বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩ বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   ইসলাম -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
বরকতময় ইফতারের দোয়া ও ফজিলত

ইসলাম ডেস্ক :

সারা দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পর প্রথম যে পানাহারের মাধ্যমে উপবাস ভঙ্গ করা হয়, তাকে ‘ইফতার’ বলে। ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারের আগেই ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নাত।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই আকর্ষণীয় যে আল্লাহতায়ালা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দাগণ যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)।

মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি; একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (মুসলিম)।

হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।’ (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস : ৫৬০, পৃষ্ঠা : ১৩১)।

হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস : ১৮৩৩)।

খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত; যে কোনো ফল দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নাত আদায় হবে। মিষ্টান্ন দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নাত পালন হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দ্বারা; নিশ্চয়ই পানি পবিত্র।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ; আলফিয়্যাতুল হাদিস : ৫৬২, পৃষ্ঠা : ১৩১-১৩২)।

ইফতার করা যেমন ফজিলতের, ইফতার করানোও তেমনি বরকতের। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)!

আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

ইফতারের দোয়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি।

বরকতময় ইফতারের দোয়া ও ফজিলত
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

সারা দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পর প্রথম যে পানাহারের মাধ্যমে উপবাস ভঙ্গ করা হয়, তাকে ‘ইফতার’ বলে। ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারের আগেই ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নাত।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই আকর্ষণীয় যে আল্লাহতায়ালা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দাগণ যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)।

মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি; একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (মুসলিম)।

হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।’ (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস : ৫৬০, পৃষ্ঠা : ১৩১)।

হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস : ১৮৩৩)।

খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত; যে কোনো ফল দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নাত আদায় হবে। মিষ্টান্ন দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নাত পালন হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দ্বারা; নিশ্চয়ই পানি পবিত্র।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ; আলফিয়্যাতুল হাদিস : ৫৬২, পৃষ্ঠা : ১৩১-১৩২)।

ইফতার করা যেমন ফজিলতের, ইফতার করানোও তেমনি বরকতের। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)!

আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

ইফতারের দোয়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি।

তারাবি নামাজের নিয়ম ও গুরুত্ব
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

শুরু হচ্ছে মুসলিমদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম রোজা। ইমান, নামাজ ও জাকাতের পরই রোজার স্থান। আরবি ভাষায় রোজাকে সাওম বলা হয়, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এক মাস ধরে সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থেকে রোজা রাখেন।

রমজান মাসের বিশেষ ইবাদত হলো তারাবির নামাজ। তারাবি হলো আরবি শব্দ “তারবিহাহ”র বহুবচন; যার অর্থ বিশ্রাম নেওয়া ও প্রশান্তি লাভ করা। ইসলামি বিধান অনুযায়ী, প্রতি চার রাকাত পর পর তারাবির নামাজে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এ নামাজে দেহ-মনে প্রশান্তি আসে বলেই একে তারাবির বা প্রশান্তির নামাজ বলা হয়ে থাকে।

রমজানের চাঁদ দেখা গেলে রোজার আগেই তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নত। এমনকি যারা শরিয়তসম্মত কোনো গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে রোজা পালনে অক্ষম, তারাও সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে তারাবির নামাজ আদায় করবেন বলে হাদিসে রয়েছে। পুরুষদের জন্য তারাবির নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। নারীরা বাড়িতে আদায় করলেও চলবে।

রমজান ছাড়া বছরের আর কোনো মাসে তারাবির নামাজ নেই। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে তারাবি নামাজের চর্চা না থাকায় অনেকেই এ নামাজের নিয়ম, প্রচলিত দোয়া ওমোনাজাত ভুলে যান। ২০ রাকাত তারাবি নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। বাংলাদেশে দুই ধরনের তারাবির নামাজ প্রচলিত। একটি হলো সুরা তারাবি এবং অন্যটি হলো খতম তারাবি। সুরা তারাবি হলো পূর্ণ কোরআন শরীফ না পড়ে বিভিন্ন সুরা দিয়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা। খতম তারাবি হলো রমজান মাসে সম্পূর্ণ কোরআন সহকারে তারাবি আদায় করা। উভয় পদ্বতিই ইসলাম অনুমোদন করে।

রমজান মাস পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। আর খতম তারাবির নামাজের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য কোরআন তিলাওয়াত করা ও শোনা। এ নামাজে পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার পাঠ করা সুন্নত। সুরা তারাবি পড়লেও ২০ রাকাত পড়া সুন্নত। একা পড়লেও ২০ রাকাতই পড়া সুন্নত। নারীদের জন্যও ২০ রাকাত তারাবি সুন্নত।

আরবি এবং বাংলা দুইভাবেই তারাবির নামাজের নিয়ত করা যাবে। আরবি নিয়ত হচ্ছে, নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। অন্যদিকে, বাংলা নিয়ত হচ্ছে- আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।

এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে তারাবি নামাজ আদায় করতে হয়। এভাবে চার রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেওয়া। তাসবিহ-তাহলিল পড়া বা কিছু সময় বিরতি নেওয়া উত্তম। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। এরপর আবার দুই দুই রাকাত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবি আদায় করা।

তারাবির নামাজের দোয়া হলো- সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।

তারাবির নামাজের মোনাজাত হলো- আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

অনেকেই ৪ রাকাত পর পর মোনাজাত করে থাকেন। আবার অনেকে পুরো নামাজ শেষ করে মোনাজাত একসঙ্গে মোনাজাত দেন। তবে নামাজ শেষ করে বিতর পড়ে মোনাজাত দেওয়াই উত্তম। রমজান জুড়ে বিশ্বনবীর এ দুটি ইসতেগফার  বেশি বেশি পড়া জরুরি। একটি হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা`ফু আ`ন্নি। অন্যটি হলো- আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ`বদুকা ওয়া আনা আ`লা আ`হদিকা ওয়া ওয়া`দিকা মাসতাত্বা`তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা`তু আবুউলাকা বিনি`মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।

এশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের আগপর্যন্ত তথা সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত তারাবির নামাজ আদায় করা যায়। ২০ রাকাত তারাবির নামাজ প্রতিষ্ঠিত নিরবচ্ছিন্ন সুন্নত। যেহেতু এটি সুন্নত নামাজ, তাই কোনো কারণে পড়তে না পারলে অসুবিধা নেই। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজাদারের উচিত তারাবি নামাজ পড়তে সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

রোজার সঙ্গে তারাবির নামাজের অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে (বুখারি, হাদিস: ৩৬)।”

তারাবির নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, রাকাত তারাবি আদায় করে বিশ্রাম বা বিরতির পর  ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে, যা দেশের প্রায় মসজিদে পড়া হয়। আর সেটি হলো-আর আমি তোমাদের জন্য তারাবি নামাজকে সুন্নাত করেছি। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয় (নাসায়ি, পৃষ্ঠা: ২৩৯)।”

অকারণে রমজানের রোজা না রাখার শাস্তি
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

রমজানের রোজা ইসলাম ধর্মে প্রধান একটি রোকন। প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন বালেগ মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা ফরজ (অবশ্য পালনীয়)। এ মাসের একটি রোজা সারাবছর রোজা রাখার চেয়েও অনেক বেশি সওয়াবের কাজ। অকারণে রোজা না রাখা কোনো মুসলমানের জন্য জায়েজ নয়।

রোজার বিধান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থ: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। ’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

অন্য আয়াতে এসেছে, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

অর্থ: ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। ’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

শরিয়তসম্মত ওজর বা যথাযথ কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গকারীদের সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসূলকে (সা.) বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুজন ব্যক্তি এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাকে বলল, পাহাড়ে উঠুন।

