ইবির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক সঙ্কট, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
17, September, 2022, 5:26:14:PM
ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফার্মেসি বিভাগ। নানা সংকট ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একাডেমিক শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বিভাগটি। দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র দুইজন শিক্ষকই তাদের একমাত্র ভরসা। এতে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দেড় বছর ধরে বিভাগ থেকে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এরই জের ধরে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘শিক্ষক নিয়ে গাফিলতি শিক্ষার মানে অবনতি’, ‘চাই মোরা এর সমাধান দ্রুত হোক শিক্ষক নিয়োগ’, ‘প্রশাসনের উদাসীনতা মানি না মানবো না’, ‘ফার্মেসির কান্না বন্ধ হোক দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ হোক’, ‘শিক্ষক নিয়োগ চাই’, ইত্যাদি প্লা কার্ড দেখা যায়। পরে বিশ^বিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে একটি প্রেস ব্রিফিং করে। এসময় তারা পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট, ল্যাব সরঞ্জামাদি, শ্রেণী কক্ষের চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, প্রজেক্ট প্রভৃতি সংকট সংক্রান্ত একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করে। বক্তব্য পাঠ শেষে তারা এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে আহবান জানায়।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ ২০১৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই বিভাগে ৪টি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষাকার্যক্রম চলমান রয়েছে। যেখানে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র দুইজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। ফলে দুইজন শিক্ষকের পক্ষে ৪ টি শিক্ষাবর্ষের সকল তত্ত্বীয় কোর্সের উপর পাঠদান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে প্রতিনিয়ত অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকদের দারস্থ হতে হচ্ছে। যার ফলে মানসম্মত শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, বিভাগে কোনো ল্যাব সহায়ক না থাকায় দুইজন শিক্ষককেই তত্ত্বীয় কোর্সের পাশাপাশি ল্যাব কোর্সের সকল দায়িত্ব পালন করতে হয়। যা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অপরদিকে দুইশতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণীকক্ষে পর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ না থাকায় মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর এই সমস্যাগুলোর সমাধানের দাবি নিয়ে বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ডীন এবং বিভাগীয় সভাপতি বরাবর সকল শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র প্রদান করা হয়েছিল। আবেদনপত্রে সাত কার্যদিবসের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছিল তারা। কিন্তু সাত কার্যদিবস অতিক্রম হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অর্ঘ্য প্রসূন সরকার বলেন, আমাদের বিভাগের বড় সমস্যা শিক্ষক সংকট। শিক্ষক, ল্যাব ইত্যাদি সংকট সমাধানে এই গুলো প্লানিং করে প্রশাসনকে পাঠিয়েছি। অনেকবার দেখাও করেছি। যেখানে ১ বার প্লানিং যথেষ্ট সেখানে ৪ বার প্লানিং দেওয়া হয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েছি তবুও কোনো সমাধান পায়নি। তিনি আরো বলেন, অন্য বিভাগের শিক্ষক এনে ক্লাস করাতে হয়। প্রায় ১৩-১৪ জন গেস্ট টিচার ক্লাস নেন। ৬ জন শিক্ষক হলে মোটামুটি কভার হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া আছে। সামনে আমাদের মিটিং আছে, আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এটা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। একটু সময় দিন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
পরে শিক্ষার্থীরা একটি প্রতিকী র্যালী বের করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। র্যালী শেষে শিক্ষার্থীরা পরমাণু বিজ্ঞানি ড. ওয়াজেদ মিয়া ভবনে ফার্মেসি বিভাগের গেটে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অর্ঘ্য প্রসূন সরকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এসময় ভিসির কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পেলে পরদিন ভিসির অফিস ঘেরাও করবে বলে হুশিয়ারী দেন শিক্ষার্থীরা।