স্বাধীন বাংলা ডেস্ক রাজধানীর পল্টন এলাকার সিটি হার্ট কমপ্লেক্সের ছয় তলায় কনকর্ড এ্যাপেক্স নামে একটি রিক্রুটিং প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানটি নারীদের ভালো বেতনে চাকরি দেয়। গ্রামের অস্বচ্ছল, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীরাই অগ্রাধিকার পায়। এমন সব কথা বলে প্রথমে আকৃষ্ট করা হতো। আর যারা বিদেশ যাবেন তাদের বলা হতো সেখানে গেলে কম পরিশ্রমে ভালো বেতন মিলবে। কোনো খরচ ছাড়াই যাওয়া যাবে। মুলত বিদেশে নারীদের কর্মসংস্থানের নামে এভাবে দীর্ঘদিন থেকে নারীদের পাচার করে আসছিল রিক্রুটিং এজেন্সিটি। আসলে প্রতিষ্ঠান বিদেশ কর্মী পাঠাতে নয়, নারী পাচারের উদ্দেশ্যেই খোলা হয়েছিল। এ পর্যন্ত ৫০ জনের নারীকে বিদেশে অধিক বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে।
রোববার রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় থাকা প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায় র্যাব। এসময় নারীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- আবুল হোসেন (৫৪) ও আলেয়া খাতুন (৫০)। তাদেরকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-১ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিও আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি জানান, আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে বৈধ প্রতিষ্ঠান রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে নারী পাচার ও নির্যাতনের মতন এমন জঘন্য অপকর্ম করে আসছে। সে মূলত এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার এ কাজের অন্যতম সহযোগী আলেয়া বেগমসহ অসংখ্য দালাল রয়েছে। দালালদের মাধ্যমে সে মূলত সমাজের বেকার, অল্পশিক্ষিত, অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বিবাহত/ তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে ও মহিলাদের মধ্যেপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অধিক বেতনের চাকরি, বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা, রাজকীয় থাকা খাওয়া সুবিধা, স্মার্টফোন দেওয়া এবং সৌদিতে হজ্ব করানোর মত ধর্মভিত্তিক লোভনীয় চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিদেশে পাঠানোর পর প্রথমে তারা ভুক্তভোগীকে একটি জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখা হতো। পরে ২-৩ দিন পর ওই সমস্ত দেশের নাগরিকরা সেই নারীদের পছন্দ করে তাদের বাসায় নিয়ে যেতো। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের দ্বারা সব ধরনের কাজ করানো, খাবারের উচ্ছিষ্ট খেতে দেওয়া বা কোন প্রকার খাবার খেতে না দেওয়া এবং অকারণে বেধরক মারধরের মাধ্যমে অমানবিক নির্যাতন করা হতো।
তিনি আরও জানান, পাচারকারী চক্রটি বিভিন্ন নারীকে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছে। যদিও তারা দাবি করেছে এ পর্যন্ত এক হাজার নারীকে তারা বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের পাঠিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত নারী আলেয়া বেগমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে এই মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং দালাল হিসেবে কাজ করতো। এর আগে আল ফালাহ, বিজয় নগর, পুরাতন পল্টন এজেন্সির মাধ্যমে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৮/৩৯ জন নারী এবং ২০২১ সাল থেকে আবুল হোসেন এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি এর মাধ্যমে মোট ১২ জন নারীকে বিদেশে পাঠিয়েছে। সে মূলত অন্যান্য দালালসহ গ্রামাঞ্চল থেকে ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে সেই এজেন্সির অফিসে নিয়ে আসত। তাছাড়াও আলেয়া বেগম বিদেশে যাওয়া ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে টিপসই নিয়ে নিজেদের সুবিধামতো চুক্তিপত্র টাইপ করে নিতো।