দেলোয়ার হোসেন, শাবিপ্রবি:

পাঁচ বছরে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(শাবিপ্রবি) বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক পদে ১১৪ জন প্রভাষক ও ১ জন সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগ পেয়েছেন। তারমধ্যে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৭৩ জন। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন অর্ধশতাধীক শিক্ষার্থী।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল(সিএসই), তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল (ইইই), শিল্পোৎপাদন ও প্রকৌশল(আইপিই) এবং বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান(এফইএস) বিভাগের প্রতিটিতে ৫ জন করে ২০ জন। স্থাপত্যবিজ্ঞান(এআরসি) পদার্থবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি(আইআইসিটি), পরিবেশ ও পুরকৌশল(জিইই), জ্বালানী ও খনি প্রকৌশল(পিএমই) এবং জিনপ্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি(জিইবি) বিভাগের প্রতিটিতে ৪ জন করে ২৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন। গণিত, কেমিক্যাল প্রকৌশল ও পলিমার(সিইপি), পুর ও পরিবেশ কৌশল(সিইই), প্রাণ রসায়ন ও অনুজীব(বিএমবি) এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটিতে ৩ জন করে ১৫ জন। সমাজবিজ্ঞান, যন্ত্রকৌশল(এমইই), রসায়ন, ব্যবসায় প্রশাসন(বিবিএ), অর্থনীতি এবং খাদ্য প্রকৌশল ও চা প্রযুক্তি(এফইটি) বিভাগে ২ জন করে ১২ জন। এছাড়া বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের প্রতিটিতে ১ জন করে মোট ৭৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন।

নিয়োগপ্রাপ্ত ১১৫ জন শিক্ষকদের মধ্যে বাকি ১৫ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়(ঢাবি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) থেকে ১২ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়(চবি) থেকে ৮ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়(জাবি) থেকে ৫ জন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(চুয়েট) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়(রাবি) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ১ জন করে মোট ৪২ জন।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের এমন গৌরভময় সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। অগ্রজদের এমন সাফল্যের ব্যাপারটিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সাবিহা সায়মন পুষ্প। তিনি বলেন, সিনিয়ররা নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক হচ্ছেন। এতে অন্যরাও শিক্ষক হবার মত স্বপ্ন দেখবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পড়াশোনায় মনযোগী হবে।   

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য রবিউল আলম চৌঁধুরী বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হচ্ছে। এতে বুঝা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভাল গ্রেজুয়েট তৈরিতে সক্ষম। তাছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে সেখানে শিক্ষক হওয়াটাতে দায়িত্বের প্রতি বেশি সচেতনতা বাড়ে।

নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া খানম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা পদটি সম্মানের। বিভাগে আমার সহকর্মীদের অনেকেই আমার শিক্ষক ছিলেন। যেহেতু সবার সাথে পরিচয়টা আমার ছাত্রী জীবন থেকে তাই আমি সহজেই সবার কাছে যেতে পারছি। আর তাঁরাও সব কিছুতে আমাকে সহযোগিতা করছে। আমি এখানে পড়াশোনা করেছি, এখন এখানকারই শিক্ষক। তা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের।
 
যোগ্য ব্যক্তিরাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবে বলে জানায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। উপাচার্য বলেন, কে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছে এটা মূখ্য নয়। যারা শিক্ষক হবার মত যোগ্য তাঁরাই নিয়োগ পেয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৩ জন এখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। সংখ্যাটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতেই প্রমাণ হয় এই বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করছে। শুধু এখানকার শিক্ষকই নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করছে তাঁরা। গুগুল, মাইক্রোসপ্টের মত টেক জায়েন্ট প্রতিষ্ঠান গুলোতেও আমাদের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। এটি বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের জন্য গর্বের বিষয়।