স্বাধীন বাংলা ডেস্ক জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি বাস ভাড়া আদায় নিয়ে কঠোর কোনো বার্তা না দিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির সহযোগিতা চাইলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, সহযোগিতা না পেলে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন। আগে থেকেই বর্তমান হারের চেয়ে বেশি আদায় করা নগর পরিবহনে এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি আদায়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকার মধ্যে এই কথা বললেন মন্ত্রী।
মঙ্গলবার রাজধানীতে সরকারি বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর পর রাজধানীতে কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা হারে ভাড়া নির্ধারণ করে বিআরটিএ জানিয়েছে, সর্বনিম্ন ভাড়া থাকছে আগের মতো ১০ টাকা। তবে রাজধানীতে গত কয়েক বছর ধরে ওয়েবিল নামে একটি কৌশলে অতিরিক্ত যে ভাড়া আদায় চলছে, একই পদ্ধতিতে এবার কিলোমিটার প্রতি কোথাও সাড়ে তিন টাকা, কোথাও চার টাকা, এমনকি ৬ টাকা হারে আদায়ের প্রমাণ মিলছে।
বাড়তি ভাড়া: বাস মালিকদের সুমতির আশায় কাদের বাড়তি ভাড়া আদায়ে স্বল্প সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নামিয়ে জরিমানা করে এর আগে কখনও সফল না হওয়া বিআরটিএ এবারও একই পদ্ধতিতে মাঠে নেমেছে। তবে তাতে সুফল মিলছে না। ওয়েবিল বন্ধ হয়নি। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা না রেখে ১৫ টাকা বা তার চেয়ে বেশি আদায় চলছে।
আওয়ামী লীগরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাস ভাড়ার পরিস্থিতি জানতে রোববার মিরপুর থেকে কাকলী যান। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের পূরবী সিনেমা হলের সামনে থেকে বাসে ওঠেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা। তিনি কালসী হয়ে বনানী ফ্লাইওভার পার হয়ে নৌবাহিনীর সদরদপ্তর পার হয়ে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে নামেন। এই পথের দূরত্ব জয় ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার। কিলোমিটার আড়াই টাকা হারে ভাড়া হারে ভাড়া আসে ২০ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু জাফরউল্লাহর কাছ থেকে আদায় করা হয় ৩০ টাকা। বলা হয়, ৩০ টাকা না দিল যেন তিনি নেমে যান।
অর্থাৎ সরকারনির্ধারিত হারের চেয় দেড়গুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এই রুটে। এটি সব রুটের চিত্র। মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী হয়ে চলাচলকারী স্বাধীন পরিবহনে কোনো কোনো গন্তব্যে ৬ টাকা কিলোমিটার, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত চলা রাইদা পরিবহনে কোনো কোনো গন্তব্যে ৪ টাকা কিলোমিটার হারে ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেয়েছে । গত নভেম্বরে বাস ভাড়া বাড়ানোর পর একই ধরনের অনিয়মের সময় বিআরটিএ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও টানা তিন দিন চেষ্টা করেও এবার সংস্থাটির বক্তব্যই পাওয়া যাচ্ছে না।
সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এখও বাস মালিকদের সুমতির দিকে তাকিয়ে। তিনি বলেন, ‘পরিবহন মালিক শ্রমিকগণ সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। তারাসহ বৈঠক করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বাস্তবে প্রয়োগ করবেন। ‘যারা সমন্বয়কৃত ভাড়ার বেশি আদায়ের চেষ্টা করছেন- আমাদের মনিটরিং এর আওতায় তারা রয়েছেন। তাই আবারও তাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’
বাড়তি ভাড়া: বাস মালিকদের সুমতির আশায় কাদের বাসে ধর্ষণ ও ডাকাতির মতো ঘটনা যারা ঘটায় তাদের ‘গণশত্রু’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করছে। এদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’
‘সংকট কেবল বাংলাদেশে নয়’ গোটা বিশ্বেই এখন অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির সরবরাহে অস্থিতিশীলতা ও মূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সংকট কোনো দেশের নয়, এ সংকট সারা বিশ্বের। ‘বাস্তবতা অনুধান না করে বিএনপি ও তার দোসররা শুধু বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করছেন।’ দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। বলেন, ‘অন্ধকারে ঢিল না ছুঁড়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে বলুন, কোথায় কারা, কে দুর্নীতি করছে। দুর্নীতির প্রশ্নে শেখ হাসিনা সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির কোন নড়চড় হয়নি।’
‘নির্বাচন হতে না দেওয়ার আস্ফালন করে লাভ নেই’ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার না থাকলে ভোটে না যাওয়া এবং ভোট হতে না দেয়ার বিষয়ে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।‘নির্বাচনে আসা না আসা যে কোনো দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু নির্বাচন হতে না দেয়ার আস্ফালন করে লাভ নেই।’ যতই বাধা আসুক সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বলেও ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ নেতা। সরকার আন্দোলনে ভীত- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য ‘কমেডি ক্লাবের জন্য যুৎসই হতে পারে’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘দেশের বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।’
তিনি বলেন, ‘একবার শুনি রাজপথ দখলে নেবে, আবার শুনি সরকারকে টেনে নামাবে, কখনও শুনি নির্বাচন হতে দেবে না। আসলে বিএনপির সক্ষমতা কতটুকু তা আমাদের জানা আছে। ‘বিএনপি নেতাদের প্রতিদিন অভিন্ন বক্তব্য, হুমকি-ধামকি শুনতে শুনতে জনগণ এখন হাসে।’