‘বারি হাইব্রীড-৪’ বেগুন চাষে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য
19, February, 2022, 5:35:8:PM
মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ আকারে বড়, ধরেও বেশি, দেশি স্বাদ, পোকা মাকড়ের আক্রমন কম, সার ও কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তাও স্বল্প। অল্প খরচে দ্বিগুন উৎপাদন হচ্ছে বারি হাইব্রীড-৪ জাতের বেগুন। ফলনশীল এ জাতের বেগুন আবাদ করে কয়েক বছরেই চাষিরা হচ্ছেন লাভবান। মেহেরপুর বিএডিসি থেকে বীজ সংগ্রহ ও পরামর্শ নিয়ে জেলার চাষিরা বারি হাইব্রীড-৪ জাতের বেগুন চাষে দ্বিগুন উৎপাদন পাচ্ছেন। বারি হাইব্রী-৪ জাতের হাইব্রীড বেগুন দেশী স্বাদ ও পুষ্টিতেও ভরপুর । প্রতি বিঘায় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলছেন বীজ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে ক্রেতারা বলছেন, যদিও এটি হাইব্রীড তবুও এতে রয়েছে দেশী বেগুনের স্বাদ। বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ জাতের বেগুন চাষে যেমন চাষিরা লাভবান হচ্ছেন, অপরদিকে ভোক্তারা বিষ মুক্ত দেশী বেগুনের স্বাদ পাচ্ছেন। সারা বছরই হার্ইরীড-৪ বেগুন আবাদ হওয়ায় অনেক চাষিরা এবেগুন চাষে ঝুকে পড়েছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের কুষক শফিকুল ইসলাম। তিনি নিজ জমিতে দেশী বেগুনের আবাদ করতেন। একদিকে পোকা মাকড় ও পাখির আক্রমণ, অন্যদিকে ওজনে কম। খরচ বাদ দিয়ে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ত। মেহেরপুর বিএডিসি’র বীজ প্রত্যয়ণ বিভাগের সাথে পরামর্শ অনুযায়ী তিনি গত বছর পরীক্ষামুলকভাবে হাইব্রীড-৪ জাতের বেগুন আবাদ করেছিলেন। ছয় মাস যাবত তিনি তার জমি থেকে বেগুন সংগ্রহ করেছেন। তিনি এক বিঘা জমিতে ছয় মাসে ৫ থেকে ৬ টন বেগুন পেয়ে মোটা টাকা আয় করেছেন। এবছরেও তিনি ২ বিঘা জমিতে এজাতের বেগুনের আবাদ করেছেন। তার বেগুন ক্ষেতের প্রতিটি গাছে ঝুলছে বেগুন। একেকটি বেগুনের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি।
শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এবছর হাইব্রীড-৪ জাতের বেগুনের আবাদ করেছি। ছয় মাস যাবত বেগুন সংগ্রহ করব জমি থেকে। দুই বিঘা জমিতে অন্ততঃ ১১ থেকে ১২ টন বেগুন পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য বেগুনের চেয়ে দেখতে সুন্দর ও মশৃণ হওয়ায় সবার আগে আমার বেগুন বিক্রি হয়ে যায়। দামও ভাল। তাছাড়া বাইরের জেলার পাইকাররা কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি বেগুন বাজারে খুচরা বিক্রি হয় ৩ থেকে ৪০ টাকা। পাইকারী বিক্রি করি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আমাদের মাঠে আমার দেখাদেখি এবার সকলেই এ জাতের বেগুনের আবাদ করেছে।
মেহেরপুর সদরের চাঁদবিল গ্রামের কৃষক আবু সিদ্দিক জানায়, তিনি ইতোপূর্বে ইসলামপুরি ও কটকটি জাতের বেগুনের আবাদ করতেন। বেগুন বাজার জাত করতে একটু দেরি হলে বোটা পচে যেত। পাখি এবং পোকার আক্রমন অনেক বেশি। বেগুন গাছে পরিমানে বেশি বেগুন হলেও ওজনে কম। এবছর হাইব্রীড-৪ জাতের বেগুন আবাদ করেছেন। একেকটি বেগুনের ওজন হয়েছে এক থেকে দেড় কেজি। আমাদের মত অনেকেই এবছর এ জাতের বেগুনের আবাদ করে লাভ পাচ্ছেন দ্বিগুন।
মেহেরপুর সবজি বীজ উৎপাদন কারি (বিএডিসি) প্রতিষ্ঠানের সহকারি-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম বলেন, হাইব্রীড জাতের ফসল ভেবে অনেইে অনিহা দেখান। আসলে হাই্রবীড জাতের অনেক সবজি ফসলেরই স্বাদ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বারি হাইব্রীড-৪ বেগুন আকারে অনেক বড়,স্বাদ বেশি। আমরা বীজ উৎপাদনের জন্য ২ একর জমিতে বেগুনের আবাদ করেছি। বর্তমানের এজাতের বেগুনে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। কীটনাশকের প্রয়োজন নেই। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারই যথেষ্ট। বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একবিঘা জমিতে ১০ কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি কেজি বারি হাইব্রীড-৪ বেগুনের বীজ বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা। বেগুনের দর বাজারে কম থাকলেও বীজ বিক্রি করেও কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন। কৃষকদের লাভবান হওয়ার জন্য আমাদের পরামর্শ ও বীজ দিয়ে সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপÍরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুর জেলার আবাদী জমির সবই সবজি চাষের জন্য উপযোগী। সবজি জেলার একমাত্র অর্থকারি ফসল। ইসলামপুরি ও কটকটি জাতের বেগুন আবাদ করতেন জেলার কৃষকরা। এ বছর ৩৬০ হেক্টর জমিতে বেগুন আবাদ হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকই এবছর বারি হাইব্রীড-৪ জাতের বেগুন আবাদ করেছেন। দীর্ঘ ছয় মাস বেগুন সংগ্রহ করবে কৃষক।