অটিজম কোন রোগ নয়। এটি মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একটি সমস্যার নাম। গর্ভকালীন শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রতিবন্ধকতার কারণে সর্বোচ্চ ও পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে অটিজমের উদ্ভব হয়। এ সমস্যা যেসব শিশুদের মাঝে সৃষ্টি হয় তাদের আমরা প্রতিবন্ধী শিশু হিসেবে অভিহিত করি। আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী শিশুরা অবহেলিত, নিগৃহীত। তাদেরকে রোগাক্রান্ত মনে করা হয় এমনকি কেউ কেউ তাদেরকে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক পিতা-মাতার কৃতকর্মের ফল হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। যা স্পষ্টতই ধর্মীয় গোঁড়ামির আওতাভুক্ত। এহেন অযৌক্তিক মনোভাব পরিহার করা উচিত। কেননা সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল সৃষ্টিকেই বিশেষ বিশেষ গুণে গুণান্বিত করে সৃষ্টি করেন। প্রতিবন্ধী শিশুরাও আমাদের সমাজের অংশ। তাই তাদেরকে হেয় করলে কিংবা আড়াল করে রাখলে চলবে না। বরং তারা কিভাবে আমাদের মতো স্বাভাবিক মানুষদের সাথে সাথে এগিয়ে যাবে তার জন্য জন্য আমাদের সহযোগীতার মনোভাব পোষণ করে তাদের পাশে থাকতে হবে। সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পিতা-মাতা, অভিভাবক এমনকি ব্যক্তিবিশেষে আমাদের বেশ কিছু করণীয় আছে। যেমন: প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে প্রকৃতির সাথে পরিচিত করতে হবে। প্রকৃতির সকল উপাদানের সাথে তাদের যেন পরিচয় হয়। তারা যেন প্রকৃতির সৌন্দর্য, রূপ, রস, গন্ধকে উপভোগ করতে পারে। যাতে তাদের মানসিকতায় প্রফুল্লতা জাগে। চিত্তবিনোদনের জন্য তাদেরকে বিনোদন পার্ক, দর্শনীয় স্থান, বিভিন্ন মেলা ও সকল সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে হবে। তারা যেন নিঃসঙ্গতা অনুভব না করে সেজন্য তাদেরকে নিয়মিত সঙ্গ দিতে হবে। তাদের পাশে থাকতে হবে। তাদেরকে সমাজের অন্যান্য শিশুদের সাথে মেশার সুযোগ করে দিতে হবে। এতে স্বাভাবিক শিশুদের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। এতে তাদের বিকাশ সাধিত হবে। তাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষত মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য কর্মী দ্বারা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। তাদের সামনে ঐসব শিশুদের অস্বাভাবিকতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদেরকে সর্বদা হাসিখুশি রাখতে হবে। অভিভাবকদের ধৈর্য ধারণ করে তাদের লালনপালন করতে হবে। তাদের প্রতি নিজের রাগকে কাবু করতে হবে। তারা উত্তেজিত হলেও ঠাণ্ডা মাথায় তা নিয়ন্ত্রণ করাতে হবে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যাক পৃথক বিশেষায়িত শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি তাদের জন্য চিত্তবিনোদনেরও ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন এসবে তাদের অংশগ্রহণ করাতে হবে। যাতে করে তারা এগিয়ে যাবার মানসিক ইন্ধন পায়। আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুর পরিবারের সদস্যদের মনে সাহয জোগাতে হবে তাদেরকে ধৈর্যশীল হতে প্রভাবিত করতে হবে। ঐসব শিশুদের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য রাখতে হবে যাতে মানসিক বিকাশের সাথে সাথে তাদের শারীরিক বিকাশও ত্বরান্বিত হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন সম্পর্কে নিজেকে জানতে হবে এবং অন্য সবাইকে তা অবহিত করতে হবে। শিশু নির্যাতন বিশেষত প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি নির্যাতন বন্ধ করতে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা সামাজিক জীব। প্রতিবন্ধী শিশুরাও আমাদের সমাজের অংশ। কাজেই তাদের প্রতি আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদেরকে তাদের পাশে থাকতে হবে। তারাও যেন অন্য সব মানুষের মতো আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অংশীদারিত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে, তাদের মেধা যেন আমাদের রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে তার জন্য তাদেরকে জায়গা করে দিতে হবে। তাদের বিকাশ ঘটানোর জন্য বিশ্বকে তাদের সামনে উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
Ñ সাইদুর রহমান শাহিদ কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।