মোঃ রেজাউল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাইওয়ে ওসির তেলেসমাতিতে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মহাসড়কে মাসোহারা দিয়ে প্রায় অবাধে চলছে নিষিদ্ধ তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহন। চাঁদার টাকা ৩ জন সোর্স দিয়ে কালেকশন করে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। যেসব যানবাহন মাসোহারা দেয় সেগুলোতে বিশেষ ধরনের স্টিকার লাগিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়। আর যাদের গাড়িতে এসব স্টিকার লাগানো থাকে না তাদেরকে আটক করে হয়রানি ও মামলা দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে ও গোপনসূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ক্লিনার ছোটনের প্রতি আত্মবিশ্বাসি হয়ে ওসি সুখেন্দ্র বসু তাঁর ব্যক্তিগত তেলেস্মতি কাজ সম্পন্ন করে।

ওসি সুখেন্দ্র বসুর নির্দেশেই চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে ওসির নিয়োগকৃত এসব দালালরা। তার বিশ্বস্ত এসব সোর্সদের মাধ্যমে সমস্ত হাইওয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ গ্রামের জাকির হাইওয়ে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। সোর্স জাকিরের এরিয়া মাধবপুর সাতবর্গ হতে আশুগঞ্জ পর্যন্ত। মাধবপুর সাতবর্গ হতে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১৫০টি ট্রাক্টর ও পিকআপ থেকে মাসে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কালেকশন করে হাইওয়ে থানার সোর্স ছোটনের হাতে পৌঁছে দেয় জাকির। সোর্স জাকির ৫ বছর আগে সিএনজি ড্রাইভার ছিলেন। গত ৩ বছর যাবৎ হাইওয়ে থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সেই জাকির এখন মাধবপুর সাতবর্গ হতে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সারাদিন মোটরসাইকেলে টহল ডিউটি করে থাকেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড় হতে ধরখার পর্যন্ত সড়কের ট্রাক্টর ও রাধিকা হতে কুটি-চৌমুহনী- কালামুড়া ব্রীজ পর্যন্ত এলাকার সিএনজি থেকে মাসোহারা তোলা হয়। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার বেসরকারি ড্রাইভার লিটনের নিয়ন্ত্রিত এলাকা এটা। এছাড়া আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড ও বিশ্বরোড থেকে মাধবপুর  পর্যন্ত লিটনের তত্ত্বাবধানে ‘বিসমিল্লাহ’ নামে ২০টি গাড়ি চলে।
 
আরেক সোর্স শামীমের নিয়ন্ত্রিত এলাকা ধরখার হতে কুটি চৌমুহনী-কালামুড়া ব্রীজ পর্যন্ত। এসব সোর্সের মাধ্যমে মাস শেষে মোটা অংকের চাঁদার টাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসির হাতে এসে পৌঁছে।
 
ওসির আরেক সোর্স মাদক মামলা ও চাঁদাবাজি মামলার জেলখাটা আসামি আরব আলী। তার নামেও মহাসড়কে চলছে অসংখ্য সিএনজি। ওসির এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে যেন কেউ কথা বলার সাহস না পায় ওসি তাকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরূপে স্থানীয় চালকসহ সাংবাদিকদের উপর হামলা ও মামলার ভয়ভীতি দেখান।

এছাড়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার সাবেক কনস্টেবল গোলাম নবী, সাবেক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম, হাইওয়ে পিআইও পুলিশ নাসির সহ বেশ কয়েক পুলিশ সদস্যের নাম্বার বিহীন সিএনজি  অটো রিকশা মহাসড়কে চলে।

এছাড়াও সন্ধ্যার পরে ট্রাক বোঝাই গাছ, কাঠ ও বাঁশের গাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাইওয়ে  থানাধীন আসলে সিএনজি নিয়ে তাড়া করে ওসির নাম বলে প্রতিনিয়ত মোটা     অংকের টাকা আদায় করা হয়। হাইওয়ে পিআইও  পুলিশ  ইউনিফর্ম পরা পুলিশের অপকর্মের তথ্য সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু সেই পিআইও পুলিশ নাসির নিজের মালিকানাধীন নাম্বারবিহীন সিএনজির পাশাপাশি বিভিন্ন অবৈধ গাড়ি আটক করলে এলাকার দাবি করে সিএনজিসহ অন্যান্য গাড়ির জন্য হাইওয়ে ওসির কাছে তদবির করেন বলে দৈনিক স্বাধীন বাংলার কাছে স্বীকার করেন।

সরেজমিনে গেলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিএনজি, ট্রাক চালক বলেন, ‘হাইওয়ে থানা পুলিশের যায়গায় যায়গায় লোক আছে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ৫০০টাকা পরিশোধ করলে হাইওয়ে থানা থেকে একমাস মেয়াদী নতুন স্টিকার (টোকেন) পাওয়া যায়। টোকেনটা গাড়িতে থাকলে ধরে না। হাইওয়ে থানার ড্রাইভার লিটনের মাধ্যমে এবং সরাসরি পুলিশের মাধ্যমেও মাসোহারা আদায় করে। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ সিএনজি নতুন করে মাসোহারা করলে হাইওয়ে পুলিশকে একমাসের পাঁচশত টাকা এডভান্স দেওয়া লাগে। বিশ্বরোড এলাকায় গাড়ি চালালে  হাইওয়ে পুলিশের পিকাপের ড্রাইভার লিটনের কাছে ৫০০টাকা মাসোহারা করা লাগে। মাসোহারা না করলে গাড়ি আটক করে ফেলে। যার (সোর্স) আন্ডারে (দায়িত্বে) যতগুলো গাড়ি থাকে একেক সময় একেক দারোগা আসলে তাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়। আবার সোর্স লিটনের কাছে আমরা টাকা দিলে হাইওয়ে পুলিশের কাছে পৌঁছে দেয় সে।’

মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য হাইওয়ে পুলিশের ব্যাপক চাঁদাবাজিকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ হলে হাইওয়ে পুলিশের অবৈধ বাণিজ্য কমে যাবে। কারণে-অকারণে গাড়ি থামিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়া বন্ধ হবে।

এ ব্যাপারে হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দ্র বসুর কাছে দৈনিক স্বাধীন বাংলার এ প্রতিনিধির প্রথম প্রশ্ন ছিল, হাইওয়ে থানায় বেসরকারি ড্রাইভার লিটন নাম্বার বিহীন গাড়ি স্টিকার নাম দিয়ে কিভাবে চলে? দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলো- হাইওয়ে থানা ক্লিনার মামলা দিয়ে গাড়ি কিভাবে ছেড়ে দেয়?
তৃতীয় প্রশ্ন ছিলো- মাদক মামলা ও চাঁদাবাজি মামলা জেলখাটা আসামি আরব আলী হাইওয়ে থানার সামনে এসে বলেন ওসি স্যার আমাকে ফোন দিয়েছে। কিন্তু সে হাইওয়ে থানার সামনে এসে ঝামেলায় জড়িয়েছে। এ বিষয়ে আপনার জবাব কি ? এবং চতুর্থ প্রশ্ন  ছিলো- হাইওয়ে থানার সোর্স হিসেবে পরিচিত লাভ করা জাকির প্রতিনিয়ত থানায় এসে কি করে; সে বিষয়ে আপনার কোন নজরদারী আছে কি না? জবাবে হাইওয়ে থানা ওসি সুখেন্দ্র বসু বলেন এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।