মাদারীপুর প্রতিনিধি : ছোটবেলা থেকেই মেহেদী পরার প্রতি খুব বেশি ঝোঁক ছিলেন নুসরাত জাহান মারিয়ার। সেই আগ্রহ থেকেই আজ তিনি সফলভাবে মেহেদী পরিয়ে আয় করছেন। মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজির হাওলা গ্রামের কাজী দেলোয়ার হোসেন ও শিক্ষিকা নুরজাহান বেগমের মেয়ে নুসরাত জাহান মারিয়া। অর্নাস চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। পড়াশুনার পাশাপাশি শখের বশে মেহেদী পরানোর কাজ করছেন মারিয়া।
নুসরাত জাহান মারিয়া বলেন, মেহেদী ছাড়া যেন ঈদই পরিপূর্ণ হতো না। তাই প্রতি বছর চাঁদরাতেই পাশের বাসার এক বড় আপুর কাছে মেহেদী পরতে যেতাম। আশেপাশের আরো অনেকেই যেতো ওই আপুর কাছে। একবছর ঈদে সেই আপুর কাছে গিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা বসে থাকার পরেও সিরিয়াল পাচ্ছিলাম না। তখন বিরক্ত হয়ে বাসায় চলে এসে আম্মুকে বললাম ‘এখন কি করব আমি’। আম্মু বলল নিজে নিজেই চেষ্টা করো। যেমন হয় হবে। সে বারই আমি প্রথম নিজে নিজে মেহেদী পরি। দেখলাম যে ওই প্রথমবারই সেই বড় আপুর চেয়ে আমি ভালো ডিজাইন করলাম। তারপর থেকে আমাকে আর অন্য কারো কাছে মেহেদী পরতে যেতে হয়নি। বরং আশেপাশের অনেকেই তখন আমার কাছে আসত মেহেদী পরতে। এভাবেই অনেক বছর পার হয়ে গেলো। তারপর থেকে আমি যখনই নিজের হাতে মেহেদী পরতাম সেটা আমার ফেসবুকে আপলোড করতাম। এরপর হঠাৎ একদিন এক পরিচিত বড় আপু আমাকে কল দেন তার এক কাজিনের বিয়েতে মেহেদী পরানোর জন্য। কিন্তু একটা ব্যক্তিগত কারণে সেদিন মাদারীপুরের বাইরে যেতে হয়েছিল বলে কাজটা করতে পারিনি। আপু আমাকে ফেসবুক পেজও খুলতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি খুব একটা পাত্তা দেইনি। আর মেহেদীটাকে আমি সবসময় শখ হিসেবেই দেখতাম। ব্যবসায়ীক দিক থেকে কখনো বিবেচনা করিনি।
নুসরাত মারিয়া আরো বলেন, ২০২০ সালে যখন করোনা ভাইরাসের কারণে প্রথম লকডাউন শুরু হলো তখন সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। তখনই আমার হাজবেন্ড মাসুদুর রহমান একদিন আমাকে বলল ‘তুমিতো মেহেদী নিয়ে একটা পেজ করতে পারো’। সে আমাকে খুব অনুপ্রেরণা দিল। সাহস জোগালো। আমিও খেয়াল করলাম আশেপাশের অনেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনলাইন ব্যাবসা করছেন। কিন্তু মেহেদী পরানোর কাজ নিয়ে মাদারীপুরে তেমন কোনো পেজ নেই। তখনই ‘মেহেদী আটস্ বাই মারিয়া’ (Mehendi arts by Maria) নাম দিয়ে একটা পেইজ করে নিলাম। এরপর থেকেই শুরু হলো মেহেদী নিয়ে আমার ব্যবসায়ীক জীবন। মাদারীপুরের বিভিন্ন জায়গায় থেকে বিভিন্ন সময় পেজে মেসেজ আসে। অনেকসময় ফোনকলও আসে। প্রথম দিক থেকে যাতায়াত নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম। কিন্তু হাজবেন্ড যেহেতু সাপোর্টে ছিল সে-ই আমাকে সবসময় ক্লায়েন্টের বাসায় পৌঁছে দিত। কাজ শেষ হওয়ার আগে গিয়ে নিয়ে আসত। এভাবেই আমি আজ অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার পেয়ে আয় করছি। কোন দিন ভাবিনি শখটা একদিন আয়ের মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে। সবই সম্ভব হয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে।
নারী উন্নয়ন সংস্থা নকশি কাথার সদস্য তানমিরা সিদ্দিকা জেবু বলেন, করোনাকালীন সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। তেমনি ভাবেই একটি ভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন নুসরাত জাহান মারিয়া। সে আজ ‘মেহেদী আটস্ বাই মারিয়া’ (Mehendi arts by Maria) নামে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার পেয়ে ব্যবসা করছেন।