বাবুল মিয়া, সুনামগঞ্জ কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রকাশিত বন্যা তথ্য মতে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীর মধ্যে সুরমা নদীর ২৬১সুনামগঞ্জ স্টেশনে সকাল ৯ টায় ধারণকৃত (+)০.৫০ মি. বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ১৩১.৫ শক্তিয়ারখলা (-)০.৬৮ মি. পুরাতন সুরমা ২৬৯.৫ দিরাই স্টেশনে (-)০.২৯ মি. ও সুরমা ২৬৮ ছাতক স্টেশনে (+)২.১৩ মি. পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান।
শহরতলির হালুয়ারঘাট গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানান, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদী ও ছোট-বড় প্রত্যেকটি হাওরে আশংকাজনক হারে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশাখে আকস্মিক বন্যায় সুনামগঞ্জে ব্যাপক ফসলহানি হয়। যার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যসহ সর্বক্ষেত্রে। সুনামগঞ্জের মানুষ কৃষি নির্ভর। বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ কৃষক পড়েছেন মহা দুর্ভোগে। বোরো ফসলের ধাক্কা সামলানোর আগেই আবারো উপর্যুপরি বন্যা। আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। হালুয়াঘাট বাজারে আমার ছোট খাটো একটি দোকানের আয় থেকেই চলে সংসার। গত দু-দিন থেকে হালুয়ারঘাট বাজারটি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য। পানিতে নষ্ট হয়েছে দোকানের মালামাল।
ইব্রাহিমপুর গ্রামের এ্যাড. নূর হোসেন বলেন, গত ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে ভারী বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চোখের সামনে তলিয়ে গেছে জেলা সদরসহ নিম্নাঞ্চল। পানি বন্দি রয়েছে হাজারো পরিবার। সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী হালুয়ারগাঁও, রহমতপুর, বালিকান্দি,বেলাবরহাটি, বিরামপুর, মঈনপুর, ভাদেরটেক, ইব্রাহিমপুর, সদরগড়, বড়ঘাট, লালপুর, রাধানগর, আছিনপুর, বৈঠাখালী, কুতুবপুর, জগাইরগাঁও, হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। ডুবে গেছে প্রায় আশি শতাংশ বাড়ি ঘর।
জেলা সদরের আরতপট্রি, মাছ বাজার,জেইল রোড, পশ্চিম বাজার,মুক্তারপাড়া, সোমপাড়া, সাহেববাড়িঘাট, রিভারভিউ, বড়পাড়া, পশ্চিম তেঘরিয়া, কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, ষোলঘর, নবীনগর, ধারারগাঁও, খাইমতিয়র এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাড়িঘর। ঘর থেকে বের হতে না পেরে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। কাজ না থাকায় মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। আয় থেকে ব্যয় বেশি হওয়ার কারনে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষজন চরম হতাশার মাঝেই টেনেটুনে চালাচ্ছেন দৈনন্দিন জীবন। বাড়ছে দেনার দায়। ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কাঁচা ঘর বাড়ি।
সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় ছোট-বড় মোট ২৬টি নদী তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর গ্রাম,আদার বাজার, হরিনাপাটি, আমবাড়ি, গোপালপুর গ্রামের হাজরো ঘর বাড়ি, বাজার, স্কুল, মাদ্রাসা ও হাট বাজার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা।