সিলেটে দু’বোনের ঝুলন্ত লাশ: সেই রাতে ৩১ নম্বর বাসায় কারা ছিল ?
22, September, 2021, 7:44:40:PM
কাওছার আহমদ: মঙ্গলবার সকালে সিলেট নগরীর মজুমদারী এলাকার ৩১ নং বাসার ছাদের একই পিলারের আলাদা দু’টি রড থেকে রানী ও ফাতেমার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সম্পর্কে তারা আপন বোন। তাদের এ রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। এ দুই বোন কী কারণে ‘আত্মহত্যা’ করলেন, নাকি তাদেরকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে- এ বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন রাতে দুই বোন হাতে দা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে চাচা মৃত ধানাই মিয়ার বাসায় আশ্রয় নিতে গিয়েছিল। সেখানে কিছু সময় অবস্থানের পর তারা আবার বাসায় ফিরে যান। এরপর সকালে আশপাশের লোকজন বাসার ছাদে তাদের লাশ দেখতে পায়। ওই রাতে ৩১ নম্বর বাসায় কি হয়েছিল, কারা ছিল, কেনইবা তারা আশ্রয়ের জন্য বেরিয়ে গিয়েছিল, তাদের হাতে দা কেন ছিল, আবার বাসায় ফিরানো হলো কেন? এমন অসংখ্য প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত কলিম উল্লাহর এই বাসায় মা, দুই ভাই ও তিন বোন থাকতেন। এক বোন বিয়ের পর যুক্তরাজ্যে থাকছেন। পরিবারের সদস্যরা চাপা স্বভাবের ছিলেন। আত্মীয় স্বজনদের সাথে তেমন যোগাযোগ ছিলনা।
এ বিষয়ে তাদের ভাই শেখ রাজন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, লন্ডনী একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল গত রোববারে। বরের বয়স অনুমান পঞ্চাশ হবে, দুই বাচ্চার বাবা। সে (রানী) বিয়েতে রাজি নয়, ঘরে ঝগড়া করছিল। আমরা তাকে বলি- বিয়ের প্রস্তাব মাত্র এসেছে, বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি। আস্তে আস্তে কনে দেখাবো; হলে হলো, না হলে নাই। এ নিয়ে সে ঝগড়া করে মায়ের সাথে। বোনের সাথেও ঝগড়া করে। সোমবার ঝগড়া করে সে চাচার বাসায় (একই এলাকায়) চলে যায়। প্রায়ই ঝগড়া হলে এভাবে চাচার বাসায় চলে যায়, সেখানে থেকে আসে। আমরা ভেবেছি, চাচার বাসা থেকে সে সকালে আসবে। এই পর্যন্ত আমাদের শেষ। তিনি আরও বলেন, সোমবার ভোর ৫টায় পাশের বাসা থেকে ডাকাডাকি করে বলে, আমাদের ছাদে মানুষ লটকে আছে। তখন আমরা দৌড়ে ছাদে যাই। গিয়ে দেখি দুজনের ঝুলন্ত মরদেহ। আমি মরদেহ নিচে নামাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবাই বলেন, পুলিশ আসুক।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, দু’বোনের মৃত্যুর দিন এই বাসায় রাতে আসলে কী হয়েছিল, কেনইবা তারা আশ্রয়ের জন্য বেরিয়ে গিয়েছিল, তাদের হাতে দা কেন ছিল, এরপর আশপাশের লোকজন ভোরে তাদের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় ছাদে দেখতে পায়। ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে, তদন্ত সাপেক্ষে মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের রির্পোট হাতে আসলে প্রকৃত বিষয় জানা যাবে । প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, লাশ উদ্ধারের পর প্রতিবেশী বা স্বজনদের সাথে কথা বলে যেটুকু জানা গেছে তাতে বিয়ে শাদি নিয়ে একটা হতাশা থাকতে পারে। তাঁদের সকলের অনেক বয়স হলেও এখনো বিয়ে হচ্ছে না। তাছাড়া এরা নানা কারণে অনেকটা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তবে আমরা এখনই কোন বিষয় নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের প্রয়োজন।