‘হাসিনা সরকার মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে পালিয়েছে’
12, October, 2024, 3:35:23:PM
জেলা প্রতিনিধি, পাবনা:
ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলে পালিয়ে গেছেন। শিক্ষকদের বেতন কাঠামো থেকে শুরু করে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে দক্ষ দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান মাদানী।
শনিবার( ১২ অক্টোবর) দুপুর পাবনার বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
শিক্ষাকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে শিক্ষক এর কর্ণধার হবে। শিক্ষার্থীদের আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আগে শিক্ষককে আদর্শবান হতে হবে। নিজেদের অধ্যাবসায়ের মধ্যে রেখে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করাতে হবে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, তাই শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে মেরুদণ্ড সম্পুর্ণ একটি জাতি গঠন করা যায়। নৈতিকতা শিক্ষাকে আগে প্রাধান্য দিতে হবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের কথা স্বরণ করে তিনি বলেন, আমাদের কলিজার টুকরা ছেলে মেয়েরা ও সাধারণ জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এই নতুন বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন। তাদের আত্মদানকে সমুন্নত রাখতে হলে অব্যশ্যই শিক্ষকদের শিক্ষার কারিগর হতে হবে। ক্লাসে ক্লাসে শহীদদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
রাসুলের আদর্শের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাসুলের আদর্শ পুরোপুরি মানতে হলে অশান্ত সমাজকে শান্ত করে গড়ে তুলতে হবে। পতিত সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে পালিয়ে গেছে। তিনি একটি জাতিকে ধ্বংস করে গেছে। বিসমিল্লাহ শব্দটি বলতে পারে না অথচ তাদের দেওয়া হয়েছে মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে। আসলে তারাতো মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলেছে। এখন তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কোথাও ঠাঁই হচ্ছে না।
আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাই যেখানে কোরআনের আলো থাকতে হবে। এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা চাই সেখানে রাসুলের আদর্শ পুরোপুরি থাকতে হবে। যেই পড়াশোনা করে এসপি- ডিসি হয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। কোরআন দিয়ে তারা জেলার সকল কাজ পরিচালনা করবে। এমন ব্যক্তিরা ক্ষমতায় আসবে যারা মসজিদের ইমাম হবে আবার ক্ষমতার মসনদে বসে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।
যাদেরকে পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে বসানে হয়েছে তারা সেকুলারিজমে বিশ্বাসী। তাদেরকে সেখান থেকে সড়াতে হবে।
মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষক পরিষদে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর অবদানের কথা স্বরণ করে তিনি বলেন, কোরআনের পাখি সাঈদী সাহেব আজীবন মাদরাসা শিক্ষার জন্য আন্দোলন করে গেছেন। তিনি আজকে বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। তাকেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
সাঁথিয়ার ধুলাউড়ি কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও পাবনা ইসলামীয়া ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল লতিফের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ড. মাওলানা আবু ইউসুফ খান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক আহমাদ, পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল, পাবনা ইসলামীয় ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ প্রিন্সিপাল অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মো. ইকবাল হোসাইন, পাবনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল গাফ্ফার খান, পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী প্রমুখ।
সম্মেলনে পাবনা জেলা মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের কমিটি গঠন করা হয়। এতে ধুলাউরি কাউছারিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি ও পাবনা ইসলামীয়া ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল লতিফকে সেক্রেটারি ঘোষণা করা হয়।
মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের ১০ দফা দাবি সমূহ- শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ করে সরকারি বেসরকারি বৈষম্যসমূহ দূর করা, জাতীয়করণ না করা পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শতভাগ উৎসব ভাতা, ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়াসহ সকল সুবিধা দেওয়া, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন সমন্বয় কমিটি গঠন করা,পতিত স্বৈরাচারী সরকারের গঠিত দুর্নীতিগ্রস্ত অবসর সুবিধাবোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কমিটি বাতিল করা, এমপিও বিহীন ইবতেদায়ী ও দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল মাদ্রাসাকে অবিলম্বে এমপিও প্রদান করা এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষকদের সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষকদের সমান বেতন দেওয়া , অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, সুপার-সহঃসুপারদের দুইটি উচ্চতর গ্রেড প্রদান এবং সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করা, মাদ্রাসার শিক্ষকদের শূন্যপদসমূহ দ্রুত নিয়োগদানের ব্যবস্থা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ন্যায় সকল পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়স সীমা ৬৫ বছর করতে হবে, শিক্ষক/কর্মচারীদের অবসরের ৩ মাসের মধ্যে অবসর ভাতা এবং কল্যাণ ভাতা প্রদান করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদেরও উপবৃত্তি প্রদানসহ সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া, বিগত ২০০৯ সাল থেকে বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারী যাদেরকে দীর্ঘদিন যাবত অন্যায় ও অবৈধভাবে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত। বরখাস্ত করা হয়েছিল তাদেরকে পুনরায় বহাল করা।