নীতির সেরা নীতি-রাজনীতির আদর্শবাদী কর্মী সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের রাজনৈতিক জীবন শুরু ও বিকাশ আওয়ামী লীগে। মাঝখানে ছন্দপতন ঘটলেও তিনি পথ হারাননি। সময়ের পালাবদলে তুমুল রাজনৈতিক চাপের মুখেও তাকে থামিয়ে রাখা যায়নি। অবশেষে সময়ই তাকে টেনে নিয়েছে আবার মূলধারায়। তিনি মন্ত্রী হয়ে কখনো কোন প্রকল্পের ফিতা কাটেন নি। ঝমকালো কোন সরকারী অনুষ্ঠানে মিডিয়ার সামনে তর্জন গর্জনের রেকর্ডও নেই। তথাপি দেশজোড়া পরিচিতি রয়েছে পোড় খাওয়া এই রাজনীতিকের। একজন পরিচ্ছন্ন চিন্তার রাজনীতিক হিসেবে, রাজনীতিতে নীতির প্রশ্নে আলোচনার ঝড় তুলে হয়েছেন গণমানুষের আপনজন।
বৃহত্তর সিলেটের হয়ে যারা একদা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছিলেন, পেয়েছিলেন দেশজোড়া খ্যাতি; সেই আব্দুস সামাদ আজাদ, দেওয়ান ফরিদ গাজী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এ.এস.এম কিবরিয়া, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সিলেট সিটির আলোচিত নেতা কামরান আহমেদ আর নেই। এখন সরকারে সিলেটের কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন; আছেন এমপিবৃন্দ; জেলা ও মহানগরের নেতারা। কিন্তু দেশজোড়া পরিচিতি নিয়ে তারা কেউ আলোচিত হতে পারেননি। এদের মাঝে ব্যতিক্রম একমাত্র সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তাঁর রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং বিস্তৃত সুপরিচিতি।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন, গণমানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা আর নেতৃত্বের গুণাবলিই হবে আগামীতে আওয়ামী লীগে পদ-পদবী পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতা। এই ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা, সততা ও রাজনৈতিক কর্মদক্ষতায় অল্প কিছু নামই জাতীয়ভাবে আলোচিত হতে দেখা যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসবার মত রাজনীতিকের যেন চরম আকাল চলছে আওয়ামী লীগে। যদিও নেতায় ঠাসাঠাসি এক রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ।
বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতারা অধিকাংশ হয়েছিলেন কারাবন্দি। বাকী যারা ছিলেন, তারা কেউ হয়েছিলেন আপোষকামী, নিষ্ক্রিয় অথবা পলায়নপর। একমাত্র কাদের সিদ্দিকী প্রতিরোধের ডাক দিলে সেই কাফেলায় তখন আরও অনেকের মত যুক্ত হয়েছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। সেই চরম দুর্দিনে ১৯৮৯ সালে ডাকসু’র ভিপি পদে বিজয় ছিল পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী রাজনীতির কোন আনুষ্ঠানিক উঠে দাঁড়ানোর ঘটনা। ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি সুলতান মনসুরের হাতেই ডাকসু ভবনে ’৭৫ পরবর্তী প্রথমবারের মত টাঙ্গানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ছবি। একজন মেধাবী, আদর্শবান ও পরীক্ষিত সংগঠক হিসেবে গোটা আশির দশক জুড়ে তিনি বাংলাদেশ কাঁপিয়েছেন। পরে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ সবই ইতিহাস।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে সংস্কারপন্থীর তকমা লাগে এই জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতার গায়ে। তখন একই তকমা লেগেছিল জননেতা তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ আরও কতিপয় নেতার গায়ে। ফলে আওয়ামী রাজনীতিতে এক ধরণের ছন্দপতন ঘটে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের। কিন্তু দমে যাননি আওয়ামী রাজনীতির এই প্রমিথিউস। তিনি অতীতের মতই সতীর্থদের নিয়ে সংগঠন গোছাতে লেগেই থাকেন। তার ফলও পেয়ে যান চরম বিরুদ্ধ স্রোতের মুখেও। পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হয়ে অবশেষে ফিরে যান আপন ডেরায়। এই হলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক সুলতান মনসুর। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধু ভক্ত নন; তিনি আপাদমস্তক রাজনীতিক এবং রাজনীতির শিক্ষাগুরুও বটে।
বর্তমানে সিলেট বিভাগ থেকে মন্ত্রীসভায় রয়েছেন ৫ জন মন্ত্রী। রাজনীতির সংগঠক হিসেবে জনগণের দোরগোড়ায় যাবার মত জনপ্রিয়তা নেই এদের কারও। ফলে রাজনীতির নতুন টার্ম হাইব্রিডে ভারাক্রান্ত হয়েছে গণমানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ। এমন পরিবেশে দেশব্যাপী দলের নিবেদিত, ত্যাগী নেতা-কর্মীরা একপ্রকার ঘরে উঠে গেছেন। আর দূর থেকে তাকিয়ে দেখছেন প্রিয় দলের রাজনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ। রাজনীতির মাঠে এদের ফিরিয়ে আনতে সুলতান মনসুরদের কোন বিকল্প নেই; থাকবেও না কোনদিন। তবে আওয়ামী রাজনীতির নীতি নির্ধারকরা সেটা দ্রুত বুঝলেই কেবল সকলের জন্যে মঙ্গল।