শনিবার, ২০ এপ্রিল 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   ইসলাম
  সদকায়ে ফিতর: কিছু কথা
  28, April, 2022, 3:14:55:PM

মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইখতিয়ার আরিফী


সদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব,  খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক ‘সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাত।

আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছে। যেমন- (ক) আজওয়া (উন্নতমানের)  খেজুরের মূল্য প্রতি কেজি এক হাজার টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৩ হাজার ২ শত ছাপ্পান্ন টাকা।
(খ) মধ্যম ধরণের খেজুর যার মূল্য প্রতি কেজি ৩শ’ টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৯৭৭ টাকা। (গ) কিসমিস প্রতি কেজি ২৩০ টাকা করে হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭৪৮ টাকা। (ঘ) পনির প্রতি কেজি ৫শ’ টাকা করে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৬২৮ টাকা। (ঙ) গম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা হিসাবে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁয়ায় ৫৭ টাকা।

হাদীসে এ ৫টি দ্রব্যের যেকোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো একটি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সকল শ্রেণীর লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্য-মানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদীসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসেবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করবে কে? আসলে এক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেওয়ার সে তাই দেবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিসমিসের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেঈন ও তবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। এ পর্যন্ত কোথাও দুর্বল সূত্রে একটি প্রমাণ মেলেনি যে, স্বর্ণযুগের কোনো সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্বনিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন। এখানে এ সংক্রান্ত কিছু বরাত পেশ করা হচ্ছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন- ‘দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি’। -সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইতক ৩/১৮৮; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান বাব আফযালুল আমল ১/৬৯ সাহাবায়ে কেরাম-এর আমল
(ক) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খাদ্য দ্বারা অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর, কিংবা এক ‘সা’ পনির বা এক ‘সা’ কিসমিস দ্বারা। আর এক ‘সা’-এর ওজন ছিল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘সা’ অনুযায়ী। -মুয়াত্তা মালেক পৃ.১২৪; আল ইসতিযকার, হাদীস ৫৮৯, ৯/৩৪৮।
এ হাদীসে রাসূলের যুগে এবং সাহাবাদের আমলে সদকা ফিতর কোন কোন বস্তু দ্বারা আদায় করা হত তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

(খ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করেছেন। তিনি একবার মাত্র যব দ্বারা আদায় করেছেন। -আলইসতিযকার, হাদীস নং ৫৯০,৯/৩৫৪
ইবনে কুদামা রা.আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে ওমর রা. সাহাবাদের তরীকা অবলম্বন করতে সারা জীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে ওমরের ভাষ্য হল- ‘সাহাবীগণ যে পথে চলেছেন আমিও সে পথেই চলতে আগ্রহী।’

এবার দেখা যাক মাযহাবের ইমামগণ উত্তম সদকা ফিতর হিসেবে কোনটিকে গ্রহণ করেছেন:

উত্তম সদকা ফিতর: ইমাম শাফেয়ীর মতে উত্তম হল হাদীসে বর্ণিত বস্তুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদক দেওয়া। অন্য সকল ইমামের মতও এমনই।
ইমাম মালিক রাহ. এর নিকট খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত খেজুর ‘আজওয়া’ খেজুর দেওয়া  উত্তম। আজওয়া খেজুরের ন্যূনতম মূল্য ১০০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি।
ইমাম আহমদ রাহ. এর নিকট সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। -আলমুগনী ৪/২১৯; আওজাযুল মাসালিক ৬/১২৮

ইমাম আবু হানীফা রাহ. এর নিকটেও অধিক মূল্যের দ্রব্যের দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরীবের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা।
সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মদীনাতে গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে  যে, সেকালে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল।
হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা ‘সা’ গমকে সদকা ফিতরের অন্যন্য খাদ্যদ্রব্যের এক ‘সা’র মতো গণ্য করা হত। -আলইসতিযকার ৯/৩৫৫

ইবনুল মুনযির বলেন- সাহাবীদের যুগে যখন গম সহজলভ্য হল তখন তারা আধা ‘সা’ গমকে এক ‘সা’ যবের সমতুল্য গণ্য করতেন। -ফাতহুল মুলহিম ৩/১৫; আওজাযুল মাসালিক ৬/১৩
তাহলে বুঝা যায়, হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হল যে, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য। এ সময় হযরত ইবনে ওমর সাহাবাদের অনুকরণে খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতেন। তখন তাঁকে আবু মিজলায রাহ. বললেন- ‘আল্লাহ তাআলা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম। অর্থাৎ আপনার সামর্থ রয়েছে বেশি মূল্যের বস্তু সদকা করার। তবুও কেন খেজুর দ্বারা তা আদায় করছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি সাহাবাদের অনুকরণে এমন করছি।

