মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   এক্সক্লুসিভ
  করোনাকালে ভোলায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার
  17, April, 2022, 5:45:6:PM

মো: আফজাল হোসেন, ভোলা: করোনার ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে ভোলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্র দেখে। এই সময় অন্তত ২২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। ভূয়া জন্ম নিবন্ধন, কাজীদের অর্থলোভী মনোভাব, ইভটিজিংয়ের ফলে নিরাপত্তার অভাব, প্রশাসনের উদাসীনতা আর সামাজিক অবক্ষয় এর অন্যতম কারণ বলে ধারণা গবেষকদের। করোনাকালিন বাল্যবিয়েকে মহামারির সাথেও তুলনা করেছেন শিক্ষকরা।

কাজীরা কতটা যে অর্থলোভী আর অনিয়ম করে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ভোলার দৌলতখান উপজেলার ২নং মেদুয়া ইউনিয়নের কাজী একভোকেট মো: মহিউদ্দিন এর আচরণে। তার বক্তব্য নিতে নিজস্ব চেম্বারে গেলে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ক্যামেরার লেন্সে হাত দিয়ে বলেন, এটা রাখেন আপনার সাথে কথা বলি। তিনি জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার ৩নং ওয়ার্ডের ৮ম শ্রেনীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর বিয়ে পড়ান মার্চ মাসের ৮তারিখ। ওই মেয়েটির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশংসা পত্র অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৫ জানুযারী তার জন্ম তারিখ। অথচ কাবিন নামায় বয়স দেখানো হয়েছে ২০০৪ সালের ৫জানুয়ারী। ৩ লাখ টাকা টাকা কাবিন করা হয়। তবে তার পরের দিন ৯মার্চ একটি নোটারী করা হয়। যেখানে কাজী অফিস মেদুয়ার কথা উল্লেখ না করে ভোলা সদরের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ৩লাখ টাকার স্থলে ৫লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়। নিকাহনামার রেজিস্টেশন নাম্বার হচ্ছে ৩২/২০২২ইং। এটাই শেষ নয়। এভাবেই কাজীরা অর্থের লোভে হাজারো বিয়ে পড়িয়ে যাচ্ছেন। এই বিয়েটি এলাকায় বেশ ধুমধাম করে প্রকাশ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। যে অনুষ্ঠানে অনেক জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত অংশগ্রহন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিষয়টি তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রাসেল ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো: মেজবাউদ্দিনসহ অনেক জনপ্রতিনিধিরাই জানতেন। তবে কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে যে যার মত করেই এড়িয়ে গেছেন। আর এভাবেই একের পর এক বাল্য বিয়ের কাজ হচ্ছে। যে কাজী মো: মহিউদ্দিন। যিনি আইনজীবী ও কাজী হিসেবে বিয়ের কাজ করে থাকেন। দৌলতখান উপজেলার ২নং মেদুয়া ইউনিয়নের কাজী হলেও বিয়ে করিয়ে থাকেন যে কোন স্থানের। শহরের উকিলপাড়ায় তার বসার বাসস্থান।

তজুমদ্দিন উপজেলার ৮ম শ্রেনীতে পড়ুয়া নুপুর এর গোপনে বিয়ে পড়ান এই কাজীই। তিনি বিভিন্ন আইনজীবীদের অনুরোধে বিয়ে পড়িয়ে থাকেন বলেও জানান। বাল্যা বিয়ে পড়ানোর কথা শিকার করে বলেন, আমার এই ক্ষতি করা আপনার ঠিক হবে না। এক পর্যায় তিনি চেম্বার ছেড়ে দ্রুত চলে যান।

ভোলার শিক্ষা ব্যবস্থায় মেয়েরা বেশ এগিয়ে থাকলেও করোনাকালীন পরিস্থিতি এবং বাল্যবিয়ের ফলে এখন অনেকটা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে ৭ম থেকে ১০ম শ্রেনীর মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে সব চেয়ে বেশি। ১১ বছর থেকে শুরু করে কেউ বাদ যাচ্ছে না বাল্য বিয়ে থেকে। জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাচরা ইউনিয়নের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মোসা: লামিয়া ও মোসা: আরিফা আক্তার বলেন, আমাদের অনেকেই বাল্যবিয়ের কারনে চলে গেছে। আমারা তাদেরকে হারিয়েছি। আমরা তাদের হারাতে চাই না। বাল্যবিয়ে মুক্ত দেশ গড়তে চাই। অভিযোগ করে বলেন, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে শিক্ষার্থীরা জন্ম নিবন্ধন কার্ডে বয়স বৃদ্ধির মাধ্যমে বিয়ে হচ্ছে বলেও দাবী করেন। ইউনিয়ন পরিষদ সচিবরা জন্মনিবন্ধন কার্ডে বয়স বৃদ্ধি করে প্রিন্ট বের করে দিচ্ছে। যা দিয়ে বাল্য বিয়ে হচ্ছে। এছাড়া অর্থলোভী কাজীরা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই বাল্যবিয়ে পড়াচ্ছে।

একই ইউনিয়নের একটি ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী মোসা: কারিমা আক্তার ও নুসরাত সুলতানা রিমা অভিযোগ করে বলেন, আমরা  বাল্যবিয়ে মুক্ত দেশ গড়তে চাই। এটা সম্ভব হচ্ছে না কিছু অসৎ লোকের জন্য। টাকার বিনিময় পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই ম্যানেজ হয়ে চলে যায়। ফলে বিল্যবিয়ে আরো বৃদ্ধি পায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়ার পথে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, মান সম্মান রক্ষায় বাবা-মা সন্তানকে বাল্য বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। তবে প্রশাসনকে অবহিত করা হলে টাকা নিয়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ তুলেন এসব শিক্ষার্থীরা। একই সাথে মেয়েরা নেট দুনিয়ায় প্রবেশের ফলে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার কথাও শিকার করেন।

এদিকে তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সচিবের রুমে দেখা হয় মোসা: আসমা বেগম এর সাথে। এক সন্তানের জননী আসমার বিয়ে হয় ২০২০ সালের ১৯ মে। দুই বছর আগে হুজুর ডেকে বিয়ে হলেও হয়নি কোন কাবিন। দুই বছর পর এক সন্তানের জননী মোসা: আসমা আক্তার ইউনিয়ন পরিষদে আসেন জন্ম নিবন্ধনকার্ড করতে। সব কিছু বলেন, আলী আহম্মদের মেয়ে ও মো: হেলালের স্ত্রী আসমা। বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থার একজন কর্মী ফারজানা জাহান বলেন, বাল্যবিয়ে হলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অবহিত করি। ক’টা বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পেরেছেন জানতে চাইলে চুপ থেকে বলেন, এটা আমাদের কাজ নয়। আমরা মেয়েদের সচেতন করি।

সাচড়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষীকা মোসা:  ইতি বেগম বলেন, বাল্যবিয়ে সমাজ উন্নয়নে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। যে বাল্যবিয়ের শিকার সে তার সন্তানদেরকেও বাল্যবিয়ে দিবে বলে আশংকা করছেন। সচেতন করছেন, তার পরেও নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে বলেন, না জানিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না।

উত্তর চাচড়া মোহাম্মদীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার উপাধক্ষ মো: নুরউদ্দিন, শম্ভুপুর মাধ্যমিক দ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: জামাল উদ্দিন, কোড়ালমারা বাংলাবাজার মাধ্যমিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: কামরুল ইসলাম এবং ভোলা সদর উপজেলার বন্ধুজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: হারুন বাল্যবিয়েকে একটি মহামারীর সাথে তুলনা করেন। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব প্রধান শিক্ষকরা বলেন, প্রশাসনকে অবহিত করি। তারা আসেন টাকা নিয়ে আবার চলে যান। পরে বুক ফুলিয়ে সামনে দিয়ে হেটে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ সচিবরা এর সাথে জড়িত। আমাদের স্বাক্ষর নেয়ার কথা থাকলেও তারা সেটা করছে না। অনিয়মটা পরিষদ ও কাজীরা মিলে করছেন। এভাবে চলতে থাকলে স্কুল শুন্য হয়ে যাবে। একই সাথে বাল্যবিয়ে এক সময় সরকারকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে হবে। আবার প্রতিষ্ঠান প্রধানরা মনে করছেন শিক্ষার্থীদের অনৈতিক একটা বিষয় থাকে। যে কারনে বাবা-মা দ্রুত বিয়ে দিয়ে চিন্তা মুক্ত হচ্ছে বলেও মনে করেন। রাজনৈতিক চাপের কথাও স্বীকার করে নিলেন প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: রাসেল বলেন, যারা বাল্য বিয়ে দেবে এ ধরনের পরিবারকে আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধভা ভাতা, ভিজিডি ও ভিজিএফসহ সরকারী সকল ধরেনর সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি নাগরিক সনদ বন্ধ করা যায় বলে মন্তব্য করেন। তবে আদালতের বয়স নির্ধারণের কাগজ দেখিয়ে বাল্য বিয়ে হয় থাকে বলেও মন্তব্য করেন এই চেয়ারম্যান।

