সিলেটে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য, সর্বস্ব হারাচ্ছেন মানুষ
5, December, 2022, 2:45:6:PM
মুফিজুর রহমান নাহিদ : সিলেটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা । প্রতিদিনই নগরীর কোথাও না কোথাও সর্বস্ব খোয়ানোর খবর আসছে। হঠাৎ করে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহন থেকে শুরু রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
গত কয়েক বছরে সিলেটে অজ্ঞান পার্টির কর্মকাণ্ডের কথা খুব বেশি শোনা যায়নি। তবে ইদানীং প্রায়ই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অনেকেই হারাচ্ছেন সর্বস্ব। অজ্ঞান পার্টি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সচেতন নগরবাসী।
অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সাধারণত বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনের মতো জনবহুল স্থানে ঘুরে বেড়ায়। চেতনানাশক মেশানো পানীয় বা খাবার খাইয়ে কিংবা হকার, সহযাত্রী-বন্ধু সেজে সাধারণ মানুষের সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। আবার কখনো বাস, অটোরিকশা, ট্রেনের যাত্রীদের পাশে বসে তাদের নাকের কাছে চেতনানাশক মেশানো রুমাল ধরে অজ্ঞান করে সবকিছু লুটে নেয়।
সম্প্রতি সিলেটে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট শহরতলির বটেশ্বর এলাকা থেকে এমসি কলেজের এক ছাত্রীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় ওই ছাত্রীর কাছে ও আমাদের শিকার নয় টিস্যুতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তার বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়।
চেতনা ফেরার পর ওই কলেজছাত্রী পুলিশকে জানায়, সকালে বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিতে বের হয়েছিলেন। বেলা ১১টার দিকে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। এসময় তার দুই পাশে দুই নারীও উঠেছিলেন। এরপর আর কিছু বলতে পারেননি। হাসপাতালে তার চেতনা ফেরে।
পুলিশ বলছে, বটেশ্বর এলাকার গ্রিন লঙ্কা রেস্তোরাঁর সামনে থেকে অচেতন অবস্থায় কলেজ ছাত্রীকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা বিষয়টি পুলিশকে জানালে তাকে উদ্ধার করা হয়। এসময় কাছ থেকে কলেজের একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রেশন কার্ড রাখার ফাইলে টিস্যুতে কলম দিয়ে লেখা, ও আমাদের শিকার নয়। আমাদের গাড়িতে সিগন্যাল দিছে, এর লাগি আমরা পুরিরে (সিগন্যাল দেওয়ায় মেয়েকে) গাড়িত তুলতে বাধ্য হইছি। কোনো ভালো মানুষ পাইলে পৌঁছায় দিও এমন চিরকুট পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহপরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে কলেজছাত্রী অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন। তার সাথে মোবাইল কিংবা মূল্যবান তেমন কিছু না থাকায় সম্ভবত তাকে রেখে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, বাড়ি ফেরাসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের টার্গেট করে তৎপরতা চালায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে চেতনাকাশক কিছু খাইয়ে বা ঘ্রাণ শুঁকিয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যায়। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে অনেকের মৃত্যুও ঘটে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, কাউকে টার্গেট করার পর তার পাশে বসে বা কথা বলে ভাব জমিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। এভাবে আলাপের ফাঁকে কোমলপানীয় বা অন্য কিছুর সঙ্গে বিষাক্ত চেতনানাশক খাওয়ানো হয়। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে কেউ অজ্ঞান করে আবার কেউ সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে সটকে পড়ে। এর বাইরে কোনো কোনো চক্র চেতনানাশক মাদক ব্যবহার করেও সর্বস্ব কেড়ে নেয়।
এদিকে যারা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছে তাদের বেশিরভাগই ঝামেলা এড়াতে অনেকে মামলা করেন না। আবার মামলা বা গ্রেফতার হলেও স্বল্প সাজা ও জামিনে বের হয়ে যায়। এসব প্রতারণায় আইন কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করেন ভুক্তভোগি ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝিমিয়ে যাওয়ায় অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে গেছে।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সুদীপ দাস দৈনিক স্বাধীন বাংলাকে বলেন, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য থামাতে পুলিশের বিশেষ দল মাঠে কাজ করছে। অনেককে ধরে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এদের কোনোভাবেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। এ জন্য পথচারী ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক হতে হবে।