নিজস্ব প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দেয়। ফলাফল হিসেবে বেড়ে যায় দাম। এর প্রভাব পড়ে আমদানিনির্ভর দেশগুলোতে। চলতি বছরের শুরুতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। লাগামহীনভাবে বাড়ছে সব নিত্যাপণ্যের দাম। জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকারের ঘোষণা ছাড়াই পুনরায় বেড়েছে চিনির দাম। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজ ও মুরগির দাম। মাছের বাজারও অস্থির হয়ে উঠেছে। এছাড়া অন্য সব পণ্যের দাম বাজারে অপরিবর্তিত আছে।
রাজধানীর কাপ্তান বাজার, নারিন্দা কাঁচা বাজার ও রায়সাহেব বাজার, বাড্ডা, মিরপুরের ১১ নম্বরের খুচরা ও পাইকারি দোকান ঘুরে দেখা যায়- প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ছিল ৮৪ থেকে ৮৮ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে ৫০ কেজির চিনির বস্তা কিনতেন ৪২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৩০০ টাকায়। দুইদিন আগে চিনি কিনতে হয়েছে ৪৫০০ টাকায়। তবে প্যাকেট জাত চিনির দাম গত এক সপ্তাহে বাড়েনি। সেগুলো প্যাকেটের গায়ে লেখা দামেই (৯৫ টাকা) বিক্রি হচ্ছে।
চিনির দামের বিষয়ে কথা হয় কাপ্তান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শুক্কুর দেওয়ানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে চিনি পাইকারি বিক্রি করতাম। দুই দিনে দাম বেড়ে যাওয়া এখন মানভেদে ৮৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মিলে চিনির দাম তেমন না বাড়লেও ট্রাক লোড করা ও পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া, ডিপো ও ডিলাররা সিন্ডিকেট করে দামবৃদ্ধি করছে। ফলে আমাদের বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
নারিন্দা কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ছলেমান মিয়া বলেন, আগের দামে কেনা চিনি ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কিন্তু আজ পাইকারি কেনা-ই বেশি পড়েছে। তাই ৯৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি বস্তা চিনিতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দাম বেড়েছে। সবকিছুর দাম বাড়ায় আমরা দোকানদাররাও ভালো অবস্থায় নেই।
চিনি কিনতে আসা নাজমা বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই বাড়তি। আগে চিনি আধা কেজি কিনতাম। এখন সেই টাকা দিয়ে ২৫০ গ্রাম কিনি। আমরা অল্প আয়ের মানুষরা এভাবে সব খাবার কেনা কমিয়ে দিয়েছি। সবাই টিভিতে বড় বড় ভাষণ দেয়। কিন্তু আমাদের কথা কেউ বলে না। আমরা কেমন আছি, তা কেউ খোঁজও নেয় না।
বাজারে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। আকারভেদে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। শসা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। লম্বা বেগুনের কেজি ৮০, গোল বেগুন ১২০, টমেটো ১৪০, সিমের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া করলা ৮০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৬০, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০, চিচিঙ্গা ৬০, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৭০, কচুর লতি ৮০, পেঁপের কেজি ৪০, বরবটির কেজি ৮০, ধুন্দলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
এসব বাজারে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০, লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। তবে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এসব বাজারে রসুনের কেজি ৪০ থেকে ৪৫, চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ ও আদা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়।
এসব বাজারে দেশি মুশুরের ডালের কেজি ১৪০ টাকা। ইন্ডিয়ান মুশুরের ডালের কেজি ১০০, লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। এদিকে দাম কমেছে ডিমের। ফার্মের মুরগির লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০, হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২১০ থেকে ২২০ টাকা।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট সাইজের রুই মাছের কেজি ৩২০ টাকা। যা গত মাসেও বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। মাছ যত বড় হয়, তার দামও তত বাড়তে থাকে। পাবদা মাছ সর্বনিম্ন সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে আকার ভেদে ৬০০ টাকা কেজি। বেলে মাছ সাড়ে ৭০০ টাকা কেজি। টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া চিংড়ি ৪০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০, লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়।
|