ফেসবুকে ভুয়া ফেক আইডি খুলে এক শ্রেনীর প্রতারক নবীন ফুটবলারদের টার্গেট করে পাইওনিয়র বা তৃত্বীয় বিভাগে খেলতে রাজধানীতে ফরম পুরন, আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া এবং মেডিক্যাল বাবদ বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া, বেশকিছু ফুটবল একাডেমিতে মাসিক বেতনে ভর্তি হয়ে বছরের পর বছর অনুশিলন করেও কোন ক্লাবে খেতে না পারা, অন্যদিকে বিভিন্ন ক্লাবে ট্রায়েলের নামে খেলোয়াড়দের হয়রানি, আবার অনেক বয়সভিক্তিক ক্লাব অযথা তরুন সম্ভাবনাময় ফুটবলারদের রেজিস্ট্রেশন করে মাঠে না খেলানো, লিগ খেলায় ইঞ্জুরিতে পরা খেলোয়াড়দের নামকাওয়াস্তে চিকিৎসা সেবা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়াআর লিগ শেষে পারিশ্রমিকের টাকা পরিশোধ না করে গাড়ী ভাড়া দিয়ে বিদায়! দেখার কেউ নেই, অভিযোগের যায়গা নেই!-এমন ঘটনায় ক’জন অভিভাবকই তার প্রিয় সন্তানকে ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করবে? বিষয়টি সবার বেলায় প্রযোজ্য না হলেও এমন ঘটনার শিকার অসংখ্য তরুণরা।
অতএব, “তরুণ সম্ভাবনাময় ফুটবলাররা ঢাকায় লিগ খেলতে আসে হাসঁতে হাসঁতে, অবশেষে বাড়ী ফেরে কাদঁতে কাদঁতে”। আবার এটাও ঠিক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় বিএফএফ এলিড একাডেমিতে সুযোগ পাওয়া তরুণ ফুটবলারদের চোখে মুখে এখন বড় হওয়ার স্বপ্ন। তবে সেটা হাতে গোনা। এদিকে, জাতীয় ফুটবলে ছেলে দলের ফলাফল যাইচ্ছে তাই হলেও মেয়েদের ফলাফলে খুশি প্রধানমন্ত্রীও। তবে ছেলেদেরফুটবল ভবিষ্যৎ নিয়ে সংকিত নতুন প্রযন্ম। সম্প্রতি দেশের ফুটবল নিয়ে যে সমস্ত ঘটনার জন্ম হয়েছে এতে চরম হতাশায় ইতোমধ্যেই মুখ ফেরাতে শুরু করেছে তরুণ সম্ভাবনাময় ফুটবলাররা। তাহলে আগামী ভবিয্যত কী?
বাংলাদেশের ফুটবল হারাচ্ছেও না, পথও ছাড়ছে না সংশ্লিষ্টরা!ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দিনদিন পিছিয়েই যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৮০ দশকে বাংলাদেশ ক্রোয়েশিয়ার কাছাকাছি ছিল। সেই ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ খেললেওআমরা ২০০শ এর কাছে। পদে পদে ভুলে ভরা বাংলাদেশের ফুটবল। কোন দোষে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল এর কারন খুঁজে বের করতে গেলে আগামী ২০ বছরে বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, ফুটবল নামও মুখে নেবে না হয়তো তরুণরা। আগামীর অবস্থা দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ। সামনে বাফুফের নির্বাচন। এই নির্বাচনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে নতুন কমিটি। তারা কীভাবে পরিচালনা করবে বাংলাদেশের ফটবল সেটাই দেখার বিষয়। তারা কি পারবেন চরম হতাশায় নিমজ্জিত আগামী প্রজন্মকে কিছুটা স্বস্তির খবর শুনাতে? হঠাৎ একদিনেই ভালো করা সম্ভব না। ভালো ফলাফল করতে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বহুবছর সময় নিয়ে আগাতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলপ্রেমী। যে দেশে ফুটবল বিশ্বকাপের সময় প্রত্যেকে বাড়ির ছাদে ফুটবল খেলা দেশের পতাকা দেখা যায়, প্রত্যকে দেয়ালে দেয়ালে রাঙিয়ে ওঠে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার দারুন রং, প্রত্যেকের গায়ে শোভা পায় তাদের জার্সি! সেই ধরনের ফুটবলপ্রেমী একটা দেশের ফুটবলের অবস্থা এমন! আসলেই সেটা মানা যায় না।
ফুটবলে উন্নতি করতে হলে একদম শুন্য থেকে শুরু করতে হবে আমাদের। একদম শিশুদের থেকে শুরু করতে হহে পরিচর্যা। প্রথমেই গড়ে তুলতে হবে শক্তিশালী বয়সভিত্তিক দল। বয়সভিত্তিক দলগুলো শক্তিশালী হয়ে গেলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। আগাতে হবে স্কুল, কলেজ ভিত্তিক দল নিয়ে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যারা খেলাধুলায় ভালো করতে তাদের সেই দিকে আগানোর জন্য সাহায্য করতে হবে। সবাইকে পড়ুয়া ছাত্র বানানোর পরিকল্পনা করলে হবে না।
জেলাভিত্তিক দলগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রত্যেকে জেলায় পর্যাপ্ত বাজেট দিতে হবে। টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। মাঠগুলোকে সংস্কার করতে হবে। আমাদের দেশের অনেক স্টেডিয়ামে এখন সবজি চাষ হয়। সঠিক পরিচর্যার অভাবে খেলাধুলার সুযোগ নেই বহু জায়গায়। স্টেডিয়ামে মেলা সহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয়। স্টেডিয়াম পরিচর্যা নিয়ে কারো কোনো দায়িত্ব থাকে না।
জাতীয়ভাবে লীগগুলোকে আরো গুছিয়ে আয়োজন করতে হবে। লীগের পিছনে বাজেট করতে হবে৷ আমরা তো অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল কোনো দেশ না যে আমরা মোটেও খরচ করতে পারব না। ভালো ভালো প্লেয়ার আনতে হবে লীগে। আমাদের খেলোয়াড়দেরশিশু বয়সেই ফুটবল উন্নত দেশের বিভিন্ন ক্লাবে প্রশিক্ষনের সুযোগ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে দেশেই গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করতে হবে ক্লাবের শাখা।কষ্টের বিষয় হলো- ফুটবলারদের চেয়ে ক্লাব কর্মকর্তা এবং বাফুফের কর্তাদের উপার্জন থাকে বেশি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির আমরা প্রতিনিয়ত খবরের কাগজে দেখতে পাচ্ছি। এটা কঠোর আইন করে বন্ধ করতে হবে।ফুটবলকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সকলের ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্ঠা আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা জরুরী। ২০১৯ সালেফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফাস্তিনো বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফরে এসে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ফুটবল আগের থেকে অনেক উন্নতি করেছে। আর এক সময় লাল-সুবজের দলটি আরও এগিয়ে যাবে। তাকে হয়তো ফুটবল কর্তারা বুঝিয়ে ছিলেন ফুটবল উন্নয়নে বাফুফে সবধরনের সুযোগ রেখেছেন তরুণদেও জন্য। আর ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফাস্তিনো সেটা শুনে এই মন্তব্য করেছেন। তিনি তো আর বাংলাদেশের তরুণদের তলানীর খবর নেন নি।
ইনফানস্তিনো সে সময় বলেছিলেন, আমার মনে হয় না বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলাক্রিকেট। এখনো এখানে ফুটবলই বেশি জনপ্রিয়। তিনি মিথ্যা বলেন নি। তিনি এটাও বলেছিলেন, ফুটবল হৃদয় দিয়ে খেলা যায়। আমি জানি ক্রিকেটে বাংলাদেশ বেশ সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু বিশ্বে কয়টা দেশ ক্রিকেট খেলে? ১০ বা ১১টা? কিন্তু ফুটবল খেলে ২১১টি দেশ। যখন প্রতিদ্বন্ধী কম হবে তখন সাফল্যের হার বেশি হবে। কিন্তু প্রতিদ্বন্ধিতা বেশি হলে সেটা সম্ভব নয়। যেমনটা ফুটবলে হয়। আর এখানেই ফুটবলের মূল চ্যালেঞ্জ। তার কথা সুর মিলিয়ে যদি আমরা ফুটবলের প্রতি আন্তকি হই তা হলে ফিফাও আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। তবে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এগিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে নারী ফুটবলে বাংলাদেশ বেশ উন্নতি করেছে। এদিকে বাংলাদেশের বংশভুত বিদেশের নাগরিকদের দেশে এনে ফুটবল উন্নয়নে করা জরুরী। যেমনডেনমার্ক থেকে এসে জাতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামাল ভূঁইয়া। ফিনল্যান্ডপ্রবাসী তারিক রায়হান কাজীকে ছাড়াও এখন জাতীয় দল ভাবা যায় না। নতুন দায়িত্ব নিলেও জামাল ও তারিকের ব্যাপারে ভালোই জানা আছে জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার। নতুন এই স্প্যানিশ কোচের মুখে অধিনায়ক জামালের প্রশংসার কোনো কমতি নেই। তবে কাবরেরা মনে করেন, ডিফেন্ডার তারিক হবেন বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ নেতা।
আর সে সাথে প্রতারক স্বার্থ্যবাদিদের কঠোর নজরদারিতে রেখে ফুটবল খেলতে আগ্রহী তরুণ কিশোরদের আগ্রহী করার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা তৈরী করার দায়িত্ব বাফুফের সহ সকলের।