ক্রীড়া প্রতিবেদক : সতের মাস পর দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজে আবার মাঠে নামছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। ম্যাচের আগের দিন বন্ধুত্বপূর্ণ আবহে দুই অধিনায়ক মুখে চওড়া হাসি নিয়ে উন্মোচন করেছেন ‘ওয়ালটন-বাংলাদেশ আফগানিস্তান ওয়ানডে সিরিজ’-এর আকর্ষণীয় ট্রফি। গত বছর চট্টগ্রামেই তিন ম্যাচের সিরিজ খেলেছিল দুই দল। এবারও সেখানেই খেলবে দুই দল। আজ দুপুর ২টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
সাদা আর রঙিণ পোশাকে আফগানিস্তান কতটা পরিবর্তনশীল তা বোঝা যায় চালচলনেই। টেস্টে খুব বাজেভাবে হারলেও রঙিন জার্সির খেলা আসতেই বদলে গেছে আফগানদের শরীরী ভাষা। জড়তা কাটিয়ে তারা এখন যথেষ্ট ফুরফুরে। অনুশীলনে নবী, রশিদ, মুজিবরা এতোটাই চনমনে যে, বোঝাই যাচ্ছে নিজেদের স্বস্তির বলয়ে ঢুকে গেছেন।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সিরিজে পরিষ্কার ফেভারিট কিনা– এ প্রশ্ন হতেই নড়েচড়ে বসেন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদী। হাসিমুখে বলেন, ‘আমরাও তো খেলতে এসেছি।’ এই বাক্য থেকে বোঝা গেল, সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে ফেভারিট মনে করে না আফগানিস্তান। কিছু পরিসংখ্যান মিশিয়ে হাসমতউল্লাহ বরং বুঝিয়ে দেন, আজ থেকে অনুষ্ঠেয় তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত, তা বোঝা যাবে ম্যাচ শুরু হওয়ার পর। তবে কথার লড়াইয়ে তামিম ইকবালের চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন হাসমতউল্লাহ। খেলার মাঠে যেটা খুব বেশি কাজে দেয় না। বিশেষ করে অভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না।
২০২২ সালে এই চট্টগ্রামে তা প্রমাণও করে দিয়েছিলেন তামিমরা। আগের বারের চেয়ে এবার আরও প্রভাব বিস্তার করে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে সে মানের দল বলা যেতেই পারে। তা হাসমতউল্লাহ না মানলেও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নে বাংলাদেশ সিরিজের পরিষ্কার ফেভারিট। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যারা জয় দিয়ে সিরিজের সূচনা করার অপেক্ষায়। কারণ, এ সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপেরও মহড়া।
সাগরিকার পাড়ে এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শেষ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় আর অতীত রেকর্ড বলছে ফেভারিট স্বাগতিকরাই। অধিনায়ক তামিম-ই এমন কথা বললেন, ‘আমার মনে হয় শেষ সিরিজ যেভাবে ছিল এই সিরিজ এরকমই থাকবে। তারা ভালো দল, বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং অ্যাটাক। গত সিরিজ থেকে কম কিছু আশা করছি না।’
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ১১ বার। বাংলাদেশের জয় ৭টি। সবশেষ গত বছর চট্টগ্রামেই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে লাল সবুজের দল। বাংলাদেশের মতো আফগানিস্তানও সরাসরি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পেয়েছে। সুপার লিগে ৯ ম্যাচ কম খেলেও আফগানদের কোয়ালিফাই খেলতে হয়নি। ১৫ ম্যাচের মধ্যে ১১টিতেই জয়।
সিরিজের আগের দিন স্বাগতিকরা রয়েসয়ে কাটিয়েছে। অনুশীলনের তীব্রতা ছিল না। সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম আর পাঁচ পেসার নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিনে। ব্যাট-বল ছুঁয়েই দেখেননি অধিনায়ক তামিম। তবে তার ফিটনেস নিয়ে আছে যথেষ্ট শঙ্কা। তবে তিনি খেলবেন নিজের অবস্থান বোঝার জন্য। অন্যদিকে আফগানিস্তানের অনুশীলন ছিল যথেষ্ট সক্রিয়। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নিবিড়ভাবে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন তারা।
জহুর আহমেদের উইকেটে হালকা ঘাস থাকবে। শুরুর দিকে পেসাররা সুবিধা পাবেন কিছুটা এমনটাই আঁচ করা যাচ্ছে। শুরুর চাপ সামলে নিতে পারলে এমন উইকেটে রানের উৎসবও করতে পারেন ব্যাটসম্যানরা।
বাংলাদেশ নামতে পারে একাদশে তিন পেসার দুই স্পিনার নিয়ে। সাতে দেখা যেতে পারে মেহেদী হাসান মিরাজ বা আফিফ হোসেন ধ্রুবর মধ্যে যে কোনো একজনকে। পেসারদের নিয়ে হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পাঁচ পেসারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হবে এতোটুকু জানা গেছে। অর্থ্যাৎ একেক ম্যাচে একেক কম্বিনেশন দেখা যেতে পারে। তামিম এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজ বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সেলও। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে একে অপরের বিপক্ষে। সেটিতে পাখির চোখ করেই নিজেদের সেরাটা দিতে মরিয়া দুই দল। অধিনায়ক তামিম জানিয়েছেন বিশ্বকাপে প্রায় ম্যাচে হয় হাই স্কোরিং। সেই বিবেচনায় চট্টগ্রামকে বাছাই করা হয়েছে এই সিরিজের জন্য।
তামিমের ভাষ্য, ‘একটা জিনিস মাথায় আছে- হাই স্কোরিং ম্যাচ হলে ভালো হয়। সাধারণত চট্টগ্রাম হাই স্কোরিং ম্যাচ। বিশ্বকাপে হাই স্কোরিং ম্যাচ হবে।’
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও এ দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে রাতের দিকে কিছুটা সম্ভাবনা আছে। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচ শেষের দিকেই থাকবে। তামিমরা কি পারবেন বিশ্বকাপের প্রথম প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয় তুলে নিজেদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে? নাকি আফগানিস্তান টেস্ট হারের বদলা নিতে ওয়ানডের শুরুটা দুর্দান্ত করবে?