স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য ও চেক জালিয়াতির ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি বিভিন্ন তথ্য সূত্র অনুসন্ধান করে জানা যায়, টাঙ্গাইলের সন্তোষে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যান্তরেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সূত্র মতে জানা যায়, এ বিশ^বিদ্যালয়ে সামান্য পদে চাকরি করা ব্যক্তিদের ব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার সেলিম ও রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদ। নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত ব্যক্তিদের ঘটনায় চেক জালিয়াতী ও এ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।
ঘটনার সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে মাওলানা ভাসানী বিশ^বিদ্যালয়ে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি দেখে টাঙ্গাইল সদর উপজেলাধীন বেপারী পাড়ার সারোয়ার হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন চাকরিপ্রার্থী ছিলেন। সাব্বির হোসেন চাকরিপ্রাপ্তির লক্ষ্যে ওই বিশ^বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল হলের ডাইনিংয়ে কর্মরত পূর্বপরিচিত সুমনা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন। সুমনা আক্তার বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. তৌহিদ ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার সেলিমের সাথে যোগাযোগ করে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার আশ^াস দেয়। সুমনা আক্তারের দাবী মোতাবেক সাব্বির হোসেন চাকরি চাকরিপ্রাপ্তির জন্য সুমনা আক্তার, রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রারের সাথে ঢাকা ক্লিনিকের বিপরীতে একটি অভিজাত হোটেল এবং রেষ্টুরেন্টে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তাদের আশ^াসে সাব্বির হোসেন দুই দফায় ঘুষের টাকা পরিশোধ করে। প্রথম দফার ১ লক্ষ টাকা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক, সন্তোষ বিশ^বিদ্যালয় শাখা, ডেপুটি রেজিস্ট্রার সেলিম যার একাউন্ট নং-৬০৩০১০০০০০১৪০-এ জমা দেন চাকরিপ্রত্যাশি সাব্বির। দ্বিতীয় দফার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মধ্যস্ততাকারী সুমনা আক্তার নগদে গ্রহণ করে। কিন্তু সাব্বিরের চাকরি না হওয়ায় তিনি সুমনা আক্তারকে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। সুমনা আক্তার ঘুষের টাকা ফেরত দিতে নানা তালবাহানা শুরু করে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের পারিবারিক ও নানা মহলে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। হয় নানা বৈঠক। কিন্তু তারপরও সমস্যার সমাধান হয় না। সব শেষে উভয় পরিবারের সমঝোতায় সুমনাকে ডেকে সাব্বিরের বাসায় বৈঠক হয়। সুমনা টাকা পরিশোধের জন্য সময় চায়। সকলের উপস্থিতিতে সাব্বিরও সময় দেয়। এসময় সুমনার নিকট থেকে সাব্বির একটি ব্ল্যাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর রাখে এবং ১৫০টাকা মূল্যের নন জুুডিশিয়াল ২টি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখেন সাব্বির। সুমনা নির্ধারিত সময়ে সাব্বিরের টাকা পরিশোধ না করায় সাব্বির সুমনা আক্তারের দেওয়া ব্ল্যাংক চেকে ১৫ লক্ষ টাকা বসিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকে গিয়ে চেক ডিজওনার করেন। এছাড়া সুমনার স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্পে আবারও মোটা অঙ্কের টাকা লিখে জালিয়াতি করে মামলা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সাব্বির তার এ এ জালিয়াতির ঘটনা বৈধ বা জায়েজ করার জন্য দৈনিক স্বাধীন বাংলা পত্রিকার টাঙ্গাইল প্রতিনিধি সংবাদকর্মী মোঃ আজাহারকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ করার জন্য প্ররোচিত করেন। সাব্বিরের তথ্য ও অভিযোগ মোতাবেক সংবাদকর্মী অভিযুক্ত সুমনার নিকট সত্য তথ্য প্রমাণ অনুসন্ধান করতে গেলে ভিডিও বক্তব্য মোতাবেক সাব্বিরের অভিযোগটি জালিয়াতি ও অতিরঞ্জিত প্রমাণিত হয়।
দায়িত্বশীল ও নৈতিক সাংবাদিকতার স্থান থেকে এমন মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত সংবাদ পরিবেশন থেকে সাংবাদিক আজহার বিরত থাকেন। তিনি বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করবেন না বলে সাব্বিরকে জানান। সাব্বির আহমদ সাংবাদিক আজহারের আত্মীয় হওয়ার পরও মিথ্যা সংবাদ করতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
মিথ্যা সংবাদ প্রচার না করায় সাব্বির সাংবাদিক আজহারের উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং গত ১১ সেপ্টেম্বর ও ১৪ সেপ্টেম্বর দুই দফা আজহারুল ইসলামের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাকে নানা হুমকি, গালিগালাজ, মিথ্যা চাদাবাজি মামলা দেওয়া সহ নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। অবশেষে সাংবাদিক আজহার নিরুপায় হয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় ২১ সেপ্টেম্বর সাব্বিরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
চাকরি প্রদান ও ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সেলিমের সেল ফোনে কথা হলে তার একাউন্টে টাকা লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেন এবং বলেন সুমনা আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ের কোন স্টাফ না। তবে তার সাথে ব্যক্তিগত টাকা লেনদেনের বিষয় ছিলো। আমার একাউন্টে এক লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলো। পরে বিষয়টি টাঙ্গাইল শহরে একটি অভিজাত রেষ্টুরেন্টে গিয়ে রেজিস্ট্রারসহ বৈঠক করে আমি সুমনাকে ঐ টাকা ফেরত দিয়েছি।