আমি বললাম, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। আমি ওঠা শুরু করি এবং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছি। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারের শব্দ শুনতে পাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিসের শব্দ? তারা বলল, এটা জাহান্নামিদের আওয়াজ। এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকদের কাছে নিয়ে যায়, যাদেরকে পায়ের টাখনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নভিন্ন, তা হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা বললেন, এরা এমন রোজাদার যারা (অকারণে রমজান মাসের) রোজা শেষ না করেই ইফতার করত। ’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১৫০৯)

রোজা রেখে সময়ের পূর্বে ইফতার করে নেওয়ার শাস্তি যদি এই হয়, তা হলে বিনা কারণে রোজা না রাখার শাস্তি কি হতে পারে তা বলাইবাহুল্য। রমজানের একটি রোজা সারাজীবনের রোজার সমতুল্য নয়; রমজানে ভেঙে ফেলা রোজার বিনিময় কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। একটি রোজার পরিবর্তে সারাজীবন রোজা রাখলেও তার হক আদায় হবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রয়োজন ও রোগ-ব্যাধি ছাড়া রমজানের একটি রোজা ভেঙে ফেলে, তার সারাজীবনের রোজার দ্বারাও এই কাজা আদায় হবে না, যদিও সে সারাজীবন রোজা পালন করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৮১১)

ইমাম যাহাবি (রহ.) ‘মুমিনদের নিকটে এ কথা স্থির-সিদ্ধান্ত যে, যে ব্যক্তি কোনো রোগ ও ওজর না থাকা সত্ত্বেও রমজানের রোজা ত্যাগ করে, সে ব্যক্তি একজন ব্যভিচারী ও মদ্যপায়ী থেকেও নিকৃষ্ট। বরং মুসলিমরা তার ইসলাম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে এবং ধারণা করে যে, সে একজন নাস্তিক ও নৈতিক স্খলিত মানুষ। ’ (মাজমূউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ : ২৫/২২৫)

রমজানের ফরজ রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া মারাত্মক অপরাধ। যারা এমনটি করবে তারা মহাক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রমজানের রোজা যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং এ রোজার মাধ্যমে আমাদের কৃত গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন। আমিন।

আপনার সন্তানকে যেভাবে রোজায় অভ্যস্ত করবেন
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্যে অন্যকে অনুকরণ-অনুসরণ করার একটা সহজাত প্রবৃত্তি দান করেছেন। এটা ছোটদের মধ্যে আরো বেশি ক্রিয়াশীল। তারা বড়দের অনুসরণ করে, অনুকরণ করে। অন্যকে দেখে দেখে, শুনে শুনে শেখে। আশপাশের মানুষজন থেকে শিখতে শিখতে বড় হয় শিশুরা। শৈশবে কোনো কাজে বা আমলে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে বড় হয়ে তা করা সহজ হয়।

শিশুরা মা-বাবার অনুকরণ করে : শিশুরা আশপাশের লোকজন ও পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। এ ক্ষেত্রে শিশুর মা-বাবা এবং তার আশপাশে যারা থাকে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবার ওপর সন্তানের অধিকার হলো তাদের সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, উত্তমরূপে পরিচর্যা করা, সুশিক্ষা প্রদান করা। তাই প্রত্যেক মা-বাবার দায়িত্ব তার সন্তানকে ইসলামী শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া, ইবাদতের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা, ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা, তাদের অন্তরে দ্বিনি শিক্ষার বীজ বপন করা।



হাদিসে ঘরে নফল নামাজ আদায় ও কোরআন তিলাওয়াত করতে বলা হয়েছে, যাতে শিশুরা তা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়। শিশুর মনে নামাজের প্রতি ভালোবাসা এবং তা পালনে সচেষ্ট হওয়ার জন্য রাসুল (সা.) সাত বছর বয়স হলেই শিশুদের নামাজ পড়ার আদেশ দিতে বলেছেন। অবশ্য রোজা অন্যান্য ইবাদত থেকে ভিন্ন। এতে প্রয়োজন শারীরিক সক্ষমতা।

সাহাবাযুগে শিশুর রোজায় অভ্যস্ত হওয়ার দৃশ্য : সাহাবায়ে কেরাম শিশুর পরিচর্যার ব্যাপারে সজাগ থাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তাদের নামাজ-রোজার প্রতি অভ্যস্ত করাতেন। ইবাদতের প্রতি তাদের অগ্রহী করে তুলতেন। এ ক্ষেত্রে রুবাইয়ি বিনতে মুআওয়িজ (রা.) বলেন, ‘আশুরার দিন সকালে রাসুল (সা.) আনসারদের সব পল্লীতে এই নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি রোজা পালন করেনি, সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে; আর যারা রোজা রেখেছে, সে যেন রোজা পূর্ণ করে। পরবর্তী সময়ে আমরা ওই দিন রোজা রাখতাম এবং আমাদের সন্তানদের রোজা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬০)

হাদিসের বর্ণনায় শিশুদের রোজা : ইমাম বুখারি (রহ.) তাঁর সহিহ বুখারিতে ‘বাবু সাওমিস সিবয়ান’ তথা ছোটদের রোজার রাখার  বিধান নামে একটি অধ্যায় স্থাপন করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, রমজান মাসে এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে ওমর (রা.) বলেন, ‘আফসোস তোমার জন্য! আমাদের ছোটরা রোজা রাখে আর তুমি রোজা রাখো না!’



একবার একজন নারী রাসুল (সা.)-এর কাছে একটি শিশুকে নিয়ে আসে। ওই নারী জিজ্ঞেস করল, এই শিশুর জন্যও কি হজের বিধান রয়েছে? তখন রাসুল (সা.) বলেন, হ্যাঁ, আর তোমার জন্য আছে সওয়াব। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২৮২)

উপর্যুক্ত তিনটি হাদিস থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। শিশুদের নামাজ-রোজাসহ অন্যান্য ইবাদতে অভ্যস্ত করানো, শিশুদের রোজা রাখার বৈধতা এবং শিশুরা ভালো কাজ করলে বা নামাজ, রোজা, হজ আদায় করলে মা-বাবাও তার সওয়াব পাবে।

যেভাবে ছোটদের রোজার প্রতি অভ্যস্ত করাব : শিশুমনে ইসলামী বিধি-বিধানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি এবং তাদের তা পালনে অভ্যস্ত করাতে রমজান মাস ও রমজানের রোজা কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তারাবি, সাহরি, ইফতার, কোরআন তিলাওয়াতের যে সামগ্রিক পরিবেশ তৈরি হয়, তা শিশুমনে ইবাদতের আগ্রহ তৈরি করে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে কারো ওপর রোজা ফরজ নয়। কেননা রাসুল (সা.) বলেন, তিন প্রকারের ব্যক্তি থেকে (হিসাব-নিকাশের) কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে—পাগল, ঘুমন্ত ব্যক্তি ও নাবালগ শিশু। (আবু দাউদ,    হাদিস : ৪৪০১)

তবে শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করাতে রোজা রাখানো মুস্তাহাব বলে মত দিয়েছেন বিজ্ঞ আলেমরা।

শিশুরা যেভাবে রোজা রাখতে অভ্যস্ত হয় : নিম্নে বর্ণিত কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করলে শিশুরা রমজানের রোজা রাখায় অভ্যস্ত হবে -

মানসিক প্রস্তুতি : ছোটদের ওপর শরিয়তের বিধি-বধান মেনে চলা আবশ্যক নয়। তবে তাদের শরিয়তের বিধি-বিধান মেনে চলার প্রতি অভ্যস্ত করাতে হবে। তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এই মানসিক প্রস্তুতি তাদের পরবর্তী সময়ে শরিয়তের যেকোনো বিধান পালন করাটা সহজ করে দেবে। সেই লক্ষ্যে তাদের হৃদয়ে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি ভালোবাসা এবং তা পালনে আগ্রহী করে তোলা।

