বিশ্বনাথ সিলেট প্রতিনিধি : গরিব অসহায়দের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেই ভরসাস্থলেও সঠিক সেবা নেই অসহায় রোগীদের। সেবার পরিবর্তে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে শিশু-কিশোর, মহিলা ও বয়োবৃদ্ধ রোগীদের।
বর্তমানে ডায়রিয়া, জ্বর ও সর্দি-কাশি রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাই চিকিৎসার জন্য অসহায় এসব রোগী চলে যায় ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু হাসপাতালে যাবার পর ভাগ্য ভালো হলে দেখা মিলে ডাক্তারের। সেখানে গিয়ে চিকিৎসার পরিবর্তে হতে হচ্ছে হয়রানি। এসব ভুক্তভোগী রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি দিয়েই কর্তব্যরত চিকিৎসকদের যেন দায়িত্ব শেষ।
রোগীদের সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে রাজার হালে এ হাসপাতালে চাকরি করছেন কর্মকর্তারা; স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নিত্যদিনের।
গত ২০১৮ সালে সরকার মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য ৩১ শয্যার এ হাসপাতালকে প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয় করে ৫০ শয্যায় উত্তীর্ণ করা হয়। কিন্তু সেখানে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় মানুষ। এ হাসপাতালে ডাক্তার আছে, রোগীও আছে- নেই শুধু চিকিৎসাসেবা। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী ৮ থেকে ১০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।
উপজেলার আমতৈল গ্রামের আম্বর আলীর স্ত্রী সুমনা বেগম, মকদ্দুছ আলীর স্ত্রী খায়রুন নেছা, ধলিপাড়া গ্রামের রিমা বেগমসহ ৩-৪ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩/৪ দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওয়ার্ডে কোনো ডাক্তারের দেখা মিলেনি। ওয়ার্ডে নামমাত্র একজন নার্স আছেন। ইনজেকশন দিতে হলে রোগী নিয়ে ওই নার্সের কাছে যেতে হয়। তাছাড়া ডাক্তার দেখাতে হলে দু’তলা থেকে শিশুদের কোলে করে নিয়ে নিচতলায় যেতে হয়। তাও ভাগ্য ভালো হলে ডাক্তারের দেখা মিলে। কারণ ওই কমপ্লেক্সের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তার প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
নিদিষ্ট ডিউটি সময়ে এই প্রতিবেদক সরাসরি হাসপাতালে অবস্থান করলে কোন কর্তব্যরত সরকারী ডাক্তারের দেখা পাননি। পুরাতন রোগী পরিচয়ে উক্ত হাসপাতালের আবাসিক এক ডাক্তারকে মুটোফোনে নক করলে তিনি বলেন, বিশ্বনাথের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাইভেট চেম্বারে তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে।
এভাবেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাষকষ্টের রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে রোগীরা ভিড় করে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন।
এমন অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রথমে রেগে যান। এরপর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ইয়াছিন আরাফাতের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। বিষয়টি তার কাছ থেকে জানার পর তাকে বলেন, এমন অভিযোগ যেন আর শুনতে না হয়। প্রতিদিন যেন ওয়ার্ডে একজন ডাক্তার যান।
এছাড়া উক্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত পচা ভাসি খাদ্য, নাস্তা সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।