স্বাধীন বাংলা প্রতিবেদক বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ায় গত ১৭ জুলাই দেশের বাজারেও কমানো হয় সয়াবিন তেলের দাম। লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৮৫ টাকা।
সোমবার থেকে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে এখনও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্যতেল। সেই সঙ্গে গত সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।
শুক্রবার রাজধানীর শ্যামলী, আগারগাঁও বিএনপি বাজার ও তালতলা বাজার ঘুরে বাজারদরের এ চিত্র দেখা গেছে। এর আগে গত রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তেলের মিল ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন পর্যন্ত বাজারে এক লিটার তেলের মূল্য ছিল ১৯৯ টাকা। বৈঠকে ৭ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা বিক্রি হবে বলে জানানো হয়। আর পাঁচ লিটার তেলের মূল্য ছিল ৯৮০ টাকা, যা কমিয়ে করা হয় ৯১০ টাকা।
এছাড়া সয়াবিন তেলের পাশাপাশি পাম তেলের মূল্যও কমানো হয়। প্রতি লিটার পাম তেল লিটারে ৬ টাকা কমিয়ে ১৫২ টাকা করা হয়। এদিকে রাজধানীর বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, এখনও সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে আগের মূল্যেই।
ব্যবসায়িদের দাবি, এখনও নতুন মূল্যের তেল বাজারে আসেনি। পুরাতন মূল্যের তেলই তাদের সংগ্রহে রয়েছে। ফলে বর্তমান মূল্যে বিক্রি করলে লোকসান দিতে হবে। ক্রেতারা অভিযোগ তুলছেন ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে। তাদের ভাষ্যমতে, মূল্য বাড়ার খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে দেয়। তখন বোতলের গায়ে কম মূল্য থাকলেও তারা বলেন, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। অথচ সরকার যখন কমিয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করে তখন মূল্য কমানোর কোনো খবর থাকে না। তারা তখন উল্টা কথা বলে, নতুন মূল্যের তেল বাজারে আসেনি।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। গত সপ্তাহে যে মরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে সেই মরিচের দাম বেড়ে দাড়িয়েছে ২০০ টাকা কেজি।
কাঁচামরিচের এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বিক্রেতা মাহবুব রহমান বলেন, ‘সারাদেশে বৃষ্টির কারণে কৃষকের কাঁচামরিচের ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে। অনেক গাছ মারা গেছে। বৃষ্টির সময় ক্ষেত থেকে মরিচ তোলা হয় না। তোলা হলে গাছের গোড়া নড়ে যায় এবং গাছ মারা যায়। এই কারণে বাজারে মরিচ কম। এর ফলে সংকট তৈরি হয়েছে এবং মূল্য বেড়েছে।’
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে প্রায় অপরিবর্তিত। বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, কাঁকরোলের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটির কেজি ৮০ টাকা, পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচ কলার হালি ৩০, করলা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা কেজি, ঝিঙে ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং গাজর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা।
এদিকে চালকুমড়া আকার ভেদে প্রতিপিস ৪০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া লেবুর হালি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গোল আলুর কেজি ৩০ টাকা, প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, দেশি রসুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, চায়না রসুন ১৫০ টাকা এবং আদার কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
বাজারে প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি। খোলা আটার মূল্য ৫০ টাকা কেজি। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, প্যাকেট চিনি ৯০ টাকা। দেশি মসুরের ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান মসুরের ডাল ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি, পোলাও চাল ১১০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা, পাইজাম ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মুরগির বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আগের মতোই বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ২৮০ টাকা এবং দেশি মুরগি প্রতিটি (এক কেজির উপরে) বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ১৫০ টাকা কেজি, কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি।
|