বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশেও শ্রীলংকার মত পরিস্থিতি হতে বাধ্য। কারণ একইভাবে এখানকার অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে, এখানে ঋণ এত বেশি গ্রহণ করা হয়েছে যে, ইতোমধ্যে ঋণের বোঝা জনপ্রতি ৪৭২ ডলার করে পড়েছে। ওখানকার মত পরিস্থিতি এখানেও দেখা দেবে, মুদ্রাস্ফৃতি এত বাড়বে যে, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি শুক্রবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর খাগড়াবাড়ি এলাকায় ১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনী সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি বলেন, এটা আমার নির্বাচনী এলাকা। এখানে গত ১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে একদলীয় নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হয়। আমরা প্রতিবছরই চেষ্টা করি এ সকল পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এ হত্যাযজ্ঞ প্রমাণ করে যে, সরকার সম্পূর্ণ বল প্রয়োগ করে এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিজের মত করে নিতে চায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪ জনকে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত করেছে। একই সঙ্গে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায়নি। তারা নিজেরাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত হয়। আজকে এ পরিবারগুলোকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ঐ সময় যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল না, তাদের বিরুদ্ধে ও একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল বলেন, আমরা সবসময় একটি কথা গুরুত্বের সঙ্গে বলে আসছি, নির্বাচন হতে হবে জনগণের ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে। তারা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে সুযোগ করে দিতে হবে। এ কারণে অতীতের ঘটনা থেকে আমরা দেখেছি যে, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন কখনও সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। এ কারণে এবারও দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। যাতে করে প্রকৃতপক্ষে জনগণের প্রতিনিধিরাই নির্বাচিত হন।এটাই হচ্ছে জনগনের দাবি। এটাই হচ্ছে এদেশের গণতন্ত্র উত্তোরনের একমাত্র পথ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের ব্যাপারে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আ.লীগের লোকেরা কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে, লুট করেছে। এ সকল লোকজনকে তারা বাদ দিতে চান। এই লোকগুলো তাদের দলে আছে এটা স্বীকার করার মাধ্যমে উনি মেনে নিয়েছেন আ.লীগ এ কাজগুলোর সাথে জড়িত। আমরা প্রতিনিয়ত বলে আসছি আ.লীগের এ সকল লোকেরা বাংলাদেশকে শেষ করছে, লুট করছে, তারা বাংলাদেশকে একটা ভঙ্গুর অর্থনীতিতে পরিণত করতে চলেছে।
বাণিজ্যমান্ত্রী টিপু মুনসি নিজে একজন বড় ব্যবসায়ি। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তার সুনিদিষ্ট ধারণা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করার মানেই হচ্ছে ব্যবসায়ীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। আজকে দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতির যে চিত্র আমরা দেখতে পাই তাতে স্পস্ট করে বোঝা যায়, সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদে এবং তাদের সহযোগিতায় এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তাদের নিজেদের সিন্ডিকেটই আজকে এর জন্য দায়ি। আমরা এ কারণে আগেই বলেছি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারনে বাণিজ্যমন্ত্রী সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, আ.লীগ বাংলাদেশকে একটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। তাদের সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, টাকা পয়সা লুট, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার কারণে অবিলম্বে সরকারের পতদ্যাগ করা উচিত।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেল বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর করিম, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ, জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবু নুর, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো: কায়েসসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠের নেতৃবৃন্দ ।
পরে তিনি গড়েয়ায় ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদির রায়ের পরবর্তী সহিংসতা সহ মোট ৯ জনের নিহততের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা শেষে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ভেলাজানে একটি সভায় যোগ দেন।