কৌশল অবলম্বন করা : ছোটদের রোজার প্রতি অভ্যস্ত করতে উপযোগী কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ধীরে ধীরে রোজা পালনের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। প্রথম দিকে অর্ধদিন এবং ধীরে ধীরে পূর্ণদিন রোজা রাখার প্রতি অভ্যস্ত করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছোটরা রোজা রাখলে তাদের প্রশংসা করা। পরিবারে একাধিক নাবালগ বাচ্চা থাকলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা জাগিয়ে তুলতে হবে। ক্ষুধার কথা বললে, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া বা খেলায় ব্যস্ত রাখবে—যেভাবে সাহাবারা করতেন। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেবে, বেশি অসুবিধা মনে করলে ওই দিনের রোজা ভেঙে পরের দিন আবার চেষ্টা করবে।

রোজার মর্যাদা বর্ণনা করা : যেকোনো বিষয়ের মর্যাদা জানা থাকলে তার প্রতি গুরুত্ব বাড়ে। ছোটদের রোজা ও রমজানের মর্যাদা বর্ণনা করা, যাতে তারা রোজা পালনে উৎসাহিত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতি কখনোও কঠোরতা প্রদর্শন করা যাবে না। রোজা না রাখলে বকাঝকা করা যাবে না।

পুরস্কার দেওয়া : ছোট বাচ্চারা রোজা রাখলে তাদের জন্য বড়দের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা। তাদের পছন্দনীয় জিনিস পুরস্কার দেবে। এটি ছোটদের  রোজা রাখতে উৎসাহী ও অনুপ্রাণিত করবে। প্রয়োজনে তাদের কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবে।

যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

রমজান মাসে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে রোজা পালন করতে হয়। যদি কেউ এসব নিয়ম যথাযথভাবে পালন না করেন তাহলে তার রোজা ভেঙে যেতে পারে। শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তির জন্য রোজা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ। ইসলামী শরিয়তে রোজা ভঙ্গ করার প্রতিবিধান রাখলেও তার শত ভাগ ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (শরিয়ত অনুমোদিত) কোনো কারণ ছাড়া বা রোগ ছাড়া রমজান মাসের একটি রোজা ভেঙে ফেলে, তার পুরো জীবনের রোজা দিয়েও এর ক্ষতিপূরণ হবে না। যদিও সে জীবনভর রোজা রাখে। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘রোজা রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা করো। আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে ঊষার শুভ্ররেখা স্পস্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত আসা পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ রোজাদার তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকতে বলেছেন—ক. স্ত্রী-সম্ভোগ, খ. খাবার গ্রহণ, গ. পানীয় গ্রহণ। সুতরাং কেউ স্ত্রী-সম্ভোগ ও পানাহারে লিপ্ত হলে তার রোজা ভেঙে যাবে। এ ছাড়া আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে ‘হায়িজ’ বা নারীদের ঋতুস্রাবের কারণেও রোজা ভেঙে যায়।

যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় এবং তার প্রতিবিধান হিসেবে কাজা ও কাফফারা (ক্ষতিপূরণ) উভয়টি আদায় করতে হয়। তা হলো স্ত্রী-সম্ভোগ ও ইচ্ছাকৃত পানাহার। কেউ যদি ইচ্ছা করে রমজান মাসের দিনের বেলা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে অথবা পানাহার করে তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। তার প্রতিবিধান হিসেবে ব্যক্তিকে রোজার কাজা ও কাফফারা করতে হবে। তবে ইমাম শাফেয়ি ও আহমদ (রহ.)-এর মত হলো কেউ ইচ্ছা করে কিছু খেলে শুধু কাজা করবে। কাফফারা দিতে হবে না। তাদের মতে, শুধু স্ত্রী-সম্ভোগের কারণেই রোজার কাফফারা ওয়াজিব হয়।

ওষুধ ও ধূমপান পানাহারের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বেচ্ছায় যেকোনো প্রকার বীর্যপাত স্ত্রী-সঙ্গমের অন্তর্ভুক্ত। কোনো স্বামী যদি স্ত্রীকে সহবাসে বাধ্য করে তবে স্ত্রী শুধু রোজা কাজা করবে এবং স্বামীর কাজা-কাফফারা দুটোই করবে।

এছাড়া যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হলে প্রতিবিধান হিসেবে শুধু কাজা করতে হয়, কাফফারা দিতে হয় না। এমন কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে -
১. ইচ্ছা করে বমি করা
২. বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা
৩. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব
৪. ইসলাম ত্যাগ করলে
৫. গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে
৬. কুলি করার সময় অনিচ্ছায় গলার ভেতর পানি প্রবেশ করলে
৭. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে
৮. রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে
৯. রাত অবশিষ্ট আছে মনে করে সুবেহ সাদিকের পর পানাহার করলে
১০. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে
১১. মুখ ভরে বমি করলে
১২. ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরো কিছু খেলে
১৩. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে
১৪. কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে
১৫. জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে
১৬. অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে
১৭. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেওয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে। (ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)

রোজার কাজা ও কাফফারা কী?

রোজার কাজা হলো ভেঙে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা রোজার প্রতিবিধান হিসেবে শুধু রোজা আদায় করা। অতিরিক্ত কিছু আদায় না করা। অন্যদিকে রোজার কাফফারা হলো প্রতিবিধান হিসেবে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করা।

রোজার কাফফারা বিষয়ে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি রোজা অবস্থায় আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, স্বাধীন করার মতো কোনো ক্রীতদাস তুমি মুক্ত করতে পারবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি একাধারে দুই মাস সওম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেন, ৬০ জন মিসকিন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না।

হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, তখন নবী (সা.) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নবী (সা.)-এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা হলো যাতে খেজুর ছিল। আরাক হলো ঝুড়ি। নবী (সা.) বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেন, এগুলো নিয়ে দান করে দাও। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমার চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্তকে সাদকা করব? আল্লাহর শপথ, মদিনার উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। রাসুল (সা.) হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত দেখা গেল। অতঃপর তিনি বললেন, এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৩৬)

বেশির ভাগ ফকিহ বলেন, হাদিসে বর্ণিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। অর্থাৎ রোজা ভঙ্গকারী দাস মুক্ত করতে অক্ষম হলে দুই মাস রোজা রাখবে। আর দুই মাস রোজা রাখতে ব্যর্থ হলে ৬০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়াবে।

কোরআন নাজিলের মাস রমজান
                                  

হাফিজ মাছুম আহমদ, দুধরচকী:

আল্লাহ তায়ালা বলেন- রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৪)

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশ বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র কোরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান থেকে আবার মজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম (সা.) এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে।

রমজান মাসের সঙ্গে আসমানি গ্রন্থগুলো, বিশেষ করে কোরআনের এমন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কারণে রমজান মহিমান্বিত হয়েছে—সন্দেহ নেই। এমনকি কোরআনের সঙ্গে এর সম্পর্ক এত গভীর যে, রমজানকে কোরআনের মাস বলেই অভিহিত করা হয়।  ইমাম যুহরি রহ. বলেন : রমজান হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত ও আহার বিতরণের মাস। (ইবনে আব্দুল বার, আত তামহিদ, ৬/১১১)

রমজানে কেন কোরআন নাজিল হয়েছে—এর কারণ তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। তবে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত, হাদিসের ভাষ্য এবং সময়ের সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায় বিশেষত তিনটি কারণে রমজানে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।

এক. রমজান আসমানি গ্রন্থ নাজিলের মাস

আল্লাহ তায়ালার সাধারণ আদত অনুসারে রমজানেই তিনি আসমানি গ্রন্থ নাজিল করে থাকেন। তাই কোরআনসহ শ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থাবলি রমজানে অবতীর্ণ হয়েছে বলে বিশুদ্ধ হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন : রমজান মাসের পহেলা ইবরাহিম (আ.) সহিফা লাভ করেন, ৬ তারিখে মুসা (আ.) এর কাছে ‘তাওরাত’ নাজিল হয়।

