মুফিজুর রহমান নাহিদ : সিলেটের কানাইঘাটে শেষ সময়ে গরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। প্রার্থীদের গণসংযোগে সরগরম ৯টি ইউনিয়ন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি সমর্থক, আওয়ামী বিদ্রোহী স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টিসহ অনান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট নিয়ে চলছে হিসেব নিকেশ। তবে নৌকার ভোটের হিসেবে গেলেই উঠে আসে বিদ্রোহীদের তৎপরতার কথা। আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জে বেকায়দায় রয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। দলের কোন হুঁশিয়ারিতেই বিদ্রোহীরা মাঠ ছাড়েননি। কোন কোন ইউপিতে বিদ্রোহীরা শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছেন।
উপজেলার ৯টি ইউপির ৫টিতেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা মাঠে আছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ভোট ভাগ হয়ে গেছে আর নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছেন। যেকোন শক্তি মোকাবেলা করে জয়ী হতে চান আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীরা। অনেক ইউপিতে দলের বড় অংশের নেতাকর্মীরাও পর্দার আড়াল থেকে বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোবল চাঙ্গা করে রেখেছেন। এতে নৌকার প্রার্থীরা মারাত্মক বিপাকে আছেন। আর যেসব ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই সে ইউপিগুলোতেও নৌকার ভোটে নতুন নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। একক প্রার্থী হয়েও স্বস্থিতে নেই প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা। ভোটের মাঠ দখলে কঠিন পরিস্থিতি টপকাতে হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীরা ভিতরে ভিতরে অন্য প্রার্থীকে সহযোগিতা করছেন এমনটাও অভিযোগ রয়েছে। এরপরও আত্মবিশ্বাসী নৌকার প্রার্থীরা।
কানাইঘাটের ৯টি ইউপির মধ্যে ৩ ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কোন প্রার্থী নেই। ঝিংগাবাড়ী ইউপি ছাড়া বাকি ৫ ইউপিতেই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীরা মাঠে। বিদ্রোহীদের ধাক্কায় হিমশিম খাচ্ছেন নৌকার মাঝিরা। বিপরীতে কোন কোন ইউপিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছেন।
৩টি ইউপি বিদ্রোহী মুক্ত হলেও নানা কারণে নৌকার প্রার্থীদের ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে দলের প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এরপরও নৌকার প্রার্থীরা দিনরাত মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। যেকোনভাবে ভোটের মাঠ কাবু করতে চাচ্ছেন তারা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, ভোটের মাঠে দলীয় প্রার্থীদের ঝুঁকি ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকার কারণ হিসেবে তাঁরা দলের তৃণমূলে চরম বিরোধকে দায়ী করছেন। এ বিরোধের কারণে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়েছেন। দলীয় প্রার্থী নিয়ে অনেক ইউপিতে মতানৈক্য রয়েছে। স্থানীয় নেতাদের পছন্দ-অপছন্দ, প্রার্থীদের জনবিচ্ছিন্নতা, এলাকার উন্নয়নে উদাসীনতা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে নৌকার প্রার্থীরা বিপাকে আছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন কারণে দলীয় প্রার্থীকে ভোটে হারানোর পুরনো রেওয়াজও প্রভাব ফেলছে। এ কারণে অনেক নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে কথা বললেও আড়ালে দলের বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ৯টি ইউপিতেই কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন নৌকার প্রার্থীরা। নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। আওয়ামী লীগের ভেতরের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছেন অন্যান্য প্রার্থীরা।
পঞ্চম ধাপে কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জানুয়ারী। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা এখন প্রচারপ্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।