রবিউল ইসলাম লাভলু, রংপুর :

চুক্তিভিত্তিক চাকরি বাণিজ্য, বদলি, কথায় কথায় নিরীহ কর্মচারিদের নানাভাবে হয়রানি, সেবা নিতে আসা রোগি ও রোগির স্বজনদের লাঞ্ছিত করা, হাসপাতাল অভ্যন্তরে ওষুধ বাণিজ্য, ক্যাম্পাসে-ফুটপাতে দোকান ও এ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য, হাসপাতাল প্রশাসনকে দাপটের সাথে দাবিয়ে রাখাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা নয়ন-শাহিন বাহিনীর মাধ্যমে সংঘঠিত হয় না। কর্মচারি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড অপব্যবহার করে হাসপাতালের সব পর্যায়ের কর্মকান্ডকে জিম্মি করে রাখার বিস্তর কাহিনী এখন ভুক্তভোগিসহ রংপুরবাসীর মুখে মুখে।

চাঞ্চল্যকর হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি নয়ন বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তুলে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যাান সাঈদ রহমান বলেন, প্রায় তিন মাস পূর্বে আমার ভাগিনা মশিউর রহমানকে চাকুরী দেয়ার কথা বলে এক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় নয়ন। পরে চাকুরী দেয়ার নামে কালক্ষেপন করেন। এমন কি চাকুরী  তো দূরের কথা, গ্রহণকৃত টাকা চাইতে গিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় আমিসহ প্রার্থী ভাগ্নে হামলার শিকার হই। হত্যা, হত্যার উদ্দেশে মারপিট, গুরুত্বর জখম, চুরি, হাসপাতাল অভ্যন্তরে নানান অপকর্মের হুকুমদাতা, কর্মচারি ইউনিয়নের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দস্যুতার ভূমিকায় জোরপূর্বক অন্যের পৈত্রিক জমি জবরদখলের চেষ্টা, এককালিন ও মাসিক বখরার ভিত্তিতে পছন্দের কর্মচারিদের দপ্তর বন্টন, হুকুম না মানলে খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী ইত্যাদি দূর অবস্থানে বদলির হুমকি, ইচ্ছেমত অলিখিত অর্থদন্ড,  এসব ন্যাক্কারজনক অপরাধ অব্যাহতভাবে সংঘটিত করে আসছে নয়ন বাহিনী। এমন কি নয়ন বাহিনীর নিজস্ব লোক দিয়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রকাশ্যে সরকারি ওষুধ কেনা-বেচার কারবারও চলে তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের এমন অপকর্ম রোধে দক্ষ প্রশাসনিক দায়িত্বের কোনো পরিচালক রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে বেশিদিন টিকতে পারেন না। সম্প্রতি বদলি হওয়া রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান সরকারের নির্দেশে  হাসপাতালে আউর্সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছুসংখ্যক জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বিদায়ী ওই পরিচালককে সেই নিয়োগ নয়ন বাহিনীর মনোনিত ঠিকাদারকে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন যা বিধিবহির্ভূত হওয়ায় হাসপাতাল প্রশাসন তা মানেন নি। পরে তাদের মনগড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জনবল নিয়োগ বানিজ্যের সুযোগ করে না দেয়ায় সেই সূত্রপাত ধরে তৎকালীন পরিচালকের বিষয়ে নানা মিথ্যা অপবাদ তুলে অযৌক্তিক য়া তুললে পরিচালক বদলি হন।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিদায়ী পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান টেলিফোনে জানান, ‘যুদ্ধে আমি পরাজিত সৈনিক। অনেক চেষ্টা করেও রমেক হাসপাতালের দির্ঘদিন থেকে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ অপশক্তির সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছি। যতদিন এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে হাপাতালকে মুক্ত করা না হবে, ততোদিন উত্তরাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত হতেই থাকবে।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০টি ওয়ার্ড রয়েছে। যার প্রতিটি ওয়ার্ডে বহিরাগত লোকবল নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছে ওষুধের দালালিসহ সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ ও সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি চুরি করার মোটা কমিশন হাতিয়ে নেন নয়ন বাহিনী। এমন কি নয়নের সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বহিরাগত মাদকসেবীদের দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডিউটি করান। যেসব মাদকসেবীদের দিয়ে অবৈধভাবে ডিউটি করান দিন শেষে তাদের হাজিরা না দিয়ে উল্টো তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় সারাদিনের কু-কর্মের ভাগ বাটোয়ারার হিস্যা।
বরাদ্দ ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নয়ন একজন চতুর্থ শ্রেনির কর্মচারী হয়ে কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ রমেক ক্যাম্পাসের ১০নং কোয়ার্টারে থাকেন কিভাবে? এছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি)সহ  গৃহস্থালি নানা রকম ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে সরকারি বিদ্যুৎ অপচয় করছেন নির্বিঘেœ। অভিযোগ রয়েছে, কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি শাহিন তথ্য বিভাগের কর্মচারি শিল্পীর কাছ থেকে তার স্বামীকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন স্বামীর চাকরি না হওয়ায় সেই টাকা ফেরত চাইলে উল্টো ভুক্তভোগিকেই হয়রানির হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি এবং সম্পাদক নয়নের কাছে জিম্মি পুরো হাসপাতাল। আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত কর্মচারিদের কাছে অসহায় চিকিৎসক, নার্সসহ সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এ বিষয়ে রমেক হাপাতালের কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নয়ন এর সাথে বার বার দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা দেননি। পরে টেলিফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন।  

হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, দির্ঘদিন থেকে জিইয়ে রাখা অযুত সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সময় ও সবার সহযোগিতা পেলে হাসপাতালের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন বলে তিনি আশাবাদি। তবে সংঘবদ্ধ নয়ন সিন্ডিকেটের ব্যাপারে বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এখনও ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। যথাযথ অভিযোগ পেলে দায়িদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।