হাসান মাহমুদ জয়, ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলগুলোর ডাইনিংয়ে মানসম্মত খাবারের অভাবে স্বাস্থ্যঝুকিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মানসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য দফায় দফায় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও মিলছে না কোন সমাধান। এর জন্য প্রয়োজন অনুপাতে ডাইনিংয়ের ভর্তুকি না বাড়ানোকে দায়ি করছেন ডাইনিং ম্যানেজাররা। এদিকে গত ৫ বছরে এই ভর্তুকি মাত্র ২০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মিল প্রতি বরাদ্দকৃত ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ টাকা ১১ পয়সা। এদিকে প্রয়োজন অনুপাতে ভর্তুকি না বাড়লেও গত ৫ বছরে আবাসিক হলের ফি প্রায় তিন গুণ বাড়িয়ে ২৪৬২ টাকা করা হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফিসহ আনুষঙ্গিক ফি বেড়ে প্রায় তিনগুণে দাঁড়িয়েছে। ফি বাড়লেও সে অনুপাতে ভর্তুকি না বাড়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের আগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসিক ফি ছিল ৭১৮ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসহ আনুষঙ্গিক ফি বাড়িয়ে প্রায় ৩ গুণ করা হয়। একই সাথে ওই শিক্ষাবর্ষের আবাসিক ফি বৃদ্ধি করে ১৮৭২ টাকা করা হয়। এছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আরেক ধাপে বৃদ্ধি করা হয় আবাসিক ফি। দ্বিতীয় ধাপে বৃদ্ধির পর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক ফি দাঁড়ায় ৩১৮০ টাকা। যা ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফি থেকে ২৪৬২ টাকা বেশি অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৩ গুণ।
এদিকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে হলের ডাইনিংয়ে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রতি মাসিক ভর্তুকি ছিলো ৮০ টাকা। এর পর থেকে গত পাঁচ বছরে এই ভর্তুকি বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২০ টাকা অর্থাৎ ০.২৫ গুণ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম ও শিক্ষার্থীদের ফি বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় ভর্তুকি বৃদ্ধি করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত খাবার পরিবেশন করতে পারছেন না বলে জানান ডাইনিং ম্যানেজাররা।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধির সাথে কমেছে ডাইনিংয়ের খাবারের মান। এছাড়াও বিভিন্ন মেনুভেদে বেড়েছে খাবারের দাম। সর্বনি¤œ মিলরেট ২২ টাকা থাকার কথা থাকলেও একটি হল বাদে সেই রেটে খাবার পায়না শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ৩০ টাকার খাবারের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০ টাকা। এদিকে দাম বাড়লেও এর বিপরীতে কমেছে খাবারের মান। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে এবিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এই দামে খাবারের মান বাড়ানো সম্ভব না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
লালন শাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, আবাসিক ফি বৃদ্ধি করলেও মানসম্মত খাবার সেভাবে পরিবেশন করছেনা। নি¤œমানের খাবার খেয়ে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি। ফি বৃদ্ধির তুলনায় ভর্তুকি বৃদ্ধির হার সামান্য। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ভর্তুকি বৃদ্ধির পাশাপাশি ডাইনিং এ ভালো মানের খাবার পরিবেশন করা হোক।
সাদ্দাম হোসেন হলের ডাইনিং ম্যানেজার আবেদ আলী বলেন, আমাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হয় তা দিয়ে বর্তমান রেটে এর চেয়ে ভালো মানের খাবার পরিবেশন করা সম্ভব নয়। আমরা ভর্তুকি বৃদ্ধি করার অথবা খাবারের দাম বাড়ানোর দাবি করেছি প্রভোস্ট স্যারের কাছে।
হলের খাবারের নি¤œমান ও ভর্তুকির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, এটা কোনো বাস্তবসম্মত কথা না। ভর্তুকি ৮০ টাকা থেকে আমরা ১০০ টাকা করেছি। তারপরেও তো হচ্ছে না। হোটেলে খেতে গেলে আরো বেশী টাকা লাগে। ২২ টাকায় খাওয়া হয় নাকি? শিক্ষার্থীরা তো অন্য কাজে বেশি টাকা খরচ করে ফেলছে, খাওয়ার ব্যাপারে কেনো টাকা খরচ করবে না? এই জিনিসগুলো মটিভেশন করা দরকার, কাউন্সেলিং করা দরকার।
তিনি আরো বলেন, খাবারের মান ঠিক করার জন্য হল বডি আছে। এগুলো ওনারা দেখবে। ম্যাসিভ কোনো প্রবলেম হলে সেগুলো আমরা দেখবো।