পর্যটকদের জন্য কাপ্তাই লেকে ভাসছে “রয়েল এডভেঞ্চার”
বিশেষ সংবাদদাতা:
চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই লেকের নীল জলে ভাসছে “রয়েল এডভেঞ্চার” নামের একটি দ্বিতল বিশিষ্ট হাউজবোট। এটি এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কাঠের তৈরি হাউজবোট।
প্রমোদতরীটির পক্ষ থেকে মো: মহিউদ্দিন মজুমদার আনন্দ জানান রাঙ্গামাটি একটি পর্যটন নগরী। এখানে হ্রদ, পাহাড়, ঝর্ণা একসঙ্গে উপভোগ করা যায়। হ্রদের বুকে এই ধরনের সুন্দর সুবিধা সম্বলিত একটি হাউস বোট পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য লেকে বেড়ানোর এক দারুন মাধ্যম তৈরি হলো।
তিনি আরো বলেন, আমরা সাধারণত ভিয়েতনাম, চায়না, থাইল্যান্ড এসব দেশে এই ধরনের প্রমোদতরী দেখতে পাই। কিন্তু রাঙ্গামাটিতেও এই ধরনের হাউস বোট চালু করে আমরা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চাই। আমরা মনে করি আমরাও ধীরে ধীরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছি। এই হাউস বোট পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণ হিসেবে কাজ করবে এবং পাশাপাশি রাঙ্গামাটির পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখবে।
দ্য রয়েল অ্যাডভেঞ্চারের সিইও মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, পর্যটন খাতে কাজ করার মানসিকতা থেকেই আমরা এই হাউস বোটটি তৈরি করেছি। এটি রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় হাউস বোট। আমাদের এখানো মোট আটটি রুম রয়েছে। যার মধ্যে বারান্দাসহ দুটি সুপার প্রিমিয়াম রুম আছে। প্রতিটি রুমের সঙ্গে ওয়াশরুম আছে। প্রতি রুমে চারজন করে থাকা যাবে। আমাদের বোটেই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা স্থানীয় এবং ট্রেডিশনাল খাবারগুলো সার্ভ করার চেষ্টা করছি। যাতে পর্যটকরা স্থানীয় খাবার সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করতে পারে।
তবে কোনো পর্যটক চাইলে তার চাহিদা মতো সব ব্যবস্থা করা যাবে। কারণ রান্নাঘর আমাদের বোটে রয়েছে। কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা একজন পর্যটক জানান, বোটটি আসলেই খুব সুন্দর করেছে। বিশেষ করে ছাদে কৃত্রিম ঘাসের কার্পেটে বসে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাছাড়া রুমের ভেতর থেকেও বাইরের ভিউটা খুব সুন্দর। মালদ্বীপের হাউস বোটগুলোর মতোই মনে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শেফালিকা চাকমা বলেন, রাঙ্গামাটি যেহেতু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ তাই এখানে ন্যাচারাল ভাইভটা থাকা খুব প্রয়োজন, যা এই বোটটিতে আছে। রাঙ্গামাটির অন্যান্য হাউস বোটগুলোতে সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও অনেক বোটে প্রকৃতি উপভোগের সুযোগটা নেই। সেক্ষেত্রে পর্যটক আকর্ষণে অন্যান্য বোটগুলো থেকে রয়েল অ্যাডভেঞ্চার এগিয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। রাঙ্গামাটিতে ছোট-বড় অনেকগুলো হাউস বোট রয়েছে। তার মধ্যে এই হাউস বোটটি আয়তনে, সুযোগ-সুবিধায় এবং সৌন্দর্যে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিলাসবহুল প্রমোদতরী যা রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই লেকে পর্যটক নিয়ে ভ্রমণ করবে। উক্ত প্রমোদতরীর মধ্যে রয়েছে মোট ৮টি রুম যার প্রতিটি রুমেই আছে এটাচ ওয়াশরুম। এর মধ্যে দুটি রুম আছে সুপার প্রিমিয়াম যেগুলো ব্যালকনিসহ। প্রতিটি রুমেই ৪ জন করে লোক থাকতে পারবে। দু’তলায় একটা বড় রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে বোটের গেস্টরা খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। বোটের মধ্যেই রান্না করার ব্যবস্থা থাকায় পর্যটকরা তাদের স্বাচ্ছন্দ্যমত সময়ে প্রকৃতি দেখতে দেখতে খাওয়া দাওয়া করতে পারবে। বোটের মধ্যেই রিসোর্ট এর মত সুন্দর রুমের ব্যবস্থা থাকায় রুমের ভিতর থেকেই রাঙামাটির প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখতে পারবে বিছানায় শুয়ে। আর রাঙামাটির সকল পর্যটন স্পটগুলোই কাপ্তাই লেকের তীরে হওয়ায় উক্ত বোটে করেই স্পটগুলো ঘুরতে পারবে পর্যটকরা। রাত্রিযাপনের সুবিধা থাকায় কোনো পর্যটককে আলাদাভাবে রিসোর্ট নেয়ার প্রয়োজন হবে না। এক বোটের মধ্যেই থাকা, খাওয়া এবং ঘুরার সকল সুযোগ সুবিধা পাবে পর্যটকরা। যারা দূর দুরান্ত থেকে ফ্যামিলি বা গ্রুপ নিয়ে ঘুরতে যায় কাপ্তাই লেকের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য এইটা খুব ভালো একটা সার্ভিস হবে।
বোটটিতে রাঙামাটির বিশেষ পর্যটক প্লেসগুলো পর্যটকরা ২ দিন ১ রাতের জন্য ঘুরতে পারবেন প্যাকেজে। প্যাকেজের মধ্যেই পর্যটকদের জন্য ২ দিনে ৬ বেলা খাবার, ৪ বেলা নাস্তা, সকল স্পট ঘুরা এবং ১ রাত প্রমোদতরীর মধ্যেই ভেসে ভেসে রাত্রিযাপন। প্যাকেজের খরচ প্রতি রুমে ৪ জন করে থাকলে প্রতিজন ৭,৫০০/- টাকা করে পড়বে। ইতিমধ্যে রাঙামাটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বোটটি। উদ্বোধন হওয়ার পরই রেগুলার বুকিং হচ্ছে। এই বোটের প্যাকেজ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ০১৭৯৫-৮০৩৭৩১ (আনন্দ) যোগাযোগ করার সুযোগ রয়েছে।
|
বিশেষ সংবাদদাতা:
চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই লেকের নীল জলে ভাসছে “রয়েল এডভেঞ্চার” নামের একটি দ্বিতল বিশিষ্ট হাউজবোট। এটি এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কাঠের তৈরি হাউজবোট।
প্রমোদতরীটির পক্ষ থেকে মো: মহিউদ্দিন মজুমদার আনন্দ জানান রাঙ্গামাটি একটি পর্যটন নগরী। এখানে হ্রদ, পাহাড়, ঝর্ণা একসঙ্গে উপভোগ করা যায়। হ্রদের বুকে এই ধরনের সুন্দর সুবিধা সম্বলিত একটি হাউস বোট পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য লেকে বেড়ানোর এক দারুন মাধ্যম তৈরি হলো।
তিনি আরো বলেন, আমরা সাধারণত ভিয়েতনাম, চায়না, থাইল্যান্ড এসব দেশে এই ধরনের প্রমোদতরী দেখতে পাই। কিন্তু রাঙ্গামাটিতেও এই ধরনের হাউস বোট চালু করে আমরা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চাই। আমরা মনে করি আমরাও ধীরে ধীরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছি। এই হাউস বোট পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণ হিসেবে কাজ করবে এবং পাশাপাশি রাঙ্গামাটির পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখবে।
দ্য রয়েল অ্যাডভেঞ্চারের সিইও মো. মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, পর্যটন খাতে কাজ করার মানসিকতা থেকেই আমরা এই হাউস বোটটি তৈরি করেছি। এটি রাঙ্গামাটির সবচেয়ে বড় হাউস বোট। আমাদের এখানো মোট আটটি রুম রয়েছে। যার মধ্যে বারান্দাসহ দুটি সুপার প্রিমিয়াম রুম আছে। প্রতিটি রুমের সঙ্গে ওয়াশরুম আছে। প্রতি রুমে চারজন করে থাকা যাবে। আমাদের বোটেই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা স্থানীয় এবং ট্রেডিশনাল খাবারগুলো সার্ভ করার চেষ্টা করছি। যাতে পর্যটকরা স্থানীয় খাবার সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করতে পারে।
তবে কোনো পর্যটক চাইলে তার চাহিদা মতো সব ব্যবস্থা করা যাবে। কারণ রান্নাঘর আমাদের বোটে রয়েছে। কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা একজন পর্যটক জানান, বোটটি আসলেই খুব সুন্দর করেছে। বিশেষ করে ছাদে কৃত্রিম ঘাসের কার্পেটে বসে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাছাড়া রুমের ভেতর থেকেও বাইরের ভিউটা খুব সুন্দর। মালদ্বীপের হাউস বোটগুলোর মতোই মনে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শেফালিকা চাকমা বলেন, রাঙ্গামাটি যেহেতু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ তাই এখানে ন্যাচারাল ভাইভটা থাকা খুব প্রয়োজন, যা এই বোটটিতে আছে। রাঙ্গামাটির অন্যান্য হাউস বোটগুলোতে সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও অনেক বোটে প্রকৃতি উপভোগের সুযোগটা নেই। সেক্ষেত্রে পর্যটক আকর্ষণে অন্যান্য বোটগুলো থেকে রয়েল অ্যাডভেঞ্চার এগিয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। রাঙ্গামাটিতে ছোট-বড় অনেকগুলো হাউস বোট রয়েছে। তার মধ্যে এই হাউস বোটটি আয়তনে, সুযোগ-সুবিধায় এবং সৌন্দর্যে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিলাসবহুল প্রমোদতরী যা রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই লেকে পর্যটক নিয়ে ভ্রমণ করবে। উক্ত প্রমোদতরীর মধ্যে রয়েছে মোট ৮টি রুম যার প্রতিটি রুমেই আছে এটাচ ওয়াশরুম। এর মধ্যে দুটি রুম আছে সুপার প্রিমিয়াম যেগুলো ব্যালকনিসহ। প্রতিটি রুমেই ৪ জন করে লোক থাকতে পারবে। দু’তলায় একটা বড় রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে বোটের গেস্টরা খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। বোটের মধ্যেই রান্না করার ব্যবস্থা থাকায় পর্যটকরা তাদের স্বাচ্ছন্দ্যমত সময়ে প্রকৃতি দেখতে দেখতে খাওয়া দাওয়া করতে পারবে। বোটের মধ্যেই রিসোর্ট এর মত সুন্দর রুমের ব্যবস্থা থাকায় রুমের ভিতর থেকেই রাঙামাটির প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখতে পারবে বিছানায় শুয়ে। আর রাঙামাটির সকল পর্যটন স্পটগুলোই কাপ্তাই লেকের তীরে হওয়ায় উক্ত বোটে করেই স্পটগুলো ঘুরতে পারবে পর্যটকরা। রাত্রিযাপনের সুবিধা থাকায় কোনো পর্যটককে আলাদাভাবে রিসোর্ট নেয়ার প্রয়োজন হবে না। এক বোটের মধ্যেই থাকা, খাওয়া এবং ঘুরার সকল সুযোগ সুবিধা পাবে পর্যটকরা। যারা দূর দুরান্ত থেকে ফ্যামিলি বা গ্রুপ নিয়ে ঘুরতে যায় কাপ্তাই লেকের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য এইটা খুব ভালো একটা সার্ভিস হবে।
বোটটিতে রাঙামাটির বিশেষ পর্যটক প্লেসগুলো পর্যটকরা ২ দিন ১ রাতের জন্য ঘুরতে পারবেন প্যাকেজে। প্যাকেজের মধ্যেই পর্যটকদের জন্য ২ দিনে ৬ বেলা খাবার, ৪ বেলা নাস্তা, সকল স্পট ঘুরা এবং ১ রাত প্রমোদতরীর মধ্যেই ভেসে ভেসে রাত্রিযাপন। প্যাকেজের খরচ প্রতি রুমে ৪ জন করে থাকলে প্রতিজন ৭,৫০০/- টাকা করে পড়বে। ইতিমধ্যে রাঙামাটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বোটটি। উদ্বোধন হওয়ার পরই রেগুলার বুকিং হচ্ছে। এই বোটের প্যাকেজ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ০১৭৯৫-৮০৩৭৩১ (আনন্দ) যোগাযোগ করার সুযোগ রয়েছে।
|
|
|
|
স্মৃতির মানসপটে যে যুদ্ধ ভাসে সে যুদ্ধের বিজয়ী তুমি হে বীর দেশ মাতৃকার সাহসী সন্তান তুমি হে বীর, তুমি হে বীর-
১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই সবুজ শ্যামলীমা আজ যখন বর্হিবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি দেশ, একটি স্ব পরিচয়ে পরিচিত দেশটির পিছনের গল্পটা আমাদের সকলেরই জানা। পাকিস্তানি শাসকদের ভয়াল থাবা থেকে এই জাতিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে একটি কণ্ঠের ডাকে, একজন মানুষের আদর্শ, দেশপ্রেম আর সাহসিকতায় হাজারো যুবক, তরুণ থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষের একটি দেশের তরে ঝাঁপিয়ে পড়বার ইতিহাস।
বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের সেই দলের অন্তর্ভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুনিরুল ইসলাম। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত স্বাধীনতার লড়াইয়ে নেমে আসেন জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে। বীর এই যোদ্ধার জন্ম ১১ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ ইং তৎকালীন বৃহত্তর রংপুরের ঠাকুরগাঁওয়ে। তাঁর পিতার নাম মৃত তজিব উদ্দীন আহাম্মদ। ১৫ বছর বয়সী সেই তরুণ সেদিন দেশের টানে সংসারের মায়াকে ভুলে নেমে আসেন পথে। ২৫ মার্চের পর সারাদেশের মত ঠাকুরগাঁওয়ে মিছিল ও আন্দোলনের রেশ নেমে আসলে তিনি আন্দোলনে অংশ নেন। অনেকেই যখন নিজেকে বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তখন এই অকুতোভয় মানুষটি ১৯৭১ এর মে-জুন মাসের মাঝামাঝি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে ট্রেনিং গ্রহণ করতে যান। সেখানে ভারতের রায়গঞ্জে তিন সপ্তাহ অবস্থান করেন। সে সময় তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক, কাসেম, তাহের, নুরুসহ প্রায় ১০/১২ জন মিলে গেরিলা ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে রাইফেলসহ অস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
শুধু ভারতে গেরিলা ট্রেনিংই নয় এর আগে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে ১০ই মার্চের দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের আহ্বানে হাইস্কুলের শিক্ষক এম. ইউসুফ এগিয়ে আসেন ছাত্র-যুবকদের ট্রেনিং দিতে। তখন তিনি ছিলেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। রোভার-স্কাউট-ওটিসি ক্যাডেটদের জন্য নির্ধারিত ৫০টি ঢামী রাইফেল দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রশিক্ষণ। ট্রেনিংয়ের লিডারশীপ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হাতে থাকলেও সেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনিরুল ইসলাম ভারত থেকে ফিরে ঠাকুরগাঁও ৬নং সেক্টরের সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এম. কে. বাশার। এসময় ৬নং সেক্টরের অধীনে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা যেমন রায়পুর, জামালপুর, বড়গাঁও, বালিয়া, রুহিয়া থেকে শুরু করে আটোয়ারীর ডাঙ্গীপাড়া এলাকা পর্যন্ত যুদ্ধ করেন। সারাদেশের সাহসী সন্তানদের মত ঠাকুরগাঁওয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও ১৯৭১ সালে নয় মাস জুড়ে সাহসিকতার সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাঁদেরই মধ্যে অন্যতম মুনিরুল ইসলাম যুদ্ধে অংশগ্রহণকালীন অক্টোবর মাসে ডান ও বাম পায়ে এবং পেটের কিছু অংশে ছররা গুলি খেয়ে আহত হন। পশ্চিম দিনাজপুরের ইসলামপুর সাবডিভিশনাল হাসাপাতালে মেডিক্যাল অফিসার ডা. শ্রী নকুল সিনহার অধীনে চিকিৎসা নেন। আহত হবার পরও তিনি যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন নি। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েই আবারো দেশমাতৃকাকে রক্ষার্থে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অকুতোভয় বীরের সাহসিকতা আর সম্মানে গর্বিত এবং নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাই আমরা। এভাবেই হাজারো বীরের রক্তের বিনিময়ে এগিয়ে যায় আমাদের যুদ্ধ।
ডিসেম্বরের ৩ তারিখ মুনিরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোদ্ধারা প্রবেশ করেন ঠাকুরগাঁও শহরে। শুরু করেন জন্মস্থান এবং নিজ এলাকাকে মুক্ত করার প্রাণপণ লড়াই। এ দিনেই পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও। এভাবেই বীর মুক্তিসেনাদের অদম্য সাহস আর দেশের প্রতি ভালোবাসায় একে একে মুক্ত হয় সমগ্র বাংলা। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় স্বীকার করে। এ বিজয় ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং শত শত বীরের আত্মত্যাগে অর্জন হয়। এই ত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মুক্ত হয় বাংলা, স্বাধীন বাংলার বুকে উঠে লাল-সবুজের পতাকা। সোনার ছেলেরা মাকে দেয়া কথা রেখেছে। মুক্ত করেছে দেশমাতাকে। জন্ম দিয়েছে “বাংলাদেশ” নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। স্বাধীন বাংলার এমনই একজন মুক্তির নায়ক মুনিরুল ইসলাম। তিনি শুধু তাঁর পরিবার বা ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব নন, তিনি সমগ্র উত্তরবঙ্গ এমনকি পুরা দেশের গর্ব। যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা সবসময়ই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন নিজের বীরত্ব বা সাহসিকতার বড়াই কখনো তিনি করেননি। শুধু দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য যে লড়াই করেছেন তা নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনও গর্ব বা অহংকার দেখাননি। কখনো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এই মানুষটি নিজেকে প্রচার বা প্রকাশ করেননি। তাঁর কর্ম প্রচার বিমুখতা তাঁর মহত্ত্বেরই বিরাট অংশ। ক’জনই বা পারে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে!
পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির ঠাকুরগাঁও জেলার জাতীয় যুব সংহতি ১নং যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন তিনি। কর্মজীবনে নারগুন অটো রাইস মিল ও মৌসুমি সিনেমা হলের মালিক ছিলেন। সোনার বাংলার সেদিনের সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ এর ৩ ডিসেম্বর ফিরে এসেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ে, ঠিক তেমনি এই বিজয়ের মাসেই গত ৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মৃত্যুবরণ করেন ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ি এলাকার শহীদ তিতুমীর সড়কের নিজ বাড়িতে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুইপুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
‘বীরেরা মরে না কখনো, তাদের প্রস্থান হয় মাত্র। তাঁরা চিরস্মরণীয়। এই বাংলার হাজারো মানুষের হৃদয়ে, স্মৃতিতে তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে ও সাহসিকতায়।’
|
|
|
|
আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া:
মৌমাছির মাধ্যমে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে সাফল্য পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মৌ-চাষি মামুন অর রশিদ ওরফে মধু মামুন। তার উৎপাদিত মধু এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও। সফল এই মধু সংগ্রহকারী মামুনের পেছনের গল্পটা খুব সহজ ছিল না। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিল তার বিরল প্রতিভা। যাত্রাপালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম্ভীরা, পথনাটক, একক নারী-পুরুষ কণ্ঠের গান সবই করেছেন। জীবিকার তাগিদে এক সময় এনজিও চাকুরীও কয়েছেন তিনি। তবে কোন কিছুই যেন তার জীবনে ধরা দেয়নি। এক সময় সিদ্ধান্ত নেয় চাকুরী ছেড়ে মধুু সংগ্রহের। এরপর ১৯৯৭ সালে কারিগরি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই দুই হাজার ৬’শ টাকা দিয়ে মাত্র চারটি মধুর বাক্স নিয়ে শখের বশেই মৌ-চাষ শুরু করেন। এসময় পুরোদমে আত্নয়োগ করেন মৌ-চাষে। নিরলস পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফলে তিনি এখন স্বাবলম্বী। মামুনের সংগৃহীত মধু দেশের গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও। বর্তমানে মামুনের ৩টি মৌ খামারে প্রায় সাড়ে ৪০০ বাক্স রয়েছে। একেকটি বক্স থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়।
কুষ্টিয়র মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মামুন। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স পাস করেন। পরে স্থানীয় একটি এনজিও চাকুরীও করেন । তবে অসুস্থতার কারণে সেই চাকুরী ছাড়তে বাধ্য হন মামুন। সংসারের অভাব অনটন দূর করতে এক সময় চাকরির আশা না করেই বাণিজ্যিকভাবে মধুর চাষ করে ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করেন। বর্তমানে তার মধু খামারে প্রায় ২০ জন কর্মচারী কাজ করছেন।
সম্প্রতি মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে বিস্তীর্ণ সরিষার ক্ষেত। শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌ-চাষের বাক্স বসিয়েছেন মামুন। বাক্স থেকে মৌমাছির দল সরিষার ক্ষেতে উড়ে উড়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার বাক্সে ফিরে যাচ্ছে। বাক্স থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয় মধু।
নাটোর থেকে ধুবইল মাঠে মধু কিনতে আসা ফারুকুল আলম তুষার নামে এক ঠিকাদার বলেন, আমি নাটোর থেকে এসেছি মধুমামুনের নাম শুনে। সারা দেশে মধু মামুনের মধুর সুখ্যাতি রয়েছে। তার মধু অনেক মানসম্পন্ন। যার কারণে সরেজমিন দেখে এবং নিজে খেয়ে বাসার জন্য আরো পাঁচ কেজি মধ্যে কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয় কুষ্টিয়ার মিরপুর মাহমদা চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ আক্তার মামুন বলেন, মধু মামুন আমাদের এলাকার ছেলে। সে দীর্ঘ দিন ধরে মৌ-খাামার গড়ে তুলেছেন। ইতিমধ্যে সারা দেশে তার অনেক নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। তার উৎপাদিত মধু চরম সমাদৃত।
তিনি আরও বলেন, মামুন স্থানীয় ধুবইল মাঠে খামার স্থপন করেছে জেনে সেটি দেখতে এসেছি। দেখে বেশ ভালো লাগছে। সে সুন্দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করেন।
মামুন আর রশিদ বলেন, বর্তমানে আমার তিনটি খামারে সাড়ে ৪০০ বক্সে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে তাড়াশের কেন্দুয়িল, চাপাইনবয়াবগঞ্জের সুকনাপাড়া এবং কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাঠে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মামুন আরও বলেন, প্রতি বছর সরষে, কালোজিরা, ধনিয়া, বরই, টমেটো, লিচুসহ বিভিন্ন ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয়। মেয়ের নামানুসারে খামারে নাম রেখেছি ‘মিষ্টি মৌ খামার’। কুষ্টিয়ার বিসিক থেকে মধু বাজারজাত করার সনদও দেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত।
মামুন জানান, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিল তার বিরল প্রতিভা। যাত্রাপালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম্ভীরা, পথনাটক, একক নারী-পুরুষ কণ্ঠের গান সবই করেছেন। মামুনের স্ত্রী রাশিদা আক্তার খুলনা বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী।
মেয়ে মায়মুনা রশিদ মিষ্টি চলতি বছর জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছেন। ছেলে আহানাফ তাহমিদ মুন পড়াশোনা করছে। বর্তমানে মামুনের মধু দেশ-বিদেশে বিক্রি হয়। অনেকে তার বাড়িতে এবং খামারে গিয়ে সরাসরি মধু কেনেন।