দাউদ (আ.) এর কাছে পবিত্র যবুর নাজিল হয় এ পবিত্র মাসের ১২ তারিখে, আর ঈসা (আ.) পবিত্র ‘ইঞ্জিল’লাভ করেন এবং কোরআন নাজিল হয় রমজানের ২৪ তারিখে। (তাবারানি, হাদিস ১৮৫; তাফসিরে তাবারি, ২৪/৩৭৭)

দুই. রমজান ও কোরআনের অভিন্ন উদ্দেশ্য

রমজান ও কোরআন উভয়ের উদ্দেশ্যও এক। আর তা হলো তাকওয়া অর্জন। দেখুন, কোরআনে এসেছে : তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

আবার কোরআন যদিও সমগ্র মানবজাতির জন্য অবতীর্ণ হয়েছে, কিন্তু এর দ্বারা শুধু মুত্তাকি ব্যক্তিরাই প্রকৃত উপকার লাভ করবেন—তা-ও উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : এটি আল্লাহর কিতাব। এতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত। (সুরা বাকারা, আয়াত ২)

ইবনে হাজার রহ. বলেন, তেলাওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য আত্মিক উপস্থিতি ও উপলব্ধি। (ফাতহুল বারি, ৯/৪৫)

ইবনে বাত্তাল রহ. বলেন, রাসূলের এ কোরআন শিক্ষা ও অনুশীলনের একমাত্র কারণ ছিলো পরকালের আকাঙ্ক্ষা ও ব্যাকুল ভাবনার জাগরণ এবং পার্থিব বিষয়ে অনীহার সৃষ্টি করা। (ইবনে বাত্তাল, শরহে বোখারি, ১/১৩)

আর তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্য এসবই।

তিন. কোরআন সংরক্ষণ

রমজান মাস হল কোরআন সংরক্ষণের মাস। যদিও কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালারই হাতে। যেমন তিনি বলেছেন, আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর, আয়াত ৯)

কিন্তু মানুষই হলো আল্লাহ তায়ালার খলিফা বা পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি। এবং মানুষের জন্য তিনি দিয়েছেন রমজান ও কোরআন। রাসূল (সা.)-এর জীবন থেকে দেখি রমজান মাসকেই তিনি কোরআন অনুশীলেন জন্য বিশেষভাবে বেছে নিয়েছেন, যেমনি তার সাহাবি ও পরবর্তী সালাফগণও করেছেন। কোরআনে সেই সকল মহান ব্যক্তিদের উল্লেখ করে এরশাদ করা হয়েছে—এটা সংরক্ষণ ও পাঠ করার দায়িত্ব আমার। যখন আমি তা পাঠ করি, তখন তুমি সে পাঠের অনুসরণ কর। অত:পর তা ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব আমারই। (সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ১৭, ১৮)

একই সঙ্গে তিনি রমজানে রোজা ফরজ করে দিয়ে তার সঙ্গে তারাবির মতো এমন একটি কোরআনি আমল জুড়ে দিয়েছেন যে, বর্তমান বাস্তবতায় তারাবি নামাজ হাফেজে কোরআনদের কোরআন চর্চার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। এভাবে বিশ্বজুড়ে হাফেজদের ঐক্যবদ্ধ অনুশীলন প্রমাণ করে রমজান ছাড়া তাদের জন্য কোরআন হেফাজত করা যারপরনাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ত।

এমনকি এ-কারণে রমজানে নবীজি (সা.) অধিক পরিমাণে কোরআন অনুশীলনে ব্যস্ত থাকতেন। রমজানে কোরআন শিক্ষায় রাসূলের সহপাঠী হওয়ার জন্য জিবরাইল (আ.) আল্লাহ কর্তৃক নিয়োজিত ছিলেন। এ বিষয়ে হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়— ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং ফজর অবধি তার সাথে অবস্থান করতেন। (বুখারি, হাদিস ১৯০২)

রাসূল তাকে কোরআন শোনাতেন এবং তিনি রাতভর তারাবি ও কিয়ামুল লাইলে দীর্ঘক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন।  আরো এসেছে, রাসূল তার প্রিয়তমা কন্যা ফাতেমাকে (রা.) গোপনে জানালেন যে, জিবরাইল প্রতি বছর (রমজানে) আমাকে একবার কোরআন শোনাতেন এবং শুনতেন, এ বছর তিনি দু বার আমাকে শুনিয়েছেন-শুনেছেন। একে আমি আমার সময় সমাগত হওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করি।  (বুখারি, হাদিস ৩৬২৪)

ইবনে হাজার বলেন, জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক রমজান হতে অন্য রমজান অবধি যা নাজিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের ওফাত হয়, সে বছর তিনি দুইবার শোনান ও শোনেন। (ফাতহুল বারি, ১/৪২)

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ।

রাসুল (সা.) ইফতার করতেন যেভাবে
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

রোজাদারের জন্য ইফতার বড় আনন্দের। হাদিসে বলা হয়েছে, রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ- একটি ইফতারের সময় এবং অপরটি যখন আল্লাহর সঙ্গে মিলবে তখন।

স্বাভাবিকতই ইফতারে খেজুর অত্যন্ত উপযোগী উপকরণ। এটি শর্করা ও পুষ্টি উপাদানের উৎস হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা রাসুল (সা.) এর অভ্যাস ছিল।

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা কিংবা শুকনো খেজুর কোনোটাই না পেলে পানিই হত তার ইফতার।’ (তিরমিজি; রোজা অধ্যায় : ৬৩২)

সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল্ল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয় পানি পবিত্র।’

রাসুল (সা.) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে পছন্দ করতেন। ইফতারে দেরি করা তিনি পছন্দ করতেন না।

সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮২১; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৩৮)।

চাঁদ দেখা যায়নি, রোজা শুরু শুক্রবার
                                  

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের আকাশে বুধবার (২২ মার্চ) কোথাও পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এদিন বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে রোজা শুরুর তারিখ নির্ধারণে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।

ইফা জানায়, যেহেতু বুধবার চাঁদ দেখা যায়নি, সেহেতু বৃহস্পতিবার শাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। রমজান মাস গণনা শুরু হবে শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে। সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার রাতে হবে প্রথম তারাবি, আর শেষ রাতে সেহেরি খাওয়া হবে।

বৈঠকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, আবহাওয়া অধিদপ্তর, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।  

রমজানের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

মুসলিম বিশ্বে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মাস গণনা শুরু হয়। আরবি (হিজরি) মাসের নতুন চাঁদ দেখলে প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া পড়তেন। নতুন চাঁদ দেখে এ দোয়াটি পড়া বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।

শুধুমাত্র রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখেই যে এ দোয়া পড়তে হবে এমন কিন্তু নয়; বরং আরবি হিজরি সনের প্রত্যেক মাসের নতুন চাঁদ দেখলে এ দোয়া পড়া সুন্নাত।

হজরত তালহা ইবনু ওবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন-

اَللهُ اَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَ الْاِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَ الْاِسْلَامِ وَ التَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَ تَرْضَى رَبُّنَا وَ رَبُّكَ الله

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস্সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ: আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তাওফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক। ’ (তিরমিজি, মিশকাত)

উল্লেখ্য, মুসলিম উম্মাহর কাছে রমজান মাস ও রোজা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতি চন্দ্র মাসের নতুন চাঁদ দেখে উল্লেখিত দোয়া পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কোরআন পড়ার ফজিলত ও উপকারিতা কী
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

কোরআন পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। কীভাবে কোরআন পড়তে হবে? কোরআন পড়ার ফজিলত ও উপকারিতা কী? এ সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা কী?
মুমিন মুসলমানের জন্য তারতিলের সঙ্গে কোরআন পড়ার নির্দেশ এসেছে। তারতিলের সঙ্গে কোরআন পড়া প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন-
وَ رَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِیۡلًا
‘আর কোরআন পড় বা তেলাওয়াত কর ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।’ (সুরা মুযযাম্মিল : আয়াত ৪)
একাধিক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআন পড়তেন ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে এবং তিনি তাঁর উম্মতকেও ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে থেমে থেমে কোরআন পড়া শিক্ষা দিতেন। কোরআন পড়ার ধরন
উল্লেখিত আয়াত থেকে কোরআন পড়ার ধরন কেমন হবে তা সুস্পষ্টভাবে হাদিসের উপমায় ফুটে ওঠেছে। তাহলো-
তারতিল সহকারে কোরআন পড়তে হবে। আর তারতিল দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- ধীরে ধীরে সঠিকভাবে বাক্য উচ্চারণ করা। কোরআনের শব্দগুলো ধীরে ধীরে মুখে উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তা উপলব্ধি করার জন্য গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনাও করতে হবে। (ইবনে কাসির)
> হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোরআন পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন- ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শব্দগুলোকে টেনে টেনে পড়তেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে বললেন যে, তিনি আল্লাহ, রাহমান এবং রাহীম শব্দকে মদ্দ করে বা টেনে পড়তেন।’ (বুখারি)
> হজরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক একটি আয়াত আলাদা আলাদা করে পড়তেন এবং প্রতিটি আয়াত পড়ে থামতেন। তিনি ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন` বলে থামতেন। তারপর ‘আর-রাহমানির রাহিম’ বলে থামতেন। তারপর ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন’ বলে থামতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি)
> হজরত হুজায়ফা ইবনে ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু বৰ্ণনা করেন, একদিন রাতে আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে নামাজ পড়তে দাঁড়ালাম। আমি দেখলাম, তিনি এমনভাবে কোরআন তেলাওয়াত করছেন যে, যেখানে তাসবিহের বিষয় আসছে সেখানে তিনি তাসবিহ পড়ছেন, যেখানে দোয়ার বিষয় আসছে সেখানে তিনি দোআ, করছেন এবং যেখানে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার বিষয় আসছে সেখানে তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করছেন।’ (মুসলিম)
> হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বৰ্ণনা করেন, একবার রাতের নামাজে কোরআন তেলাওয়াত করতে করতে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ আয়াতটির কাছে পৌছলেন ‘আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন; তবে তারা আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদের ক্ষমা করে দেন, তাহলে আপনি পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞ’; তখন তিনি বার বার এ আয়াতটিই পড়তে থাকলেন এবং এভাবে ভোর হয়ে গেল।’ (মুসনাদে আহমাদ)
কোরআন পড়ায় সুর
সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণও এভাবে কোরআন পড়তেন। কোরআন পড়ার ক্ষেত্রে সুন্দর কণ্ঠ দেওয়া, সুললিত কণ্ঠে কোরআন পড়াও উত্তম। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
> ‘যে কোরআনকে সুন্দর স্বরে পড়ে না সে আমার দলভূক্ত নয়।’ (বুখারি)
> ‘তোমরা কোরআনকে তোমাদের সুর দিয়ে সৌন্দর্যম-িত কর।’ (ইবনে মাজাহ)
> ‘হজরত আবু মুসা আশাআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু সুমিষ্ট স্বরে কোরআন পাঠ করতেন বিধায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘তোমাকে দাউদ পরিবারের সুর দেওয়া হয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম)
> ‘কেয়ামতের দিন কোরআনের অধিকারীকে বলা হবে, তুমি পড় এবং আরোহন করতে থাক। সেখানেই তোমার স্থান হবে যেখানে তোমার কোরআন পড়ার আয়াতটি শেষ হবে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
কোরআন পড়া ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ
হজরত ওসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শিখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)
কোরআন সুপারিশকারী
হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘তোমরা কোরআন মাজিদ পাঠ কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কোরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
হজরত নাওয়াস ইবনে সামআন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘কোরআন ও দুনিয়াতে তার (কোরআনের) উপর আমলকারীদের (বিচারের দিন মহান আল্লাহর সামনে) পেশ করা হবে। সুরা বাকারাহ ও সুরা আল-ইমরান তার আগে আগে থাকবে এবং তাদের পাঠকারীদের স্বপক্ষে (প্রভুর সঙ্গে) বাদানুবাদে লিপ্ত হবে।’ (মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
কোরআন বুঝে কিংবা না বুঝে পড়া
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোরআনের হাফেজ (বিশুদ্ধভাবে পাঠকারী) মহা সম্মানিত পুণ্যবান লেখকদের (ফেরেশতাদের) সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তির (পাকা হিফজ না থাকার কারণে) কোরআন পড়ার সময় ‘ওঁ-ওঁ’ করে কিংবা পড়তে কষ্টবোধ হয় তবে তার জন্য রয়েছে দুইটি সওয়াব। (একটি পড়ার জন্য আর দ্বিতীয়টি কষ্টের জন্য)।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)
কোরআন পড়া ব্যক্তির উপমা
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোরআন পড়া মুমিনের উদাহরণ হচ্ছে ঠিক উতরুজ্জা (কমলা লেবুর মত এক ধরণের ফল); যার ঘ্রাণ উত্তম এবং স্বাদও উত্তম। আর যে মুমিন কোরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক খেজুরের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ তো নেই, তবে স্বাদ মিষ্ট।
(অন্যদিকে...)
কোরআন পড়া মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধিময় (তুলসী) গাছের মতো; যার ঘ্রাণ উত্তম, কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কোরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক মাকাল ফলের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ নেই, স্বাদও তিক্ত।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)
কোরআন পড়ায় উত্থান-পতন
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ এই গ্রন্থ (কোরআন মাজিদ পড়ার) দ্বারা (তার উপর আমলকারী) জনগোষ্ঠীর (উন্নতির) উত্থান ঘটান এবং এরই (অবাধ্যতার) দ্বারা অন্য (অবাধ্যতাকারী) গোষ্ঠীর পতন ঘটান।’ (মুসলিম, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)
কোরআন পড়া নিয়ে হিংসা
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুই জনের ক্ষেত্রে ঈর্ষা করা বৈধ। (১) যাকে আল্লাহ কোরআন (মুখস্থ করার শক্তি) দান করেছেন, সুতরাং সে ওর (আলোকে) দিন-রাত পড়ে ও আমল করে। (২) যাকে আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সে (আল্লাহর পথে) দিন-রাত ব্যয় করতে থাকে।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
কোরআন পাঠে প্রশান্তি নাজিল হয়
হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন এক লোক (কোরআনের) সুরা কাহফ পড়ছিল। তার পাশেই দুটো রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ইতোমধ্যে লোকটিকে একটি মেঘে ঢেকে নিলো। মেঘটি লোকটির কাছাকাছি হতে থাকলে ঘোড়াটি তা দেখে চমকাতে (লাফালাফি) আরম্ভ করলো। এরপর যখন সকাল হলো তখন লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করল। তা (শুনে) তিনি (প্রিয় নবি) বললেন, ‘ওটি ছিল প্রশান্তি; যা তোমার কোরআন পড়ার কারণে নাজিল হয়।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
কোরআন পড়ায় প্রতি বর্ণের সাওয়াব
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কোরআন মাজিদ)-এর একটি বর্ণ পড়বে, তার একটি নেকি হবে। আর (এই) একটি নেকি দশটি নেকির সমান হয়। আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ; বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ।’ (তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মীম; যার নেকির সংখ্যা হবে ত্রিশ)।’ (তিরমিজি)
কোরআন থেকে দূরে থাকার কুফল
সুতরাং কোনোভাবেই কোরআন পড়ো থেকে দূরে থাকার সুযোগ নেই। আর কোরআন পড়া থেকে বিরত বা দূরে থাকলে এর পরিণতি বিরান ঘরের মতো। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোরআনের কোনো অংশ যে ব্যক্তির পেটে নেই; সে (সেই পেট বা উদর) বিরান ঘরের সমতুল্য।’ (তিরমিজি, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)
মনে রাখতে হবে
কোরআন পড়ার ফজিলত অনেক। আর তাই কোরআন বেশি বেশি পড়তে হবে। বুঝলেও পড়তে হবে; না বুঝলেও পড়তে হবে। সাবলীলভাবে পড়তে না পারলে থেমে থেমে অল্প অল্প করে কষ্ট হলেও পড়তে হবে। তবে উল্লিখিত ফজিলত ও মর্যাদা সমগুণ বা দ্বিগুণ পর্যন্ত পাবেন মুমিন।
কোরআন পাঠকারীর চূড়ান্ত মর্যাদা
আর পরকালে কোরআন পড়া ব্যক্তির জন্য তো রয়েছে বিশেষ মর্যাদার লোভনীয় ঘোষণা। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পবিত্র কোরআন পড়া ব্যক্তি, হাফেজ ও তার উপর আমলকারীকে (কেয়ামতের দিন) বলা হবে, ‘তুমি কোরআনুল কারিম পড়তে থাক আর (মর্যাদার আসনে উপরে) চড়তে থাক। আর ঠিক সেইভাবে স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে পড়তে থাক; যেভাবে দুনিয়াতে পড়তে। কেননা, (জান্নাতের ভেতর) তোমার স্থান ঠিক সেখানে হবে; যেখানে তোমার শেষ আয়াত পড়া সম্পন্ন হবে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
কেন কোরআন পড়তে হবে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য উল্লিখিত হাদিসের বর্ণনাগুলোই যথেষ্ট। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে কোরআন পড়ার বিকল্প নেই। কোরআন পড়ায় মিলবে দুনিয়া শান্তি ও পরকালের মুক্তি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তারতিলের সঙ্গে ধীরে ধীরে থেমে থেমে সুন্দর ও সুললীত কণ্ঠে কোরআন পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

খতমে তারাবির বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তি
                                  

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পবিত্র রমজান মাসে খতমে তারাবি পড়ার সময় সারা দেশের সব মসজিদে একই পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।  মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

রমজান মাসে দেশের প্রায় সব মসজিদে খতমে তারাবি নামাজে পবিত্র কুরআনের নির্দিষ্ট পরিমাণ পারা তিলাওয়াত করার রেওয়াজ চালু আছে। তবে কোনও কোনও মসজিদে এর ভিন্নতা থাকে। এতে করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী মুসলমানদের মধ্যে পবিত্র কুরআন খতমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে একটি অতৃপ্তি ও মানসিক চাপ অনুভূত হয়। কুরআন খতমের পূর্ণ সওয়াব থেকেও তারা বঞ্চিত হন।

এ পরিস্থিতি নিরসনে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ছয় দিনে দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিনে এক পারা করে ২১ পারা তিলাওয়াত করলে ২৬ রমজান দিবাগত রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবে কদরে পবিত্র কুরআন খতম করা সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় দেশের সব মসজিদে খতমে তারাবির নামাজে প্রথম ছয় দিনে দেড় পারা করে ও পরবর্তী ২১ দিনে এক পারা করে তিলাওয়াতের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সারা দেশের সব মসজিদের খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, মুসল্লি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই অনুরোধ করা হয়েছে।

রোজা শুরু কবে, জানা যাবে বুধবার
                                  

স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : এবারের পবিত্র রমজান মাস কবে থেকে শুরু হবে তা জানা যাবে বুধবার। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে রমজান মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা করে রোজা শুরুর তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও কমিটির সভাপতি মো. ফরিদুল হক খান।

মঙ্গলবার সকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন এ তথ্য জানান।

বুধবার সন্ধ্যায় হিজরি ১৪৪৪ সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে বৃহস্পতিবার থেকে রমজান মাস গণনা শুরু হবে ও মুসলমানরা রোজা রাখবেন। সেক্ষেত্রে বুধবার রাতেই এশার নামাজের পর তারাবি নামাজ পড়বেন, রোজা রাখতে শেষ রাতে প্রথম সেহরিও খাবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

অন্যদিকে বুধবার চাঁদ দেখা না গেলে বৃহস্পতিবার শাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে, রমজান মাস গণনা শুরু হবে শুক্রবার। এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পর তারাবি নামাজ পড়বেন ও শেষ রাতে খেতে হবে সেহরি।

এদিকে বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭ টেলিফোন এবং ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১ ফ্যাক্স নম্বরে বা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

উত্তম ও পবিত্র জীবনসঙ্গী পাওয়ার দোয়া
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

সবাই নিজের জীবনে উত্তম-পবিত্র জীবনসঙ্গী চাই, কিন্তু তা কখনো নিজ ইচ্ছেয় চাইলেই পাওয়া যায় না, আল্লাহ যদি চায় তাহলেই পাওয়া যায়। আল্লাহর পক্ষে আপনার ধারণা থেকেও উত্তম কিছু দেওয়া কোনো ব্যাপার না। তাই শুধু তারই অভিমুখি হোন। তার কাছেই চাইতে থাকুন।

শুধু শুধু অকারণেই চিন্তা করে কোনো লাভ হবে না। মনে রাখবেন, আল্লাহ যদি না চান, তাহলে তা কখনোই ঘটবে না। আবার, আল্লাহ্ তায়ালা যদি চান তাহলে কেউই তা রুখতে পারবে না, যতোই প্রতিকূলতা থাক না কেন। তাই, যিনি দিতে পারবেন, তার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করুন, শুধু তার রহমতের জন্য নিজের জীবনকে প্রস্তুত করুন, রবের আদেশ পালনে সর্বদা নিজের নফসকে(আত্মা) নিয়োজিত রাখুন।   

আর যেহেতু দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাই আমাদের উচিত সর্বদা দোয়া করে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং সেই অনুযায়ী আমল করা। এই যেমন, নেককার জীবনসঙ্গী পাওয়ার দোয়া, উত্তম স্বামী পাওয়ার দোয়া। আবার বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীও জানতে চায় কীভাবে উত্তম সন্তান লাভ করা যায়। তাদের জন্যই এ কোরআনি আমল-

আরবি উচ্চারণ: رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণ: রব্বানা-হাবলানা-মিন আয্ওয়া-জ্বিনা- ওয়া যুররিইয়্যা-তিনা-কুররতা আ’ইয়ুনিঁও ওয়া জ‘আল্না-লিল মুত্তাকী-না ইমা-মা।

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দাও।’ (সুরা ফুরক্বান : আয়াত ৭৪)

যারা মহান আল্লাহর কাছে উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের প্রত্যাশা করে, তাদের উচিত মহান আল্লাহর কাছে তারই শেখানো ভাষায় আবেদন করা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিমে বান্দাকে উত্তম স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান লাভের দোয়া শিখিয়েছেন। যেসব স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান একে অন্যের চোখকে শীতল করবে।

যৌবনকালের ইবাদত আল্লাহর বেশি পছন্দ
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

যৌবন আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নিয়ামত, যা মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জীবনের মাঝামাঝি সময়ে দিয়ে থাকেন। কারণ মানুষ যখন ভূমিষ্ঠ হয়, তখন সে দুর্বল থাকে। কথা বলতে পারে না, নিজ হাতে খেতে পারে না। সব কাজেই তাকে মা-বাবা কিংবা অন্য কারো সহযোগিতা নিতে হয়।

আবার বৃদ্ধকালেও মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন আবার মানুষ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর মাঝামাঝি সময়েই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে থাকেন, যা ব্যবহার করে তারা বিশ্ব জয় করতে পারে। এটা সবশক্তিমান আল্লাহর রীতি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন দুর্বল বস্তু থেকে এবং দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন। আর শক্তির পর তিনি আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। ’ (সুরা : রোম, আয়াত : ৫৪)

যৌবন মানেই বন্ধু, আড্ডা, গান, মাস্তি নয়। মহান আল্লাহ ক্ষণিকের জন্য মানুষকে তাঁর এই বিশেষ নিয়ামত দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা তাতে উত্তীর্ণ হবে, তারাই সফল। আর যারা তা অবহেলা করবে, তারা চির ব্যর্থ। যে ব্যক্তি তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করবে, কঠিন কিয়ামতের দিন সে মহান আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে। পবিত্র হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ... ২. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে। (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)

যুগে যুগে সব পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুবকরাই দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি জাতির ইতিহাসেই দেখা যায়, তাদের মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যুবকরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তেমনই এক যুবক ছিলেন ইবরাহিম (আ.)। যিনি সর্বপ্রথম তাঁর গোত্রের মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৬০)

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপযুক্ত সময়ে বিশেষ বিশেষ নিয়ামত দান করেন। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য সেই উপযুক্ত সময় হলো যৌবন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর মুসা যখন যৌবনে পদার্পণ করল এবং পরিণত বয়স্ক হলো, তখন আমি তাকে বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান দান করলাম। আর এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ১৪)

শুধু তা-ই নয়, ঈমান রক্ষার জন্য গোত্র ত্যাগকারী সেই আসহাবে কাহফকেও পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১৩)

যৌবন কখনো কখনো মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। যৌবনের তাড়নায় অনেক ধরনের পাপে লিপ্ত হয়ে যায়। এ কারণেই যুবকদের উদ্দেশে রাসুল (সা.) বলেন, হে যুবকদের দল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে। এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ‘সাওম’ পালন করে। কেননা সাওম যৌন ক্ষমতাকে দমন করে। (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৫)

যৌবনে কেউ কেউ অধিক ফ্যাশনপ্রিয় হয়। তাদের চুল, পোশাক ও বেশভূষায় থাকে উগ্রতা। কেউ কেউ নারীদের মতো কানে দুল পরে। কেউ আবার সোনার আংটি, চেইন, ব্রেসলেট ইত্যাদিও পরে থাকে। রাসুল (সা.) এ ধরনের কাজ পছন্দ করতেন না। একবার রাসুল (সা.) হজরত খাব্বাবের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন, তার হাতে একটি সোনার আংটি। তিনি বললেন, এখনো কি এ আংটি খুলে ফেলার সময় হয়নি? খাব্বাব (রা.) বললেন, আজকের পর আর এটি আমার হাতে দেখতে পাবেন না। অতঃপর তিনি আংটিটি ফেলে দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৩৯১)

মূলকথা হলো, যৌবনকাল মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত। এ সময় মানুষের ইবাদতের শক্তি ও সুস্থতা দুটিই থাকে। এ সময় একটা মানুষ যতটা শুদ্ধতা ও দৃঢ়তার সহিত আমল করতে পারে, বৃদ্ধ হয়ে গেলে তা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই এই মহামূল্যবান নিয়ামতে কোনোভাবেই অবহেলায় কাটানো উচিত নয়। কারণ, কিয়ামতের দিন যৌবনকালের সময়ের হিসাব নেওয়া হবে।

নবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে ; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)

তাই প্রত্যেক যুবকের উচিত তার যৌবনকে পাপমুক্ত রেখে আল্লাহর ইবাদতে রঙিন করা। সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি, জিনা-ব্যভিচারসহ সব গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। আল্লাহকে ভয় করা। মানুষের উপকার করা। সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা। তাহলেই আমাদের সমাজটা আরো সুন্দর ও নিরাপদ হয়ে উঠবে।

যাদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

রোজা পালন করা মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদেরকে লক্ষ্য করে বলে দিয়েছেন যে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

রোজা রাখার এ ফরজ বিধান কাদের জন্য? সেসব মুসলিম নারী-পুরুষ কারা? যাদের ওপর বাধ্যতামূলক রমজান মাসের রোজা পালন করাকে ফরজ করা হয়েছে। ইসলামি শরিয়তে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছে।

যাদের জন্য রোজা পালন বাধ্যতামূলক। তারা হলো-
>> মুসলমান হতে হবে।
অমুসলিমদের জন্য ইসলামে রোজা রাখার কোনো হুকুম নেই।

>> প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।
মুসলিম ছেলে-মেয়ের বয়স ৭ বছর হলেই রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া। যদি তারা রোজা পালনে সক্ষম হয়। তবে আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ নামাজের সঙ্গে তুলনা করে ১০ বছর বয়সে রোজা না রাখলে দৈহিক শাস্তির কথা বলেছেন।

৭ বছর বয়স থেকে ছেলে-মেয়ে রোজা রাখলে তারা সাওয়াব পাবে। আর ভালো কাজে উৎসাহিত করার কারণে উৎসাহ দাতা বা বাবা-মাও সাওয়াব পাবেন। হাদিসে এসেছে-

যখন আশুরার রোজা ফরজ ছিল তখন আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে রোজা রাখাতাম। আর খাবারের জন্য কান্না করলে তাদেরকে তুলা দিয়ে তৈরি আকর্ষণীয় খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আমরা এটা করতাম ইফতারের সময় পর্যন্ত।’ (বুখারি)

>> নিজ ঘরে অবস্থানকারী হতে হবে।
কোনো ব্যক্তি যদি সফরে বের না হয়, তবে তার জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। যদি কেউ দীর্ঘ সফরে বের হয় তবে তার জন্য রোজার বিধানকে সহজ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ কিংবা সফরে থাকে তবে সে অন্য সময় তা পালন করবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

>> শারীরিকভাবে রোজা রাখার সক্ষমতা থাকতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয় কিংবা রোজা রাখলে জীবন নাশ হতে পারে এ পরিস্থিতি হয় তবে তার জন্যও রোজা বিধান সহজ। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ কিংবা সফরে থাকে তবে সে অন্য সময় তা পালন করবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

>> নারীদের হায়েজ ও নেফাস থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
- নারীদের মাসিক ঋতুস্রাবকে কে হায়েজ বলা হয়। হায়েজ অবস্থায় নারীরা অপবিত্র থাকে। এ সময় তাদের জন্য রোজা রাখার হুকুম নেই।
- আর সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর নারীদের প্রথম ৪০ দিন হলো নেফাসের সময়। এ দুই সময়ে নারীদের রোজা বিধান থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে।

>> দিনের বেলায় যদি কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে।
>> রোজার সময় দিনের বেলায় যদি কোনো ছেলে-মেয়ে যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়।
>> রোজার সময় যদি কোনো পাগল ভালো হয়ে যায়।

তবে তারা রোজা হুকুমের আওতায় এসে যাবে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে ইফতারের সময় পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে ইসলাম গ্রহণকারী, বালেগ হওয়া ছেলে-মেয়ে কিংবা পাগলের আগের রোজা আদায় তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কেননা আগের রোজাগুলো অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের ওপর আবশ্যক ছিল না।

>> যারা মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায় আবার মাঝে মাঝে ভালো হয়ে যায় তবে ভালো থাকার সময় তাদের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। রোজা অবস্থায় যদি কেউ পাগল হয়ে যায় কিংবা অজ্ঞান হয়ে যায় তবে তাদের জন্য রোজা হুকুম বাতিল হবে না।

>> রমজান মাসে কোনো মানুষ মারা গেলে অবশিষ্ট রোজা রাখায় তাদের জন্য কোনো হুকুম নেই। আত্মীয়দের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির রোজা রাখায়ও বাধ্যবাধকতা নেই।

>> যদি কেউ রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে অজ্ঞতায় থেকে রোজা না রাখে, তবে কোনো কোনো আলেমের মতে সে ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হবে না। রোজা ফরজ হওয়ার বিষয়টি জানার পরপর তার ওপর রোজা রাখা বধ্যতামূলক।

>> আবার কেউ যদি রমজান মাসের দিনের বেলায় অজ্ঞতাবশত হারাম না জানার কারণে স্ত্রীর সঙ্গে যৌনতা তথা সহবাসে মিলিত হয় তবে অধিকাংশ আলেমের মতে সে দোষী সাব্যস্ত হবে না।

মনে রাখতে হবে, মুসলিম এলাকায় বসবাস করে রোজা ফরজ কিনা কিংবা সহবাস হারাম কিনা এ বিষয়ে জানা নেই বললে এ ওজর গ্রহণযোগ্য নয়।

রোজা ফরজ হওয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলো যারা জানে তাদের কাছ থেকে জেনে নেয়া সবার জন্য আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের ফরজ রোজা পালনে এর হুকুম-আহকাম জেনে নেয়ার তাওফিক দান করুন। রমজানের ফরজ রোজা যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
                                  

ইসলাম ডেস্ক :

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রমজান মাসের রোজা অন্যতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরিতে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা উম্মতের উপর রোজা ফরজ করেছেন।

রমজানের রোজা কেউ যদি অস্বীকার করলে— সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এছাড়াও শরিয়ত সমর্থিত ওজর (অপারগতা) ছাড়া ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারী— মৌলিক ফরজ লংঘনকারী ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে গণ্য। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে— সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে তবু ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)

রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রমজান মাস সারা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ

নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে— হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)

রমজান বরকতময় মাস

আবু হুরায়রা (রা) বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটল, তখন নবীজি (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন...।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭১৪৮)

রমজানের রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার রোজার বিনিময়ে অনেক বড় পুরস্কারেরও ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, “আল্লাহ্ তাআলা বলেন- ‘রোজা আমারই জন্য। আমি নিজে এর প্রতিদান দেব। আমার বান্দা আমার জন্য পানাহার ছেড়ে দেয়, কামনা-বাসনা ছেড়ে দেয়। রোজাদারের জন্য দু’টি খুশি। একটি খুশি ইফতারের সময়। আরেকটি খুশি আমার সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট  মিশকের সুগন্ধের চেয়েও উত্তম।” (বুখারি, হাদিস : ৭৪৯২)

এ মাসে মানুষের প্রত্যেকটি আমল বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নেকি ১০ গুণ থেকে (ক্ষেত্র বিশেষে) ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ, রোজা আমার জন্য। সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)

রোজাদারদের জন্য বিশেষ দরজা

জান্নাতে একটি ফটক আছে। তার নাম রাইয়্যান। কেয়ামতের দিন রোজাদারগণ সেই ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সেই ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে- ‘রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা উঠবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ যাবে না। যখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন রাইয়্যান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। সুতরাং আর কেউ এ ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬; মুসলিম, হাদিস: ১১৫২)

আর যে ব্যক্তি সে রাইয়ান গেট দিয়ে প্রবেশ করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি, যিনি উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম পালন করে, তার প্রথম পুরস্কার— রমজান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয়— যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৮৯৬৬)

দোয়া কবুল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি

এ মাসে অসংখ্য মানুষের দোয়া কবুল করা হয়। আবেদন মঞ্জুর করা হয়। জাহান্নামির নাম জাহান্নামের তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয়, দোখজ থেকে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। তাই এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইতে হবে। যাবতীয় দরখাস্ত দয়াময় আল্লাহর দরবারে পেশ করতে হবে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৪৫০)

হাদিসে আছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না : রোজাদারের দোয়া, ইফতার পর্যন্ত। ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। মজলুমের দোয়া।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৪২৮)

রমজান পাপ মোচন ও গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো মুছে দেয় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

রমজানে দান-খায়রাত বেশি করা

নবী কারিম (সা.) এমনিতেই প্রচুর দান করতেন। আর এ মাসে দানের পরিমাণ আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলে আকরাম (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তার দানশীলতা অধিকতর বৃদ্ধি পেত রমজান মাসে; যখন জিবরাঈল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাঈল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পর কোরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল। (মুসলিম, হাদিস : ২৩০৮)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)

আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজানে বেশি থেকে বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


   Page 1 of 11
     ইসলাম
বরকতময় ইফতারের দোয়া ও ফজিলত
.............................................................................................
তারাবি নামাজের নিয়ম ও গুরুত্ব
.............................................................................................
অকারণে রমজানের রোজা না রাখার শাস্তি
.............................................................................................
আপনার সন্তানকে যেভাবে রোজায় অভ্যস্ত করবেন
.............................................................................................
যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়
.............................................................................................
কোরআন নাজিলের মাস রমজান
.............................................................................................
রাসুল (সা.) ইফতার করতেন যেভাবে
.............................................................................................
চাঁদ দেখা যায়নি, রোজা শুরু শুক্রবার
.............................................................................................
রমজানের চাঁদ দেখে যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
কোরআন পড়ার ফজিলত ও উপকারিতা কী
.............................................................................................
খতমে তারাবির বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তি
.............................................................................................
রোজা শুরু কবে, জানা যাবে বুধবার
.............................................................................................
উত্তম ও পবিত্র জীবনসঙ্গী পাওয়ার দোয়া
.............................................................................................
যৌবনকালের ইবাদত আল্লাহর বেশি পছন্দ
.............................................................................................
যাদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক
.............................................................................................
রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
.............................................................................................
পবিত্র জুমার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ সময়
.............................................................................................
মসজিদুল হারাম ও নববীতে তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়াবেন ১২ ইমাম
.............................................................................................
হজ প্যাকেজের দাম কমাবে না সরকার
.............................................................................................
রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
.............................................................................................
পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি
.............................................................................................
কোরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফজিলত
.............................................................................................
দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল
.............................................................................................
আরব দেশগুলোতে রোজা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
.............................................................................................
গায়ক-গায়িকাদের মুখ বাঁকা হওয়া নিয়ে ইসলাম কী বলে
.............................................................................................
মৃত্যুকালে রাসূল (সা.) যে কথাটি বারবার বলেছিলেন
.............................................................................................
গুনাহ মাফের ৪টি বিশেষ দোয়া
.............................................................................................
বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখে যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ গঠনে সালামের ভূমিকা
.............................................................................................
শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত
.............................................................................................
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
.............................................................................................
যাদের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক
.............................................................................................
কোন দেশে কত ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে
.............................................................................................
সন্তান প্রতিপালনে মা-বাবার প্রতি ইসলামের ৩ নির্দেশনা
.............................................................................................
পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত ও আমল
.............................................................................................
রমজানের রোজা ফরজ হলো যেভাবে
.............................................................................................
হজের খরচ সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের দাবি
.............................................................................................
যানবাহনে ওঠার সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়লো ৭ মার্চ
.............................................................................................
কোন দেশে কত ঘণ্টা রোজা
.............................................................................................
ভূমিকম্প হলে যে দোয়া পড়তে বলেছেন বিশ্বনবী
.............................................................................................
সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ
.............................................................................................
ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ সময়
.............................................................................................
ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ সময়
.............................................................................................
হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়লো
.............................................................................................
জান্নাত লাভের সহজ দুই আমল
.............................................................................................
হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা: চলছে ঢাকা উত্তর বিভাগীয় অঞ্চলের অডিশন
.............................................................................................
যে দোয়ায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়
.............................................................................................
শবে বরাত কবে জানা যাবে কাল
.............................................................................................
পবিত্র শবে মেরাজ আজ
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT