স্বাধীন বাংলা ডেস্ক:
বরাবরই শিক্ষার্থীরা ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রাজনীতির কঠিন সন্ধিক্ষণে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা প্রায়শই সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের তৎপর্যপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বৃহৎ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ছাত্র আন্দোলনই সবসময় কোনো অঞ্চলের জন্য মূল চালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রাজনীতিতে বিশ্বব্যাপী তাদের প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
২৫ আগস্ট ‘স্টুডেন্টস ইম্প্যাক্টস অন পলিটিকস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাকিস্তান টুডে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে বিশাল আলোড়ন তুলেছিল শিক্ষার্থীরা। সেসময় তারা মাতৃভাষার পক্ষে দুর্বার আন্দোলন তৈরি করেছিল। যার প্রভাব পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধেও ছিল।
বাংলাদেশের ছাত্ররা সবসময়ই দেশের রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারা দেশের যে কোনো সংকটে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলেছে এবং সফল হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন নতুন এক গতি হাজির করেছে। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি, অসমতা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে তরুণদের ধারাবাহিক প্রভাব গোটা জাতিকে নতুন লক্ষ্যে অর্জনের পথ প্রসস্ত করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারে দুই ছাত্রের দায়িত্বপালন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা রাজনীতিতে ছাত্রদের আওয়াজকে বুলন্দ করেছে। এই পদক্ষেপটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং ছাত্র আন্দোলনের জাতীয় চেতনায় যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে তা প্রতিফলিত করে। এই ছাত্র নেতারা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পেরেছে। শিক্ষাগত সংস্কার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপে তরুণ প্রজন্মের সাথে যুক্ত বিষয়গুলোর উপর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। তাদের সম্পৃক্ততা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের দিকে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে তরুণদের উদ্বেগগুলিকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
অন্তর্র্বতী সরকারে ছাত্রদের দায়িত্বপালন ঐতিহ্যগত রাজনীতিতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক। কেননা ছাত্র আন্দোলনের মূল চাবি হচ্ছে, ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতা। এক্ষেত্রে অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং অন্তর্র্বতী সরকারে তাদের অন্তর্ভুক্ত পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত সমাজের পথে চলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ সত্ত্বেও শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্রুত রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া মানতে বাধ্য করা হচ্ছে যা সুশাসন প্রতিষ্ঠারই ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব অন্তর্র্বতী সরকারের ক্ষমতার উঠোন ছাড়িয়ে গেছে। এই আন্দোলন নীতি পরিবর্তনের পক্ষে তরুণ ভোটারদের সংঘবদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের জবাবদিহি করার মাধ্যমে রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে পুনর্র্নিমাণ করার সম্ভাবনাও তৈরি করেছে এই ছাত্র আন্দোলন। বিভিন্ন উপায়ে, ছাত্ররা জাতির জন্য একটি নৈতিক মানদণ্ড হিসাবে কাজ করছে, তারা এমন পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি করতে চায় যা ন্যায্যতা, সমতা এবং ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করবে।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে, রাজনীতিতে ছাত্রদের সক্রিয়তা কীভাবে বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। দেশের সর্বস্তরের নাগরিকরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। মূলত এই গণজোয়ার ইতিবাচক সমাজগঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে সক্ষম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামো মৌলিকভাবে অগণতান্ত্রিক হওয়ায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃত সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন তরুণরা।
দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বংশবাদী নেতৃত্ব দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে ক্ষমতা একক পরিবার বা অভিজাতদের একটি ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়। যা গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। তরুণদের প্রতিনিধিত্ব জবাবদিহিতার উপর জোর দেয়। এই জাতীয় ব্যবস্থায়, নেতৃত্ব প্রায়শই যোগ্যতা বা দলীয় সদস্যদের ইচ্ছার মাধ্যমে অর্জিত হওয়ার পরিবর্তে পারিবারিক লাইনের মাধ্যমে চলে যায়। এই নিবিষ্ট বংশতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে ক্ষুন্ন করে এবং নতুন চিন্তা ও নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্র: মানবজমিন
|