জেলার সাত উপজেলার ৫৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে অন্তত ২২ হাজার এর বেশি শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে বলে স্বীকার করে নিলেন জেলা শিক্ষা গবেষণা কর্মকর্তা মো: নুরে আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বাল্যা বিয়ে রোধ করতে পারলে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়তো না। সামাজিক অবক্ষয়, বিদ্যালয় নিরাপদে আসা যাওয়া করতে না পারাকে দায়ী করে অভিবাবকদের সচেতন এবং মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতি জোর দিয়েছেন জেলা শিক্ষা গবেষণা বিষয়ক এই কর্মকর্তা।

অপরদিকে তজুমদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে জাল সার্টিফিকেট তৈরির কথা স্বীকার করে শুধু মাত্র বাবা-মা ও পরিবার এর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রতি জোর দেন। বলেন, এর ফলেই বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি সম্প্রতি নুপুর নামের ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, এটা খোঁজ নিতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সচিবকে বলেছিলাম।



   শেয়ার করুন
   আপনার মতামত দিন
     এক্সক্লুসিভ
সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রমিথিউস সুলতান মনসুর
.............................................................................................
চাকরি না পেয়ে হতাশায় আত্মহত্যা জাবি শিক্ষার্থীর!
.............................................................................................
শোকের নদী ‘বিত্তিপাড়া’, এখনও নাম ওঠেনি বধ্যভূমির তালিকায়
.............................................................................................
রাহু গ্রাসে সাংবাদিক সমাজ, বানানো হচ্ছে শ্রমদাস
.............................................................................................
মধু সর্ব রোগের শেফা
.............................................................................................
পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে নিয়ে ‌`ভয়েস অব ওমেন`
.............................................................................................
যুক্তরাজ্যের অবৈধ নাগরিকদের ঠাঁই হবে রুয়ান্ডায়
.............................................................................................
করোনাকালে ভোলায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার
.............................................................................................
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে অস্ট্রেলিয়া
.............................................................................................
যুদ্ধের প্রভাব: লন্ডনে ডিজেলের লিটার ২০০ টাকা
.............................................................................................
তনু হত্যার ৬ বছর: চোরাবালিতে আটকে আছে তদন্ত, শনাক্ত হয়নি আসামি
.............................................................................................
সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘আশুরার বিল’
.............................................................................................
আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা
.............................................................................................
বাংলাদেশে কী ধরণের সমরাস্ত্র বিক্রি করতে চায় তুরস্ক
.............................................................................................
কুষ্টিয়ার যতীন্দ্রনাথ যেভাবে হলেন ‘বাঘা যতীন’
.............................................................................................
বেকার যুবকদের ভাগ্য বদলে বিশেষ ঋণ
.............................................................................................
খাদ্য নিরাপত্তায় এখনও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ
.............................................................................................
খুলনায় মাদক সম্রাট শাহজাহান আটক
.............................................................................................
স্থানীয় নির্বাচন: ক্ষমতাসীন দলে তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কা
.............................................................................................
নাশকতার আশঙ্কায় দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা
.............................................................................................
গম উঠাচ্ছে না মিলাররা
.............................................................................................
বর্জ্য পরিশোধনের নামে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা
.............................................................................................
নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাজারে
.............................................................................................
কোরবানির গরু ফুলানো হচ্ছে ভিটামিন দিয়ে
.............................................................................................
‘ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে যা বলেছিলেন এরশাদ শিকদার’
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT