আন্তর্জাতিক ডেস্ক জার্মানির কুখ্যাত নাৎসী বাহিনীর প্রধান ও দেশটির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলারের ব্যবহৃত একটি হাতঘড়ি ১১ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে ঘড়িটি নিলামে তোলা হলে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি এই দামে ঘড়িটি কিনে নেন। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশনস নামের একটি নিলাম প্রতিষ্ঠান এই নিলামের আয়োজন করেছিল।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, নিলামে বিক্রি হওয়া ঘড়িটি ইউরোপভিত্তিক কোম্পানি হুবারের তৈরি। মূলত ঘড়ি ও অলঙ্কার প্রস্তুতকারী কোম্পানি হুবারের প্রধান অফিস বা হেডকোয়ার্টার লিচেনস্টাইনে। ঘড়িটির ওপর একটি সোনালি রঙের ঢাকনা রয়েছে। ঢাকনাটিতে নাৎসী বাহিনীর প্রতীক স্বস্তিকা চিহ্ন ও অ্যাডলফ হিটলারের নামের আদ্যাক্ষর এএইচ খোদাই করা আছে।
হুবার কোম্পানির ক্যাটালগ বলছে, ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৩৩ সালে এবং ওই বছর হিটলারের জন্মদিনে তার কোনো এক শুভাকাঙ্ক্ষী এটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন। কাকতালীয়ভাবে ১৯৩৩ সালেই জার্মানির সরকারপ্রধান বা চ্যান্সেলর হন হিটলার এবং এই পদে থাকেন ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৩৯ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য মূলত তাকেই দায়ী করা হয়। যুদ্ধে হিটলারের নেতৃত্বাধীন নাৎসী বাহিনীর হাতে বিশ্বজুড়ে নিহত হয়েছেন প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে অন্তত ৬০ লাখ ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী।
১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল জার্মানির বেরঘোফের একটি বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেন হিটলার। তার আত্মহত্যার মধ্য দিয়েই যবনিকা পতন ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশনসের কর্মকর্তারা জানান, হিটলারের আত্মহত্যার কিছু সময় পর প্রায় ৩০ জন ফরাসি সৈন্যের একটি দল প্রবেশ করেছিল সেই বাঙ্কারে। সেখানে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়ার পর সেনারা হিটলার ও বাঙ্কারে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র স্যুভনির হিসেবে হস্তগত করেন। সেই সেনাদেরই কেউ একজন এই ঘড়িটি নিয়েছিলেন মৃত হিটলারের হাত থেকে। তবে শুক্রবারের নিলামে ওঠার আগ পর্যন্ত এই ঘড়িটি বেশ কয়েক বার হাত বদল হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলেকজান্ডার অকশনসের কর্মকর্তারা।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে হিটলারের ঘড়ি কেনা-বেচার নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইহুদি সংঘ। সংঘের চেয়ারম্যান রাব্বি (ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের পুরোহিত) মিনাশিম মার্গোলিন নিলাম প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া এক খোলা চিঠিতে ভবিষ্যতে এ ধরনের জিনিসপত্র কেনা-বেচা করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। চিঠিতে রাব্বি মার্গোলিন বলেন, ‘এটা সত্য যে আমাদের ইতিহাস জানতে হবে; এবং সেজন্য জাদুঘর ও বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন নাৎসীদের বৈধ নির্দশনও রয়েছে। আপনার যেসব জিনিসপত্র বিক্রি করেন, সেসব বৈধ নাৎসী নিদর্শনের মধ্যে পড়ে না।’
চিঠির জবাবে আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশনসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য ইতিহাস সংরক্ষণ করা। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মিনডি গ্রিনস্টেইন বিবিসিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যদি সঠিক ইতিহাস জানতে চাই, তাহলে প্রথমে আমাদের ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষন করতে হবে। আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশনস সেই কাজটিই করছে।’
‘আমরা বিশ্বাস করি, ইতিহাস ভালো হোক কিংবা খারাপ— অবশ্যই তা সংরক্ষণ করতে হবে।’