শনিবার, ৭ ডিসেম্বর 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   ফিচার
  ৭১ এর বীর মুনিরুল ইসলাম
  30, December, 2022, 11:41:7:AM


           স্মৃতির মানসপটে যে যুদ্ধ ভাসে
            সে যুদ্ধের  বিজয়ী তুমি হে বীর
            দেশ মাতৃকার সাহসী সন্তান
              তুমি হে বীর, তুমি হে বীর-

১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই সবুজ শ্যামলীমা আজ যখন বর্হিবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি দেশ, একটি স্ব পরিচয়ে পরিচিত দেশটির পিছনের গল্পটা আমাদের সকলেরই জানা। পাকিস্তানি শাসকদের ভয়াল থাবা থেকে এই জাতিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে একটি কণ্ঠের ডাকে, একজন মানুষের আদর্শ, দেশপ্রেম আর সাহসিকতায়  হাজারো যুবক, তরুণ থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষের একটি দেশের তরে ঝাঁপিয়ে পড়বার ইতিহাস।

বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের সেই দলের অন্তর্ভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুনিরুল ইসলাম। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত স্বাধীনতার লড়াইয়ে নেমে আসেন জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে। বীর এই যোদ্ধার জন্ম ১১ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ ইং তৎকালীন বৃহত্তর রংপুরের ঠাকুরগাঁওয়ে। তাঁর পিতার নাম মৃত তজিব উদ্দীন আহাম্মদ। ১৫ বছর বয়সী সেই তরুণ সেদিন দেশের টানে সংসারের মায়াকে ভুলে নেমে আসেন পথে। ২৫ মার্চের পর সারাদেশের মত ঠাকুরগাঁওয়ে মিছিল ও আন্দোলনের রেশ নেমে আসলে তিনি আন্দোলনে অংশ নেন। অনেকেই যখন নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তখন এই অকুতোভয় মানুষটি ১৯৭১ এর মে-জুন মাসের মাঝামাঝি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে ট্রেনিং গ্রহণ করতে যান। সেখানে ভারতের রায়গঞ্জে তিন সপ্তাহ অবস্থান করেন। সে সময় তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক, কাসেম, তাহের, নুরুসহ প্রায় ১০/১২ জন মিলে গেরিলা ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে রাইফেলসহ অস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

শুধু ভারতে গেরিলা ট্রেনিংই নয় এর আগে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে ১০ই মার্চের দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের আহ্বানে হাইস্কুলের শিক্ষক এম. ইউসুফ এগিয়ে আসেন ছাত্র-যুবকদের ট্রেনিং দিতে। তখন তিনি ছিলেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। রোভার-স্কাউট-ওটিসি ক্যাডেটদের জন্য নির্ধারিত ৫০টি ঢামী রাইফেল দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রশিক্ষণ। ট্রেনিংয়ের লিডারশীপ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হাতে থাকলেও সেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনিরুল ইসলাম ভারত থেকে ফিরে ঠাকুরগাঁও ৬নং সেক্টরের সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এম. কে. বাশার। এসময় ৬নং সেক্টরের অধীনে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা যেমন রায়পুর, জামালপুর, বড়গাঁও, বালিয়া, রুহিয়া  থেকে শুরু করে আটোয়ারীর ডাঙ্গীপাড়া এলাকা পর্যন্ত যুদ্ধ করেন।
সারাদেশের সাহসী সন্তানদের মত ঠাকুরগাঁওয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও ১৯৭১ সালে নয় মাস জুড়ে সাহসিকতার সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাঁদেরই মধ্যে অন্যতম মুনিরুল ইসলাম যুদ্ধে অংশগ্রহণকালীন অক্টোবর মাসে ডান ও বাম পায়ে এবং পেটের কিছু অংশে ছররা গুলি খেয়ে আহত হন। পশ্চিম দিনাজপুরের ইসলামপুর সাবডিভিশনাল হাসাপাতালে মেডিক্যাল অফিসার ডা. শ্রী নকুল সিনহার অধীনে চিকিৎসা নেন। আহত হবার পরও তিনি যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন নি। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েই আবারো দেশমাতৃকাকে রক্ষার্থে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অকুতোভয় বীরের সাহসিকতা আর সম্মানে গর্বিত এবং নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাই আমরা। এভাবেই হাজারো বীরের রক্তের বিনিময়ে এগিয়ে যায় আমাদের যুদ্ধ।

