মাত্র চার লাখ টাকা খরচা করে ‘শেষ গল্পটা তুমিই’ নামে একটি নাটক বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য ইমন। এ বছরের ভালোবাসা দিবসে নাটকটি টিভিতে প্রচারও হয়েছে। গত ২৪ মার্চ সেটি প্রকাশ হয় সিডি চয়েসের ইউটিউব চ্যানেলেও। এর পরই ঘটে বিপত্তি। নাটকের নির্মাতার বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
কিন্তু কী আছে ‘শেষ গল্পটা তুমিই’ নাটকটিতে? যার কারণে এত বড় বিপদের মুখে পড়তে হলো নির্মাতা কর্তৃপক্ষকে? বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের অভিযোগ, অনন্য ইমন তার নাটকটিতে খাঁচায় বন্দি টিয়া পাখি দেখিয়েছেন, যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে কারণেই মামলা করা হয়েছে।
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, ‘শেষ গল্পটা তুমিই’ নাটকটির ১৫ মিনিট ৮ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৫৩ সেকেন্ড পর্যন্ত মোট ৪৫ সেকেন্ড খাঁচায় বন্দি একটি টিয়া পাখিকে দেখানো হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল ফেসবুকের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের নজরে আসে বিষয়টি।
নথিতে বন্যপ্রাণী অপরাধ দম ইউনিট উল্লেখ করেছে, বন্যপ্রাণীকে খাঁচাবন্দি করা, বেচাকেনা, প্রদর্শন বা এ জাতীয় অপরাধে সহায়তা করা, প্ররোচনা দেওয়া ইত্যাদি ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ‘সিডি চয়েস ড্রামা’ নামে ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত নাটকটিতে খাঁচাবন্দি বন্যপ্রাণী প্রদর্শন প্রচলিত আইনে অপরাধ এবং অন্যদেরও সেই অপরাধ করতে উৎসাহিত করেছে।
সে কারণে নাটকটির পরিচালক অনন্য ইমনের বিরুদ্ধে ‘বন্য প্রাণী আইন ২০১২’র ৩৮(২), ৪১ এবং ৪৬ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। মামলার সাক্ষী চারজন- অসীম মল্লিক (বন্য প্রাণী পরিদর্শক), মো. আব্দুল্লাহ-আস-সাদিক (বন্য প্রাণী পরিদর্শক), মো. হাফিজুর রহমান (ফরেস্টার) ও মো. আব্দুল মালেক (জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট)।
তবে নির্মাতা অনন্য ইমনের দাবি, তার নাটকের চিত্রনাট্যে খাঁচায় বন্দি টিয়া পাখির কোনো দৃশ্য ছিল না। যে বাড়িতে নাটকটির শুটিং হয়েছে, সেখানেই ছিল টিয়া পাখিটি। নির্মাতা বলেন, ‘এখানে তো পাখিটিকে আদর করে খাওয়ানো হচ্ছিল। এটা নিয়ে আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে কল্পনায়ও আসেনি। একই সঙ্গে দৃশ্যটিতে নায়কের মা গাছে পানি দিচ্ছিলেন। পাখি বন্দি দেখানোয় যদি কপালে তিরস্কার জোটে, তবে গাছে পানি দিতে সবাইকে উৎসাহিত করার জন্য আমার পুরস্কার পাওয়া উচিত।’
হতাশা প্রকাশ করে নির্মাতা অনন্য ইমন বলেন, ‘আমার নাটকের বাজেট মাত্র ৪ লাখ টাকা, ক্ষতিপূরণ ১৫ কোটি টাকা! পারিবারিক সব সম্পত্তিসহ আমাকে বিক্রি করলেও এত টাকা পাওয়া যাবে না।’
মামলা প্রসঙ্গে অন্যতম সাক্ষী ফরেস্টার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা গ্রামীণফোন, দারাজের মতো প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্রে বন্যপ্রাণী আইন ভঙ্গের অভিযোগ এনে মামলা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চোখ-কান খোলা রাখি সর্বক্ষণ। অনন্য ইমন সাহেব বন্য প্রাণীকে খাঁচাবন্দী দেখিয়ে অপরাধ তো করেছেনই, অন্যদেরও উৎসাহিত করেছেন।’
গত ২৬ জুন এই মামলায় নির্মাতা অনন্য ইমনের হাজিরা ছিল আদালতে। কিন্তু কোরবানির ঈদের নাটকের শুটিং থাকায় তিনি যেতে পারিনি। এরপর আইনজীবী নিয়োগ করে ২১ জুলাই আদালতে হাজির হন নির্মাতা। তখন বিচারক তাকে ১ আগস্ট হাজির থাকতে বলেন। অনিচ্ছাকৃত এই কর্মকাণ্ডকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য তিনি আদালতকে অনুরোধ জানান।
প্রসঙ্গত, পরিচালনার পাশাপাশি ‘শেষ গল্পটা তুমিই’ নাটকটির চিত্রনাট্যও লিখেছেন নির্মাতা অনন্য ইমন। এটির গল্প রচনা করেছেন সুকন্যা দত্ত। এর প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব ও তাসনিয়া ফারিণ। বিভিন্ন চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন মিলি মুন্সি, পাপিয়া, আরেফিন, জারা ইসলাম প্রমুখ। নাটকটি প্রকাশের পরই খেল মামলা। এখন এই জল কতদূর গড়ায় সেটাই দেখার।