স্টাফ রিপোর্টার : মায়ের পরকিয়া অতঃপর বিয়ে। মাকে মারধর করার প্রতিবাদ করায় ছেলেকে জীবন দিতে হলো মায়ের ২য় স্বামীর হাতে। আর নিজের ছেলের বিচার চেয়ে এখন জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাবা আমিন মৃধা। ঘটনাটি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত সোহরাব মৃধার ছেলে আমিন মৃধার সাথে একই এলাকার রহিমা বেগমের ২০০৫ সালে বিবাহ হয়। রহিমা ঢাকার মোহাম্মদপুর চাদ উদ্যানে একটি বেসরকারী সংস্থায় চাকুরী করার সুবাদে আমীন মৃধা ঐ এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ঐ বেসরকারী সংস্থার নুর মোহাম্মদ নামে জনৈক এক ব্যক্তির সাথে রহিমা পরকিয়ায় সম্পর্ক জড়িয়ে পরে স্বামীকে ছেড়ে নুর মোহাম্মদের সাথে ২য় বিবাহ আবদ্ধ হন। বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলে নুর মোহাম্মদকে ছেড়ে আমিন মৃধার সাথে পুনরায় সংসার করেন। একমাত্র ছেলের কথা ভেবে সংসার শুরু করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও আমিন মৃধাকে ছেড়ে নুর মোহাম্মদের সাথে ২য়বারের মত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

যার ফলে আমিন মৃধা তার ছেলে রিয়াজুল (১৩)কে নিয়ে গ্রামে চলে যান। জীবিকার তাগিদে আমিন মাছ ধরার জন্য নদীতে চলে যান। বেশ কিছুদিন পর মাকে দেখার জন্য এবং মায়ের কথা অনুযায়ী রিয়াজুল ঢাকায় বেরাতে চলে আসে। একদিন রহিমার সাথে নুর মোহাম্মদের ঝগড়া হলে নুর মোহাম্মদ রহিমাকে মারধর করে। ছেলে রিয়াজুল দেখে এর প্রতিবাদ করে। এ নিয়ে নুর মোহাম্মদ এর সাথে রিয়াজুলের বাগবিতন্ডা হলে নুর মোহাম্মদ ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিত ভাবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রিয়াজুল হত্যা করে তাকে -তাদের বসত ঘরের ছাদে রডের সাথে ঝুলিয়ে রেখে নুর মোহাম্মদ নিজেই মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সংবাদ দেয় রিয়াজুল আত্নহত্যা করেছে।

পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে পোষ্টমোডেম করে রিয়াজুলের মায়ের নিকট মৃতদেহ হস্তান্তর করে। ছেলের মৃত দেহ নিয়ে মা চলে যায় গ্রামে। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রিয়াজুলের পিতা নদী থেকে এসে মৃত্যুর কারন জানতে চায়? রহিমা বেগম ও তার ভাইয়েরা জানায় রিয়াজুল আত্নহত্যা করেছে। কিছুদিন পর রিয়াজুলের বাবা ঢাকায় আসে। জানতে চায় ছেলের আত্নহত্যার কারন? কিন্তুু রিয়াজুলের মা ও তার ২য় স্বামী সাফ জানিয়ে দেয় সে আত্নহত্যা করছে কিন্তু কোন কারন কেহ জানাতে পারেনি। রিয়াজুলের মৃত্যুর ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। যার নং ৩১/২২,তারিখ ২২/০৯/২২ইং। কিন্তু পিতা আমিন মৃধা প্রতিবেশীদের নিকট জানতে পারে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ছেলের হত্যার বিচার চাওয়ায় রহিমার ২য় স্বামী নুরমোহাম্মদ ও তার স্ত্রী রহিমা (মৃত রিয়াজুলের মা) ক্ষিপ্ত হয়ে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য সাবেক স্বামী আমিনকে প্রাননাশের হুমকি দেয় এবং এলাকা ছেড়ে যেতে বলে।

অন্যদিকে রিয়াজুলের মৃত সংবাদটি রহিমার ২য় স্বামী মোহাম্মদপুর থানাকে অবহিত করেন সেখানে তার ঠিকানা উল্লেখ করেন সাং- চর গোয়াই,থানা-গোসাইরহাট,জেলা শরিয়তপুর। কিন্তুু প্রকৃতপক্ষে নুর মোহাম্মদের ঠিকানা সাং পাশাদীঘির,থানা-দৌলতপুর,জেলা- খুলনা। ফলে নুরমোহাম্মদ তার ঠিকানা সঠিক না লেখায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

রিয়াজুলের সৎ পিতা মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক সুজন মাহমুদের নিকট গেলে তিনি বলেন পোষ্টমডেম রিপোট পযন্ত অপেক্ষা করার জন্য।

এ দিকে রিয়াজুলেরর পিতা অভিযোগ করে বলেন- বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নুরমোহাম্মদ টাকার বিনিময়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে এবং পোষ্টমডেম রিপোটে যাতে আত্নহত্যা করেছে তা বাস্তবায়নে কাজ করছে এবং রিয়াজুলের পিতাকে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য রহিমা ও তার স্বামী নুর মোহাম্মদ হুমকি দিয়ে আসছে।

এ বিষয়ে এসআই সুজন মাহমুদ জানান- সুরতহাল রিপোটে রিয়াজুলের পিঠে একটি দাগ পাওয়া গিয়েছে। তবে পোষ্টমডেম রিপোট পাওয়ার পর জানা যাবে হত্যা না আত্নহত্যা? এ ছাড়া রিয়াজুলের পিতাকে নুর মোহাম্মদের সাথে আপোষে করার ও পরামর্শ দেন এতে রিয়াজুল মৃত্যু নিয়ে ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়। তাই সে ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে একটি আবেদন করেছে।

মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত ) বলেন, পোষ্টমোডেম রিপোর্ট এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে রিয়াজুলের পিতাকে হুমকি এবং হত্যাকারী অভিযুক্ত নুরমোহাম্মদ কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ হওয়া এবং তার সাথে আপোষের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে ও জানান।