ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী আগামী জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন এবং সংসদে চূড়ান্ত আইনে পরিণত করার দাবি করা হয়েছে।
কারণ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।
শনিবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনর আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমাদের দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। এছাড়া কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।
এর কারণ, বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত সংশোধনীটি আগামী সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন ও পাস হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো- আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সব পাবলিক প্লেসে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান` নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রেজিস্টার (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহবুবুস সোবহান।
প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী রোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির কারণ মূলত ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। তাই এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে আসন্ন সংসদ অধিবেশনেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন এবং পাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের এন্টি-টোব্যাকো সেলের সদস্য সচিব ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন, অ্যাসোসিয়েশন অব ফাজিশিয়ানস অব বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক সোহাইল মাহমুদ আরাফাত, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোইসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনসহ বাংলাদেশ ক্যান্সার সোইসাইটি ও অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।
ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক ব্যাধির অন্যতম প্রধান কারণ তামাকজাত দ্রব্যের বহুল ব্যবহার। জনগণের মধ্যে তামাক এবং তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে।