ডিসেম্বরের ৩ তারিখ মুনিরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোদ্ধারা প্রবেশ করেন ঠাকুরগাঁও শহরে। শুরু করেন জন্মস্থান এবং নিজ এলাকাকে মুক্ত করার প্রাণপণ লড়াই। এ দিনেই পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও। এভাবেই বীর মুক্তিসেনাদের অদম্য সাহস আর দেশের প্রতি ভালোবাসায় একে একে মুক্ত হয় সমগ্র বাংলা। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় স্বীকার করে। এ বিজয় ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং শত শত বীরের আত্মত্যাগে অর্জন হয়। এই ত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

মুক্ত হয় বাংলা, স্বাধীন বাংলার বুকে উঠে লাল-সবুজের পতাকা। সোনার ছেলেরা মাকে দেয়া কথা রেখেছে। মুক্ত করেছে দেশমাতাকে। জন্ম দিয়েছে “বাংলাদেশ” নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। স্বাধীন বাংলার এমনই একজন মুক্তির নায়ক মুনিরুল ইসলাম। তিনি শুধু তাঁর পরিবার বা ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব নন, তিনি সমগ্র উত্তরবঙ্গ এমনকি পুরা দেশের গর্ব। যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা সবসময়ই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন নিজের বীরত্ব বা সাহসিকতার বড়াই কখনো তিনি করেননি। শুধু দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য যে লড়াই করেছেন তা নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনও গর্ব বা অহংকার দেখাননি। কখনো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এই মানুষটি নিজেকে প্রচার বা প্রকাশ করেননি। তাঁর কর্ম প্রচার বিমুখতা তাঁর মহত্ত্বেরই বিরাট অংশ। ক’জনই বা পারে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে!

পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির ঠাকুরগাঁও জেলার জাতীয় যুব সংহতি ১নং যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন তিনি। কর্মজীবনে নারগুন অটো রাইস মিল ও মৌসুমি সিনেমা হলের মালিক ছিলেন।
 
সোনার বাংলার সেদিনের সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ এর ৩ ডিসেম্বর ফিরে এসেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ে, ঠিক তেমনি এই বিজয়ের মাসেই গত ৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মৃত্যুবরণ করেন ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ি এলাকার শহীদ তিতুমীর সড়কের নিজ বাড়িতে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুইপুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

‘বীরেরা মরে না কখনো, তাদের প্রস্থান হয় মাত্র। তাঁরা চিরস্মরণীয়। এই বাংলার হাজারো মানুষের হৃদয়ে, স্মৃতিতে তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে ও সাহসিকতায়।’



   শেয়ার করুন
   আপনার মতামত দিন
     ফিচার
পর্যটকদের জন্য কাপ্তাই লেকে ভাসছে “রয়েল এডভেঞ্চার”
.............................................................................................
৭১ এর বীর মুনিরুল ইসলাম
.............................................................................................
কুষ্টিয়ার মিরপুরে মধু সংগ্রহ করে স্বাবলম্বী মামুন
.............................................................................................
অগ্রায়নেও ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার আওয়াজ নেই
.............................................................................................
বন্দী জীবনে মুক্তির পথ খুঁজলেন শব্দের কাছে
.............................................................................................
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার মাটির ঘর
.............................................................................................
ঈদ বিনোদনে প্রস্তুত ফ্যান্টাসি কিংডম
.............................................................................................
বিখ্যাত ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’র স্বাদ ছড়াচ্ছে দেশে দেশে
.............................................................................................
বিশ্বে এইসব দেশে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের রোজা হয়
.............................................................................................
আলু পরোটা বিক্রি করে সংসার চলে রাজ্জাকের
.............................................................................................
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা দিচ্ছে শিমুল ফুল
.............................................................................................
তিল চাষে অধিক মুনাফার সম্ভাবনা
.............................................................................................
বৈদ্যুতিক বিবর্তনে বিলুপ্ত গ্রামীণ হ্যাজাক, হারিকেন ও কুপি
.............................................................................................
বাহারি ফুলে রঙ্গিন ইবি ক্যাম্পাস
.............................................................................................
হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্প
.............................................................................................
হলুদ চাদরে ঢেকে আছে মাঠ
.............................................................................................
ধার করা ক্যামেরায় বানানো সিনেমাটি জিতলো কান চলচ্চিত্র পুরস্কার
.............................................................................................
সাতক্ষীরায় হলুদ চাষে কৃষকের বাম্পার ফলনের আশা
.............................................................................................
প্রচারবিমুখ এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘মেজর ওয়াকি’
.............................................................................................
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ সাজে বিস্তীর্ণ মাঠ
.............................................................................................
মেহেদী পরিয়ে আয় করছেন নুসরাত মারিয়া
.............................................................................................
কুমড়ার বড়ি তৈরীতে ব্যস্ত গৃহিনীরা
.............................................................................................
হাট-বাজারে পিঠা উৎসব
.............................................................................................
বরিশালে শীতের আগামনে ভাপা পিঠা বিক্রির ধুম
.............................................................................................
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতাদের আর দেখা মেলে না
.............................................................................................
বিদেশি জাতের তরমুজ চাষে শিক্ষকের সফলতা
.............................................................................................
শাপলার রাজ্য বরিশাল
.............................................................................................
বরিশালের আমড়া খেতে ভারি মজা!
.............................................................................................
জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে জবি শিক্ষার্থীর চিত্রকর্ম
.............................................................................................
এক সফল গরু খামারী জিয়া উদ্দিন মজুমদার
.............................................................................................
করোনায় করুণ কাহিনি
.............................................................................................
বাড়ছে লিথিয়ামের চাহিদা
.............................................................................................
সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি হিসেবে বান্দরবান পাঠানোর কারণ
.............................................................................................
ঘরেই তৈরি করুন চিলি চিকেন
.............................................................................................
বিলুপ্তর পথে শেরপুরের আদিবাসীদের তাঁতশিল্প
.............................................................................................
প্রযুক্তি নির্ভর দুনিয়ায় অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র ‘ফ্রিল্যান্সিং’
.............................................................................................
দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে কাঠের তৈরি এই ৫ তলা বাড়ি
.............................................................................................
শীতের শুরুতে জকিগঞ্জের ফুটপাতে পিঠা বিক্রির ধুম
.............................................................................................
সাজেক সে তো মেঘের রাজ্য
.............................................................................................
পুরুষরা স্ত্রীর কাছে যেসব সত্য গোপন করেন
.............................................................................................
আঙ্গুলের নখ বলে শরীরে অসুখের উপস্থিতি
.............................................................................................
কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পষ্টে ২ কিশোরের মৃত্যু
.............................................................................................
ফোন খরচ বাঁচিয়ে পথ শিশুদের খাবার বিতরণ!
.............................................................................................
প্রবাসীদের ‘ঈদ’ এর পেছনের গল্প
.............................................................................................
ঈদে গরুর মাথার মাংস রান্নার রেসিপি
.............................................................................................
পরিশ্রমের কাছে মেধা চির অসহায়
.............................................................................................
ফুলের সুবাস মিষ্টি কেন ?
.............................................................................................
বিশ্ব বাবা দিবস আজ
.............................................................................................
বিলুপ্তির পথে মিঠাপুকুরে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প
.............................................................................................
ফ্লোরা ফেস্টিভ্যালঃ বাসায় বসে বাগানের রিভিউ দিন
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT