ক্রীড়া প্রতিবেদক : সিলেটে তিন দিনের প্রস্তুতি ক্যাম্পে সন্তুষ্ট টাইগারদের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার দাবি, পিচ ও কন্ডিশন তারা যেমনটা চেয়েছিলেন, ঠিক তেমনটাই ছিল।
আগামী মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। যেটি অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে। তাই সেখানকার উইকেট ও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সিলেটে ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ দল।
ক্যাম্পের শেষ দিনে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে হাথুরুসিংহে বলেন, আমরা কন্ডিশন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। আমরা যেমন চাই, তেমন পিচ কন্ডিশন তৈরি করতে তারা (কিউরেটর ও মাঠকর্মীরা) কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। আপনি দেখতে পারেন ছেলেদের এনার্জি। ইন্টেনসিটি খুব ভালো ছিল, আমি এটাতে খুশি।
দ্বিতীয় মেয়াদে কোচিং করাতে আসা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারকে ভালোভাবেই জানেন। ওপেনিংয়ে রীতিমতো ধুঁকতে দেখা যায় বাংলাদেশি ব্যাটারদের। ওপেনারদের ভালো করার টোটকা দিয়ে রাখলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ বলেন, ওপেনার হলে ১০ ওভার ব্যাট করতে হবে, কীভাবে শুরু করতে হবে এবং ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের (৩০ গজের মধ্যে ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতা) সর্বোচ্চ ব্যবহার কীভাবে করতে হবে সেটাও ভাবতে হবে। মাঝে ব্যাট করলে পরিস্থিতি অন্যরকম থাকবে। কখনো চারজন বা পাঁচজন আউট হওয়ার পর আসতে হবে (ব্যাটিংয়ে)।
সিলেটের অনুশীলন ক্যাম্পে প্রধান কোচের কাজ কী ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে হাথুরুসিংহে জানান, তিনি আসলে বিশেষ কিছু করাননি। হাথুরু বলেন, আমি কারও সঙ্গেই বাড়তি কিছু করিনি। আমি শুধু মাঝে দাঁড়িয়ে এটি নিশ্চিত করছিলাম যে, সেশনটা যেন ভালোভাবে শেষ হয় এবং ইন্টেন্সিটি না কমে। নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে চিন্তিত নই আমি। পুরো দল নিয়েই ভাবছি। সে (তামিম) খুব ভালো ব্যাটিং করছে। এই ক্যাম্পে যেভাবে ব্যাটিং করেছে, আমি খুব খুশি।
৯ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া আয়ারল্যান্ড সিরিজটি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ। ঘরের মাঠে আইরিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশ যেমন আক্রমণাত্নক ছিল, ইংল্যান্ডের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও ইতিবাচক ও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ দল।
হাথুরুসিংহে বললেন, সব সময় আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার মানসিকতা থাকবে আমাদের। এর মানে এই না যে, বল মেরে স্টেডিয়ামের বাইরে পাঠাতে হবে। আগ্রাসী ক্রিকেট মানে হলো, যাই করি না কেন, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে করতে হবে। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রাসী থাকা, সেটা হোক দল বাছাই কিংবা ফিল্ড প্লেসিং কিংবা কী ধরনের বোলিং করা হবে। আমরা ছেলেদেরকে এই স্বাধীনতা দিতে যাই, যেন তারা মাঠে গিয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারে।
এদিকে, বিশ্বকাপ বছরে খেলোয়াড় বাজিয়ে দেখার রীতি একদমই নতুন নয়। তবে পুরোনো ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়মিত সুযোগ দিয়ে তাদের বড় মঞ্চে পরীক্ষায় বসনোর আগে ঝালিয়ে নেওয়া হয়। এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যেন বৈশ্বিক আসরে তাদের থেকে সেরা পারফরম্যান্স পাওয়া যায়।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আপাতত আস্থা রাখছেন তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটারদের ওপর, যারা হতে পারে লম্বা রেসের ঘোড়া। তাইতো গত এক-দেড় বছরে নিয়মিত খেলা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেনকে বাদ দিয়ে তৌহিদ হৃদয়, ইয়াসির আলী রাব্বীদেরকে নিয়মিত সুযোগ দিচ্ছেন।
আয়ারল্যান্ড সিরিজের শুরুর দুই ওয়ানডেতে আফিফকে স্কোয়াডে রাখলেও পরবর্তীতে তাকে সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। ফিরতি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও তাকে দলে নেওয়া হয়নি। মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রামের মোড়কে ‘বাদ’ দেওয়া হয়েছে তা একপ্রকার ওপেন সিক্রেট। সেই বিশ্রাম এখনও চলছে। এই দুই ক্রিকেটারের অক্টোবর-নভেম্বরে বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা একদমই ক্ষীণ।
তবে হাথুরুসিংহে কারও জন্যই দরজা বন্ধ করছেন না। দুজনকে নিয়ে আগের অবস্থানেই রয়েছেন তিনি বলেন, ‘(আফিফ ও মাহমুদউল্লাহ) তাদের ব্যাপারে আমি আগে যা বলেছি সেটিই থাকবে। তারা সবাই এই সীমারেখায় আছে। বিশ্বকাপের আগে তারা সবাই-ই খেলার সুযোগ পাবে। আমরা ওই মানসিকতার কোনো পরিবর্তন করিনি।’
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করছেন। মাহমুদউল্লাহ ধারাবাহিক না হলেও আফিফ আবাহনীর জার্সিতে ধারাবাহিক। ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্সও করছেন। কিন্তু তার এই পারফরম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলের দরজা খুলবে কিনা তা বলা মুশকিল। তবে মাহমুদউল্লাহর জন্য এই দলে ফেরা খুব কঠিন বলেই মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তার মতে, চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পরিকল্পনায় মাহমুদউল্লাহ থাকলে বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজগুলোতে তাকে খেলানো হতো।
শুধু মাহমুদউল্লাহ বা আফিফ নয়, সাকিবের সঙ্গী হিসেবে আরেকজন বাঁহাতি স্পিনার কে হবেন তা নিয়েও চলছে পরীক্ষা। এ পজিশনে নাসুম ও তাইজুলের মধ্যে হচ্ছে তীব্র লড়াই। কোনো সিরিজে তাইজুলকে বাজিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো সিরিজে নাসুমকে। সুযোগ পেলে দুজনই পারফরম্যান্সের ডালাপালা মেলে ধরছেন। তাদের এই লড়াই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত চলতেই থাকবে তা হাথুরুসিংহেই ঘোষণা দিলেন, ‘আমি স্কোয়াড বড় করতে চাই। সবাইকে অনেক অভিজ্ঞতা দিতে চাই। বিশ্বকাপের আগে অবধি এমন চলতেই থাকবে।’
স্বাধীন বাংলা/এআর
|