ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বেপরোয়া চোর সিন্ডিকেট; পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ
27, August, 2021, 6:04:21:PM
মোঃ রেজাউল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে চোর সিন্ডিকেট আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দিন বা রাত, সুযোগ পেলেই চুরি করছে টাকা, মোটরসাইকেল, গরু-ছাগলসহ ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় মামলামাল। এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরও মিলছে না প্রতিকার। ভুক্তভোগীরা বলছেন, চোর ধরার ক্ষেত্রে সদর থানা পুলিশ গাছাড়া ভাব দেখাচ্ছে। ফলে চোর তো আটক হচ্ছেই না, উল্টো চুরির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
প্রায় আড়াই মাস আগে এক সাংবাদিকের মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৯ জন চোর আটক ও ১১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। কিন্তু সম্প্রতি এই ঘটনার আগে বা পরে উল্ল্যেখযোগ্যভাবে কোন চোর আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, জনসেবামূলক কাজে পুলিশ স্বাভাবিক ভাবে কতটা কাজ করছে? নাকি কেবল সামাজিক ভাবে চাপ সৃষ্টি হলেই পুলিশ সক্রিয় হচ্ছে?
গত ১৮ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডার তিতাস পাড়া মহল্লার শাহানাজ খান খোকনের ঘর থেকে রাত ২টায় দেড় লক্ষ টাকা চুরি করে নিয়ে যায় ওই এলাকার কুখ্যাত চোর হৃদয়। এই ঘটনায় হৃদয়কে ২নং আসামী ও মুসা নামে পুলিশের কথিত এক সোর্সকে আসামী করে সদর থানায় অভিযোগ দিলেও আজও পর্যন্ত এর কোন অ্যাকশন লক্ষ্য করা যায়নি। অভিযোগের পর এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও অভিযোগটা এখনো কেন মামলা হিসেবে নথিভূক্ত হয়নি ও কোন আসামী কেন আটক হয়নি জানতে চাইলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চুরির ঘটনায় যেহেতু কোন সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না তাই বিষয়টি মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করা সম্ভব নয়।
রাত ২টায় যখন চুরির ঘটনা ঘটে তখন বাদী ছাড়া বিষয়টি কে দেখবে? কে সাক্ষী হবে? তাছাড়া ৯ মোটরসাইকেল চোরকে আটক করার ক্ষেত্রে কতটা মামলা হয়েছিল ও কতজন সাক্ষী ছিলো? প্রশ্ন শাহানাজ খান খোকনের ছেলে আল আমীনের।
ওই অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, পুলিশের সোর্স মুসার ভাতিজা হলো কুখ্যাত চোর হৃদয়। মুসার শেল্টারেই হৃদয় ও তার সিন্ডিকেট একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে তিতাস পাড়া সহ পুড়ো মেড্ডা এলাকায়। যা শেল্টার দিচ্ছে মুসা নিজে।
দেড় লক্ষ টাকা চুরির অভিযোগে হৃদয়কে যখন পুলিশ আটক করছে না তখন গত ১৯ আগস্ট খোদ তিতাস পাড়াতেই আবার গরু ও ছাগল চুরির ঘটনা ঘটলো। এবারও প্রধান অভিযুক্ত কুখ্যাত চোর হৃদয়। চুরি হওয়া গরু-ছাগলের মালিক তিতাস পাড়ার জাকির হোসেন। এই ঘটনায় গত ২০ আগস্ট জাকির হোসেন থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও এখনো পর্যন্ত কোন অ্যাকশানে নামেনি পুলিশ।
এই ঘটনার ৪দিন পর অর্থাৎ ২৩ আগস্ট তিতাস পাড়ার আহাদ মিয়ার ঘরে চুরি হয়। ঘরের হাড়ি-পাতিলসহ নিত্যপ্রয়াজনীয় জিনিষপত্র চুরেরা নিয়ে যায়। এখানেও প্রধান অভিযুক্ত কুখ্যাত চোর হৃদয়।
এদিকে গত ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় শহরের কাজীপাড়ার শফিকুল ইসলামের বাড়ির নিচ তলা থেকে মাসুক নামে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। মোটরসাইকেলটি রাখার ১৫ মিনিটের মধ্যেই হাওয়া হয়ে যায়।
এছাড়াও ফেসবুকে প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা লিখে ভুক্তভোগীরা স্ট্যাটাস দেন। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই কোন বিচার বা মালামাল ফেরত পাওয়ার আশায় স্ট্যাটাস দেন না। বরং আইনশৃংখলা পরিস্থিতি দিন দিন কোন দিকে যাচ্ছে সেটাই ক্ষোভ থেকে প্রকাশ করছেন তারা, এমনটিই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি এমরানুল ইসলাম বলেছেন, চোর চুরি করলে সেটা আটকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে আমরা যেহেতু পুলিশ আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। তিতাস পাড়ার কুখ্যাত চোর হৃদয়ের ব্যাপারে আরো তথ্য আছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা হতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় তালিকাভুক্ত কত ভাগ চোরকে আটক করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি জানান, তালিকাভুক্ত ২০ ভাগ চোর আটক আছে।