ইবি প্রতিনিধি হলের আবাসিকতার জন্য সাক্ষাৎকারে অংশ নেয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে বোর্ডে থাকা এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষিকার নাম মাহবুবা সিদ্দিকা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং খালেদা জিয়া হলের হাউজ টিউটর। গত ২৩শে আগস্ট হলের সিট বরাদ্দের জন্য সাক্ষাৎকার শেষে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এক ছাত্রী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৪শে আগস্ট ফের ওই ছাত্রীকে প্রভোস্ট কার্যালয়ে ডেকে হেনস্তা ও হুমকি দেয়া হয়। এসময় ওই শিক্ষিকা নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ‘তোমারে পুইত্তা ফালামু’ বলে হুমকি দেন। এছাড়া ওই শিক্ষিকা বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন বলে অভিযোগ একাধিক ছাত্রীর।
সূত্র জানায়, গত ২৩শে আগস্ট খালেদা জিয়া হলের আবাসিকতা প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার নেয় হল প্রশাসন। এসময় বোরকা পরিহিতা এক ছাত্রীকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি হিজাব পরি আর হলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাই না সেজন্য আমাকে বলা হয়েছে আমি নাকি শিবির করি। আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নাই তারপরেও তারা আমাকে দোষারোপ করেছেন।’ পরে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী তার আত্মীয় শাখা ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতাকে বিষয়টি জানান। পরে তিনি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সাগরকে বিষয়টি অবহিত করেন। এ বিষয়ে সাগর মাহবুবা সিদ্দিকার সাথে যোগাযোগ করে ঐ ছাত্রীকে হেনস্তা না করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে ২৪শে আগস্ট হল প্রভোস্টের কার্যালয়ে ঐ ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ডাকেন মাহবুবা সিদ্দিকা। ঐ ছাত্রী হল প্রভোস্টের কার্যালয়ে গেলে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করেন ও হুমকি দেন ওই শিক্ষিকা। এসময় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী, হাউজ টিউটর নাজমুল হুদা ও ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সেদিন ঐ ছাত্রীকে হেনস্তা ও হুমকির সময় তাকে নানাভাবে শিবির প্রমাণের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এসময় সাগরের মাধ্যমে অনুরোধ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাহবুবা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমি রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ছিলাম। চিনো তুমি আমারে? আমি কত পাওয়ার চালাইছিলাম তুমি জানো? তোমার এলাকার মেয়র টিটু ভাইকে চিনো? বইল্লা ঐখানে তোমারে পুইত্তা ফালামু। আমার বাড়ি কোথায় জানোস? আমার শ্বশুরবাড়ী কোথায় জানস? আমার সাথে ফাইজলামি না? এলাকায়ও টিকতে পারবা না।’
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, ’বিষয়টি নিয়ে আমার এলাকার বড়ভাইকে জানালে তিনি ম্যামের সাথে কথা বলেছেন। এজন্য তিনি আরো রেগে যান। পরে আমাকে ডেকে নানাভাবে হুমকি দেন।’
হুমকির বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক মাহবুবা সিদ্দিকা বলেন, ‘বিষয়টি আংশিক সত্য, আংশিক মিথ্যা। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীকে হুমকি দিতে পারে না, শাসন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ওই ছাত্রীকে পরেরবার ডাকা হয়েছে কারণ সে বাইরে গিয়ে আরেকটা ছাত্রলীগের ছেলের কাছে গিয়ে বলেছে। আর সে আমার ছাত্রের মারফতে আমাকে থ্রেট করেছে।’ তবে একই বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর বলেন, ‘আমি শুধু ম্যামকে ঐ মেয়ের বিষয়টা একটু ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছিলাম। হুমকি দেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠেনা।’ এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, ‘হলের ৯৯ শতাংশ ছাত্রী বোরকা পরে এ বিষয়ে আমাদের কোন বাঁধা নেই। একজন ছাত্রী ভুল করলে যেভাবে বোঝানো হয় সেভাবেই তাকে বুঝানো হয়েছে বলে জানি।’