|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
গৌরব, আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের পদ্মা সেতু
খুলে গেল স্বপ্নের সেতুর দুয়ার। দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাঙালি জাতির এ যেন আরেক বিজয়! ১৯৭১ সালে টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধরে পর যখন বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্রটি বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা পায় তখন বাঙালি আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল। সেই আনন্দে মিশে ছিল গৌরব, সন্মান এবং সব হারিয়ে নতুন করে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন। মানুষের মুখে মুখে ছিল তখন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি। সেই বিজয়ের অর্ধশত বছর পর পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেশবাসী আরেকটি বিজয় পেল। এই বিজয়েও মিশে আছে গৌরব, আত্মমর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাস।
বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়েছে ভাবতেই মনে পুলক জাগে! তবে আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে যতটা সাফল্য আমরা উপলব্ধি করছি তা সহজ ছিল না। প্রকল্পের শুরুতেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে থমকে যায় এই স্বপ্নের সেতু নির্মাণের কাজ। ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর। মনে পড়ে সেই দিনের কথা- যেদিন একটি জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল- ‘পদ্মাসেতু হচ্ছে না’।
২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের হলরুমে ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়া তালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। শুধু তাই নয়, ‘পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করায় পদ্মা সেতু না হওয়ার জন্য সরকার, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর পরিবার দায়ী। আমরা ক্ষমতায় এলে একটা নয়, দুটি পদ্মা সেতু বানাবো (দৈনিক মানবজমিন, ৩০ জুন ২০১২)। এ ধরনের কথাও খালেদা জিয়া বলেছেন। তার সঙ্গে তখন সুর মিলিয়ে বলার লোকের অভাব ছিল না। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতু বানানোর কোনও ইচ্ছা সরকারের ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল লুটপাট। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার কল্পনা বিলাস বাদ দিন।’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুলাই, ২০১২)।
বিশ্বব্যাংক যখন ২০১২ সালের ২৯ জুন নানা ধরনের বায়বীয় অজুহাতে পদ্মা সেতুতে প্রত্যাশিত ঋণ বাতিল করে, একই বছর ৮ জুলাই সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। তাঁর এই ঘোষণাতে চারদিকে বেশ হাস্যরোল সৃষ্টি হয়েছিল। এসব হাস্যরোল তোয়াক্কা না করেই শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছিলেন। সরকার সেতু প্রকল্পের পরামর্শকের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকেও।
সেই সময়ে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের চাপে সেতু বিভাগের সচিবসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া। যদিও পরে সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কানাডার আদালতে হওয়া মামলায় প্রমাণিত হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সেতু সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াসহ বাকি অভিযুক্তরা নির্দোষ প্রমাণিত হন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে যে অভিযোগ তোলা হয় সেটিকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দেয় কানাডার আদালত।
মূল সেতু নির্মাণ এবং নদী শাসনের কাজ শুরুর পর থেকেই নানা চ্যালেঞ্জ এসেছে। কখনো পদ্মার ভাঙন, আবার কখনো কারিগরি জটিলতায় কাজ আটকে গেছে। মডিফাই করতে হয়েছে নকশায়। কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি। ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাজ শুরুর পরের বছরেই মাওয়ায় স্থাপিত নির্মাণ মাঠের বেচিং প্ল্যান্টসহ একাংশ নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। ২০১৭ সালের দিকে স্রোতের কারণে মাওয়ায় নদীর তলদেশে গভীর খাদ তৈরি হয়। এ ছাড়া মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিভিন্ন সময় ভাঙন দেখা দেয়। ফলে নদীশাসনের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ওই বছর ৩১ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন এরিয়ার কিছু অংশে ভাঙন দেখা দেয়। ওইদিন কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে থাকা অনেক মালামাল নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
২০১৭ সালে সেতুর খুঁটি বসানোর সময় ডিজাইনে থাকা ২২টি খুঁটির নিচে মাটি পরীক্ষায় নরম মাটি পাওয়া যায়। তখন নকশা সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। শুরুতে প্রতিটি পিয়ারের নিচে ছয়টি করে পাইল (মাটির গভীরে স্টিলের ভিত্তি বসানো) বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও নকশা সংশোধন করে একটি করে পাইল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর কারণে খুঁটি নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হতে ঐ বছরের মার্চ পর্যন্ত লেগে যায়। এতে বাড়তি সময় লাগে এক বছর। এ কারণে ওই সময় কাজের কিছুটা গতি হারায়।
কত ষড়যন্ত্র, কত মিথ্যাচার! কোনো কিছুই দমাতে পারেনি শেখ হাসিনাকে। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র আর বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর যে সেতু কল্পনায় ছিল না, সেই পদ্মা সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্রই পদ্মা সেতুর পথ রোধ করতে পারেনি। নিন্দুক আর ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে ছাই দিয়ে ২৫ জুন ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু দেশের পিছিয়ে পড়া ২১ জেলাকে জাগিয়ে তুলতে উম্মুক্ত হলো। শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক মিড়িয়াগুলোতে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন শেখ হাসিনা।
মনে পড়ে ১৯৭১ সালের কথা। মানুষ যখন পাকিস্তানিদের শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার কথা কল্পনাও করেনি। যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে আশা জাগিয়েছে মুক্তির, স্বাধীনতার। তখনও রাজাকার বাহিনী এ নিয়ে কটূক্তি করেছে, ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে দমাতে চেয়েছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এ জাতিকে এক কাতারে এনে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। ঠিক বর্তমান সময়ে শেখ হাসিনা যেন বঙ্গবন্ধুরই প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু যেমন যে কোনো সিদ্ধান্তে পিছ পা হতেন না, তেমনি শেখ হাসিনাও। তার প্রমাণ এই পদ্মা সেতু।
শেখ হাসিনা আমাদের এমন এক সেতু উপহার দিয়েছেন যে সেতু বিশ্ব রেকর্ডও করেছে। প্রথম বিশ্ব রেকর্ডটি হলো- মাটির ১২০ থেকে ১২২ মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসানো। পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে পাইল এত গভীরে প্রবেশ করাতে হয়নি। দ্বিতীয় রেকর্ড হলো, ভূমিকম্পের বিয়ারিং-সংক্রান্ত। এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। এর পরের বিশ্ব রেকর্ড হলো, পিলার এবং স্প্যানের মাঝে যে বেয়ারিং থাকে সেটি। এখানে ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের একেকটি বেয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে এমন বড় বেয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি কোনো সেতুতে। অন্য রেকর্ডটি হলো নদী শাসন সংক্রান্ত। ১৪ কিলোমিটার এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদী শাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি।
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ হলো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ। গার্মেন্টস শিল্পসহ নানা কারণে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশের সেই অপবাদ অনেক আগেই ঘুঁচে গেছে। বিশ্ব আজ চিনেছে বাংলাদেশ নামক একটি দেশ আছে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার নেতৃত্বে অনেক উন্নয়নশীল দেশও তার নেতৃত্বের বিচক্ষণতায় পিছিয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন পদ্মা সেতু বাঙালিকে দাবিয়ে না রাখতে পারার প্রতীক। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতে লাভ নেই। মানুষ এখন বুঝে গেছে শেখ হাসিনা শুধু মুখে বলেন না। কাজে প্রমাণ দেন।
লেখক: সাজ্জাদ হোসেন চিশতী গণমাধ্যম কর্মী
|
খুলে গেল স্বপ্নের সেতুর দুয়ার। দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাঙালি জাতির এ যেন আরেক বিজয়! ১৯৭১ সালে টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধরে পর যখন বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্রটি বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা পায় তখন বাঙালি আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল। সেই আনন্দে মিশে ছিল গৌরব, সন্মান এবং সব হারিয়ে নতুন করে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন। মানুষের মুখে মুখে ছিল তখন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি। সেই বিজয়ের অর্ধশত বছর পর পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেশবাসী আরেকটি বিজয় পেল। এই বিজয়েও মিশে আছে গৌরব, আত্মমর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাস।
বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়েছে ভাবতেই মনে পুলক জাগে! তবে আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে যতটা সাফল্য আমরা উপলব্ধি করছি তা সহজ ছিল না। প্রকল্পের শুরুতেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে থমকে যায় এই স্বপ্নের সেতু নির্মাণের কাজ। ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর। মনে পড়ে সেই দিনের কথা- যেদিন একটি জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল- ‘পদ্মাসেতু হচ্ছে না’।
২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের হলরুমে ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়া তালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। শুধু তাই নয়, ‘পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করায় পদ্মা সেতু না হওয়ার জন্য সরকার, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর পরিবার দায়ী। আমরা ক্ষমতায় এলে একটা নয়, দুটি পদ্মা সেতু বানাবো (দৈনিক মানবজমিন, ৩০ জুন ২০১২)। এ ধরনের কথাও খালেদা জিয়া বলেছেন। তার সঙ্গে তখন সুর মিলিয়ে বলার লোকের অভাব ছিল না। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতু বানানোর কোনও ইচ্ছা সরকারের ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল লুটপাট। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার কল্পনা বিলাস বাদ দিন।’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুলাই, ২০১২)।
বিশ্বব্যাংক যখন ২০১২ সালের ২৯ জুন নানা ধরনের বায়বীয় অজুহাতে পদ্মা সেতুতে প্রত্যাশিত ঋণ বাতিল করে, একই বছর ৮ জুলাই সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। তাঁর এই ঘোষণাতে চারদিকে বেশ হাস্যরোল সৃষ্টি হয়েছিল। এসব হাস্যরোল তোয়াক্কা না করেই শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছিলেন। সরকার সেতু প্রকল্পের পরামর্শকের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকেও।
সেই সময়ে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের চাপে সেতু বিভাগের সচিবসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া। যদিও পরে সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কানাডার আদালতে হওয়া মামলায় প্রমাণিত হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সেতু সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াসহ বাকি অভিযুক্তরা নির্দোষ প্রমাণিত হন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে যে অভিযোগ তোলা হয় সেটিকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দেয় কানাডার আদালত।
মূল সেতু নির্মাণ এবং নদী শাসনের কাজ শুরুর পর থেকেই নানা চ্যালেঞ্জ এসেছে। কখনো পদ্মার ভাঙন, আবার কখনো কারিগরি জটিলতায় কাজ আটকে গেছে। মডিফাই করতে হয়েছে নকশায়। কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি। ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাজ শুরুর পরের বছরেই মাওয়ায় স্থাপিত নির্মাণ মাঠের বেচিং প্ল্যান্টসহ একাংশ নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। ২০১৭ সালের দিকে স্রোতের কারণে মাওয়ায় নদীর তলদেশে গভীর খাদ তৈরি হয়। এ ছাড়া মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিভিন্ন সময় ভাঙন দেখা দেয়। ফলে নদীশাসনের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ওই বছর ৩১ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন এরিয়ার কিছু অংশে ভাঙন দেখা দেয়। ওইদিন কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে থাকা অনেক মালামাল নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
২০১৭ সালে সেতুর খুঁটি বসানোর সময় ডিজাইনে থাকা ২২টি খুঁটির নিচে মাটি পরীক্ষায় নরম মাটি পাওয়া যায়। তখন নকশা সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। শুরুতে প্রতিটি পিয়ারের নিচে ছয়টি করে পাইল (মাটির গভীরে স্টিলের ভিত্তি বসানো) বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও নকশা সংশোধন করে একটি করে পাইল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর কারণে খুঁটি নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হতে ঐ বছরের মার্চ পর্যন্ত লেগে যায়। এতে বাড়তি সময় লাগে এক বছর। এ কারণে ওই সময় কাজের কিছুটা গতি হারায়।
কত ষড়যন্ত্র, কত মিথ্যাচার! কোনো কিছুই দমাতে পারেনি শেখ হাসিনাকে। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র আর বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার পর যে সেতু কল্পনায় ছিল না, সেই পদ্মা সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্রই পদ্মা সেতুর পথ রোধ করতে পারেনি। নিন্দুক আর ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে ছাই দিয়ে ২৫ জুন ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু দেশের পিছিয়ে পড়া ২১ জেলাকে জাগিয়ে তুলতে উম্মুক্ত হলো। শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক মিড়িয়াগুলোতে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন শেখ হাসিনা।
মনে পড়ে ১৯৭১ সালের কথা। মানুষ যখন পাকিস্তানিদের শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার কথা কল্পনাও করেনি। যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে আশা জাগিয়েছে মুক্তির, স্বাধীনতার। তখনও রাজাকার বাহিনী এ নিয়ে কটূক্তি করেছে, ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে দমাতে চেয়েছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এ জাতিকে এক কাতারে এনে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। ঠিক বর্তমান সময়ে শেখ হাসিনা যেন বঙ্গবন্ধুরই প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু যেমন যে কোনো সিদ্ধান্তে পিছ পা হতেন না, তেমনি শেখ হাসিনাও। তার প্রমাণ এই পদ্মা সেতু।
শেখ হাসিনা আমাদের এমন এক সেতু উপহার দিয়েছেন যে সেতু বিশ্ব রেকর্ডও করেছে। প্রথম বিশ্ব রেকর্ডটি হলো- মাটির ১২০ থেকে ১২২ মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসানো। পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে পাইল এত গভীরে প্রবেশ করাতে হয়নি। দ্বিতীয় রেকর্ড হলো, ভূমিকম্পের বিয়ারিং-সংক্রান্ত। এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। এর পরের বিশ্ব রেকর্ড হলো, পিলার এবং স্প্যানের মাঝে যে বেয়ারিং থাকে সেটি। এখানে ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের একেকটি বেয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে এমন বড় বেয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি কোনো সেতুতে। অন্য রেকর্ডটি হলো নদী শাসন সংক্রান্ত। ১৪ কিলোমিটার এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদী শাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি।
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ হলো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ। গার্মেন্টস শিল্পসহ নানা কারণে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশের সেই অপবাদ অনেক আগেই ঘুঁচে গেছে। বিশ্ব আজ চিনেছে বাংলাদেশ নামক একটি দেশ আছে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার নেতৃত্বে অনেক উন্নয়নশীল দেশও তার নেতৃত্বের বিচক্ষণতায় পিছিয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন পদ্মা সেতু বাঙালিকে দাবিয়ে না রাখতে পারার প্রতীক। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতে লাভ নেই। মানুষ এখন বুঝে গেছে শেখ হাসিনা শুধু মুখে বলেন না। কাজে প্রমাণ দেন।
লেখক: সাজ্জাদ হোসেন চিশতী গণমাধ্যম কর্মী
|
|
|
|
সুমাইয়া আক্তার আত্মহত্যা মহাপাপ। আইনের দৃষ্টিতেও অপরাধ। পৃথিবীর সকল ধর্ম এবং নৈতিকতা আত্মহত্যার বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছে। গত ২০২১ সালে ১০১জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সমাজসেবী সংগঠন আচরণ ও গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায় আত্মহত্যাকারীদের ৬১ শতাংশেরও বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ তো গেল গত বছরের ঘটনা ২০২২ সালের অর্ধেক পেরোতে না পেরোতেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
গত একমাসে বহুল আলোচিত আত্মহত্যার মধ্যে যেগুলো খুবই উল্লেখযোগ্য ঘটনা সেগুলো হলো- অতি সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের (৪৫তম আবর্তন) শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অমিত কুমার বিশ্বাস ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মারা যাওয়ার পর তার রুম থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। এর কিছুদিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের মেধাবী শিক্ষার্থী অঙ্কন বিশ্বাস বিষপান করে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে মারা যান। যদিও এখনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি যে এটি আত্মহত্যা ছিল নাকি পরিকল্পিত খুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সাদিয়া তাবাসসুম নামে এক শিক্ষার্থী নিজ ঘরে বাঁশের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যা প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দিন যাচ্ছে আর প্রতিদিনের খবরের কাগজে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার সংবাদ রচিত হচ্ছে। গত ২৩শে মে একই দিনে তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এরা হলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০- ২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র আবিদ বিন আজাদ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস এর একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ওয়াফিয়া এবং সাভারের আশুলিয়ার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তানভীর অয়ন।
আত্মহত্যা প্রবণতা কত বেড়ে গেছে চিন্তা করা যায় কি যে একই দিনে তিনজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যা কি আদৌ কোন কিছুর সমাধান হতে পারে! আমরা আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে খুঁজে পাই বিভিন্ন কারণ। তবে বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে বলেছেন শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা করার পেছনে যে কারণগুলো উল্লেখযোগ্য তা হল- দরিদ্রতা, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, প্ররোচনা, চাপ, হতাশা, নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হীনতা, আত্মবিশ্বাস এর ঘাটতি ইত্যাদি। এসব কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নেয়। কিন্তু এই আত্মহত্যা তো কোনো কিছুর সমাধান না। পৃথিবীর কোনো ধর্মই আত্মহত্যা কে সমর্থন করে না। তবুও মানুষ এ নিকৃষ্ট পথ বেছে নেয়।
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এটি প্রমাণিত যে আত্মহত্যা মারাত্মক অপরাধ ও হারাম কাজ। আর এর পরিণত খুবই ভয়াবহ। আত্মহত্যাকারীকে জাহান্নামের আগুনে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আত্মহত্যা সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করেন - "তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।" ( সূরা আন নিসা আয়াত: ২৯) অপর একটি আয়াতে বলা হয়- "তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।" (সূরা বাকারা আয়াত: ১৯৬)
আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে হলে নীতিনির্ধারকদের প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে আরো বেশি করে সমন্বিত প্রকল্প কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি ও কর্ম নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ক্যারিয়ার চিন্তা থেকে হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা গুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে এখনই পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরে আমাদের অনুশোচনা করতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় দায়িত্বশীলদের অবদান রাখার সময় এখনই।
দিনের-পর-দিন বেড়ে চলা এই আত্মবিনাশের পরিত্রাণের ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ না করলে খুব শীগ্রই এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আত্মহত্যা করলে শুধু একজন ব্যক্তিই মারা যায় না, তার সাথে তার পুরো পরিবার জড়িত। তারা ভেঙে পড়ে, হারায় প্রিয়জন। সাময়িক দুঃখ, কষ্ট, চিন্তা বা হতাশার জন্য যে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে তার জন্য সে দুনিয়া আখিরাত দুটোই হারাচ্ছে। দুর্দিন সব সময় থাকে না। সময় ঘুরে সুদিন ফিরে আসে। নেপোলিয়ন বেনাপার্ট তার বিখ্যাত উক্তিতে বলেছেন , "আত্মহত্যা জীবনের সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়।" জীবনের সার্থকতা আত্মহত্যা নয়, জীবন একটাই এখানে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে অনেক প্রতিকূলতা পেরোতে হবে।
দুঃখের পর সুখ আসবে। অন্ধকার রাতের পর রৌদ্রজ্জ্বল সূর্য দেখা দেবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতির নিয়মেই আমাদের জীবনে দুঃখ কষ্ট আসে। সেই দুঃখ কষ্টে আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। দৃঢ় বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। দুঃখ নামক নদী সাঁতরে পার করতে পারলেই সুখ নামক স্বর্গভূমির দেখা মিলবে।তাই আত্মহত্যা নয় জীবনে দুঃখ-কষ্ট যাই আসুক মেনে নিতে হবে। জীবনটাকে উপভোগ করতে হবে। জীবন একটাই, একবার হারিয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই একমাত্র জীবনের দুঃসময় সুসময় দুটোই হাসিমুখে পার করতে হবে।
সৃষ্টিকর্তার উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। যে প্রাণটা আপনি শেষ করতে চাইছেন এটা স্রষ্টার সৃষ্টি পৃথিবীর কোন মানুষ তা সৃষ্টি করতে পারবে না। আর সেই স্রষ্টার সৃষ্টি কে ধ্বংস করার পরিণাম যদি কেউ স্বচক্ষে দেখতে পারতো তাহলে আর কেউ আত্মহত্যা করত না। সাময়িক দুঃখ কষ্টের জন্য আত্মহত্যা করতে গিয়ে মানুষ নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে অনন্তকালের জাহান্নামের আগুনে। তাই আসুন আত্মহত্যাকে না বলি জীবনকে উপভোগ করতে শিখি। সুখ দুঃখ সব মেনে নিয়ে জীবনটাকে সুন্দর ও উপভোগ্য করে তুলি।
|
|
|
|
সাকিবুল ইসলাম প্রতিটা প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এটা আমরা সবাই জানি, এটাও জানি মৃত্যু নিশ্চিত, এটা থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। কিন্তু এই মৃত্যুর সাথে আরো একটি শব্দ যেটা প্রায়ই আমরা দেখি তা হলো আত্মহত্যা। বর্তমান সময়ে এটির প্রবণতা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। কিন্তু কেন এই আত্মহত্যা? এটাই কি সকল সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়? কিসের আশায় মানুষ নিজের জীবনকে নিজেই হত্যা করছে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলেই সামনে চলে আসে আত্মহত্যার করুণ রূপ!
কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার আশপাশে থাকা একজন বিকলাঙ্গ মানুষ বা গরিব দিনমজুর জীবনের প্রতিকূলতার মাঝে থেকেও খুশি মনে কীভাবে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে? অথচ আপনি সামান্য কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আত্মহত্যার কথা ভাবছেন! আত্মহত্যা মানেই সবকিছুর সমাধান নয় বরং জীবনযুদ্ধে হার মেনে নেওয়া। ভাঙা-গড়ার চিরায়ত নিয়ম মেনেই জীবন সুন্দর। বেদনা, একাকিত্ব, দুঃখ জীবনেরই অংশ। সুখের পর দুঃখ আবার দুঃখের পর সুখ— এ চক্রেই আমাদের জীবন আবদ্ধ। এ কথাগুলো কমবেশি আমরা সবাই জানি। তবু কেউ কেউ বেদনার সঙ্গে লড়তে ভুলে যাই, নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখার আগেই আত্মহনন করে বসি। আমাদের মাথায় থাকে না এ চলে যাওয়া মানে হেরে যাওয়া।
প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারি বলেই আমরা মানুষ। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। ভাঙা-গড়ার প্রাকৃতিক নিয়মকে অস্বীকার করে মানবজন্মকে বৃথা করা আমাদের উচিত নয়। কিছু সময় জীবনে আসবেই যেগুলো পার করা সত্যিই কষ্টকর। কেউ পাশে না থাকা বা গভীর একাকিত্ব, কিংবা বিচ্ছেদ অথবা ব্যর্থতার বৃত্তে আবর্তিত হওয়া— এগুলো সবার জীবনেই আসে এবং আসবেই। এটাই সত্য। নিজের জীবনকে খুব বেশি ভালোবাসতে হবে৷ জীবনের গূঢ় সত্যটা ভাবলে দেখা যায়, বেদনাও সুন্দর। বেদনাকেও উপভোগ করা যায়। প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজেকে সময় দেয়া, নিজের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করা। তারপর পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র। প্রতিটি মানুষের উচিত ভালো ও ইতিবাচক চিন্তার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো। নিজেকে মানসিকভাবে সতেজ রাখাও সুখী জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবসর সময়টাকে একাকিত্ব হিসেবে না দেখে নিজের প্রিয় কোনো কাজ করে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যেতে পারে। সেটা হতে পারে আড্ডা, বইপড়া, টিভি দেখা, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা। যারা একাকিত্ব অনুভব করেন তারা সম্পর্ক গড়ায় মনোযোগ দিন। ইতিবাচক মানুষের সংস্পর্শে আসুন, শখের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, ধর্মকর্ম পালনে মনোযোগ দিন। দেখবেন জীবন অনেক উপভোগ্য। যারা ব্যর্থতার চক্রাকারে আবদ্ধ তারা লড়াই করুন। পরিশ্রম কখনো কাউকে নিরাশ করে না। নিজেকে ব্যর্থ মনে করে পৃথিবীকে যত কুৎসিত মনে করছেন, একবার শুধু সফল হোন, ততগুণ বেশি সুন্দর দেখবেন পৃথিবীকে।কিছু মানুষ রয়েছেন যারা আত্মহনন করেন হীনম্মন্যতায়, মর্যাদাহানিতে, অপরাধের শিকার হয়ে। তাদের উদ্দেশে বলব ফিরে আসতে হবে। একটু চেষ্টা করলেই নতুন জীবনে ফেরা সম্ভব। আমাদের সবার জীবনের মূলমন্ত্র একই, তা হলো লড়াই বা যুদ্ধ।
একজন ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্য বহাল রাখার দায়িত্ব সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারেরই। কেউ ব্যর্থ হলে, অন্যায় করলে কিংবা কারো সঙ্গে অন্যায় হলে তাকে মানসিক সমর্থন দিতে হবে। তাকে ধিক্কার দেয়া, মানসিকভাবে অপদস্ত করা বা সামাজিকভাবে হেয় করা কোনো অবস্থাতেই উচিত নয়। কাউকে মানসিকভাবে সতেজ রাখার উপায় হলো তাকে সঙ্গ দেয়া। বর্তমানের অধিকাংশ আত্মহত্যাই হলো নিঃসঙ্গতাজনিত। নিজের বন্ধু, পরিবারের কেউ বা সমাজের কেউ নিঃসঙ্গতায় ভুগলে তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তাকে মানসিক সমর্থন দিতে হবে। আত্মহত্যা সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই জোরালো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। না হয় জাতির জন্য সামনে অপেক্ষা করছে অশনি সংকেত! আমাদের বিষণ্ন লাগতেই পারে। এই বিষণ্ন লাগা, হতাশ লাগা এগুলো কোনো বড় ঘটনা নয়। শরীরের রোগের মতো মনের রোগের চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচেতন প্রয়াস আরও বাড়াতে হবে। আমাদের মনের যত্ন নিতে হবে। সব থেকে বেশি যা দরকার তা হলো, আমাদের আত্মবিশ্বাসের জায়গাকে মজবুত করতে হবে। জীবনে আঘাত, দুঃখ, বেদনা, কষ্ট আসে জীবনকে শক্ত করার জন্য; মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য নয়। মনে রাখতে হবে, মৃত্যু আমাদের জীবনের লক্ষ্য নয়, বেঁচে থাকাটাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য। আমরা চাই, মানুষ নিজেকে ভালবেসে বেঁচে থাকুক, আত্মহত্যার এই দুঃখগাঁথার ইতি ঘটুক।
লেখক : সাকিবুল ইসলাম শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার, কলাম অ্যান্ড কনটেন্ট রাইটার্স
|
|
|
|
এম এ রহিম: ২০০১ সালের ২ অক্টোবর। জাতীয় সংসদ নির্বাচ শেষ হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে বিএনপি। সরকার গঠনে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। নির্বাচন শেষ হওয়ার দুইদিনের মাথায় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী মতি ভাই সিলেট এলেন। সিলেট নগরীর তালতলায় হোটেল হিলটাউনে উঠলেন। পত্রিকাটির ব্যুরো প্রধান আমি। রাতের খাবার খেলাম এক সাথে।
মতি ভাই জানিয়ে দিলেন পরদিন খুব সকালে যাওয়ার জন্যে। সাতসকালে আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাসভবনে যাবেন। নির্দেশনা অনুযায়ী হিলটাউন হোটেলের সামনে হাজির হলাম সূর্য উঠার আগেই। দেখলাম মতি ভাই দাঁড়িয়ে আছেন।
টিপটিপ বৃষ্টি ঝড়ছিল। মতি ভাইয়ের নির্দেশনায় একটি রিকশা নিয়ে রওয়ানা হলাম ধোপাদিঘির পারে হাফিজ কমপ্লেক্সে। হাফিজ কমপ্লেক্স আবুল মাল আবদুল মুহিতের পৈতৃক বাড়ি। নিচতলার ঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামীম ভাইকে। মতি ভাইকে দেখে অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লেন শামীম ভাই। ২-৩ মিনিটের মাথায় সিড়িঁ বেয়ে নেমে এলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বললে আরে মতি যে। এতো সকালে কোথা থেকে এলে। কথার মাঝেই তিনি অট্টহাসি দিচ্ছিলেন। দুইদিন পূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তিনি যে পরাজিত হয়েছেন তার কোনো আলামতই দেখা যাচ্ছিলনা। প্রসঙ্গত ওইসময় সিলেট-১ আসনের নির্বাচনে বিএনপি নেতা এম সাইফুর রহমানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০১ সালে প্রথম বারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। সিলেটের অলিগলিতে মুহিতকে নিয়ে ছুটে যেতেন সে সময়কার সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ভোটারদের সাথে এ এম মুহিতকে পরিচয় করিয়ে দিতেন কামরান। সন্ধ্যার আগেই প্রতিটি মিডিয়া অফিসে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ছুটতেন আকাশ চৌধুরী। তিনি বর্তমানে দৈনিক সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি। আকাশ চৌধুরীও আন্তরিকভাবে সহযোগিতা কামনা করতেন সাংবাদিকদের। আজকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ফ্যাক্স বা ই-মেইলযোগে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করতেন। মাল মুহিতের সহোদর ভাই আবদুল মোমেন।
যাক ফিরে যেতে হয় মতি ভাই ও মাল মুহিতের কতোপকোথন পর্বে। দুইজনই কথা বলছিলেন দাঁড়িয়ে। এক পর্যায়ে ভাষা পরিবর্তন হয়। দুইজনই অনর্গলভাবে ইংরেজি ভাষায় কথা বলছিলেন। একসময় মতি ভাই জানতে চাইলেন সাইফুর রহমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কি না? পরিস্কার ভাষায় আবুল মাল আবদুল মুহিত বললেন ‘আমি সন্ত্রাসের গডফাদারকে অভিনন্দন জানাতে পারি না, অভিনন্দন জানাইনি, জানাবো না।’ এই কথা বলে আবুল মাল আবদুল মুহিত রওয়ানা হলেন কোম্পানীগঞ্জে। সাথে ছিলেন ইফতেখার হোসেন শামীম। তার আগে বিদেয় জানালেন আমাদেরকে।
বাংলাদেশের খাঁটি দেশপ্রেমিক আবুল মাল আবদুল মুহিত ৩০ এপ্রিল চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর এই প্রস্থানে শোকে কাতর সিলেটবাসী।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা অনলাইন :
বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি ‘গণমাধ্যম/সংবাদমাধ্যম আইন’ আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। আইনটি নিয়ে সাংবাদিক মহলে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। দিন গড়িয়ে যাবার সাথে বহুল কাঙ্খিত আইনটি নিয়ে নানা ধরণের তথ্য বেরিয়ে আসছে। আসলে প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন-২০২২’ কতোটা সাংবাদিকদের স্বার্থে প্রণয়ন করা হচ্ছে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। এক কথায় বলতে গেলে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকুরীর শর্তাবলী) আইন-২০২২’ সাংবাদিকদের জন্য ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’। প্রস্তাবিত আইনটি জাতীয় সংসদের উত্থাপনের আগে এ আইনের সংশোধনের দাবিতে সাংবাদিক সমাজ মাঠে নামছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ ফেব্রুয়ারি রোববার ‘জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট’ শীর্ষক সাংবাদিক সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। এদিন সকাল ১১টায় ‘জাস্টিস ফর জার্নালিস্ট’ এর উদ্যোগে সাংবাদিক সমাজ আইনটির সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধন করবে; সাংবাদিক সমাজ তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি উপস্থাপন করবে।
প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যম আইন সাংবাদিকদের জন্য কতটুকু ইতিবাচক জানার চেষ্টা করি। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত সাংবাদিকদের জন্য আরেকটি সর্বনাশ উকি দিচ্ছে নাতো ? সেই প্রশ্ন এখন সাংবাদিক মহলের। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন ২০২২’ জাতীয় সংসদের উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রস্তাবিত আইনটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন পরবর্তী বিল আকারে পাস হলে সাংবাদিক সমাজে মহাসঙ্কটের সৃষ্টি হবে। প্রস্তাবিত গণমাধ্যম আইনে সবমিলিয়ে নতুন ৫৭টি ধারা সংযুক্ত হয়েছে তার মধ্যে ৩৭টি ধারা সাংবাদিকদের পেশাগত মান মর্যাদা ক্ষুন্ন ও স্বার্থ পরিপন্থি বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
আইনের খসড়াটির উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরা হলো: (১) প্রস্তাবিত গণমাধ্যম আইনে সাংবাদিকদের বিদ্যমান বা চলমান শ্রম আইনের সকল ধারা বাতিল করায় সুবিধা বঞ্চিত সাংবাদিকরা ন্যায় বিচার পেতে শ্রম আদালতের শরনাপন্ন হতে পারবেন না। (২) যেহেতু ফৌজদারি বা দেওয়ানী আদালতে সাংবাদিকদের চাকুরি, পাওনা সংক্রান্ত কোন আইন নেই হেতু ফৌজদারি ও দেওয়ানী আদালতেও সাংবাদিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো পথ খোলা থাকবে না। (৩) প্রস্তাবিত আইনে সাংবাদিকদের বিচারিক কোন আদালত থাকছে না; তার উপর বেতন, গ্রেচ্যুয়িইটি বা যে কোন বিরোধ বিষয়ে ন্যায় বিচার পেতে আদালতে যেতে হলে সরকার কতৃক বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে। (৪) প্রস্তাবিত আইনে সাংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান শ্রম আইনের বিধিগুলো বাতিল করে সাংবাদিকদের সাংবাদিক কল্যাণ সমিতি করতে বলা হয়েছে; সেহেতু খসড়া আইনটি জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার পর থেকে সাংবাদিকদের জন্য বার্গেনিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করা ইউনিয়নগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। (৫) সম্প্রচার মাধ্যম সংবাদ বিভাগে কর্মরত ক্যামেরাপারসন বা ফটোসাংবাদিক বা চিত্র সাংবাদিকদের পদে সাংবাদিক হতে পরিবর্তন করে কলাকুশলী করা হয়েছে। (৬) সাংবাদিকদের বিদ্যমান শ্রম আইনে ৬০ বছরে অবসরে যাওয়ার বিধি থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে ৫৯ বছরে সাংবাদিকতা পেশায় অবসরে যাওয়ার বিধান করা হয়েছে। (৭) সাংবাদিকদের বিদ্যমান শ্রম আইনে সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্টদের সপ্তাহে ৩৬ ঘন্টা কর্মকালীন সময় থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে ৪২ ঘন্টা প্রস্তাব করা হয়েছে। (৮) সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন। সাংবাদিকদের ২ দিন ছুটির দাবী থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে ১ দিন করা হয়েছে এবং সাংবাদিকদের বিদ্যমান শ্রম আইনে সকল সুযোগ সুবিধা কাঁটছাট করে প্রস্তাবিত আইন তৈরী করা হয়েছে। কর্মরত সাংবাদিকদের সর্বস্তরে পেনশন, ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ মহার্ঘ্য ভাতাসহ মৌলিক দাবি থাকলেও বা দেশের চলমান ও বিদ্যমান আইনে সংস্করণে, পরিবর্তন/পরিমার্জন করে সাংবাদিক সমাজের জন্য আরও উন্নত টেকসই আইন প্রণয়নের দরকার থাকলেও সাংবাদিকদের বিদ্যমান আইনের সাথে মিল রেখে টিভি ও আনলাইনে কর্মরত সাংবাদিদের জন্য ব্রডকাষ্ট আইন করাসহ সাংবাদিকদের পেশা, সম্মান, স্ট্যাটাস উন্নয়নে প্রেসকাউন্সিল আইন সংশোধন জরুরি থাকলেও সেটা না করে সাংবাদিকদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে গণমাধ্যমকর্মী আইন (চাকুরীর শর্তাবলী-২০২২) করার উদ্যোগ আমাদের সাংবাদিক সমাজকে শঙ্কিত করে তুলেছে। চলমান এ সংকটে সাংবাদিক সমাজ কিভাবে পরিত্রাণ পেতে পারে বা এই সংকট দূর করা যায় সেজন্য সকলের অংশগ্রহণে পরামর্শমূলক একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। দেশে বিদ্যমান সকল সাংবাদিক সংগঠনকে এ ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে।
লেখক: মিজানুর রহমান মাসুদ যুগ্ন সম্পাদক: আজকের বিজনেস বাংলাদেশ
|
|
|
|
নাজমুন নাহার জেমি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রাম সহ্য করে ধীরে ধীরে তিনি পূর্ব বাংলার জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্ত বিজয়ে উপনীত হন। বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আপসহীন নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করে বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে নেতৃত্বের সামনের কাতারে চলে আসেন তৎকালীন ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১১ মার্চ ১৯৪৮ প্রথম ধাপের আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে ছাত্রদের সংগঠিত করেন। দ্বিতীয় ধাপ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন তারই পরিকল্পনা ও নির্দেশিত পথে এগিয়ে চলে।
১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। ওই অধিবেশনে কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারের পক্ষে একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন, পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের ভাষা বাংলা। কাজেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাই রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিৎ। ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তীব্র ভাষায় এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। দুঃখের বিষয়, মুসলিম লীগ দলের কোনো বাঙালি সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে সমর্থন করে কথা বলেননি। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনও উর্দুর পক্ষ অবলম্বন করেন। গণপরিষদে বাংলা ভাষাবিরোধী সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে ঢাকায় ছাত্রসমাজ ২৬ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট পালন করে। বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২ মার্চ ফজলুল হক হলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি সভা আহ্বান করা হয়। কামরুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ১১ মার্চ সমগ্র পূর্ব বাংলায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ওইদিনে ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এ সভাতেই ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ কে সর্বদলীয় রূপ দেওয়া হয়। ১৯৪৮ এর ১১ মার্চ সকাল ১০টায় শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়া হয়। আটক দিনগুলো সম্পর্কে তিনি বলেছেন ‘জেলের... দেয়ালের বাইরেই মুসলিম গার্লস স্কুল। যে পাঁচ দিন আমরা জেলে ছিলাম সকাল ১০টায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটু ক্লান্তও হত না। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ‘বন্দী ভাইদের মুক্তি চাই’ প্রভৃতি স্লোগান।
১৯৪৮ এর ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত আমতলায় শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলা ভাষার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিটিং শেষে তিনি ছাত্রদের নিয়ে স্মারকলিপি দেন। এ বিষয়ে তিনি বলছেন, ‘১৬ তারিখ আমতলায় এই প্রথম আমাকে সভাপতিত্ব করতে হলো।’ রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন শুধু ঢাকায়ই সীমাবদ্ধ ছিল না, দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলা পাকিস্তানের শতকরা ছাপ্পান্ন ভাগ লোকের মাতৃভাষা। তাই বাংলাই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিৎ। তবুও আমরা বাংলা ও উর্দু দুটি রাষ্ট্রভাষা কার দাবি করেছিলাম।’ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রায় সাত মাস পর ১৯ মার্চ পাকিস্তানের জাতির পিতা গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে আসেন। ২ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতার অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে তিনি ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ শেখ মুজিব তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন, ‘আমরা প্রায় চার-পাঁচশত ছাত্র এক জায়গায় ছিলাম সে সভায়। অনেকে হাত তুলে জানিয়ে দিল মানি না, মানি না।’ ছাত্রসমাজের এ দ্বিধা দ্বন্দ্বের সময় কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে জিন্নাহর অবস্থানকে সমর্থন করে বক্তব্য দেন। এ সময় শেখ মুজিবের নেতৃত্বের দূরদর্শিতা লক্ষ করা যায়। তিনি বলেন, ‘নেতা অন্যায় করলেও ন্যায়ের স্বার্থে তার প্রতিবাদ করতে হবে। বাংলা ভাষা শতকরা ৫৬ জন লোকের মাতৃভাষা, পাকিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সংখ্যাগুরুদের দাবি মানতেই হবে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।’ সাধারণ ছাত্ররা শেখ মুজিবকে সমর্থন করলেন। এরপর ভাষার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন, শোভাযাত্রা অব্যাহত থাকে।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খাজা নাজিমুদ্দিন প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯৫২ সালের ২৫ জানুয়ারি। ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি ঘোষণা করেন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ তার এ ঘোষণার পর জনগণ ১৯৪৮ সালের চেয়েও ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘট পালিত হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি। ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরি মিলনায়তনে সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র ও তরুণদের বাইরে এটিই প্রথম সভা, যেখানে বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতারা সমবেত হন। তরুণ রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমদ তখন জেলে বন্দী ছিলেন। অসুস্থতার ভান করে শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলেন। হাসপাতাল থেকেই তিনি গোপনে মোহাম্মদ তোয়াহা, আবদুস সামাদ আজাদ, গোলাম মাওলা প্রমুখের সঙ্গে সভা করে জানিয়ে দেন ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে, হরতাল হবে এবং অ্যাসেম্বলি ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।
এদিকে শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদ তাদের দীর্ঘ কারাবাস থেকে মুক্তির জন্য ১ ফেব্রুয়ারি সরকারের কাছে আবেদন করেন এবং জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের মুক্তি দেওয়া না হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা জেলের ভেতর অনশন ধর্মঘট করবেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের দু’জনকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিন সাহেব ফরিদপুর জেলেই অনশন করলেন। দু’দিন পর অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে তাদের জোর করে নল দিয়ে তরল খাবার দেওয়া হলো। এদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের অনশনের বিষয়টি ২০ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য আনোয়ারা খাতুন মুলতুবি প্রস্তাব হিসেবে উত্থাপন করলে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন নির্লজ্জভাবে এর বিরোধিতা করেন।
ইতোমধ্যে ঢাকায় ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টার দিকে মাইকে ১৪৪ ধারা জারি করে পরবর্তী এক মাস ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১০টা থেকে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমা হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মতিন জ্বালাময়ী বক্তৃতায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্তমত দশজন দশজন করে ছাত্র মিছিল করে অ্যাসেম্বলি ভবনের দিকে যেতে থাকে। বেলা প্রায় সোয়া ৩ টার সময় এমএলএ ও মন্ত্রীরা মেডিক্যাল কলেজের সামনে দিয়ে পরিষদ ভবনে আসতে থাকেন। পুলিশ বেপরোয়াভাবে ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালায়। বাধ্য হয়ে ছাত্ররা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পুলিশ ছাত্রদের লক্ষ করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই রফিক উদ্দিন, আবদুল জব্বার শহিদ হন এবং আরও ১৭ জন গুরুতর আহত হন। রাতে আবুল বরকত মারা যান।
২১ ফেব্রুয়ারি রাতে শেখ মুজিব জেলে বসে ঢাকার ছাত্রদের ওপর গুলির খবর পেলেন। ফরিদপুরেও হরতাল হয়েছে। অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে অনশন ভঙ্গ করানো হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান তাকে নিয়ে যেতে জেলগেটে আসেন। প্রকৃতপক্ষে এদেশে ১৯৪৭ থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্র গঠনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাই তাঁকে এদেশের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছে।
লেখক : নাজমুন নাহার জেমি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
|
|
|
|
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের পাতায় একজন স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিকদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই ভাষাশহীদ রফিকের নামটাই সর্বপ্রথম উঠে আসবে। ভাষা আন্দোলনে অমর শহীদদের অন্যতম রফিক উদ্দিন আহমদ আমাদের গর্বের জায়গা দখল করে আছেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে রফিক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে প্রথম শহীদ হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করেন এই আন্দোলনের ইতিহাসে। রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন লড়াকু এ বীর সৈনিক। ভাষা যে একটি জাতির অস্তিত্ব তা প্রমাণ করতে প্রাণ বিসর্জন দিতে পিছপা হননি তিনি।
দেশ জাতি, সমাজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিক অনুপ্রেরণার এক অনন্য উৎস। ভাষা আন্দোলনের সময় রফিক উদ্দিন আহমদ তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিংগাইরের পারিল বলধারা গ্রামে (বতর্মানে রফিকনগর) আবদুল লতিফ মিয়া এবং রাফিজা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নেন প্রতিবাদী ও সাহসী সন্তান রফিক উদ্দিন। শহীদ রফিক তার বাড়ি থেকে ৭ মাইল দূরে অবস্থিত বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। পরে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। রফিক মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ১ম ও ২য় বর্ষে লেখাপড়া করেন। ১৯৫০ সালে দেবেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষা দেন। বাবার প্রিন্টিং ব্যবসা দেখাশুনার জন্য পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। রফিক দেবেন্দ্র কলেজে বাণিজ্য বিভাগে পড়ালেখা করেছেন। তিনি জগন্নাথ কলেজের অনিয়মিত অর্থাৎ সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র ছিলেন বলে জানা যায়। শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি তিনি মাঝে-মধ্যে পিতার প্রেসের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। ওই ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থেই তিনি জগন্নাথ কলেজের সান্ধ্যকালীণ কোর্সে ভর্তি হন।
তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সময় শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন। এ আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন রফিক। কিন্তু দিন কয়েক পরেই যে পানু বিবির সঙ্গে রফিকের বিয়ে। তাই ছেলেকে মিছিলে যেতে মানা করেন লতিফ মিয়া। ২১ ফেব্রুয়ারি বিয়ের শাড়ি-গহনা নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আন্দোলন মিছিলে যান তিনি। তাদের মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল প্রাঙ্গণে গুলি চালায় পুলিশ। এতে রফিক মাথায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ভাষাশহীদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে প্রথম শহীদ হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে যুক্ত করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল। ছয়/সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ এনাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন। তাদের মাঝে ডাঃ মশাররফুর রহমান খান গুলিতে ছিটকে পড়া রফিকের মগজ হাতে করে নিয়ে যান।
রফিকই পৃথিবীতে ভাষার জন্য প্রথম শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। তবে পাকিস্তানী হায়েনারা তাকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঢাকা মেডিক্যাল থেকে তার লাশ নিয়ে লুকিয়ে ফেলে এবং জনরোষের ভয়ে মৃত্যু পরবর্তী রাত ৩টায় সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাধায়নে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করে। কিন্তু তাঁর কবরের কোন চিহ্ন রাখা হয়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দার এর ‘ভাষা আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে একাধিক উৎস থেকে উল্লেখ করা হয়েছে ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন। মাতৃভাষার লড়াইয়ে রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন লড়াকু বীর সৈনিক রফিক। ভাষা যে একটি জাতির অস্তিত্ব তা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করতে প্রাণ বিসর্জন দিতে পিছপা হননি জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) সাবেক এই শিক্ষার্থী। একজন তরুণ সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে হয়েছিলেন আন্দোলনের অনন্য নায়ক। এ দেশ জাতি, সমাজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিক চেতনা আর অনুপ্রেরণার এক অনন্য উৎস।
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার শহীদ রফিককে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে। সরকারিভাবে ২০০৬ সালে তারঁ ‘পারিল’ গ্রামে শহীদ রফিকের নামে ভাষা শহীদ পাঠাগার ও স্মৃতি যাদুঘর স্থাপন করা হয়। যেখানে তার ব্যবহৃত জিনিষপত্র ও প্রচুর বই আছে। তারও আগে প্রশিকার উদ্যোগে তারঁ বাড়ির কাছেই একটি ছোট লাইব্রেরি গঠন করা হয়। যেখানে মূলত তার স্মৃতিগুলো প্রথম থেকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়।
মহান এ ভাষাসৈনিক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থীর স্মৃতি ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেরিতে হলেও সম্মান জানিয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে পুরনো বিজনেস স্টাডিজ ভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষাশহীদ রফিক ভবন’ নামকরণের প্রস্তাব করা হয়। পরে এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। নতুন নামকরণ হওয়া ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’ এ বাংলা আর ইতিহাস বিভাগের কার্যালয় ও মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে নেই কোনো ভাস্কর্য বা স্মৃতি স্তম্ভ।
শহীদ রফিক জগন্নাথের ছাত্র হয়ে ভাষার জন্য জীবন দেয়ায় বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবসময় গর্ববোধ করি। অনেক শিক্ষার্থী হয়তো জানেও না তার ইতিহাস। তাই ভাষা শহীদ রফিকের ভাস্কর্য নির্মাণ ও ইতিহাস সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছে সবাই। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চা, সমাজকল্যাণসহ মানবিক গুণাবলি বিকাশ উপযোগী ত্রিয়াকলাপে আগ্রহ থেকেই রফিকের মধ্যে সৃষ্টি হয় ঢাকার চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণের তাড়না। যা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের তরুণদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের চেতনা ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। মহান এই ভাষাসৈনিককে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ বা ভাস্কর্য তৈরি করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে কোনো হল নির্মিত হলে তা ভাষাশহীদ রফিকের নামে নামকরণ করা যেতে পারে। শহীদ রফিকের নামে ভাষা শহীদ পাঠাগার ও স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন করা যেতে পারে। নতুন ক্যাম্পাসের হলের সামনে হলেও যেন শহীদ রফিকের একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহীদ রফিকের পরিবারকে উপযুক্ত সম্মানে ভূষিত করা হোক, এমনটিই প্রত্যাশা।
আজ এত বছর পরে ফেব্রুয়ারির শুরুতে এ শহীদ ভাইদের প্রতি এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা সবার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, সারা বছরই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব ভাষাশহীদ রফিকের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মানের ডালি অক্ষুণ্ণ থাকে এই আহ্বান সবার কাছে। শহীদ রফিকের নামে বছরের বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠানের আয়োজন কিংবা নাটক মঞ্চস্থ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ইতিহাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এই ভাষাসৈনিককে যেন বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ভুলে না যায় সে জন্য প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে। ভাষার জন্য যিনি জীবন দিয়েছেন তিনি আমাদের গর্বের ধন আমাদের বড় ভাই ভাষাশহীদ রফিক।
সর্বোপরি ভাষা আন্দোলন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তি ও অনুপ্রেরণার জায়গা ছিল। জগন্নাথের ছাত্র ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি শুধু ভবনের নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্মৃতি স্তম্ভ বা ভাস্কর্য বানালে সবার কাছে ইতিহাস রক্ষিত হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শহিদ শিক্ষকসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
|
|
|
|
নাজমুন নাহার জেমি
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনঃ বন্যা, নদীভাঙন, খরা,জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিক্ষয় আমাদের নিত্যসঙ্গী। নদীভাঙনের ফলে প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হচ্ছে। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি তো রয়েছেই। মানবসৃষ্ট নানা কারণে প্রাকৃতিক পানিচক্র বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। কমে যাচ্ছে পানির গুণগত মান ও প্রাপ্যতা। বাড়ছে লবণাক্ততা ও মিঠা পানির স্বল্পতা। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বন্যা, খরা, সাইক্লোনের ঝুঁকি বাড়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করাও দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এমতাবস্থায় পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি, মৎস, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প, বনায়নসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনায় রেখে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করে দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার সমন্বিত পরিকল্পনা হচ্ছে ডেল্টা প্ল্যান বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বাংলাদেশের মতো নেদারল্যান্ডসও একটি ব-দ্বীপ রাষ্ট্র। আমাদের মতো তারাও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস একত্রে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। শতবছরের মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারপারসন করে ‘ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’ গঠন করেছে সরকার। ১২ সদস্যের এই কাউন্সিল গঠন করে ১ জুলাই ২০১৮ গেজেট প্রকাশ করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে বহু আলোচিত ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ পরিকল্পনাটি ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদ ব্যাবস্থাপনা, নৌপরিবহন স্যানিটেশন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সব খাত বিবেচনায় রেখে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ অপরিহার্য ছিল। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গঠন করা হবে করা হবে ‘ডেল্টা তহবিল’। তহবিলের সম্ভাব্য উৎস বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিকেও (পিপিপি) বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গঠন করা হবে ‘ডেল্টা কমিশন’। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭৮২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল নাগাদ জিডিপির ২.৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থায়ন দরকার বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। খাদ্য নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ পানির নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই তিনটি বড় লক্ষ্যকে চিহ্নিত করে ডেল্টা প্ল্যানের ৬টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: (১)বন্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, (২) বিশুদ্ধ পানির নিরাপত্তা এবং পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, (৩) নদীর বর্ধিত অংশ ও নদীর মোহনার টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, (৪) জলাভূমি এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং এগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিতে প্রচার চালানো, (৫) অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃসীমান্ত জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং ন্যায়সঙ্গত প্রশাসন গড়ে তোলা, (৬) জমি ও জলজ সম্পদের সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
পরিকল্পনাটি প্রণয়নে দেশের ৮টি হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলকে ভিত্তি হিসেবে ধরে প্রতিটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির মাত্রায় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একই ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোকে অভিন্ন গ্রুপে বা হটস্পটে আনা হয়েছে। এভাবে দেশে মোট ৬টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো: উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল,পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা অঞ্চল এবং নগর অঞ্চল ও ক্রসকাটিং অঞ্চল (শেরপুর, নীলফামারী ও গাজীপুর জেলা)। এসব হটস্পটের পানিসম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, খাদ্যনিরাপত্তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ভূ-প্রতিবেশ, নদীর অভ্যন্তরীণ ব্যবহার, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা, পলি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, কৃষিতে পানির চাহিদা নিরূপণ ও সুপেয় পানি সরবরাহে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ২৩টি প্রকল্প, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৯টি প্রকল্প, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৬টি প্রকল্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৮টি প্রকল্প, নদী ও মোহনা অঞ্চলের জন্য ৭টি প্রকল্প, নগর অঞ্চলের জন্য ১২টি প্রকল্প আর ক্রসকাটিং অঞ্চলের জন্য ১৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট ১৯টি সহায়ক গবেষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে, যার আলোকে একটি জ্ঞানভান্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও নগরায়ন বিবেচনা করে ভবিষ্যতের বিভিন্ন রূপকল্প বিবেচনায় শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ বর্ষা মৌসুমে বন্যা ব্যবস্থাপনা, পানি ও ভূমির লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণসহ পানিসম্পদ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের ডেল্টা প্ল্যানকে আরও সুপরিকল্পিতভাবে সমন্বিত করা প্রয়োজন। বাস্তবসম্মত টেকসই উন্নয়নের মূলনীতি বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে।
লেখক: নাজমুন নাহার জেমি শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
|
|
|
|
মোঃআজমাইন মাহতাব : মূলতঃ রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে থাকা বস্তু গুলো কুড়ানোই এদের মূল কাজ। প্রায়শই খালি গায়ে কিংবা ছেড়া জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়ায় এই সব শিশুরা। নিছক জীবিকা বা বাবা-মাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগানোর জন্য বাল্য বয়সে তাদের এই রকম জীবন যাপন। আচ্ছা আমাদের কি কিছুই করার নেই এদের জন্য? আমরা দেশের জন্য কত কিছুই তো করতে চাই। সকলের সম্মিলিত একটু চেষ্টায় এই সকল পথ শিশু পেতে পারে একটু মানবিক জীবন যাপনের সুযোগ। পথ শিশুদের একটি বড় অংশ তাদের পরিবার ছাড়াই দিনে এবং রাতে রাস্তায় অবস্থান করে। কিছু শিশু সারাদিন ভিক্ষা করে রাতে পরিবারে ফিরে আসে। অপরদিকে দেশের নগর বন্দর শহরে দিনে দিনে ছিন্নমূল শিশুদের মিছিল প্রসারিত হচ্ছে। চোরাচালান মাদক বিক্রি সমাজ বিরোধী কার্যকলাপে শিশুদের ব্যবহার আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিবছর ২৫ হাজার শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরে। জন্ম নিবন্ধনে আওতায় এদের অধিকাংশ আনা সম্ভব হয়নি। এদের একটি অংশের প্রতিদিন রাত কাটে রাস্তা ও ফুটপাতে। বাবার কোলে অপার স্নেহ আর মায়ের আঁচলে মুখ লুকানোর স্বর্গীয় সুখ তাদের কপালে জোটেনি। ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই ওরা অনাদর, অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হয়েছে ধাপে ধাপে। রাস্তার পাশে জেগে উঠা আবর্জনার স্থূপ, বাস টার্মিনাল-রেলস্টেশন এখানে-সেখানে নোংড়া অপরিচ্ছন্ন স্থানটুকুই আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নেয় ওরা । কাগজ কুড়ানো কিংবা ভিক্ষাবৃত্তি দিয়েই ওরা জীবন শুরু করে। সব্যসাচী মানুষের ধিক্কার, চড়-থাপ্পরসহ নানা শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। ওরা যেন সমাজের সর্বোচ্চ অবহেলিত মানুষ। ওদের নিয়ে ভাবনার সময় হয় না কারো। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় সহ সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ওরা কারো সহানুভূতি পায় না কখনো। বেঁচে থাকার আহার টুকু কখনো রোজগার করতে না পারলে পেটের জ্বালায় ওরাই বেছে নেয় চুরি, ডাকাতিসহ নানা সামাজিক অপরাধমূলক কাজ। সমাজের এসব পথ শিশুরা কারো কাছে ‘টোকাই’ আবার কারো কাছে ‘পিচ্চি’ হিসেবে পরিচিত। রেলস্টেশন ছিন্নমূল পথশিশু বা টোকাইদের একটি বড় অংশের বিচরণস্থল। এছাড়া বাজারের আশেপাশে বিভিন্ন রাস্তার পাশে, কল-কারখানার আবর্জনার স্থূপে অনেক টোকাই ছেলে-মেয়েদের কাঁধে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ ঝুলিয়ে কাগজ কুড়াতে দেখা যায়। তাছাড়া বাসস্ট্যান্ডে অনেক পথ শিশুকে বাসের কন্টাক্টারের সাথে সাথে যাত্রী হাঁকতে দেখা যায়। কিন্তু শিক্ষা বঞ্চিত, সমাজ সভ্যতার তিমিরে নিমজ্জিত, এসব ছিন্নমূল টোকাই-পিচ্চিদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে ওদের মেধা ও শ্রমের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটিয়ে দেশের সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। ভিক্ষা নয়, দেশের উৎপাদনের বড় একটি অংশের যোগান দেয়া যেতে পারে ওদের দ্বারা। সেই সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ছিন্নমূল টোকাই শিশুদের জন্য শিক্ষা গ্রহণের একটি সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। সচেতন মহলের কাছে অনুরোধ, এসব ছিন্নমূল অসহায় পথ শিশুদের পাশে এসে দাঁড়ান, তাহলে এরা উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করে দেশ গড়ার কাজে অংশ নিতে পারে। পথ শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠলে ঠিকানাহীন নিরাশ্রয় এসব শিশুরা মানুষ হবে। দেশ হবে সমৃদ্ধশালী।
|
|
|
|
নূরে আলম সিদ্দিকী
১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসন থেকে অবমুক্তির পরপরই আমার পূর্বপুরুষদের একটি বেদনাদায়ক ও বিশ্বকে অবাক করা একটি নতুন সংগ্রামের পথপরিক্রমণে নামতে হয়। বোধ করি পৃথিবীর কোন দেশের কোন বর্ণ-গোত্রের কোন ভাষার মানুষকে নিজের ভাষায় নিজের মাকে ডাকার অধিকার আদায় করতে গিয়ে বুকনিঃসৃত তাজা তপ্ত রক্ত ঢালতে হয়নি। সেই রক্তদান এতটাই গৌরবের ও আত্মমর্যাদার ছিল যে, দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে অর্জিত পাকিস্তানের উষালগ্নেই বাঙালি জাতীয় সত্তার বিকাশ, ব্যাপ্তি ও সফলতার- একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সুদৃঢ় বিনির্মাণের উপাত্ত তৈরি করে। বাঙালির আত্মপরিচয় সগৌরবে তুলে ধরার লক্ষ্যেই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি নাঈমউদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ছাত্রলীগের জন্ম হয়। এই ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার মহান ব্রতে ব্রতী হয়ে যারা এই অসাধ্য সাধন করেন, সেই স্থপতিরা শুধু বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় অধিকারেই তাদের চিন্তাকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের পরও সেইসব উচ্চকিত, উচ্ছ্বসিত, উদ্গত উদ্ধত প্রাণগুলো ভাষা আন্দোলনের অববাহিকায় দেশের প্রথম বিরোধী শক্তির সংগঠন হিসেবেই একটি স্বর্ণোজ্জ্বল সংগঠন ছাত্রলীগের আত্মপ্রকাশ ঘটায়। শুধু আমাদের কেন, সারাবিশ্বকে বিস্ময়াভিভূত করে ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯ সালে আন্দোলনের একেকটি সোপান তৈরি ও তা অতিক্রমণের মধ্য দিয়ে ৭০-এর নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ৭০-এর নির্বাচনকে প্রশান্ত চিত্তে আলিঙ্গন করে। প্রতিটি আন্দোলনের স্রোতধারায় দোল খাইয়ে বাঙালি জাতীয় চেতনাকে তখনকার জনগোষ্ঠীর বিস্তীর্ণ হৃদয়ে এমনভাবে প্রতিস্থাপিত করে যে, বঙ্গবন্ধুকে আন্দোলনের প্রতীক বানিয়ে ছাত্রলীগ আন্দোলনটিকে স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধিকার এবং স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় শুধু রূপান্তরিতই করেনি, ছাত্রলীগ তখনকার বাংলার জাগ্রত জনতার চিত্তকে এতটাই শানিত করে যে, নিরস্ত্র জাতি পৃথিবীর সবচাইতে হিংস্র ও পৈশাচিক সেনাশক্তিকে শুধু মোকাবেলাই করেনি, পর্যুদস্ত করার মাধ্যমে পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করে স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনে। একটি নিরস্ত্র জাতির এই ঐতিহাসিক বিজয় ও স্বাধীনতা বিশ্বকে শুধু বিমুগ্ধই করেনি, বিস্ময়াভিভূত ও আশ্চর্যান্বিত করেছিল। এই মহান বিজয়ের পথপরিক্রমণের একজন পথিক হিসেবে আমার মনে হয়, একটি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠীর এমন মহামিলন বোধ করি পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি। ষাট দশকের প্রথমার্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এনএসএফ দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে একটি অংশ ছাত্রশক্তির একটি অংশের সাথে মিলে সরকার সমর্থিত এনএসএফ নামে আত্মপ্রকাশ করে। রব সাহেব বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও প্রতিভাপ্রদীপ্ত ছাত্র হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তাকেই সভাপতি এবং মাহবুবুল হক দোলনকে সাধারণ সম্পাদক করে এনএসএফ-এর যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তী সম্মেলনে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জমির আলীর প্রযত্নে এনএসএফ প্রকৃতভাবেই বিকশিত হয় এবং অনেকগুলো হল ছাত্র সংসদে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়। ডাকসুতেও তাদের নেতৃত্বের অংশীদারিত্ব ছিল। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারপিট ও নানাবিধ ইস্যুতে তুলকালাম সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের জৌলুস ও আধিপত্য বিস্তারের দুর্দমনীয় লালসার পরিস্ফূটন ঘটলেও দলটির মধ্যে কাকতালীয়ভাবে অনেক প্রতিভাবান ছাত্রের সমাহার ঘটে। নেতৃত্বের মধ্যেও প্রতিভাপ্রদীপ্ত ছাত্রদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। সেই সময় সমাজতন্ত্রের স্লোগান সমন্বিত ছাত্র ইউনিয়নের প্রচন্ড প্রতাপ ছিল। ছাত্র ইউনিয়ন তখনও দ্বিধা-বিভক্ত হয়নি। বদরুল আলম, ফরহাদ ভাই, কাজী জাফর ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বের অগ্রভাগে থেকে ছাত্র ইউনিয়নের ব্যাপ্তি ও বিকাশ সমুজ্জ্বল করে তোলেন। ছাত্রলীগ সামরিক জান্তা আইয়ুবের সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথরচাপা অবস্থান থেকেও অত্যন্ত দৃপ্ত পদক্ষেপে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের অধ্যায় বিনির্মাণ করে মূলতঃ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি, মৌলিক গণতন্ত্র-ব্যবস্থা বাতিল এবং সামরিক শাসনের কূটিল চক্র ও হিংস্র থাবা থেকে জাতিকে বিমুক্ত করার প্রচেষ্টাকে ব্যাপকতর করে তোলে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সর্বজনাব রফিকুল্ল্হা চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, এনায়েতুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খান- এরাই প্রত্যয়দৃঢ় মননশীলতায় ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রবল গণআন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হন। তখনকার সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে ছাত্রলীগের সুদৃঢ় ভূমিকা থাকলেও অগ্রভাগকে আলোকিত করে রাখত ছাত্র ইউনিয়ন। তৎকালীন ঘটনাপ্রবাহের বাস্তবতায় এই নিরেট সত্যটিকে অস্বীকার করা যাবে না। তবে সবচেয়ে গৌরব, অহংকার ও আত্মবিশ্বাসের কথা হলো- শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, এনায়েতুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খান এবং পরবর্তীতে সৈয়দ মযহারুল হক বাকী, ও আব্দুর রাজ্জাক ছাত্রলীগের মাধ্যমে আন্দোলনের হাল ধরে সমগ্র বাংলাদেশকে ভিসুভিয়াসের মতো জ্বালিয়ে তোলেন। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের প্রচন্ড তোড়ে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট চিরতরে বাতিল হয়ে যায়। গণতন্ত্রের প্রতিশব্দ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কারারুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করেন। এখানে একটি কথা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক যে, ছাত্র আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপদান করার এবং অভীষ্ট সৈকতে নোঙ্গর করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও প্রেক্ষিত গড়ে ওঠে অনিবার্যভাবেই। এবং সেই লক্ষ্যমাত্রায় নূরুল আমিন সাহেবের নেতৃত্বে এনডিএফ নামে একটি রাজনৈতিক ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ওঠে। এখানেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। ৬২’র আন্দোলনে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, এনায়েতুর রহমান, কেএম ওবায়দুর রহমান- এরা ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের মূর্ত প্রতীক ছিলেন। আন্দোলনের বেদীমূল সৃষ্টি তো বটেই, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের কথোপকথন, চালচলন, ওঠাবসা- এমন নিখুঁত আদলে পরিমন্ডিত হতো যে, সবমিলিয়ে তারা ছাত্র আন্দোলনের আদর্শ পুরুষ ও অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। ৬ দফা প্রদানের পর সৈয়দ মাযহারুল হক বাকী, আব্দুর রাজ্জাক- এরাও ছাত্র-রাজনীতির ক্ষেত্রে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেন। পরিমার্জিত চিন্তার ও বুদ্ধির সৌকর্যে বাম রাজনীতির ধারাকে ছাপিয়ে ৬ দফার দাবিকে উচ্চকিত করতে তাঁরা সক্ষম হন। এই আন্দোলনের স্রোতধারায় ছাত্রজনতার আরও উচ্ছ্বসিত ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে গড়ে ওঠে ১১ দফার আন্দোলন। তাঁদের অকুতোভয় সাহস ও প্রত্যয়দৃঢ় দৃপ্ত চেতনায় পরবর্তীতে ৬৯-এর গণ-আন্দোলনের প্রচন্ড চাপে লৌহমানব খ্যাত আইয়ুব খানের পতনকে নিশ্চিত করে। তা সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সামরিক শাসনের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নাই। তবুও ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন ছিল অনেকটা ভোঁতা এবং মানুষের চেতনাটাও ছিল তীব্র এবং তীক্ষè। সামরিক শাসনের ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা ও অগ্রাহ্য করার মতোই শানিত। সম্ভবত পাকিস্তানের সামরিক জান্তা মানুষের এই শানিত চেতনাটি উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। যার ফলে সামরিক শাসন জারি করার পরপরই ইয়াহিয়া খান ৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতেই সাধারণ নির্বাচনের সুষ্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করতে বাধ্য হন। ফলে গণ-আন্দোলন একটুখানি হোঁচট খেলেও মূলত পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটা বিস্ময়কর বিজয় এনে দেয়। এই বিজয়ের আরেকটি বৈর্বক্তিক দিক হল, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদীয় আসন নির্ধারনের মাধ্যমে নির্বাচনটি অনুষ্ঠানের ঘোষণা। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সৌভাগ্যে জুটল ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন। ১১ দফা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমগ্র বাংলাদেশ গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে ওঠে। আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন ছাত্রনেতা আব্দুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী ও তোফায়েল আহমেদ। তখনকার ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রলীগের একাধিপত্যের শুরু এখান থেকে। আমরা পরবর্তীকালে যারা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা বা ৪ খলিফা হিসেবে আন্দোলনের জ্বাজ্জল্যমান প্রতীকরূপে রাজনীতিতে প্রতিভাত হয়েছিলাম, আমাদের চিত্তের অনুরণন, নাড়ীর স্পন্দন, রক্তের শিরায় শিরায় যে ছন্দ সৃষ্টি হতো- তা বাঙালি জাতীয় চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। এদেশের সকল আন্দোলনের বিশ্লেষণে এটি মরুভূমির নিষ্কলুষ সূর্যোদয়ের মতো ফুটে ওঠে যে, ছাত্রলীগই সকল আন্দোলনের অগ্রযাত্রী, উদ্ভাবক ও সারথি। বঙ্গবন্ধুকে তারা আন্দোলনে শুধু প্রণোদনাই প্রদান করেনি, বরং মূল শক্তি হিসেবে তার সমস্ত অগ্রযাত্রায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ইতিহাসের অলঙ্ঘ্যনীয় বিচারে বাংলাদেশ, শেখ মুজিব এবং ছাত্রলীগ একটি অপরটির প্রতিশব্দ বা পরিপূরক হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের আনুষ্ঠানিক জন্মদিন। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বেলিত ও উজ্জীবিত স্বাধীনতার ভ্রুণটির সৃষ্টি হয় ছাত্রলীগের গর্ভে। এ বাংলার রূপ-রস-গন্ধ ও মননের নির্যাস নিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে ভ্রুণটি সেদিন জন্মলাভ করেছিল, তাই বাংলাভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির স্বর্ণালী চন্দন মেখে অস্তিত্বের আবীর মাখে। “এ মাটি আমার সোনা, আমি করি তার জন্মবৃত্তান্ত ঘোষণা”- এটি ছাত্রলীগের অযুত-নিযুত কর্মীর জন্য শুধু একটি স্লোগান ছিল না, বরং অস্তিত্বের স্বর্ণসৈকত ছিল। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানেও বাঙালি চেতনার উন্মেষ ঘটানোর দুঃসাহসিকতা একটি অকল্পনীয় ব্যাপারই ছিল। অস্বীকার করার উপায় নেই, সমগ্র পাকিস্তানেই মুকুটহীন সম্রাট হিসেবে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অধিষ্ঠিত ছিলেন। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নয়, বরং জিন্নাহ সাহেবের মধ্যাহ্নের সূর্যরশ্মির মতো প্রদীপ্ত ব্যক্তিত্বের আলোকরশ্মির প্রখরতা হৃদয়ঙ্গম করেই মহাত্মা গান্ধী তাঁকে কায়েদে আযম উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ভারতকে অবিভক্ত রাখার অভিলাষ ও অভিপ্রায় করমচাঁদ গান্ধীর এতটাই প্রবল ও তীব্র ছিল যে, জিন্নাহ সাহেবকে তিনি অবিভক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু জিন্নাহ সাহেব তার চিন্তা-চেতনা, মনন ও মননশীলতায় আপসহীন, অকুতোভয় ও এতটাই প্রত্যয়দৃঢ় ছিলেন যে, এ ধরনের প্রস্তাবনা জিন্নাহ সাহেবকে সামান্যতম দুর্বল করতে পারেনি, আকর্ষণও করতে পারেনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় তার এই প্রত্যয়দৃঢ় চেতনাবোধ নীল নভোনীলের প্রদীপ্ত সূর্যের মতোই উদ্ভাষিত ও প্রজ্জ্বলিত করে তোলে তার নেতৃত্বকে। তিনি নেতৃত্বের এমন শিখরচূড়ায় অবতীর্ণ হন যে, তার প্রতিটি আহ্বান এই উপমহাদেশের মুসলমানদের কাছে অলঙ্ঘ্যনীয় হয়ে দাঁড়ায়। জিন্নাহ সাহেব সত্যিকার অর্থে কায়েদে আযম বা মহান নেতায় পরিগণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান। মনে রাখতে হবে, মুসলিম লীগের রাজনীতিটাই ছিল প্রাসাদকেন্দ্রিক। নবাবদের সুরম্য প্রাসাদ আহসান মঞ্জিলের মতো নবাবী প্রাসাদে জন্মলাভ করা সংগঠনটি আভিজাত্যের দাম্ভিকতায় বুদ্ হয়ে থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তব অর্থে তিনি তো পাকিস্তানের উভয় অংশের মানুষের হৃদয়ের সিংহাসনের অধিপতি ছিলেন। কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কূটিল প্রয়াসে একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এবং রাজনৈতিক জীবনে আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের (শওকত আলী, মোহাম্মদ আলী) প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় গড়েওঠা ওই নেতৃত্ব কীভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে একপেশে হয়ে গেলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অতি সাধারণ ছাত্র হিসেবে আজও তা আমার বোধগম্য হয় না। তবুও আমি বিদগ্ধ চিত্তে ও পরিতৃপ্ত হৃদয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবো এই কারণে যে, সেদিন তিনি ক্ষমতার নেশায় বুদ্ হয়ে বাঙালির অস্তিত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর অভিলাষ ব্যক্ত না করলে বাঙালি জাতীয় চেতনায় উজ্জীবিত আন্দোলনের পথপরিক্রমণের উন্মত্ততায় ছাত্রলীগের জন্ম হতো না। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি এবং বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ ব্যাপ্তি ও বিকাশ হতো না। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর জিন্নাহ সাহেবের এই উক্তি তাৎক্ষণিক বা ক্ষণিকের চিন্তার ফসল ছিল না। তখন ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিলাষকে চরিতার্থ করার জন্য মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের প্রায় সকলেই এই নির্লজ্জ অভিলাষ ব্যক্ত করেন। আর ক্রমাগত জনসম্পৃক্ততা তৈরি করে তখনকার ছাত্রলীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মনন তৈরির সাধনায় লিপ্ত হয়। তাইতো ভাষা আন্দোলনের বিশ্লেষকরা একমত হয়ে বলতে পেরেছিলেন, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নাও, নয়তো আন্দোলনের মোকাবেলা কর। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা না করলে রাজপথের বিদগ্ধ গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করে নেওয়া হবে। হয়েছেও তাই। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে বাংলার মাটি রঞ্জিত হয়েছে। কিন্তু বুকের তাজা রক্তের মাধ্যমে এই ভাষার দাবি অর্জিতও হয়েছে। ছাত্রলীগের একটি অতি ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে এ অর্জন আমার কাছে প্রচন্ড অহংকারের। এ অর্জনের বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মিতেই পথ দেখে আমরা সায়ত্বশাসন থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার অগ্নিঝরা পথে হাঁটতে পেরেছিলাম। এ পথে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্য আমাদের মধ্যে লেগেই থাকত। তার মধ্যে ৭০-এর নির্বাচনের পূর্বে কোন ম্যান্ডেট ছাড়াই স্বাধীনতার আহ্বান জানানোর রোমান্টিক অভিলাষটি প্রচন্ড চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এমনিতেই সমগ্র বিশ্বব্যাপী তখন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ঝড়ো হাওয়া বইছিল। তার প্রচন্ড উত্তাপের প্রভাব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র আন্দোলনে পড়াটাও স্বাভাবিক। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী। সৌভাগ্যক্রমে তখন ছাত্রলীগের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলাম। স্বাধীনতার অববাহিকায় একজন চারণ কবির মতো গান গেয়ে ফেরার বিস্তৃত সুযোগ আমার ভাগ্যে এসেছিল। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এ প্রজন্মকে আমি অবহিত করতে চাই, সেদিনের সেই অগ্নিঝরা সময়ে আবেগাপ্লুত হৃদয়কে সযত্নে নিয়ন্ত্রণে এনে সম্পূর্ণ সঠিক ধারায় পরিচালিত করতে পেরেছিলাম বলেই আন্দোলনের সোনারতরী সফলতার তীর খুঁজে পেয়েছে। ৭০-এর নির্বাচনের গণম্যান্ডেটের রায় আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দুর্দমনীয় ব্যক্তিত্ব এবং ছাত্রলীগের সূক্ষ্ম ও ত্রুটিবিমুক্ত অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্যটিকে আলিঙ্গন করতে পেরেছি। অনেক তপ্ত-তাজা প্রাণের রক্ত ঝরেছে, অনেক সতী-সাধ্বী রমনীর সতীত্ব বিসর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতার সূর্যের বিকীর্ণ অগ্নিকণায় বাঙালির সব ক্ষতচিহ্নগুলো মুছে দিয়ে স্বাধীনতার বিমূর্ত অস্তিত্বকে মূর্ত করেছে। অবস্থার প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মকে আমার বারবার বলতে ইচ্ছে করে, এই সুদীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর তার সূক্ষ্ম কারিগর ছিল ছাত্রলীগ। রাতের সব তারা যেমন লুকিয়ে থাকে দিনের আলোর গভীরে, তেমনি স্বাধীনতার চেতনাটি লুকিয়ে ছিল ছাত্রলীগের মননে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে যখন ছাত্রলীগ বা স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নামটি উচ্চারিত হয় না, তখন আমার হৃদয়টি দুমড়ে-মুচড়ে যায়Ñ কুঁকড়ে কেঁদে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকে ছোট করার জন্য নয়, বরং তাঁর কর্মময় জীবনটিকে শিল্পীর আঁচড়ে প্রতিভাত করার জন্যই ছাত্রলীগের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকা-কে নিবিড়ভাবে তুলে আনতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ইতিহাস একদিন কথা বলেই। আমি চোখ বুজে হৃদয়ের ধড়কানিতে শুনতে পাই, বঙ্গবন্ধুর সেই অমোঘ উচ্চারণ, “ছাত্রলীগের ইতিহাসÑ বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস”। বঙ্গবন্ধুর এই কথার সূত্র ধরেই আমার হৃদয়ের অনুরণনকে আমি ব্যক্ত করতে চাই। বঙ্গবন্ধুকে বটবৃক্ষের সাথে তুলনা করলে, তার মাটিতে প্রোথিত শিকড় হলো ছাত্রলীগ। তাকে বিশাল সাগরের সাথে তুলনা করলে, তার উচ্ছ্বসিত উর্মিমালা হলো ছাত্রলীগ। তিনি বাংলা, বাংলাই তাঁর- এই ছন্দে কোন কবি যদি শেখ মুজিবকে অভিহিত করেন, তবে তার অস্তিত্বের সমস্ত শরীর থেকে বেরিয়ে আসবে দোঁআশ মাটির পূত-পবিত্র গন্ধ। মনে হবে সারাবাংলার শ্যামল-সুন্দর ছবিটি তার অবয়বে গাঁথা। এগুলোর নিপুণ শিল্পী এবং শৈল্পিক মনন হলো ছাত্রলীগ। এখানে সংগঠনের মতভেদের প্রশ্ন আসে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ তো অবশ্যই থাকবে। এই ভিন্নতা বাংলাদেশের গণতন্ত্রেরই বিকাশ ঘটাবে। কিন্তু শেখ মুজিবের মহান অস্তিত্বকে কোনভাবেই খাটো করবে না। তবে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের মহান পথপরিক্রমণে যারা সহযাত্রী ও সহকর্মী ছিলেন- তাদের অবস্থানকে নিশ্চিহ্ন করার যেকোন অভিলাষ তাঁকে খাটো করবে, স্বাধীনতা আন্দোলনের সূর্যস্নাত গৌরবকে ম্লান করে দেবে। ৪ঠা জানুয়ারি ছাত্রলীগের আনুষ্ঠানিক জন্মের উষালগ্নের দিনে নতুন প্রজন্মের কাছে আমার প্রত্যাশা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সাফল্যকে তুতে ধরতে হলেই ছাত্রলীগের বিশাল কর্মযজ্ঞকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে চেতনার মূর্ত প্রতীক, সেই চেতনার বাস্তবায়নের কারিগর ছাত্রলীগকে পাশ কাটিয়ে ইতিহাসের সঠিক বিশ্লেষণ ও বর্ণনা হয় না। বরং একটি বিকৃত মানসিকতার উদগ্র চেতনাই প্রতিভাত হয়। বর্তমানে সরাসরি রাজনীতি না করলেও রাজনীতি আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, অনুভূতির পরতে পরতে। রাজনীতির চেতনায় উজ্জীবিত আমার সমগ্র সত্তা আমাকে একটি মুহুর্ত থেকেও রাজনৈতিক চেতনাবিমুক্ত হতে দেয় না। তাই এই প্রজন্মের কাছে আমার শাশ্বত দাবী রয়েই যায়, তোমাদের গৌরবদীপ্ত অতীতকে জানার চেষ্টা কর। সেদিনের সংগ্রাম ছিল ভাষা, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার। আজকের সংগ্রাম হোক বিশ্বাসের, দেশপ্রেমের ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে দেশকে সম্মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। জীবনসায়াহ্নে আমার শেষ আশীর্বাণী, সেদিনের যে ছাত্রলীগ স্বাধীনতা এনেছে, বাঙালি জাতীয় চেতনার মূর্তপ্রতীক সেই ছাত্রলীগ স্বাধীনতার সুফলকে প্রান্তিক জনতার দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করুক। মূল্যবোধের কোন অবক্ষয় তাদের উজ্জীবিত হৃদয়কে অন্ধকারে ঢেকে না দিক। প্রগতিশীল চেতনাকে বিবর্ণ না করুক। যার অতীত আছে, তার বর্তমান কলঙ্কিত হতে পারে না, ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে না। লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
|
|
|
|
২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশসহ ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা “ট্রান্সফরমিং আওয়ার ওয়াল্ড দ্যা ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট” শিরোনামে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুমোদন করেন। আর এই “এসডিজি” বিশ্বমানবতার সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত একটি কর্মপরিকল্পনা, যা মূলত বিশ্বব্যাপী শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। এরই লক্ষ্যে “এসডিজি”তে ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি টার্গেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়। “এসডিজি”র প্রথম আর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য “দারিদ্রের অবসান”। যখনই দারিদ্রের কথা উঠে তখনই চোখে ভেসে উঠে “বেকারত্ব”। সব কিছুর সমাধান যেন বেকারত্ব, তাই এর সমাধানে দেশের প্রতিটা নাগরিক উচ্চ শিক্ষিত, অর্ধ বা অল্প শিক্ষিত সকলেরই “কোন কাজই ছোট নয়“ এই ধারণায় বিশ্বাসী হতে হবে। শুধু সরকারি চাকুরির প্রতি না ছুটে আত্মবিশ্বাসী হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের কথাও মাথায় রাখা উচিত। তাছাড়াও বর্তমান বিশ্বে আউটসোর্সিং করেও নাগরিকেরা বিশাল পরিমাণের আয় করতে পারে। এক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থা বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এতে ব্যক্তিকে উৎসাহিত করতে সরকার নানা ধরনের স্বল্প সুদে ঋণ ব্যবস্থা সুবিধাসহ ভর্তুকি প্রদান করবে। দেখা যাবে আত্মকর্মসংস্থানকারী নিজেই তার অধিক উৎপাদনে অধিক জনবল নিয়োগ দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করবে, যার মধ্যদিয়ে বেকারত্ব হ্রাসের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে মানুষের হাতে টাকা আসবে ফলে ব্যক্তি বিনিয়োগে উৎসাহিত হলে বিনিয়োগ বাড়বে আর জাতীয় আয় বা জিডিপি বৃদ্ধিপাবে। “ক্ষুধা মুক্তি” এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য আর আমাদের বাংলাদেশ যেহেতু কৃষিপ্রধান দেশ তাই এই ক্ষুধা মুক্তির জন্যে প্রথমে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে আর এই লক্ষ্যে ইউরিয়া ব্যতীত সকল প্রকার সারের মূল্য অর্ধেকে কমিয়ে আনতে হবে, ভালো বীজ সহজলভ্য করা, ডিজেলের মূল্যে কৃষককে ভর্তুকি দেয়া, ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সহজলভ্য ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ এবং সেচ যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি, ব্যাংকঋণ সহজ করলে কৃষককেরা উৎসাহিত হবে ফলে অধিক ফলন নিশ্চিত হলে দেশে ক্ষধা মুক্তি নিশ্চিত হবে। এছাড়া নাগরিকদের একে অপরের প্রতি দয়ালু হলে একে অপরকে নিজের ভাই ভেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে দেশের কোন নাগরিকই না খেয়ে থাকবে না। অন্যদিকে সরকার খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করবেন যারা অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিবে আর নিরাপদ খাদ্য মজুদে সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্য শস্য সংগ্রহ করবে। আমদানিকৃত পণ্য নিজ দেশে উৎপাদনের পরিবেশ সৃষ্টি করলে দেশের জাতীয় আয়ের সাথে সাথে নাগরিকের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। অন্যদিকে “সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ” নিশ্চিত করতে নাগরিকের সচেতনতা আবশ্যক, কোন অসুস্থতায় ঘরে বসে নিজ থেকে চিকিৎসা না নিয়ে বা ইউটিউবের মতো চ্যানেলের সব বিষয় বিশ্বাস না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নাগরিকেরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এলাকায় একটা স্বাস্থ্যালয় গড়ে তুলতে পারে, যেখানে মাসে ২ বার ডাক্তারের সাথে এলাকাবাসীর সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করতে পারে এবং ডাক্তার নিজেই সু-স্বাস্থ্য বিষয়ে সকলের সাথে আলোচনা করবেন। এবং ঐ প্রতিষ্ঠান উচ্চমান সম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা, সাশ্রয়ী ও সহজপ্রাপ্য ঔষুধ ও টিকাসহ এলাকার সবার সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে লক্ষ্য রাখবে। তাছাড়াও ইমাম থেকে শুরু করে শিক্ষিত নাগরিকেরা সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার-প্রসার সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। এতে করে শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু সহ নানা অপ্রত্যাশিত মৃত্যু কমে আসবে এবং নাগরিকের প্রত্যকের একে অপরের প্রতি সচেতন হতে হবে যা নিজের জন্যে আমরা উত্তম মনে করি তাই অন্যের জন্যে করার মানসিকতা তৈরি করলে তবেই সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত হবে। “মানসম্মত শিক্ষা”র জন্যে শিক্ষিত নাগরিকেরা এগিয়ে আসবে তার আশেপাশের লোকজনকে শিক্ষার ব্যাপারে বুঝাবে আর স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষাকে আরও সম্প্রসারণ করতে জোরদার ব্যবস্থা নিবেন এক্ষেত্রে যেসব বাবা-মা সন্তানকে স্কুলে পাঠাবেনা তাদের জন্যেও আইনের ব্যবস্থা নিতে পারে। শিক্ষার প্রসারের জন্যে গবেষণাগারের বৃদ্ধি সহ নিরাপদ পরিবেশের সৃষ্টি করতে হবে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত করতে হবে। এভাবেই দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে। আবার “এসডিজি” বাস্তবায়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে আমাদের দেশ প্রকৃতির আশীর্বাদে পরিপূর্ণ সেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিপুল সম্ভাবনা আছে। সূর্যের আলো, তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, বায়ু প্রবাহ, জল্প্রবাহ, জৈব শক্তি এবং শহরের আবর্জনা ইত্যাদিকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনায় রেখে এসব কার্যকরীভাবে কিভাবে কাজে লাগান সম্ভব সেই পদ্ধতি সকল নাগরিকদের যৌথ প্রচেষ্টায় খুঁজে বের করতে হবে কেননা এর ব্যবহার নিশ্চিত হলে দেশের জ্বালানি চাহিদা বিপুল পরিমানে মিটবে পাশাপাশি অর্থনৈতিক সফলতাও ত্বরান্বিত হবে। এদিকে জলাবায়ু পরিবর্তন প্রায় সকল রাষ্ট্রের জন্যে এক বিরাট উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় যা গত ১০০ বছরে ১০ থেকে ২৫ সে. মি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রায় বন্যা, বৃষ্টি আবার খরা লেগে আছে যা উৎপাদন আর কৃষিভূমি হ্রাস করছে এমন পরিস্থিতি বহাল থাকলে পাশাপাশি লবনাক্ততার হার বৃদ্ধি পেয়ে পানির সংকট সহ নানা অজানা রোগের দেখা দিবে। তাই এই জলবায়ু রক্ষায় নাগরিকদের একজোটে মাঠে নামতে হবে এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা থেকে শুরু করে বনায়ন, অযথা পশু শিকার হতে বিরত থাকবে, সরকার নাগরিকদের জন্যে এ বিষয়ে প্রণোদনামূলক প্রদক্ষেপ নিতে পারেন এবং ফোসিল ফুয়েলে অধিক পরিমাণে টেক্স বসালে এর সরবরাহ কমে আসবে এর পরিবর্তে কলকারখানা চলবে উয়িন্ড মিল আর সোলার পেনেলে, তবেই ওজন স্তর ঠিক থেকে বিশ্ব গ্রীন হাউস ইফেক্ট থেকে রক্ষা পাবে। একটা রাষ্ট্র চালনায় শান্তি ও ন্যায়বিচারের গুরুত্ব অপরিসীম। এক্ষেত্রে নাগরিকদের প্রত্যেকের নিজেদের অধিকার বিষয়ক নূন্যতম আইনের ধারনা থাকতে হবে। আইন রক্ষা বাহিনির মানসিকতা এমন হতে হবে যে “আমার এলাকায় একজনের প্রতিও অন্যায় বিচার হবে না”। অন্যদিকে নাগরিকেরা একে অপরকে সম্মান করবে, একে অপরের অধিকার নিয়ে সচেতন থাকবে। প্রত্যেক নাগরিকের “আমি” ধারণা থেকে বেড়িয়ে “আমরা” ধারনায় বিশ্বাসী হতে হবে। জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় নিরসনে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করতে হবে। রাষ্ট্রের যাবতীয় সকল সিদ্ধান্তে নাগরিকের মতামত গ্রহন করা। এতেই নাগরিকের অধিকার বাস্তবায়ন হলে প্রত্যেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে যা দেশের আর দশের জন্যে সুফল বয়ে আনবে। প্রতিটা রাষ্ট্র গঠিত তাঁর দেশের এক এক জন ব্যক্তি নিয়ে আর এই এক একজন ব্যক্তিই দেশের সম্পদ যাদের নিয়ে পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্র গঠিত। তাই এই এক এক জন নাগরিককেই নিজ দেশকে নিজ পরিবার ভাবার মানসিকতা তৈরি করতে হবে এবং “এসডিজি” বাস্তবায়নে ইতিবাচক অংশগ্রহণ করতে হবে তবেই ২০৩০ সালের মধ্যেই আমাদের সোনার বাংলা “এসডিজি” তে সফল হয়ে উন্নতির চরম শিকরে দাঁড়াবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “আমার দেখা নয়াচীন “ বই এ তিনি দেখিয়েছেন চীনের অধিবাসীরা নিজ দেশকে নিজ পরিবার ভাবে আর দেশের সকল কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে, তাদের মধ্যে বিশ্বাস আর ন্যায়পরায়ণতা ছিল উল্লেখ করার মত। আমাদের দেশের নাগরিকদেরও এমন হতে হবে যাতে করে ভিন্ন সকল রাষ্ট্র আমাদের দেখে মুগ্ধ হয়। লেখক সুমাইয়া বিনতে হোসাইন শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
|
|
|
|
তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি : রাজশাহী অঞ্চলে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সবাই নৌকা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেকোন মূল্যে নৌকা পেলেই বিজয় এই মানসিকতা সৃষ্টির পর নেতারা আর কর্মীদের খেয়াল রাখার প্রয়োজন মনে করছেন না। এতে তৃণমুলে দলের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক ও সংগঠনের প্রতি খেয়াল না রেখে তারা হাতে গোনা দু’একজন নেতাকে ম্যানেজ করতে শুরু করেছে মহা কর্মযজ্ঞ।
আওয়ামী লীগের দুর্দিনের পরীক্ষিত-আদর্শিক ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী-সমর্থকদের দিকে তাদের তাকানোর সময় নেই, দরকারও নেই। কেউ কেউ বলছেন, এলাকার ও জনগণের কল্যাণে কাজ করা বোকামী ছাড়া কিছুই নয় এরই মধ্যে তার প্রমাণ তারা পেয়ে গেছে। এলাকায় যতোই জনপ্রিয়তা থাক নেতার সুপারিশ ব্যতিত নৌকা কপালে জুটছে না। অধিকাংশক্ষেত্রে ভাই-ভাতিজা, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, কর্মচারী এমনকি তল্পীবাহকদের যোগ্যতা কম বা না থাকলেও বিভিন্ন দলীয় সংগঠনের মূল পদে বসিয়ে ও স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে যেকোনো কৌশলে নির্বাচিত করে নিয়ে আশা হচ্ছে। এতে আদর্শিক, পরীক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ অনেক জনপ্রিয় নেতৃত্ব রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হতে বাধ্য হচ্ছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
অথচ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বেগবানসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও সম্মানিত করতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু একশ্রেণীর লোভী মুনাফাখোর রক্ত পিপাসু কথিত নেতা এ মহৎ উদ্যোগকে কলঙ্কিত করে চলছে বলে মনে করছে তৃণমূলের কর্মীসমর্থকরা।
স্থানীয় সূত্র বলছে- বিভিন্ন সরকারি ভাতা, টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ত্রাণের চাল, মানবিক সহায়তা এবং রাস্তাঘাটসহ উন্নয়ন বরাদ্দের বড় অংশই যথাযথভাবে ব্যয় করছেন না এসব নির্বাচিতদের অনেকেই। এতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন অনেকটা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এসব কারণে উন্নয়ন, সেবা ও সহযোগিতা বঞ্চিত হচ্ছে কম বেশী প্রায় প্রতিটি এলাকার জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীরা। জনগণ বঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ; দলীয় নেতাকর্মীরাও গুরুত্বহীন ও ক্ষুব্ধ। এই বঞ্চনা ও ক্ষুব্ধতা নৌকা প্রতীক এবং দলীয় হাইকমান্ডের দিকে দিনে দিনে ধাবিত হচ্ছে। গর্বের নৌকা মার্কা হারিয়ে ফেলতে বসেছে তার ওজন ও ঐতিহ্য বলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে খুব কম প্রার্থীই আছেন যারা জনকল্যাণে বা নেতাকর্মীদের সেবায় নিয়োজিত থাকার চেষ্টা করেন। কারণ, এখন জনসমর্থন, উন্নয়ন এবং দলীয় নেতা কর্মীদের পাশে থাকার খুব একটা দরকার নেই; শুধু প্রয়োজন যে কোন কায়দায় নৌকাটা নিজের করে নেয়া। তাই তারা হন্যে হয়ে ছুটছে টাকা কামিয়ে নৌকা হাসিল করতে। এই প্রতিযোগিতায় বাড়ছে গ্রুপিং কোন্দল এবং রাজনৈতিক অশান্তি; বিনষ্ট হচ্ছে দলীয় ঐক্য ও সংহতি এমনটি অভিমত তৃণমুলের। এভাবে অনেক এলাকাতেই আওয়ামী লীগকে অজনপ্রিয় করে দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছে তৃণমুল। এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
|
|
|
|
আরিফা আক্তার
অতিমাত্রায় টিকটক নামক অ্যাপস এর ব্যবহার একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। ২০১৭ সালে বেইজিংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স কিশোরদের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাপ মিউজিক্যালি কিনে নেয় এবং নাম দেয় টিকটক। যদিও টাইম টাইপাসের জন্য এই অ্যাপসটি তৈরি করা হয় কিন্তু বর্তমানে এটি একটি ব্যধিতে রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি মানুষের মধ্যে বিশেষ করে উঠতি বয়সের শিশুর কিশোরীদের মধ্যে এই আচার-ব্যবহার বিপুলভাবে বেড়েছে।
প্রত্যেক মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি হলো অন্যের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলা। অতীতে মানুষ নিজের মেধা, বুদ্ধি, আচার-আচরণ ও ব্যক্তিত্ব না দর্শনগত উপস্থাপনার মাধ্যমে অন্যের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করত। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরীর জন্য প্রযুক্তিগত পন্থাকে ব্যবহার করা হয়। এসকল পন্থার মধ্যে অন্যতম হলো মোবাইল অ্যাপস টিকটক। এই অ্যাপস এর মাধ্যমে ১৫ সেকেন্ডের যেকোনো ভিডিও তৈরি করা যায় এবং যা খুব সহজে অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা যায়। অন্য কারো তৈরি করা কোন গান বা অভিনয়ের মধ্যে ঠোঁট মিলিয়ে নিজের অভিনয়শৈলী প্রকাশ করা যায় টিকটকের মাধ্যমে।
টিকটক একটি মোবাইল অ্যাপস হলেও এর নেতিবাচক দিক অনেক বেশি। তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের বাস্তবতা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে টিকটক। শুধু তাই নয় তাদের মধ্যে উগ্রত, অশালীনতা, অশ্লীলতা, কল্পনাপ্রবনতার মতো বিভিন্ন জটিল মানসিক রোগ তৈরি করছে। যারা ক্রমাগত এই অ্যাপস ব্যবহার করে তাদের মধ্যে বিশেষ মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। অতিরিক্ত টিকটকের ব্যবহারের ফলে মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বাস্তবতার প্রতি বিমুখতা, মনস্তাত্ত্বিক অবক্ষয় ও চারিত্রিক অবনতির মত ভয়ানক জটিল মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সামগ্রিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে।
টিকটক অ্যাপস এর ব্যবহারের কারণে এমন কিছু নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে যার ফলে ভিডিও আপলোডকারীকে জীবনের ইতি টানতে হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে আপলোডকারী বিভিন্ন ধরনের হয়রানি শিকার হয়েছে। কিছুদিন আগে ভারতীয় এক যুবক মেয়েদের পোশাক পরে মেয়েদের রূপে অভিনয় করে ভিডিও আপলোড করে । সাধারণ মানুষজন ছেলেটিকে মেয়ে রূপে দেখে তাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মজা করতে থাকে। সবার মজা এমন একটি পর্যায় চলেযায় যা ছেলেটি শেষপর্যন্ত না নিতে পেরে আত্মহত্যার পথে চলে যায়। ইয়েঙ্ক নামে চায়নার লাইভ স্ট্রিমিং গার্ল তার সুরেলা কন্ঠে লাইভ গান গেয়ে টিকটকে ভিডিও বানিয়েছিল এবং লাখো মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল। যখন ইয়েঙ্কে চায়নার জাতীয় সঙ্গীত একটু ভিন্নভাবে গেয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে। যেটি চায়নার মানুষ খুবই অপছন্দ করে এবং তাকে জাতীয় সংগীতের অবমাননার দায়ে পাঁচ দিন জেল খাটতে হয়েছিল। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের চিফ মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে একটি ছেলে টিকটকের ভিডিও প্রদান করে। সেই ভিডিওটির এডিটিং দেখে মনে হয়েছিল চিফ মিনিস্টার কিছুটা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় আছে কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই নয়। এই ভিডিওতে চিফ মিনিস্টারের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য বিভিন্ন ধারায় ছেলেটাকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল। চায়নাতে মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির লোগো খুলে ফেলার ট্রেন্ড তৈরি হয়েছিল টিকটকের মাধ্যমে। এসব ভিডিও দেখে অনেকে অন্যের গাড়ির লোগো চুরি করা শুরু করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হুয়োং নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এসব উদাহরনের মাধ্যমে টিকটকের ভয়াবহতা আন্দাজ করা যায়। সব ক্ষেত্রে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে মজা করার আগে ভেবে নিতে হবে সবকিছুর একটি পরিসীমা রয়েছে। সীমা ছাড়িয়ে কোনকিছু করলে তা সবসময় অকল্যাণ বয়ে আনে। সোশ্যাল মিডিয়াতে যা কিছুই প্রকাশ করা হয় না কেন তা ডিলিট করে দিলেও পৃথিবীর কোথাও না কোথাও সেটা থেকে যায়। পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে কেউ-না-কেউ ওকে ডাউনলোড করে রাখতে পারে এবং সময় মতো ব্যবহার করতে পারে। তাই এ ধরণের মানসিক ব্যাধি থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি বর্তমানে টিকটক অ্যাপ এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বর্তমানের বাজারমূল্য ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
লেখক - আরিফা আক্তার সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
|
|
|
|
নাজমুন নাহার জেমি
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে ষাটের দশকে। তবে সত্তরের দশকের শেষের দিকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে এই শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। পোশাক শিল্প তৈরি পোশাক বা আরএমজি (Ready Made Garments) নামে সমধিক পরিচিত। সুবিন্যস্ত কারখানায় বৃহদায়তনে ব্যাণিজ্যিক ভিত্তিতে পোশাক উৎপাদনের ঘটনা বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন। ষাটের দশকের শুরু পর্যন্ত ব্যক্তি উদ্যোগে ক্রেতাদের সরবরাহকৃত এবং তাদেরই নির্দেশিত নকশা অনুযায়ী স্থানীয় দর্জিরা পোশাক তৈরি করতো। শুধুমাত্র শিশুদের জামাকাপড় এবং পুরুষদের পরিধানযোগ্য গেঞ্জি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে ষাটের দশক পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারও ছিল না বললেই চলে। সত্তরের দশকের শেষার্ধ থেকে মূলত একটি রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে বাংলাদেশ পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। তৈরি পোশাক শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হয় এবং এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের আয় বৃদ্ধি পায় ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন আসে। খাতটি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে এবং তা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
১৯৮০ সাল পর্যন্ত কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য মোট রপ্তানিতে ৫০% অবদান রেখে রপ্তানি আয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। আশির দশকের শেষার্ধে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের আয়কে অতিক্রম করে পোশাক শিল্প রফতানি আয়ে প্রথম স্থানে চলে আসে। ১৯৯৯ সালে এই শিল্পখাতে সরাসরি কর্মসংস্থান হয় ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি লোকের, যার শতকরা প্রায় ৮০ জন মহিলা। তৈরি পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণের সাথে সাথে বস্ত্র, সুতা, আনুষাঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেটজাতকরণের উপকরণ ইত্যাদি শিল্পেরও সম্প্রসারণ হতে থাকে। এতদ্ব্যতীত পরিবহন, ব্যাংকিং, শিপিং এবং ইন্সুরেন্স সেবার চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর সবটাই অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে। এ ধরনের নতুন পরোক্ষ-কর্মসংস্থান মূলত পোশাক শিল্প কর্তৃক সৃষ্টি যার সুবিধাভোগী মোট ২,০০,০০০ শ্রমজীবী।
তৈরি পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণ বাংলাদেশের সমাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করেছে। পরোক্ষভাবে এই যে সেবাখাতে প্রায় আড়াই লাখের মতো মানুষের কর্মসংস্থান হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্প সাড়ে ২২ লাখ নারী শ্রমিকের জীবনযাত্রার লক্ষণীয় পরিবর্তন সাধন করেছে এবং তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। শ্রমজীবী নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন পরিবারে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন আনয়নে সক্ষম হয়েছে, আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের কারণে এসব নারী শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকরির সুবিধাদি ভোগকারী, বাবা, ভাই এবং স্বামীর ঐতিহ্যগত পিতৃতান্ত্রিক কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধন করেছে। অধিকাংশ শ্রমজীবী নারী এখন বিয়ে এবং সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও অংশ গ্রহণ করতে পারছে। সমাজের বাল্যবিবাহ কমেছে, সেই সাথে হ্রাস পেয়েছে জন্মহার। শ্রমজীবী মেয়েরা তাদের ছোট ছোট ভাইবোনদের যত্ন নিচ্ছে এবং স্কুলে পাঠাচ্ছে। ফলে দেশে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তৈরি পোশাক শিল্পখাতের সম্প্রসারণ নতুন উদ্যোক্তাদল সৃষ্টি করছে যারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী বেসরকারি খাত গড়ে তুলেছে। এই উদ্যোক্তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা নারী। বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ` বৈশাখী ` ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একজন নারী। বর্তমানে তৈরি পোশাক কারখানায় অনেক নারী ঊর্ধ্বতন নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত।
শুরুতে এই শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প সম্পূর্ণভাবেই আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্ভর ছিল। এই নির্ভরশীলতার কারণে পরিস্থিতি ছিল খুবই নাজুক। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশি মালিকেরা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় এবং পরিস্থিতির উন্নতি হয়। স্থানীয় উদ্যোগত্তারা পশ্চাৎ-সংযোগ শিল্পের বিকাশ ঘটায় এবং স্থানীয়ভাবেই দক্ষতা বৃদ্ধি করে মানসম্পন্ন রপ্তানিযোগ্য সুতা ও কাপড় উৎপাদন শুরু করে। দ্রুত পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প গড়ে ওঠার কারণে এই শিল্প আর আগের মতো কাঁচামাল আমদানির উপর নির্ভরশীল নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বৃহৎ বহুস্তরবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে। এ সমস্ত কারখানা সুতাকাটা, বয়ন, রং,প্রক্রিয়াজাত এবং ক্যালেন্ডারিংসহ অন্যান্যকাজ সম্পন্ন করে। তাছাড়া এ সমস্ত রপ্তানিযোগ্য কাপড় স্থানীয় কারখানায়ও বিক্রি হয়। এই কারখানাসমূহে বিদেশি ক্রেতাদের নকশা অনুযায়ী কেটে মোড়কে ভরে নির্ধারিত ক্রেতাদের কাছে পাঠানো হয়। পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প গড়ে উঠার ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান পূর্বের তুলনায় আরও সংহত হয়েছে।
কম উৎপাদন খরচের কারণেই বাংলাদেশ বিদেশি ক্রেতার কাছে ক্রমবর্ধমান আকর্ষণীয় ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। কম খরচের সুযোগ গ্রহণ করতেই তারা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরবরাহকারী ঋণ সহায়তা বৃদ্ধি করে। এত কিছু সত্ত্বেও নতুন কারখানাসমূহ চলতি পুঁজির জন্য প্রচন্ড সমস্যায় পড়ে। এই সময় ব্যাক- টু- ব্যাক এল.সি (লেটার অব ক্রেডিট বা আস্থাপত্র) লেনদেনের জন্য উদ্ভাবিত নতুন পন্থার অবদানে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে। ব্যাক- টু- ব্যাক এল.সি চলতি মূলধনের সমস্যা লাঘব করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য মানসম্পন্ন কাপড় আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
|
|
|
|
সুরাইয়া ইয়াসমিন তিথি করোনা মহামারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত বেকারত্ব সমাজ। নিরবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে গ্রাজুয়েটধারী ও উচ্চ শিক্ষা অর্জনকারী বেকাররা। এমনকি অনেক বেকার দেউলিয়া হয়ে ঘুরে ফিরে সুইসাইডকে বেছে নিয়েছে। কাজ না পাওয়ার হতাশা আর দুর্ভাবনায় কেউ আত্মঘাতী হতে চাইলে তাকে বাঁচিয়ে রাখাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বেকার যারা এখন তাদের চাকরির খুব প্রয়োজন, তাদের জীবনটা এই মহামারির কারণে একটা অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কোন কাজ নেই, যতদিন যাচ্ছে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের মলিন চেহারা সেই হতাশা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে। করোনার কারণে এখন অনেকই চাকরিচ্যুত হওয়া শুরু করেছে। করোনার কারণে কতদিন কারখানা বন্ধ থাকবে, তা কেউ বলতে পারে না। আর যারা পরিবহন শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক, দোকানের শ্রমিক বা অন্যান্য ইনফরমাল খাতের শ্রমিক, তারা তো বেকার হয়ে বসে আছে। খোদ রাজধানীতেই কয়েক লাখ বাস শ্রমিক এখন বেকার।
মহামারির কারণে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সবকিছুই আটকে আছে। কোন সার্কুলার নাই, কোন চাকরির পরীক্ষা নেই। এই মহামারি কবে শেষ হবে, কবে আবার চাকরির প্রক্রিয়া শুরু হবে তা কেউ জানে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যুবক-যুবতী, যাঁরা ‘উচ্চশিক্ষিত’ কিন্তু বেকার। চাকরি না পাওয়ার ফলে নিজেদের পরিবারের গলগ্রহ ভাবতে ভাবতে তাঁদের মনে যে হতাশা ও গ্লানি জমে ওঠে, তা দুঃসহ। হতাশা তাঁদের মা-বাবাকেও ছাড়ে না। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত ছেলের বেকারত্ব মা-বাবার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত মেয়ের বেকারত্বের সমাধান তাঁরা পেয়ে যান মেয়েটিকে সচ্ছল কোনো পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারলে এই হলো শেষ পরিণতি। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ কর্মচ্যুত হবেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাবে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরি হারানোর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই খারাপ খবর। কারণ এই দেড় কোটি মানুষ চাকরি হারালেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে অন্তত ৫ কোটি মানুষ।
করোনা ভাইরাস মহামারি কবে শেষ হবে, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, মহামারির কারণে আর্থিক মন্দা বহাল থাকবে আরো কিছুদিন। যার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পড়বে চাকরির বাজারেও। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছেন, এরকম তরুণ-তরুণীরা তাদের কর্মজীবন শুরু করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। দীর্ঘায়িত হতে পারে বেকারত্বের সংকট। বেকারত্ব সমস্যা স্বাভাবিক সময়েই অধিকাংশ দেশের জন্যই মাথাব্যথার কারণ। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় সরকারকে বেকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। করোনা ভাইরাস দরিদ্র্যকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে আর সেই সাথে আছে বেকারত্ব। তাই অর্থনীতির গতি ফেরাতে কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করছে কর্তৃপক্ষ। কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হয়। তখন চাকরির বাজারে হন্যে হয়ে না ছুটে নিজেই নিজের কর্ম স্থির করা সম্ভব হয়। বাইরের দেশেও কারিগরি দক্ষ শ্রমের মূল্যায়ন বেশি। কর্মসংস্থান বাড়াতে বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করতে হবে। কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে খরচ করতে পারলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সরকার এ ধরনের কর্মসূচি প্রণয়ন করতে পারেন তাহলে বেকারত্বের রুপরেখা কিছুটা কমতে পারে।
|
|
|
|
বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির অগ্রসরতার যুগে সোশ্যাল মিডিয়া বিনোদন ও যোগাযোগের মাধ্যম কে করেছে সহজ ও সহজলভ্য। অবসর সময় কাটানোর একমাত্র সঙ্গী সোশ্যাল মিডিয়া। টিকটক অ্যাপ (tiktok app) ও এমন একটি সোশ্যাল মিডিয়া যার মাধ্যমে শর্ট ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করা যায় ।বলতে গেলে এটা কিছুটা ইউটিউব এর মতো। পরিচিত ফিল্মী ডায়লগ বা গানের সঙ্গে নিজেরা অভিনয় করে মজার মজার ভিডিও বানানো যায় । তবে ১৫ সেকেন্ডের থেকে বড় ভিডিও বানানো যায় না এই অ্যাপে, আর নিজের স্বর ব্যবহার করতে পারবেন না, যাকে বলা হয় ‘লিপ সিঙ্ক, অর্থাৎ ঠোঁট নাড়া।
এসব ভিডিওতে মান কিংবা বক্তব্য কিছুই মূখ্য নয়,কিন্তু বর্তমানে তারকাখ্যাতি পাওয়ার জন্য উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের ভিডিও তে প্রাধান্য পাচ্ছে যৌনতা সহিংসতার মত ভয়ংকর বিষয়।
টিকটক লাইকির প্রতিযোগীতায় আছেন চিত্রনায়িকা থেকে শুরু করে সাধারন শিক্ষার্থী সহ সব বয়সের নারী পুরুষ।সব মিলিয়ে এ এক অন্য জগত।যেসব কিশোর কিশোরীরা রাতারাতি তারকা খ্যাতি পেতে চান তাদের জন্য এসব এপ যেন আলাদিনের চেরাগ।
এই ভিডিও গুলো শ্যুট করা হয় গ্রুপ করে যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে কিশোর গ্যাং।প্রতিদ্বন্দী গ্রুপগুলোকে টেক্কা দিতে দল ভারি করছে গ্রুপগুলো,গ্রুপে ফলোয়ার বাড়ানোর নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দ্বন্দ্বে।ঢাকার রাস্তায় বা বিভিন্ন পিকনিক স্পটে গ্যাং নিয়ে করছে শ্যুটিং।দর্শনার্থীরা কোন অভিযোগ করলে উলটো ঝামেলার সৃষ্টি করে বলে এমন অভিযোগ পেয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।তারকা হবার নেশায় অপরাধের অন্ধকারে ডুবসাঁতার কাটছে কিশোর কিশোরীরা।
যদিও ১৩ বছরের বেশি বয়সীদেরই এই অ্যাপ ব্যবহার করার কথা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এর থেকে কমবয়সীরাও টিকটক ব্যবহার করছে এবং তাদের সংখ্যাটা বেশ বড়।রাতারাতি তারকা হওয়ার নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মকান্ডে।
পুলপার্টি সহ নানা ধরনের আয়োজন করা হয় বিভিন্ন টিকটক লাইকি গ্রুপ গুলোর উদ্যোগে।পুলপার্টির আড়ালে চলে দেহ ব্যবসা।টার্গেট করা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর কিশোরী ,এছাড়াও চলে মাদক ব্যবসা, নারী পাচার এবং ধর্ষনের মত অপরাধ।বর্তমানের আলোচিত ঘটনাগুলর বেশিরভাগ এর সূত্রপাত ঘটছে টিকটকারদের কেন্দ্র করে।
ফেসবুক বা টুইটারে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টগুলোতে যেমন নীল টিক চিহ্ন দেওয়া থাকে, টিকটকের ক্ষেত্রে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টগুলিতে কমলা চিহ্ন দেওয়া হয়।যার ফলোয়ার যত বেশি ফলোয়ার টাকাও পাচ্ছে তত বেশি।জনপ্রিয়তা ও টাকার লোভে কিশোর কিশোরীরা আকর্ষিত হচ্ছে খুব সহজেই।
প্রাইভেসির একটা সমস্যা রয়েছে এই অ্যাপে। মাত্র দুই ধরণের প্রাইভেসি সেটিং আছে আপনার বানানো ভিডিও হয় শুধু আপনি দেখতে পাবেন, অথবা তা সব অ্যাপ ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। মাঝামাঝি কোনো জায়গা নেই।এই অ্যাপটির মাধ্যমে যে কেউ আপনাকে ফলো করতে বা মেসেজ করতে পারে।এর ফলে বন্ধু বানানোও সহজ হয়ে যাচ্ছে,পরিচিতি বাড়ছে অসামাজিক মনোবৃত্তির মানুষরা তাই সহজেই কমবয়সী ব্যবহারকারী, বিশেষ করে ছোট মেয়েদের প্রলোভন দেখাতে পারে।
তথ্য-প্রযুক্তি পত্রিকা ‘গ্যজেট ব্রিজ’এর সম্পাদক সুলভ পুরি মনে করেন, অ্যাপটি তো অন্তত এটুকু করাই উচিত, যাতে ১৬ বছরের কম বয়সী কেউ টিকটক ব্যবহার না করতে পারে, তা সুনিশ্চিত করা।
এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি ও গ্যাজেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই ধরণের বেশিরভাগ অ্যাপই আজকাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে কাজ করে। তাই একবার এইসব অ্যাপে নিজের যে কোনও তথ্য আপনি দেবেন, সেগুলো চিরকালের মতো তাদের কাছে থেকে যাবে।
সমাজ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন টিকটক লাইকির মত এপ গুলো নতুন প্রজন্মের কিশোর কিশোরীদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বড় কারন যার পরিনতি হতে পারে ভয়াবহ। এই ধরনের সংস্কৃতির সাথে যদি তারা অভ্যস্ত হয় তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের নেতৃত্ব বড় হয়ে উঠবে অসুস্থ প্রজন্ম হিসেবে,এই গোষ্ঠী কিভাবে দেশের বা বিশ্বের নেতৃত্বে যাবে তা নিয়ে সংকিত।অনেকদূর এগুলোও টিকটক কালচার এখনও প্রাথমিক অবস্থায় আছে বাংলাদেশে।সরকার যদি এখনও ব্যবস্থা না নেয় তবে এটি একটি বড় ধরনের আচরন গত অসুস্থতা হিসেবে পরিনত হবে
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন পর্নগ্রাফি এপগুলো সফলভাবে বন্ধ হলেও সেক্সচুয়াল ইন্টারেকটিভ এপগুলোর ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা স্পষ্ট।
ব্যক্তিগত সচেতনতা,পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান,প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরি এবং কঠোর আইন এর প্রয়োগ এর কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশী আইনে অবৈধ,সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে তার বিরুদ্ধে আইন নেয়া অত্যাবশকীয়। সার্বভৌমত্ত ,অখন্ডতা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা তিন বিষয় বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত বন্ধ করেছে এসব এপ।
দেশের নিরাপত্তা কিশোরদের সুস্থ মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য,পরিবারের সকল সদস্যদের উচিত কিশোরদের দিকে বিশেষ নজর দেয়া এছাড়াও রাষ্ট্রের দায়িত্ব এসকল বিদেশী এপ এর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশের আইনে অবৈধ,সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা। নতুন প্রজন্মের সুস্থ মানসিকতা ও নিরাপত্তার সাথে বেড়ে উঠার অঙ্গীকার হোক আমাদের সকলের।
আনন্যামা নাসুহা, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আখলাকুল আম্বিয়া নির্বাহী সম্পাদক: মাে: মাহবুবুল আম্বিয়া যুগ্ম সম্পাদক: প্রদ্যুৎ কুমার তালুকদার সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: স্বাধীনতা ভবন (৩য় তলা), ৮৮ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০। Editorial & Commercial Office: Swadhinota Bhaban (2nd Floor), 88 Motijheel, Dhaka-1000. সম্পাদক কর্তৃক রঙতুলি প্রিন্টার্স ১৯৩/ডি, মমতাজ ম্যানশন, ফকিরাপুল কালভার্ট রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত । ফোন : ০২-৯৫৫২২৯১ মোবাইল: ০১৬৭০৬৬১৩৭৭ Phone: 02-9552291 Mobile: +8801670 661377 ই-মেইল : dailyswadhinbangla@gmail.com , editor@dailyswadhinbangla.com, news@dailyswadhinbangla.com
|
|
|
|