জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটে চলছে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ। জয়পুরহাট সদর উপজেলাসহ, পাঁচবিবি, কালাই ক্ষেতলাল এবং আক্কেলপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে শ্রমজীবীরা এখন আগাম জাতের বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা জয়পুরহাটে চলতি ২০২১-২০২২ রবি ফসল উৎপাদন মৌসুমে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জেলায় এবার ৬৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কায়ছার ইকবাল বলেন, ‘সাম্প্রতিক কালবৈশাখী ঝড়বৃষ্টির প্রভাবে জয়পুরহাট সদর উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর বোরো ধান খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফসল উৎপাদনের ক্ষতি ধরা হয়েছে ৯০০ মেট্রিক টন। আর এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় কোটি টাকা।’
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার পর্যন্ত ১০ শতাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই করা হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন আগে যে কালবৈশাখী ঝড়বৃষ্টি হলো, তার প্রভাবে পুরো জেলার প্রায় ২ হাজার ১৩ হেক্টর বোরো ধান খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফসল উৎপাদনের ক্ষতি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।’
সরেজমিনে জেলার ধানচাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি কালবৈশাখীর প্রভাবে বয়ে যাওয়া ঝড়বৃষ্টির কারণে তাদের পাকা এবং আধাপাকা ধানের গাছ জমিতে নুয়ে পড়েছে। কিছু কিছু নীচু জমিতে এখনও পানি জমে আছে। তাই ধান কেটে নিতে হচ্ছে চড়া দামে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘা ধান কাটা যেতো ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এখন সেই ধান কাটতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। এখন প্রতি বিঘা ধান কেটে নিতে হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়।
এদিকে শ্রমজীবীরা জানান, বেশি দামে ধান কেটেও পড়তা হচ্ছে না তাদের। ধান গাছ নুয়ে না পড়লে এবং জমিতে পানি না জমে থাকলে যে সময়ে তারা ৩ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করতে পারতেন; এখন এক থেকে দেড় বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করতে তাঁদের সেই সময় লাগছে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমরগ্রামের কৃষক কাউছার রহমান জানান, তাঁর ৮ বিঘা জমির মধ্যে ৫ বিঘা জমিই বর্গা রেখেছেন তিনি। ৩ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বোরো ধান জিরাশাইল চাষ করেছেন। এক সপ্তাহ আগে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর কারণে পাকা ধানগাছ জমিতে নুয়ে পড়ছে। ৫ হাজার টাকা বিঘা দরে সে ধানগুলো কেটে দিচ্ছেন শ্রমিকরা।
ইীলফামারী জেলার ডোমার থেকে আসা শ্রমিক দলের সর্দার মোসলেম উদ্দিন জানান, জমির ধান নুয়ে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না। তাই ৫ হাজার টাকা বিঘা দরে ধান কেটেও পড়তা হচ্ছে না।