মামুন বলেন, বেশিরভাগ কোম্পানিই স্বল্প মূল্যে মধু কিনে নিয়ে তাতে কেমিক্যাল মিশিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে। গাছি সংগ্রহকারীরা মৌচাকে চাপ দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। এতে মধুর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আর মৌ খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। এতে মধুর গুণগত মান ভালো থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমার খামারে উৎপাদিত মধু দেশের গন্ডি পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে যায়। আমার ইচ্ছে রয়েছে সরকারি ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমার খামার আরো বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখতে সক্ষম হব।
সফল এই মধু খামারী বলেন, গত বছর আবহাওয়া কিছুটা বিরুপ থাকায় মধুর উৎপাদন কম হয়েছিল। তবে এবার আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা পুরন করতে পারবো। গত বছর বিভিন্ন ফুল থেকে দশটন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। এবার আশা করছি বিশটন মধু সংগ্রহ করতে পারবো।
|
|
|
|
জিতু আহমদ, ওসমানীনগর:
‘...ও বউ ধান ভানেরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, ঢেঁকি নাচে বউ নাচে হেলিয়া দুলিয়া ও-বউ ধান ভানেরে...’। গ্রাম বাংলার মহিলাদের কণ্ঠে অতিথে অগ্রায়ন মাস আসলেই শোনা যেত এ ধরনের সুর আর ঢেঁকির দুপ দুপ শব্দ। ঢেঁকিতে পা রেখে কত গান ও কত প্রবাদ গাওয়া হতো গ্রাম্য মেয়েদের। সিলেটের ওসমানীনগরে এক সময় অগ্রায়ন মাস আসলেই আমন ধান ঘরে তুলে সেই ধান ঢেঁকিতে ভেঙ্গে তৈরী হত নানা রখমের পিঠা। কিন্তু আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব এগিয়ে যাওয়ায় এখন আর ঢেঁকির প্রয়োজন পরে না কারো। তাই ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির খাতায়। জানা যায়, বর্তমানে আমন ধান ধান কাটা থেকে মারাই ও ধান ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজ সমাপ্ত করেন অধুনিক মেশিনেই। আর তাই আধুনিকতায় যান্ত্রিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও গৃহস্থলী সামগ্রী ঢেঁকি। এক সময় গ্রামের সবার বাড়িতে ঢেঁকির দেখা পাওয়া গেলেও এখন ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির দেখা পাওয়া দুপ্রাপ্য। প্রগতি ও আধুনিকতার যুগে কর্মব্যস্থ মানুষের ব্যস্থতা যেমন বেড়েছে তেমনি যে কোন কাজ স্বল্প সময়ে স্বল্প শ্রমে দ্রুত সম্পন্ন করতে সবাই ব্যস্ত। আধুনিকতার ধাপটের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের কৃষান কৃষাণীদের ভালো মানের চাল তৈরী করার প্রধান মাধ্যম কাঠের ঢেঁকি। এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক ঢেউ লেগেছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকির ছন্দময় শব্দ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওসমানীনগর উপজেলায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার কৃষকদের বাড়ী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কাঠের ঢেঁকি। ধান চাল আটা ও চিড়া ভাঙ্গানোর জন্য বৈদুতিক মিল হওয়ার কারণে গ্রামীন কৃষকরা সহজেই ধান, আটা ও চিড়া কম সময়ে অল্প খরচে ভাঙ্গাতে পারছে। কিন্তু এক সময় গ্রামের অভাবগ্রস্ত গরিব অসহায় মহিলাদের উপার্জনের প্রধান উপকরণ ছিল ঢেঁকি। গ্রামের বিত্তশালীদের বাড়িতে যখন নতুন ধান উঠত তখন অসহায় অভাবগ্রস্ত মহিলারা ঢেঁকিতে ধান ছেঁটে চাল বানিয়ে দিত। তা থেকে তারা যা পেত তা দিয়েই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চলে যেত। ঢেঁকিতে ধান ভানতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের হাসি-তামাশার কথা বলত ও গান গাইত।
এছাড়া নিজেরে প্রয়োজনে অনেক বাড়িতে ব্যাবহার করা হতো ঢেঁকি। কালের বিবর্তনে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ওসমানীনগর থেকে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প।
ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের নোয়ারাই গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ীর আমলে আমাদের বাড়ীতে ঢেঁকি ছিল। অগ্রায়ন মাস আসেই আমরা সেই ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গতাম (ভাঙ্গা হত)। আজ আর সেই ঢেঁকি নেই। তাজপুর বাজারের ব্যবসায়ী ছাদিকুর রহমান ছাদেক জানান, গ্রামীন জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে মাটির বাড়ী ঘরে বদলে ডিজাইন করে, পাকা বাড়ী ঘর তৈরী হচ্ছে। আধুনিকতার ফলে অনেকে বাড়ীতে ঢেঁকি রাখার জায়গা থাকছে না। তাই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে।
|
|
|
|
রাফসান সাইফ সন্ধি, ঘাটাইল: পুরো নাম ইসরাত জাহান ইকরা। বাবার নাম ওসমান গণি তালুকদার ও মায়ের নাম সাহিদা খাতুন। তারা পেশায় দুইজনই শিক্ষক। ইকরার বেড়ে উঠা টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। স্কুলজীবন থেকেই ছবি আঁকা, নাচ কিংবা গান সবকিছুতেই পারদর্শী ছিলেন ইশরাত জাহান (ইকরা)। ২০১৭ সালে ঘাটাইল এস ই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০১৯ সালে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান(ইকরা)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ক্যাম্পাসে তিনি পরিচিত ইকরা নামে।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চা করে বেড়ে ওঠা ইকরা ২০২০ সালের শুরুতে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। বিশ্বব্যাপী দেখা দিল করোনা মহামারি, বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্পাস। তিনি বিধিনিষেধে ঘরে অলস বসে না থেকে সময়টাকে কাজে লাগাতে ফেসবুকে IQRA - A Storyteller নামে একটি পেজ খুলে ফেলেন। এই পেজে আবৃত্তির পাশাপাশি জীবনঘনিষ্ঠ গল্প বা নিবন্ধ পড়া শুরু করেন। আর তাতেই পাওয়া গেল অবিশ্বাস্য সাড়া! ইকরার পেজটিতে বর্তমানে অনুসারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৬ হাজার।
ইকরা জানান, ‘প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলের প্রতিযোগিতাগুলো থেকেই আবৃত্তি শুরু, আম্মুই দেখিয়ে দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পরপরই শুরু হয় করোনা। বন্দী জীবনে মুক্তির পথ খুঁজলাম শব্দের কাছে। ছোটবেলা থেকে বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি, বইপোকা নামে স্কুল কলেজে কিংবা বন্ধুমহলে সবাই ডাকতো, ইংরেজি সাহিত্যে পড়শুনার সুযোগটা তাই বিরাট একটা আনন্দের ব্যাপার ছিলো। যদিও বাংলা সাহিত্যের সাথেই আমার বেড়ে উঠা। সাহিত্য পড়া দারুণ উপভোগ করছি। পড়াশুনা শেষে যদি আমার এই উপভোগ্য বিষয়গুলো পরবর্তী প্রজন্মের সাথে ভাগ করে নিতে পারি তবে বেশ হয়। ২০২১ এর ১৫ই আগস্ট আমার পড়া একটা গল্প (বুয়েট পড়ুয়া ভাইয়ের টিউশনির গল্প) প্রচুর মানুষ পছন্দ করা শুরু করেন, গল্পটা এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ শুনেছেন। এরপর সবাই আমাকে চিনতে শুরু করেন ‘IQRA - A Storyteller’ হিসেবে। শুরুর দিকে কন্টেন্ট বানাতে সত্যি ভীষণ স্ট্রাগল গিয়েছে। শুরু থেকেই বন্ধুদের সাপোর্ট পেয়েছি ভীষণ। ইউনিভার্সিটিতে এসে সমমনা চমৎকার একটা ফ্রেন্ড সার্কেল পেয়েছি। ওদের যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছে। এরপর আমার পরবর্তী কাজগুলো মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছেন। কখনো ভাবিনি কবিতা বা গল্প পাঠের জন্য মানুষ আমাকে চিনতে শুরু করবে পত্রিকায় বা ফেসবুকের পাতায় বা ট্রেনে, বাসে, রাস্তাঘাটে শুধুমাত্র কবিতার জন্য।
তিনি আরও বলেন, কবিতা এবং শব্দকে অনুভব করা শিখতে চাই আরও ভালোভাবে যাতে সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌছে যায় আমার উচ্চারণ। লেখালেখি করি মাঝে মাঝে ইচ্ছে আছে নিজের অনুভবগুলিকে নিয়ে সত্যি সত্যি একদিন বই লিখে ফেলবো।
ফেসবুক পেজের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান, নিরাপত্তা নিয়ে এখনও তেমন সমস্যা হয়নি তবে স্পাম মেইল পাই প্রতি সপ্তাহেই, আসলে একটু ভয়ে ভয়ে থস্কা লাগে। এর থেকেও বেশি ভয় পাই হয়তো নেগেটিভিটি। মানুষজন কখন ভুল বুঝা শুরু করবেন বা আমি কখন একটা ভুল করে বসবো এই ভয়টা এখন নিত্যদিনের। আর যাই হোক বাজে মন্তব্য শুনতে চাই না।
ইনকামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বলতে তেমন কিছুনা, আসলে সবাই যা মনে করেন ফেসবুক ইউটিউবের ইনকামটা অতো বেশি না। এক্সাক্ট এমাউন্টটা বলতে চাচ্ছি না এমনিতেই স্পাম মেইল প্রচুর আসে, তবে সেটা তেমন নয়। আমি এখনও ছাত্র পড়াই রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে- বুঝতেই পারছেন। মনে হয় বেশিসময় দিলে ব্যাপারটা অন্যরকম হতো, আসলে আমি একটু নিরিবিলি পড়াশুনা করতে ভালোবাসি,তাই পেজটা আসল মনোযোগের জায়গায় নিয়ে আসতে পারছি না।
|
|
|
|
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইট-পাথরের দালান। একটু সুখের আশায় মানুষ কত কিছুই না করছে। তবে মাটির ঘরের শান্তি ইট পাথরের দালান কোঠায় খুঁজে পাওয়া ভার।
আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের বিবর্তনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ চিরচেনা মাটির ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে। অতীতে মাটির ঘর গরীবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর বলে পরিচিত ছিল। এ ঘর শীত ও গরম মৌসুম আরামদায়ক তাই আরামের জন্য গ্রামের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবানও মাটির ঘর তৈরি করে থাকতেন। জানা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকেই মাটির ঘরের প্রচলন ছিল। এটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিনত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হত। ১০-১৫ ফুট উচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় অথবা টিনের ছাউনি দেয়া হত। মাটির ঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের তিন-চার মাসের অধিক সময় লাগতো। গৃহিনীরা মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা একে তাদের নিজ বসত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তুলতেন। এক সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক পরিবার মাটির ঘরে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় এখনো মাঝে মাঝে চোখে পড়ে চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী এই মাটির ঘর।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বাকচালা গ্রামের মজিবর মিয়ার বাড়িতে সেই পুরোনো স্মৃতিভরা শান্তির নীড় মাটির ঘর দেখা যায়। মজিবর মিয়া জানান, এই ঘর আমার দাদার ছিল। সে মারা যাওয়ার পর আমার বাবা থাকতেন। এখনও ঘরটি রয়েছে। দাদার পুরোনো স্মৃতি ধরে রাখতে এখনো মাটির ঘর রেখে দিয়েছি। তবে যুগের সাথে তাল মেলাতে এখন অনেকে ইটের ঘর তৈরি করছে, তাই ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর।
উপজেলার সাগরদীঘি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নাসির উদ্দিন জানান, মাটির ঘর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের বিবরর্তনে অধিকাংশই মানুষ মাটির ঘর ভেঙে অধিক নিরাপত্তার জন্য পাকা ঘর তৈরি করছে।
|
|
|
|
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদ আনন্দের এই যাত্রায় বাড়তি মাত্রা যোগ করতে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত বিনোদন কেন্দ্র ফ্যান্টাসি কিংডম কমপ্লেক্স। বিশ্বমানের বিনোদন সেবা, এক্সসাইটিং সব রাইড নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ফ্যান্টাসি কিংডম। আকর্ষণীয় এই থিম পার্কটি ইতোমধ্যে ভ্রমণপিপাসু মানুষের মাঝে বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। দুরন্তগতিতে ছুটে চলা রাইড রোলার কোস্টার এই পার্কের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর রাইডগুলোর মধ্যে একটি। তাছাড়া রোলার কোস্টার এর পাশাপাশি আরও রয়েছে, শান্তা মারিয়া, ম্যাজিক কার্পেট, ইজিডিজি, জায়েন্ট স্প্যাল্শ সহ এক্সাইটিং সব রাইড। যা আপনার ঈদের ছুটিকে করবে প্রানোচ্ছ্বল। এছাড়া এখানে যে শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের সব রাইড তা কিন্তু নয়। ছোট্ট সোনামণিদের জন্য রয়েছে বর্ণিল সব গেম জোন এবং মজার মজার রাইড।
উপচে পড়া কর্মব্যস্ততার এক গোয়েমিকে পেছনে ফেলে সুবিশাল জলরাজ্যে বিনোদনের এক সুবর্ণ সুযোগ হলো ওয়াটার কিংডম। কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট উত্তাল ঢেউয়ের তৈরি ওয়াটার কিংডমের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাইড ওয়েভ পুল। এছাড়া স্লাইড ওয়ার্ল্ড, ফ্যামিলি পুল, টিউব স্লাইড, লেজি রিভার, মাল্টি স্লাইড, ওয়াটার ফল, ডুম স্লাইড, লস্ট কিংডম, ড্যান্সিং জোনসহ মজাদার সব রাইড তো থাকছেই। যা আপনার আনন্দের মাত্রা দ্বিগুণ করবে।
দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও চমৎকার সব রাইড নিয়ে নির্মিত হয়েছে হেরিটেজ কর্ণার। খুব কাছ থেকে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এখানে রয়েছে চমৎকার কিছু রাইডে চড়ার সুযোগ। পার্কে নির্মিত সেসব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-জাতীয় স্মৃতিসৌধ, আহসান মঞ্জিল, চুনাখোলা মসজিদ, কান্তজীর মন্দির, জাতীয় সংসদ ভবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।
এছাড়া রয়েছে ফরমুলা ওয়ান রেসিং এর আদলে তৈরি বাংলাদেশের সর্ব-প্রথম গো কার্ট ট্যাক এক্সট্রিম রেসিং। যারা রেসিং করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এক্সট্রিম রেসিং বেষ্ট অপশন। ছোট ছোট চার চাকার প্রায় মাটি ছুঁই ছুঁই এই রেসিং কারগুলো আপনাকে দেবে রেসিংয়ের এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
ব্যস্ত জীবনের কর্মমুখর দিনগুলোর ক্লান্তি দূর করে, নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে শহরের বাইরে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে নির্মল বিনোদনের জন্য ফ্যান্টাসি কিংডম হোক আপনার প্রথম পছন্দ। তাই এবারের ঈদে আপনার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের নিয়ে আসুন ফ্যান্টাসি কিংডম আর হারিয়ে যান ফ্যান্টাসি কিংডমের দুনিয়ায়।
এবারের ঈদ উপলক্ষে পার্ক কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদের বাড়তি বিনোদনের জন্য, ঈদ পরবর্তী ৭ দিনের বিশেষ আয়োজন করেছে যার মধ্যে জমজমাট কনসার্ট, ফ্যাশন শো, ডিজে শো, গেম শো, অন্যতম।
|
|
|
|
এ. এম. উবায়েদ: কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়া। এ গ্রামে এ লিচুর স্বাদ নেওয়ার জন্য মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে ভিড় করেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লিচুরসিক ক্রেতারা। সাধারণত মঙ্গলবাড়িয়া লিচু রপ্তানি হয় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাশাপাশি ক্রমেই দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে এ লিচুর খ্যাতি।
গ্রামের নামেই লিচুর নাম রাখা হয়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’। রসালো, সুমিষ্ট, সুগন্ধ ও গাঢ় লাল রঙের কারণে এ লিচুর খ্যাতি ছড়িয়ে গেছে দেশের বাহিরেও। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার এ লিচুর ফলনও হয়েছে বাম্পার।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় দুই শতাধিক লিচু-বাগান আছে। বাগানেই এ লিচু বিক্রি হয়। প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এ বছর চাষিরা বাগানগুলো থেকে আনুমানিক ১০ কোটি টাকার অধিক লিচু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
মঙ্গলবাড়িয়ার প্রতিটি বাড়ির বসতভিটার বা আঙিনায় গাছে গাছে থোকায় থোকায় লাল রংয়ের ক্ষুদ্রাকৃতির বিচি, পাতলা চামড়া ও বড় আকৃতির লিচু সবার নজর কাড়ছে। সুস্বাদু ও উন্নত জাতের লিচুর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।শাঁস মোটা ও রসে ভরপুর এ লিচুর মূল জনপ্রিয়তা তার ঘ্রাণে। মঙ্গলবাড়িয়ার সুস্বাদু লিচুর উৎপত্তি নিয়ে প্রবীণদের মুখে শোনা যায়, ওই গ্রামের আ. হাসিম মুন্সী নামের এক স্কুল শিক্ষক বহু বছর আগে ভারতীয় একটি গোলাপী জাতের লিচুর চারা এনে বাড়ির সামনে রোপন করেছিলেন। ৫ থেকে ৭ বছর পর চারা গাছে লিচুর ফলন হয়। তার গাছের লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় উক্ত গ্রামের কৃষক বশির উদ্দিন এই গাছের কলম চারা তৈরি করে লিচুর চাষ শুরু করেন। পর্যক্রমে সম্প্রসারিত হতে থাকে এই লিচুর চাষ।
বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, হোসেন্দী, নারান্দী, তারাকান্দি, জাঙ্গালীয়া, সুখিয়া, ও চন্ডিপাশাসহ উপজেলার সর্বত্রই অধিকাংশ বাড়িতে লিচুর বাগান রয়েছে। তার মধ্যে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামেই ৭-৮শ’ লিচুর বাগান রয়েছে। প্রতি বছর গাছে মুকুল আসার আগেই বেপারীরা অনেক লিচু গাছ আগাম কিনে নেয়।
