ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক ছাত্রী হেনস্তা ও তার বন্ধুকে মারধরের ঘটনায় জড়িত খালেদা জিয়া হলের এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে হল কর্তৃপক্ষ। এদিকে বহিষ্কৃত ছাত্রীর পাল্টা অভিযোগের প্রেক্ষিতেও তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার হলের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে আলোচনায় বসে হল কর্তৃপক্ষ। আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
হল প্রভোস্ট সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র ছাত্রী পপি আক্তারকে হেনস্তার ঘটনায় হলের দেড়শতাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সায়মা রহমানকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দেন কোষাধ্যক্ষ। এ ঘটনায় খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা মাহবুবা সিদ্দিকাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ওই হলের আবাসিক শিক্ষক নাজমুল হুদা ও নাহিদা আক্তার।
এদিকে পপি কর্তৃক সায়মার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনার পাল্টা অভিযোগের প্রেক্ষিতেও কমিটি গঠিত হয়েছে। সামগ্রিক ঘটনাবলির অধিকতর তদন্তের জন্য বিষয়টি প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশনা দিয়েছেন কোষাধ্যক্ষ। এসময় তাদেরকে তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সৈয়দা সায়মা রহমান তার প্রেমিক মেহেদী হাসান হাফিজের রেফারেন্সে খালেদা জিয়া হলের নতুন ব্লকের ২০৪ নম্বর রুমে ওঠে। ওই রুমের জানালার পাশের সিটে ওঠা নিয়ে পপি আক্তারের সাথে তার বাকবিতণ্ডা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে পপি আক্তার ও তার বন্ধুরা ক্যাম্পাসে ঘুরতে বেরোলে প্রধান ফটকের মুজিব ম্যুরালের সামনে পপিকে হেনস্তা করে হাফিজ ও তার সহযোগিরা। এসময় পপির বন্ধু পথিক এগিয়ে আসলে তাকে মারধর করে হাফিজরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে হাফিজের বিচার চেয়ে আন্দোলনে নামে খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত তারা হল চত্বরে বিক্ষোভ করে তারা। পরে হল প্রশাসন ও প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যদের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করে। পরদিন শুক্রবার হল প্রভোস্ট বরাবর সায়মা রহমান ও হাফিজের বিচার চেয়ে তারা লিখিত অভিযোগ দেয়। এদিকে পপি আক্তারসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ তোলে সায়মা রহমান। শুক্রবার হল প্রভোস্ট বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় সে।
অভিযোগ পত্র সূত্রে, সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে পপি, মিতু, সালমা ও আরো কয়েকজন মিলে ২০৪ নম্বর রুমে ঢুকে সায়মাকে সিটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা তাকে মারধর করে ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। এসময় হঠাৎ সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে নেয়া হয়।
কিন্তু মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খুরশিদা জাহান জানান, দায়িত্বরত অবস্থায় তিনি এমন রোগী পাননি।
সার্বিক বিষয়ে খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, প্রায় দেড়শোর অধিক ছাত্রী সায়মার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা তাকে হল থেকে বহিষ্কার করেছি। ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য আমরা প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে বিষয়টি হস্তান্তর করেছি। তদন্তের পর তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদের তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রশাসনের নির্দেশক্রমে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।