দেলোয়ার হোসেন, শাবিপ্রবি: ২০১৭ সালের ২১শে আগস্ট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগপান। নিয়োগ পাবার শুরু থেকেই সিলেট অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপিঠের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ গবেষণা, শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সুবিদা প্রদানের ফলে সবার কাছে খ্যাতি অর্জন করেন।
বিগত চার বছরে তিনি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ৯৮৭ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। উক্ত প্রকল্পে সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য ১১ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন-২টি, জুনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদেও জন্য ১১ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন-২টি, ১০তলা বিশিষ্ট ৪র্থ ছাত্রীহল, ১০তলা বিশিষ্ট ৪র্থ ছাত্রহল, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভাগ সমূহের ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন-২টি, কর্মচারীদের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন ১টি, ১০ তলা বিশিষ্ট ৩য় প্রশাসনিক ভবন ১টি, ভৌত বিজ্ঞান, কৃষি ও খনিজ বিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগ সমূহের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ১টি, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন, বাংলা, ইংরেজি বিভাগ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের জন্য ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ১টি, ১০তলা বিশিষ্ট ক্লাব কমপ্লেক্স ভবন ১টি, গ্র্যাজুয়েট ও বিদেশী ছাত্রদের জন্য ৭ তলা বিশিষ্ট হোস্টেল ১টি, শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের জন্য ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন ১টি, ৪তলা বিশিষ্ট মসজিদ ১টি।
এছাড়া কেন্দ্রীয় গ্যারেজ বর্ধিতকরণ এবং প্রধান সড়কের উভয় পার্শে^ ১৫ মিটার স্প্যানের দুইটি নান্দনিক ব্রীজ রয়েছে। পাশা পাশি পূর্বে বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকা প্রকল্পের আওতায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সৈয়দ মুজতবা আলী হলের অসমাপ্ত তিন-চতুর্থাংশ, সেন্টার অব এক্সেলেন্সভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২য় ভবন, আইআইসিটি ভবনের অসমাপ্ত পঞ্চম থেকে দশম তলার নির্মাণ কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩৪ বছর পর বহুল কাঙ্খিত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পাপ্ত হয়েছে। প্রাচীর নির্মাণকালে ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিও রাহুগ্রাস মুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বরকে নান্দনিক করে এর সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটককে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করে পুননির্মাণের কাজ চলছে। গোলচত্তর থেকে প্রধান ফটক পর্যন্ত দুই পাশে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে এবংডধষশ ডধু নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঢাকায় অবস্থিত ভাড়াকৃত গেস্ট হাউজের পরিবর্তে ৬০০০ বর্গফুট আয়তনের একটি আধুনিক মানের গেস্ট হাউজ ক্রয় করা হয়েছে। করোনা মাহামারীতে দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে অত্যাধুনিক ঈড়ারফ ১৯ ঞধংঃরহম খধন স্থাপন করা হয়েছে এবং পরীক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রমও চলছে। সাস্ট’কে সিলেট সিটিকর্পোরেশনের আওতাভূক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী,শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদে জন্য ৫টি এসি বাসসহ ১১টি নতুন বাস কেনা হয়েছে এবং আরোও গাড়ি কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাস ছাড়াও ১টি পাজেরো জীপ, ১টি হাইএস মাইক্রোবাস ও ১টি এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করা হয়েছে। ড্রাইভার ও হেলপারের অপ্রতুলতা নিরসন করা হয়েছে।
শাবিপ্রবিকে সবুজায়নের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে অর্ধলক্ষের অধিক ঔষধি, ফলজ ও বনজ গাছের চারা লাগানো হয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছর পরে বহুল আকাংঙ্খিত “তৃতীয় সমাবর্তন”-২০২০ সফলতার সাথে সমাপ্ত হয়েছে । সমাবর্তনে অংশগ্রহনকারী সকল গ্রাজুয়েটদের স্থায়ীভাবে গাউন ও হ্যাট প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সকল শিক্ষার্থীকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ডোপটেস্ট এর মাধ্যমে ১ম বর্ষে ভর্তি করানো হয়েছে। যা পরবর্তীতে জাতীয় ভাবে সমাদৃত হয়েছে। সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ চা বাগানে কর্মরত পিছিয়ে পড়া শ্রমিকদের সন্তানাদির জন্য এদেশে প্রথম বারের মতো শাবিপ্রবিতে ভর্তির জন্য কোটা ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে এবং তাদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেশনজট শূন্য করার লক্ষ্যে সেমিস্টার পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠান ও অধ্যাদেশ অনুসারে ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে শাবিপ্রবি সেশনজট মুক্ত হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে নন-মেজর কোর্সগুলো স্ব স্ব বিভাগের অধীনে রাখা হয়েছে। সকল বিভাগে সমন্বিতভাবে সেমিস্টার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপি করোনা মহামারীকালে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম শাবিপ্রবি অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়া শুরু করে। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও বিমক কর্তৃক অপরাপর সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদ্ধতি অনুসরণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। বন্যা আক্রান্ত জেলা সমূহের শিক্ষার্থীদের এবং করোনা কালে চাহিদানুসাওে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা ও অনলাইন ক্লাস পরীক্ষা চালু রাখার নিমিত্তে মাসিক ডাটা প্যাক সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ডিন’স এ্যাওয়ার্ড চালু করা।
শাবিপ্রবির দীর্ঘ ছয় কিলোমিটারের সীমানা প্রাচীর ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি। কিন্তু উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে এটিকে সফলের রুপ দেয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটকে বৃদ্ধি করা হয়েছে অর্ধেকের ও বেশি।