণে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সবকিছুই আটকে আছে। কোন সার্কুলার নাই, কোন চাকরির পরীক্ষা নেই। এই মহামারি কবে শেষ হবে, কবে আবার চাকরির প্রক্রিয়া শুরু হবে তা কেউ জানে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যুবক-যুবতী, যাঁরা ‘উচ্চশিক্ষিত’ কিন্তু বেকার। চাকরি না পাওয়ার ফলে নিজেদের পরিবারের গলগ্রহ ভাবতে ভাবতে তাঁদের মনে যে হতাশা ও গ্লানি জমে ওঠে, তা দুঃসহ। হতাশা তাঁদের মা-বাবাকেও ছাড়ে না। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত ছেলের বেকারত্ব মা-বাবার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত মেয়ের বেকারত্বের সমাধান তাঁরা পেয়ে যান মেয়েটিকে সচ্ছল কোনো পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারলে এই হলো শেষ পরিণতি। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ কর্মচ্যুত হবেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাবে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরি হারানোর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই খারাপ খবর। কারণ এই দেড় কোটি মানুষ চাকরি হারালেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে অন্তত ৫ কোটি মানুষ।
করোনা ভাইরাস মহামারি কবে শেষ হবে, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, মহামারির কারণে আর্থিক মন্দা বহাল থাকবে আরো কিছুদিন। যার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পড়বে চাকরির বাজারেও। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছেন, এরকম তরুণ-তরুণীরা তাদের কর্মজীবন শুরু করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। দীর্ঘায়িত হতে পারে বেকারত্বের সংকট। বেকারত্ব সমস্যা স্বাভাবিক সময়েই অধিকাংশ দেশের জন্যই মাথাব্যথার কারণ। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় সরকারকে বেকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। করোনা ভাইরাস দরিদ্র্যকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে আর সেই সাথে আছে বেকারত্ব। তাই অর্থনীতির গতি ফেরাতে কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করছে কর্তৃপক্ষ। কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হয়। তখন চাকরির বাজারে হন্যে হয়ে না ছুটে নিজেই নিজের কর্ম স্থির করা সম্ভব হয়। বাইরের দেশেও কারিগরি দক্ষ শ্রমের মূল্যায়ন বেশি। কর্মসংস্থান বাড়াতে বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করতে হবে। কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে খরচ করতে পারলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সরকার এ ধরনের কর্মসূচি প্রণয়ন করতে পারেন তাহলে বেকারত্বের রুপরেখা কিছুটা কমতে পারে।