মাহে রমজানের অন্যতম বিধান সিয়াম সাধনা। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও সবল মুমিনের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। কিন্তু এ সংযম পালনে দৈনন্দিন ভুলবশত কিছু বাড়াবাড়ির শিকার হই। অথচ জীবনযাপন সহজ করা ইসলামি শরিয়তের অন্যতম উদ্দেশ্য। এই রমজানেও আল্লাহ তার সর্বশ্রেষ্ঠ জীবকে বিধিবিধান পালনে ছাড় দিয়েছেন। ফলে সবাইকে সব অবস্থায় রোজা রাখতে হবে না।
আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কষ্ট চাপিয়ে দেননি।’ (সুরা হজ : ৭৮)। অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের প্রতি সহজতা চান।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)
আজকে আমরা জানব, কোন কোন অবস্থায় মুসলমানরা রমজানে রোজা পালন না করলেও গুনাগার হবেন না।
অসুস্থ হলে : অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা না রাখার অবকাশ আছে। শর্ত হলো অসুস্থতা এমন পর্যায়ের হওয়া, যাতে ব্যক্তির বড় ধরনের ক্ষতি, কষ্টের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, সুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একইভাবে কোনো দ্বিনদার, আল্লাহভীরু ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোজা না রাখার পরামর্শ দিলে রোজা ছেড়ে দেয়া যাবে। তবে পরে তা কাজা করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।’ সুরা বাকারা : ১৮৪
বার্ধক্য : অতিশয় বৃদ্ধ নারী ও পুরুষের যদি রোজা রাখার শারীরিক সামর্থ্য না থাকে, তবে তাদের না রাখার অবকাশ দিয়েছে। যদি এমন হয় যে, বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ বছরের কোনো সময় (দিন ছোট বা বড় হোক, শীত বা গ্রীষ্ম হোক) রোজা কাজা করতে পারবে না, তাহলে তারা কাফফারা আদায় করবে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘রোজার কারণে যাদের খুব বেশি কষ্ট হয় তাদের কর্তব্যের পরিবর্তে ফিদিয়াস্বরূপ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা।’ সুরা বাকারা : ১৮৪
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আয়াতটি এখনো রহিত হয়নি। এমন বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী যাদের রোজা রাখার সামর্থ্য নেই, তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন অভাবগ্রস্তকে খাবার খাওয়াবে।’ তাফসিরে ইবনে কাসির
গর্ভধারণ : অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারী যদি নিজের ও সন্তানের ব্যাপারে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তবে তার জন্য রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুসাফিরের জন্য রোজা ও অর্ধেক নামাজ ছাড় দিয়েছেন এবং ও স্তন্যদানকারী নারীর জন্য রোজার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন।’ সুনানে নাসায়ি : ২৩১৫
তবে পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা করতে হবে। আর ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে তার জন্য রোজা ছেড়ে দেয়া জায়েজ হবে না।
ভ্রমণকালীন সময় : ভ্রমণকালীন ব্যক্তির জন্য রমজানের রোজা না রাখার অবকাশ আছে। এ জন্য যতটুকু পরিমাণ ভ্রমণ করলে নামাজ কসর করা বৈধ, ততটুকু ভ্রমণ করতে হবে। তবে ব্যক্তি চাইলে রোজা রাখতে পারবে আবার তা ভাঙতেও পারবে। রোজা ভাঙলে পরবর্তী সময়ে তা কাজা করে নিতে হবে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।’ সুরা বাকারা : ১৮৪
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রমজানে সফর করেছি। তখন রোজাদার ব্যক্তি রোজা ছেড়ে দেয়া ব্যক্তিকে এবং রোজা ছেড়ে দেয়া ব্যক্তি রোজাদার ব্যক্তিকে দোষারোপ করেনি।’ সহিহ বুখারি : ১৯৪৭
বিশেষ প্রয়োজনে : বিশেষ প্রয়োজন পূরণ ও আপতিত বিপদের হাত থেকে বাঁচতে কখনো কখনো রোজা না রাখার অবকাশ আছে। যেমন ডুবে যাওয়া বা আগুনে পোড়া ব্যক্তির চিকিৎসা রোজা ভঙ্গ না করলে করা সম্ভব হয় না। তবে এমন ব্যক্তিও পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা করবে।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রোজা রেখে মক্কার উদ্দেশে সফর করেছিলাম। আমরা একজন এক জায়গায় যাত্রাবিরতি দিলাম, তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের শত্রুর নিকটবর্তী হয়েছ। রোজা ভঙ্গ করাই তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে।’ সহিহ মুসলিম : ১১২০