নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) ও সমমানের পরীক্ষা কাল রবিবার শুরু হবে। পরীক্ষা চলবে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত। এ পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে।
এ বছর এসএসসি ও সমামানের পরীক্ষায় ৫০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে। গতবার এসএসসি ও সমমানে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ২০ লাখ ২১ হাজার। চলতি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ছাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৮ হাজার ৬০৯ জন। এবছর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২০৭টি, কেন্দ্র বেড়েছে ২০টি। এবার মোট কেন্দ্র ৩ হাজার ৮১০টি এবং মোট প্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ৭৯৮টি।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষা সব বিষয়েই নেওয়া হবে। প্রতিটি বিষয়ে স্বাভাবিক সময় বা তিন ঘণ্টা পরীক্ষা হবে। সৃজনশীল ও নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন (এমসিকিউ) থাকবে আগের মতোই। রুটিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষা শুরুর দিনে বাংলা প্রথম পত্র, ২ মে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ৩ মে ইংরেজি প্রথম পত্র, ৭ মে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র, ৯ মে গণিত, ১০ মে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ১১ মে ধর্মশিক্ষার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ১৪ মে পদার্থবিজ্ঞান, ১৫ মে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, ১৬ মে রসায়ন, ১৭ মে ভূগোল ও পরিবেশ, ১৮ মে জীববিজ্ঞান, ২১ মে বিজ্ঞান, ২২ মে হিসাববিজ্ঞান এবং ২৩ মে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ের পরীক্ষা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশ্নপত্র মাঠপর্যায়ে চলে গেছে। শিক্ষার্থীরা অনুকূল পরিবেশে পরীক্ষা দেবে। তবে পরীক্ষাসংক্রান্ত যে কোনো অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর থাকবে প্রশাসন।
এবারের মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে ১৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৮ জন। বাকিরা অনিয়মিত। অনিয়মিতদের মধ্যে রয়েছে গত বছর এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করা, মানোন্নয়ন আর প্রাইভেট পরীক্ষার্থী। এবারও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে অংশ নিচ্ছে। এসব বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭০ এবং ছাত্রী ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৫ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৩ এবং ছাত্রী ১ লাখ ৫১ হাজার ১২৮ জন। আর কারিগরি বোর্ডে এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৯৭ হাজার ৩৩৪ ও ছাত্রী ৩০ হাজার ৪৩৩ জন।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ মে। এরপর ২৪ মে থেকে ৩০ মে’র মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা ২৫ মে শেষ হবে। এ বোর্ডের ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৭ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত চলবে। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে তত্ত্বীয় পরীক্ষা ২৩ মে শেষ হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৫ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত চলবে।
জানা গেছে, পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিটিআরসিকে সর্বোচ্চ সতর্ক রাখা হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুকে প্রশ্নফাঁস নিয়ে গুজব এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেন নজরদারি রাখা হবে। পাশাপাশি যেসব গ্রুপ বা ব্যক্তি ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়াবে তাদের আইডি শনাক্ত করে পুলিশের বিশেষ শাখা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দেওয়া হবে। প্রশ্ন ছাপানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজি প্রেসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে। এমনকি প্রশ্ন সর্টিং ও বহনে জড়িত শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও নজরদারিতে থাকবেন।
অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীর দেরি হলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিখে রাখা হবে। কোনো শিক্ষক মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়াও ট্রেজারি-থানা থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাচ যুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট পূর্বে প্রশ্নের সেট কোড সচিবকে জানানো হবে। সেটি অনুযায়ী কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট বিধি অনুযায়ী খুলবেন।
এদিকে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশে করতে পারবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে এসএসসি, এসএসসি/দাখিল (ভোকেশনাল) ও দাখিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।