সিলেটের প্রতিটি ওয়ার্ডে আ.লীগের দুর্গ গড়ে তুলুন: মাসুক
16, September, 2022, 3:19:51:PM
সিলেট ব্যুরো: সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন। তিনি পুরনো ইতিহাস টেনে বলেন, ৫১ বছর আগে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার অনেক ইতিহাস আছে। অনেক সংগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম । বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হারিয়েছিলাম। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রই আবার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।
‘এখনো মনে আছে, স্বাধীনতার সময় আমরা ভারতে গিয়েছিলাম। ভারত আমাদের এক কোটি মানুষকে সহযোগিতা করেছিলো। যা ছিলো বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের মহান উদারতা। আপনারা জানেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সাড়ে তের বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অনেক দূর নিয়ে গেছেন। করোনাকালীন সময়ে আমরা দেখেছি একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি। স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেছিলেন এই ব্রিজে উঠবেন না, ব্রিজ ভেঙে যাবে। কিন্তু আজ তা বাস্তব। শুধু পদ্মা সেতু নয় বঙ্গবন্ধু টানেলও হচ্ছে। আরও অনেক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। আজকে কোনো গ্রামে কাচা প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল ও কলেজ দেখা যায় না। সব পাকা করা হয়েছে। মাদ্রাসার মধ্যে উন্নয়ন করা হয়েছে। সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে। শুধু মসজিদ নয় মন্দিরও করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষ দল এটাই তার প্রমাণ। এভাবেই উন্নয়ন চলমান রয়েছে। যা শেখ হাসিনার সূদুরপ্রসারী নেতৃত্বের ফসল। কিন্তু অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে বিএনপি জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে। তারা বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে চক্রান্ত করে। এই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রদের দেশে থাকার অধিকার নাই। তাদের রুখতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। কোনো ভাবেই তাদেরকে সুযোগ দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ওয়ার্ড কমিটি সুযোগ্য লোক দিয়ে করতে হবে। যারা সংগঠনকে গোছাতে পারবে তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠন করতে হবে। তিনি যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদেরকে সিনিয়রদের কথা শুনতে ও মানতে হবে। তাদের কাছ থেকে শিখতে হবে। তাহলেই নব প্রজন্মের তরুণদেরকে নিয়ে সংগঠন শক্তিশালী হবে। আর স্বাধীনতা বিরোধী কোনো ব্যক্তিকে সংগঠনে সুযোগ দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, ওয়ার্ডকে সুসংগঠিত করার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে। তিনি সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে টুলটিকর সৈয়দ গাজী বুরহান উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট শামীম আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমদের পরিচালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য প্রদান করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তাঁর পরিবারের নিহত সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদ, অত্র ওয়ার্ডের সকল নেতৃবৃন্দ সহ আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করেন। তিনি বলেন এখানে শুয়ে আছেন সিলেটের প্রথম মুসলমান গাজী বোরহান উদ্দিন। এই পবিত্র এলাকায় আমার মায়ের জন্মস্থান। আমার এখানে অনেক সময় অতিবাহিত হয়েছে। আমি এলাকার কাছে ঋণী। এই ২৪নং ওয়ার্ডের আজকে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আপনারা জানেন, আমরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে এক বছর সময় লেগেছে। দায়িত্ব পাওয়ার পরেই মহামারী করোনা আসে। তারপর আকস্মিক বন্যা সহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করেছি। বিভিন্ন সমস্যা থাকা স্বত্বেও সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ৯টি সাংগঠনিক উপকমিটি গঠন করেছি। গত ৩০শে জুলাই মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাংগঠনিক পক্ষ ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব তৈরির করার জন্য ওয়ার্ড সম্মেলনে শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ৬টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো পকেট কমিটি নয়। যারা যোগ্য তাদেরকেই নেতৃত্বে আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা নেতা হিসেবে নয় কর্মী হিসেবে কাজ করছি। নেতা ভিত্তিক দল নয়, কর্মী ভিত্তিক দল করতে হবে। তিনি বলেন, কর্মীরা দলের সাথে বেঈমানী করে না। যারা লোভী নেতৃত্ব তারাই দলের সাথে বেঈমানী করে। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা সিলেটে এসে বলেছিলেন, আমি নিতে আসিনি দেশকে দিতে এসেছি। আপনারা জানেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন আর শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। সরকারের উন্নয়ন প্রচার করতে হবে। তিনি বলেন, মহামারী করোনা ও বন্যার সময় এই ওয়ার্ডে প্রচুর সহযোগিতা করা হয়েছে। এই এলাকার কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের নয় তারপরেও সহযোগিতা করা হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ দল অনুযায়ী উন্নয়ন করে না। আপনারা দেখেছেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে উন্নয়নের জন্য ১২শ’ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে কিন্তু তারপরও জনগণ অল্প বৃষ্টিতেই পানিতে ডুবছে। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। আগামীতে ব্যালট ভোটের মাধ্যমে তার উপযুক্ত জবাব দিতে হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীদের সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য, দপ্তর সম্পাদক খন্দকার মহসিন কামরান, কার্যনির্বাহী সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শরিফ আহমদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান সায়েম, টুলটিকর সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি জব্বার আহমদ পাপ্পু,সাবেক ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আকবর কবির সায়েম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, বিজিত চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ,কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আজহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর, উপ-দপ্তর সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্ত্তী রনি, সহ-প্রচার সম্পাদক সোয়েব আহমদ, কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল আহাদ চৌধুরী মিরন, আব্দুল আজিম জুনেল, মোহাম্মদ শাহজাহান, রাহাত তরফদার, সুদীপ দে, রোকসানা পারভীন, খলিল আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান সুহেদ, শিপা বেগম শুপা, এডভোকেট তারাননুম চৌধুরী, জুমাদিন আহমদ।
এসময়ে উপস্থিত ছিলেন প্রায় শত বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা মতি চাঁন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ইসমাইল মাহমুদ সুজন, মাহবুব খান মাসুম, ফজলে রাব্বি মাসুম, মঈনুল ইসলাম মঈন, শেখ সোহেল আহমদ কবির সহ ওয়ার্ড আওয়ামী এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদকের পরিচালনায় আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলরবৃন্দের ব্যালট ভোটের মাধ্যমে ওয়ার্ডের সভাপতি হিসাবে ফয়সল আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে জাবেদ আহমদ নির্বাচিত হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন কুরআন থেকে তেলওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতৃবৃন্দের জন্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।