হঠাৎ করেই একদিন মা আমাকে বলল, তোমাদের স্কুল বদলাতে হবে। এখানে খুনিদের বাচ্চারা পড়ে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোন খুনি? তখন মা আমাকে বোঝালো। যদি তারা খুনি হয়।
সবাই এ বিষয়ে জানে, তাহলে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে কিভাবে? ছোট ছিলাম বিষয়টা বুঝতে পারছিলেন না। তখন জানলাম ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্সের কথা। ছোট বেলায় অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এটা আবার আইন হতে পারে! শুধু স্কুল ছাড়াই নয়। শেষ পর্যন্ত দুই বছর পর বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিলেন বাচ্চাদের নিয়ে এভাবে থাকা যায় না। কেননা স্কুলে ফলো করতো খুনিরা। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা তো তখন বুক ফুলিয়ে ঘুরত। `- ১৯৭৫ সালের পর দেশে ফিরে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে কি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তার স্পষ্ট চিত্র উঠে আসে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের কথায়।
যার হাত ধরে বাংলাদেশের জন্ম। তার পরিবারের এই দেশে ঠাই হয়নি এক সময়। বাংলাদেশকে অস্বীকার করেছে যারা, তারা দেশকে মৌলবাদ ও পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর সকল চিহ্ন ও অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জীবন বাজী রেখে দেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শত বাধা পেরিয়ে তিনি আজ বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে রোল মডেল হিসেবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। আর তার হাতে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা তৈরিতে সহায়ত শক্তি হিসেবে পাশে ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা। কেউ উপদেষ্টা হয়ে, কেউ দেশের তরুণদের নিয়ে কাজ করে, কেউবা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করলেও সর্বদা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সকল আন্দোলন ও সকল কার্যক্রম ছিলেন শেখ রেহানা। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ২০১১ সাল থেকে কর্মরত রয়েছেন জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউএনডিপি`তে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর ট্রাস্টি হিসেবে তরুণদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে গভর্নেন্স অ্যান্ড হিস্ট্রি বিষয়ে স্নাতক ও পরবর্তীতে একই প্রতিষ্ঠান থেকে কমপ্যারেটিভ পলিটিক্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। গান ও চিত্রকর্মের মাধ্যমে তরুণদের বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সংযোগ ঘটিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণদের কাছ থেকে দারুন সাড়াও পেয়েছেন তিনি। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধর ইতিহাসকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি যথেষ্ট কার্যকর ও সহজ হয়েছে। রাদওয়ান মুজিব ঐতিহাসিক ঘটনাকে ইতিহাস হিসেবে কম বরং গল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে বেশি পছন্দ করেন। এ জন্য গ্রাফিক নভেল `মুজিব`, ডকুড্রামা `হাসিনা: এ ডটারস টেল` এবং `জয় বাংলা কনসার্টের আকারে তিনি ইতিহাস তুলে ধরার কাজ করছেন। তিনি নতুন প্রজন্মের চাওয়াকে বুঝতে পারেন। এই প্রজন্মকে ইতিহাসের অন্তরালে ঘুরিয়ে আনতে ও বাংলাদেশ সৃষ্টির জাতীয় মূল্যবোধকে বোঝাতে যেসব কৌশল নেওয়া প্রয়োজন সেসব ব্যবস্থা নেন তিনি।
২০০৮ সালে সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে আল জাজিরাতে ব্রিটিশ সম্প্রচারকারী ডেভিড ফ্রস্টের ‘ফ্রস্ট ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড’ শোতে একটি সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের গণতান্ত্রিক প্রমাণপত্রের তীব্র সমালোচনা করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার ভবিষ্যত ভূমিকা নিয়ে কথা বলে বিশ্বব্যাপী একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিলেন রাদওয়ান মুজিব। এটি হাসিনার মুক্তি ও জরুরি শাসন প্রত্যাহারের জন্য আন্তর্জাতিক আহবানে সাহায্য করেছিল।
সোনার বাংলা গঠনে তার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার খালা শেখ হাসিনা যে স্বপ্ন দেখেছেন। সেখানে বর্তমান প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পেরেছেন রাদওয়ান। বিতর্ক এড়িয়ে নিজস্ব ঢংয়ে তার চলাফেরা, চাকরি করা সবই পরিণত হয়েছে অনুকরণীয় হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। এ ছাড়াও অটিজম আন্দোলন ও বিশ্বস্বাস্থ্যে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটি ডিসটিংগুইসড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে। তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে’ অন্তর্ভুক্ত আছেন। পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্য, সামাজিক ও শিক্ষা সহায়তা দেয়ার জন্য অবকাঠামো গড়তে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যার উদ্যোগেই অটিজম সচেতনতায় বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
পরিবারের ১৯ সদস্যকে ১৯৭৫ সালে হত্যার পর দেশে ফিরতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাসিত এই জীবনে তার সঙ্গে থাকা ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের বাহিরেই স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে আবারও স্নাতক ডিগ্রি নেন। এখানেই না থেমে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও সম্পন্ন করেন। যেই বাংলাদেশের জন্মের জন্য পরিবারের সদস্যদের এত কিছু সহ্য করতে হয়েছে, সেই বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন সজীব ওয়াজেদ। ২০০৭ সালের ইয়ং গ্লোবাল লিডার হিসেবে নির্বাচিত জয় তথ্য-প্রযুক্তিতে নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তার পরামর্শে যুক্ত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা। এরপর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দেশের আইসিটি খাতে এক বিপ্লব সাধন করে ২০২১ সালে সম্পন্ন হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প। বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
এর পাশাপাশি দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সকল পর্যায়ের তরুণদের যুক্ত করতে সিআরআই এর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তার উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে গণমানুষের সহায়তা ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তরুণ প্রজন্মের সংগঠন ও সংগঠকদের জাতীয়ভাবে `জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড`-এর মাধ্যমে পুরস্কৃত করছে ইয়াং বাংলা। তারুণ্যকে উন্নয়নের সহযোগী ও তরুণদের নিয়ে কাজ করা সিআরআই এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করেছেন। তার দেখানো পথে দেশ গঠন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন জাতির জনকের উত্তরসূরিরাও। ১৯৭৫-এর ঘাতকরা চেয়েছিল দেশকে পিছিয়ে দিতে। দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে। তবে সেটি বদলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। আর সহযোগী হিসেবে নিজ নিজ জায়গা থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্মও।