রাতেই কিন্তু কাজটা হয়, কী বলবো এটি আমিও করিয়েছি, নির্বাচন প্রসঙ্গে চুন্নু
31, July, 2022, 6:01:5:PM
স্বাধীন বাংলা ডেস্ক বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় ফেরেশতা দিয়েও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু। আজ রোববার (৩১ জুলাই) সকালে ইসির সঙ্গে সংলাপে এ মন্তব্য করেন তিনি। মজিবুল হক চুন্নু বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন আইনের ১২৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনতে হবে। যাতে কমিশনের কথা না শুনলে কমিশন নিজেই শাস্তির বিধান করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন দল যদি সহায়তা না করে তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট গ্রহণে ঘোর বিরোধিতা করেছে সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি।
তাদের দলসহ দেশের মানুষের ইভিএমে আস্থা নেই দাবি করে দলটি বলেছে, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকরা নেই। ইভিএমে ভোট হলে আসন্ন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথাও বলেছে তারা। অবশ্য ইভিএম বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কোনো মন্তব্য করেননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এর সভাপতিত্বে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু এ সব কথা বলেন। এ সময় ইসির চার কমিশনার, ইসি সচিবসহ নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। ইভিএমের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ইভিএমে আমাদের আস্থা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমারও এতে কোনো আস্থা নেই। মানুষ মনে করে ইভিএমে ভোট পাল্টে দেওয়া হলে কিছু করার নেই। কারণ ফল রি-চেক করা যায় না। নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ইভিএম সম্পর্কে আপনাদের এক্সপার্টকের কথাও আমার মাথায় ঢোকেনি । জনগণের আস্থা বিশ্বাস ছাড়া ইভিএম ব্যবহার যৌক্তিক হবে না। প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ইভিএম খুবই কঠিন পদ্ধতি। অনেক দেশ ইভিএম বাতিল করেছে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু নিজের নির্বাচনে ইভিএমের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে বলেন, তার নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এর সমাধান কিভাবে হবে। কে এটি ঠিক করবে সেই লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় ইভিএম নষ্ট হলে সেটি আপনারা ঠিক করবেন? না নির্বাচনের অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম করবেন। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান এক পর্যায়ে ইভিএমের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তাদের সময় ইভিএমে কোনো সমস্যা হয়নি। তারা ৪/৫শ ভোট ইভিএমে করেছে।
এসময়ে কমিশনারকে থামিয়ে দিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, ইভিএম খুবই স্পর্শকাতর। এটা নিয়ে যুক্তি দিয়ে লাভ নেই। এদিকে ইসিকে উদ্দেশ্য করে সংলাপে চুন্নু আরও বলেন, আপনাদের দোষারোপ করে লাভ নেই। রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা না পেলে নির্বাচনে আপনারা অসহায়। সমস্যা আমাদের সিস্টেমের। কিছু সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য না হলে যতই শক্ত আইন করা হোক কোনো লাভ হবে না। নির্বাচনে ভালো পদ্ধতি হোক সেটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউই চায় না। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন ব্যালট পেপারে গ্রহণের দাবি করে চুন্নু বলেন, আমরা চাই ওই নির্বাচনটি ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হোক।
নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। নির্বাচন ইভিএমে হলে জাতীয় পার্টির যাওয়ার সম্ভবনা নেই বলেও জানান দলটির মহাসচিব। নির্বাচনের দিন ভোরে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর প্রস্তাব করে তিনি বলেন, এখন প্রত্যেকটি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কাজেই চাইলে সকাল বেলা ব্যালট পৌঁছানো সম্ভব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির বিষয়টি প্রকারন্তরে স্বীকার করে জাপা এমপি চুন্নু বলেন, নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার পৌছানোর প্রস্তাব। তাহলে রাতের বিষয়টি আর আসে না। রাতেই কিন্তু কাজটা হয়। কী বলবো এটিও আমিও করিয়েছি। হয় না-এটা ঠিক না।
জাতীয় পার্টি প্রস্তাবে আরো যা বলেছে- আনুপাতিক প্রতিনিনিধিত্ব মুলক নির্বাচন, নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ না করে নিজস্ব ক্ষমতাবলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আইন প্রণয়ন, নির্বাচনি খরচ ২৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে করে ৫০ লাখ টাকা করা প্রয়োজনে সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়া, ইউটিলিটিস বিল, ক্রেডিট কার্ড-এর বিলের জন্য প্রার্থীতা বাতিলের বর্তমান বিধান বাতিল করা, সরকারি কর্মচারীগণ অবসরের যাওয়ার পরে সরকারি মালিকানাধীন ও স্বায়িত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের তিন বছর না গেলে নির্বাচন করতে না পারার বিধান করা।
মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফখরুল ইমাম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভূইয়া, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু।