মো: আজমাইন মাহতাব : নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ০৫ সদস্যকে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল রবিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা হতে তাদের আটক করে।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা হল- মোঃ গোলাম সারোয়ার (২৫), সাকিব মাহমুদ (২৭), মোঃ ফরহাদ হোসেন, মোঃ মুরাদ হোসেন (২১)ও মোঃ ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম (২৮)। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই ও লিফলেট, ০১টি রেজিস্টার এবং ০১টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর দাওয়াতী, হিজরকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। তারা ২/৪ বছর পূর্বে নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্তি¡ক, শারীরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে জামাতুল আনসারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কারণে তারা বিভিন্ন ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকে এবং সংগঠনে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা হতে ফাজিল সম্পন্ন করে। সে লক্ষীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে চাকুরী করত। সে পূর্বে গ্রেফতারকৃত নেয়ামত উল্লাহর মেয়ের জামাতা। সে তার শশুরের মাধ্যমে ০২ বছর পূর্বে ‘‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া”র আদর্শে অনুপ্রানিত হয়। তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদেরকে কুমিল্লার বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রেরণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সাথে সে জড়িত ছিল। বিভিন্ন সেইফ হাউজে অবস্থানকৃত হিজরতকারীদের শারীরিক ও তাত্তি¡ক বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করত। এছাড়াও, সে তথাকথিত হিজরতকৃত সদস্যদের বিভিন্ন সেইফ হাউজে পৌছে দিত বলে জানা যায়। সে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিল। বিগত সময়ে কুমিল্লা হতে নিখোঁজ ০৩ তরুণ (নেহাল, আসমানী ও নিলয়) এর ঘটনায় কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ রেলষ্টেশনের নিকটবর্তী সিসিটিভি ফুটেজে গ্রেফতারকৃত সারওয়ার’কে নিখোঁজদেরকে কুমিল্লার দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
গ্রেফতারকৃত সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা হতে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে। সে একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং এর কাজ করত। সে ‘‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া”র শুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত¡াবধায়ক শামীম মাহফুজের আপন ভাতিজা। সে ০৩ বছর পূর্বে শামীম মাহফুজের মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনে যোগদান করে। সে গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। এছাড়াও সে শামীম মাহফুজের নির্দেশনায় গাইবান্ধা অঞ্চলে ‘‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া”র আদর্শে উদ্বুদ্ধ সদস্যদেরকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রেরণ কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিল এবং সে সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। গাইবান্ধায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটুক্তি করায় সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় সে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে এবং হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও ৩-৪ জন সদস্যকে একত্রিত করে। উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বেই সাকিব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন সহোদর ভাই। ফরহাদ স্থানীয় কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে এবং মুরাদ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনের সূরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিব এর শ্যালক। ০৩ বছর পূর্বে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা উক্ত সংগঠনের সাতে জড়িত হয়। তারা রাজধানীর গুলিস্থান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সোসরিজ এর দোকান পরিচালনা করত এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করত। এছাড়াও মুন্সিগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করত। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করত বলে জানায়। এছাড়াও তারা পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য ১ম পর্যায়ে ১২ জন সদস্যকে প্রেরণকালীন সময়ে এই খামারে সবাইকে একত্রিত করে বলে তারা জানায়। পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, বস্ত্র, নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যাদি এবং বোমা তৈরির জন্য কতিপয় সামগ্রীসমূহ গ্রেফতারকৃত ফরহাদ ও মুরাদ সংগ্রহ করত এবং পরবর্তীতে সামগ্রীসমূহ মগবাজারে গ্রেফতারকৃত ওয়াসিকুর রহমান নাঈমের নিকট পৌছে দিত।
গ্রেফতারকৃত ওয়াসিকুর রহমান নাঈম রাজধানীর একটি মাদ্রাসা হতে হিফজ সম্পন্ন করে। ০২ বছর পূর্বে সে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। সে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ষোল আনা’ নামক একটি আতরের দোকান পরিচালনা করত এবং দোকানে লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করত। সে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। গ্রেফতারকৃত ফরহাদ ও মুরাদ পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বস্ত্র সামগ্রী ও বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে গ্রেফতারকৃত নাঈমের ‘ষোল আনা’ নামক আতরের দোকানে পৌছে দিত। পরবর্তীতে সে বিভিন্ন মাধ্যমে তা পার্বত্য অঞ্চলে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করত বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।