যাক আমাদের কথা ছিল, সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদীসে পাঁচ প্রকারের খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাহলে এ যুগে সকল শ্রেণীর জন্য এমনকি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কী করে সমীচীন হতে পারে?
বড়ই আশ্চর্য! পুরো দেশের সকল শ্রেণীর লোক বছর বছর ধরে সর্বনিম্ন মূল্যের হিসেবে ফিতরা আদায় করে আসছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ৫৫/৬০ টাকা করে। মনে হয় সকলে ভুলেই গেছে যে, গম হচ্ছে ফিতরার ৫টি দ্রব্যের একটি (যা বর্তমানে সর্বনিম্ন মূল্যের)। সুতরাং আমরা এদেশের ফিতরা আদায়কারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি তারা যেন যার যার সামর্থ অনুযায়ী হাদীসে বর্ণিত দ্রব্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের দ্রব্যটির হিসাবে ফিতরা আদায় করেন। পনির, কিসমিস, খেজুর কোনোটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে। ধনীশ্রেণীর মুসলিম ভাইদের জন্য পনির বা কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়। যেখানে রমযানে ইফতার পার্টির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা বয় করা য়, ঈদ শপিং করা হয় অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোনো হিসাবেই পড়ে না। যদি এমনটি করা হয় তবে যেমনিভাবে পুরো হাদীসের উপর মুসলমানদের আমল প্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি হারিয়ে যাওয় সুন্নত যিন্দা করা হবে, তেমনি এ পদ্ধতি দারিদ্র্যবিমোচনে অনেক অবদান রাখবে। গরীব-দুঃখীগণের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে ঈদের পবিত্র দিনে।
আরেকটি আবেদন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দেশের সম্মানিত মুফতীগণ, মাশায়েখ হযরাত ও দারুল ইফতাগুলোর কাছে, তারা যেন সদকাতুল ফিতর এর পরিমাণ ঘোষণা দেওয়ার সময় হাদীসে বর্ণিত সকল দ্রব্যের হিসাবেই পৃথক পৃথকভাবে বলে দেন এবং মানুষকে যথাসম্ভব উচ্চমূল্যের ফেতরা আদায়ে উৎসাহিত করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দিন।

- ইমাম ও খতীব, নারিন্দা, ওয়ারী, ঢাকা



   শেয়ার করুন
   আপনার মতামত দিন
     ইসলাম
সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ মাফ হয় যে দোয়ার বদৌলতে
.............................................................................................
ইজতেমা ময়দানে আরো ৩ মুসল্লির মৃ/ত্যু, মৃ/তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০
.............................................................................................
বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিয়েছে আফগান তাবলিগ জামাত
.............................................................................................
বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)
.............................................................................................
ট্রানজিট ভিসায় ওমরাহ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা
.............................................................................................
আশুরার রোজা রাখার ফজিলত ও নিয়ম
.............................................................................................
মহররম মাসের ফজিলত ও আমল
.............................................................................................
নেক সন্তান লাভের দোয়া ও আমল
.............................................................................................
সন্তান পেতে যে আমল করবেন নিঃসন্তান দম্পতি
.............................................................................................
হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহকে ঈমানে অটল থাকার আহ্বান
.............................................................................................
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান
.............................................................................................
কোরবানির মাংস বণ্টনের সঠিক নিয়ম
.............................................................................................
সৌদিতে ৯ দিনে আট বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
.............................................................................................
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
পালিয়ে যাওয়া স্ত্রী ফিরে এলে কি সংসার করা যাবে?
.............................................................................................
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও আমলসমূহ
.............................................................................................
আজ পবিত্র শবে কদর
.............................................................................................
আগুন নেভাতে যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
.............................................................................................
ইফতারের করার সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
আজ থেকে ইতিকাফ শুরু
.............................................................................................
ইফতারের করার সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
ইফতারের দোয়া
.............................................................................................
যে ৩ সুগন্ধি বেশি পছন্দ করতেন মহানবী (সা.)
.............................................................................................
ইফতারের দোয়া
.............................................................................................
ইফতারের করার সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
ইফতারের করার সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
কোরআন প্রতিযোগিতায় আবারও হাফেজ তাকরীমের বিশ্বজয়
.............................................................................................
আপন বোনকে জাকাত দেওয়া যাবে?
.............................................................................................
ইফতারের দোয়া
.............................................................................................
রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ
.............................................................................................
যেসব কারণে রোজা ভাঙা যাবে
.............................................................................................
ইফতারের সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
ইফতারের করার সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
রোজার নিয়ত কখন কীভাবে করবেন
.............................................................................................
শিশুদের রোজার অভ্যাস গড়ে তুলবেন যেভাবে
.............................................................................................
রমজানের যে ৩ সময়ে দোয়া কবুল হয়
.............................................................................................
বরকতময় ইফতারের দোয়া ও ফজিলত
.............................................................................................
তারাবি নামাজের নিয়ম ও গুরুত্ব
.............................................................................................
অকারণে রমজানের রোজা না রাখার শাস্তি
.............................................................................................
আপনার সন্তানকে যেভাবে রোজায় অভ্যস্ত করবেন
.............................................................................................
যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়
.............................................................................................
কোরআন নাজিলের মাস রমজান
.............................................................................................
রাসুল (সা.) ইফতার করতেন যেভাবে
.............................................................................................
চাঁদ দেখা যায়নি, রোজা শুরু শুক্রবার
.............................................................................................
রমজানের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
কোরআন পড়ার ফজিলত ও উপকারিতা কী
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT