সিলেট ব্যুরোঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত) শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছেন, সিলেটের ৪নং ওয়ার্ড একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। এই এলাকা থেকেই আমরা সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করতাম। এই ওয়ার্ডের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমাদেরকে পরশ্রীকাতর যে কোনো বিষয় থেকে দুরে থাকতে হবে। আপনারা জানেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। আগামী দেড় বছর পরেই জাতীয় নির্বাচন। আমাদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
সংগঠনকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। সুষ্ঠু সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। ওয়ার্ডকে শক্তিশালী করার মাধ্যমেই দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে না পারলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা দেখেছি ১৯৭৫ সালে ষড়যন্ত্র করে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। দেশের অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট গুলশানে গ্রেনেড হামলা করে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই হামলায় ইব্রাহিম ভাই নিহত হয়েছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে জননেত্রীকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এভাবেই করেই বিএনপি জামায়াত গোষ্ঠী এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ সহ সকল অপকর্মের দাঁত ভাঙা জবাব রাজপথেই দেওয়া হবে। যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে লক্ষ্য করেই সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নের যে ধারা চলমান রয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। আমরা দেখেছি, জননেত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বছরের প্রথম তারিখে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। যা অভূতপূর্ব উন্নয়নের উদাহরণ। এভাবেই করেই সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে আগামীতেও হবে।
গত সোমবার রাত ৮টায় ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আম্বরখানাস্থ গোল্ডেন টাওয়ারের নিচতলায় ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাবের আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম.এ খান শাহীনের পরিচালনায় সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্য প্রদান করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ । তিনি বলেন, আজ ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। দলকে সুসংগঠিত করতে ওয়ার্ড সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ধারাবাহিকভাবে ওয়ার্ডের সম্মেলন হচ্ছে।
ভালো ও গ্রহণযোগ্য লোক দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। অনুপ্রবেশকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। দেখা যায়, এক পরিবারে তিন ভাই তিন দলে থাকে। সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করতে সৎ ও স্বচ্ছভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র থেকে দূরে থাকতে হবে। তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। সিলেটে যে দলের মানুষ আমাদের পোস্টার ছিড়ে ফেলে তাদেরকে আমরা ঘৃণা করি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫১ বছরের মধ্যে সাড়ে ১৩ বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পদ্মা সেতু হয়েছে। উনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমরা টাকার মানের দিক থেকে পাকিস্তানকে ছাঁড়িয়ে গেছি। সুতরাং জননেত্রীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন পদ-পদবী নয় কাজ করে দলকে এগিয়ে নিতে হবে। জননেত্রীর হাতকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। নতুন প্রজন্ম সহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি উপস্থিত হওয়ার জন্য সকল নেতা-কর্মীদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্য প্রদান করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর পরিবারের নিহত সকল সদস্য,জাতীয় চার নেতা, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বদর উদ্দিন আহমদ, প্রদীপ পুরকায়স্থ, আকরার বক্ত মজুমদার সহ আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতৃবৃন্দকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক উপকমিটির নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন অব্যাহত রয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাংগঠনিক পক্ষ ঘোষণা করা হয়।
আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে যে গুনগত রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারা সূচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা আজ একে একে বাস্তবায়ন হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগকে সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার জন্য। তিনি স্মৃতি চারণ করেন, ১৯৯১-৯২ সালে এই ৪নং ওয়ার্ডে আমরা কাজ করেছিলাম। এই ওয়ার্ডে আত্মগোপন করেছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আত্মগোপন নয় সংগ্রামের মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করবো। তখন ছাত্রদলকে মোকাবিলা করেছিলাম। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে গিয়েছিলাম। রাজপথেই তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করেছিলাম।
দুঃসময়কে আমরা জয় করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছিলাম। তিনি বলেন, আমরা কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করবো না। ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বিএনপি-জামায়তের নৈরাজ্য মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিনত হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। তিনি সাংগঠনিক উপকমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত সকল নেতৃবৃন্দ সহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদ উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট বেলাল উদ্দিন, কার্যনির্বাহী সদস্য মোঃ শাহজাহান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য বেলাল খান, ফয়সল আজাদ খান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, বিজিত চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ জুবের খান, উপ-দপ্তর সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্ত্তী রনি, কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল আহাদ চৌধুরী মিরন, রাহাত তরফদার, সৈয়দ কামাল, জামাল আহমদ চৌধুরী, জুমাদিন আহমদ, ইলিয়াস আহমেদ জুয়েল।
এসময়ে উপস্থিত ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতৃবৃন্দ আনোয়ার বক্ত মজুমদার,কামরুজ্জামান বাবু , এ.কে আজাদ খান, পঞ্চু সিংহ, সাইফুজ্জামান আনু, মোতাহের আহমদ, মোঃ ফারুক আলী, হাজী লেকত আলী, সিদ্দেক আলী, ফারুক ইসলাম ফারুক, ১৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাজোয়ান আহমদ, ২১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইল মাহমুদ সুজন, মঈনুল ইসলাম মঈন, ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুন্না, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন ,ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদ শেখ সহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদকের পরিচালনায় আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলরবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে ওয়ার্ডের সভাপতি হিসাবে ফয়েজ খান পিয়ারা এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এম.এ খান শাহীন -কে নির্বাচিত করা হয়।
|