পাইকাররা এখান থেকে লিচু কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। এছাড়াও আমেরিকা, জার্মান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদিআরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে যাচ্ছে মঙ্গলবাড়িয়ার এ সুস্বাদু লিচু। মঙ্গলবাড়িয়ার অধিকাংশ লিচু-বাগানই আগাম বিক্রি হয়ে যায়। পাইকাররা অগ্রিম গাছ কিনে অতিরিক্ত দামে লিচু বিক্রি করে থাকেন। এবারও ভালো দাম পাবেন বলে আশা করেন চাষি ও পাইকাররা। এ জন্য সবার মুখে হাসি।
লিচু চাষী আমিনুল ইসলাম জানান, আমার বাগানে ৫০ থেকে ৬০টি লিচু গাছ রয়েছে। এ বাগান থেকে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। প্রতিবছর বাগানের লিচু বিক্রি করে লাখ টাকার উপরে আয় করেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের উৎপাদিত লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু। শাঁস মোটা, রসে ভরপুর, গন্ধও অতুলনীয়। পরিবেশ অনুকুল হওয়াতে চলতি বছর বাগানগুলো থেকে লিচু বিক্রি করে চাষীরা ভালো লাভবান হতে পারবেন।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের মধ্যে স্বমহিমায় উদযাপিত হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল কারিম। গত দুই বছর করোনার কারণে ঘরবন্দি থাকলেও এবার কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই রমজানের বিভিন্ন ইবাদতে অংশ নিচ্ছেন মুসলিমরা।
পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই মুসলমানরা রোজা রাখছেন। চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোজা শুরু হয়। চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে যেমন রোজা শুরু বা শেষ হওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়, তেমনি সূর্যের উদয় বা অস্ত যাওয়ার ওপর নির্ভর করে রোজার সময়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রোজার সময় নিয়ে পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইফতারের দুই ঘণ্টা পরই সেহরি খেতে হয়৷ অর্থাৎ তাদের জন্য রোজা ২২ ঘণ্টার।
আজ আমরা জেনে নেব বিশ্বের কোন দেশগুলোতে মুসলমানদের সবচেয়ে লম্বা সময়ের রোজা রাখতে হয়।
আইসল্যান্ডে ২১ ঘণ্টা রোজা আইসল্যান্ডে এক হাজার জনেরও কম মুসলমানের বাস৷ তাদের মধ্যে যারা পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করেন, তারা একদিক থেকে বিশ্বের আর সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে ছাড়িয়ে যান৷ আইসল্যান্ডে এবারের রোজার শুরুতে সেহরি খেতে হচ্ছে রাত ৩টায় আর ইফতার পরের দিন রাত সাড়ে ৯টায়৷ রোজার শেষ নাগাদ সেহরি খেতে হবে ২টা ২০-এ আর ইফতার রাত ১১টায়। সব মিলিয়ে সময় দাঁড়াচ্ছে ২১ ঘণ্টা!
২০ ঘণ্টা রোজা রাখেন সুইডেনের মুসলিমরা খুব গরমের মধ্যে রোজা হলে সুইডেনের মুসলমানদেরও কষ্টের সীমা থাকে না৷ দেশটির আট লাখ মুসলমানের মধ্যে যারা রোজা রাখেন, তাদের ইফতারের মাত্র চার ঘণ্টা পরই সেহরি খেতে হয়৷ সুইডেনের মুসলমানদের অনেক দিন সেহরির প্রায় ২০ ঘণ্টা পর ইফতার খেতে হয়৷
১৯ ঘণ্টা পর সূর্য ডোবে আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ৩ হাজার মুসলমানের মধ্যে কেউ কেউ আজকাল সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে সেহরি আর ইফতার করতে শুরু করেছেন৷ গ্রীষ্মকালে ভীষণ গরম থাকে সেখানে৷ তার ওপর কোনো কোনো দিন সূর্যোদয়ের ১৯ ঘণ্টা পর সূর্য ডোবে৷
জার্মানিতে ১৭ ঘণ্টা পর ইফতার রমজান মাসের সময় দিন খুব বড় হলে জার্মানির মুসলমানদেরও রোজা রাখতে ভীষণ কষ্ট হয়৷ এ বছর জার্মানির বার্লিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সেহরি খেতে হচ্ছে রাত প্রায় ৪টায় আর ইফতার রাত পৌনে ৯টায়৷
ইংল্যান্ডেও ১৭ ঘণ্টা রোজা ইংল্যান্ডে সেহরি থেকে ইফতারের সময়ের পার্থক্য প্রায় ১৭ ঘণ্টা৷ প্রথম রমজানে সেহরি খেতে হবে প্রায় সাড়ে ৩টার মধ্যে ইফতারের সময় পরের দিন সন্ধ্যা সোয়া ৮টা নাগাদ, যা শেষ রোজায় প্রায় ৯টায় গিয়ে ঠেকবে৷
কানাডায় ১৬ ঘণ্টা পর ইফতার এখন প্রায় ১০ লাখ মুসলমান আছে কানাডায়৷ সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বাস টরন্টোতে৷ এবার কোনো কোনো দিন সেহরির প্রায় ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর ইফতারি খেতে হবে তাদের৷
তুরস্ক – সাড়ে ১৫ ঘণ্টা মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্কেও গরমকালে রোজা রাখতে হয় খুব কষ্ট করে৷ এবার সেহরির প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর ইফতার করতে হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে
|
|
|
|
মাসুদ রানা বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: সহপাঠীদের নিয়ে আলাপচারিতার এক ফাঁকে কিছু একটা খাবো বলে ইচ্ছে প্রকাশ করেন অনেকেই। কোথায় খাবেন কী খাবেন তা নিয়ে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে মুখরোচক বা রসনা বিলাস খাবার খেতে কে না ভালোবাসে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের আড্ডায় আলু পরোটা খেতে। গত বুধবার নয়ন হাসান সহ এলাকার কয়েকজন ছোট ভাই হাঁটতে হাঁটতে কোন একসময় পৌছে গেলাম বিরামপুর রেলস্টেশন চত্ত্বরে। ছোট ভাইয়েরা বললো চলেন সবাই একসাথে রাজ্জাকের আলু পরোটা খাই।
আলু পরোটা খেতে খেতে কথা হয় আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তিনি বলেন, আগে অন্যের হোটেলে কাজ করতাম, যা মাইনে পেতাম তা দিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টকর হতো। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করবো। হাতে পয়সা কড়ি নেই, সংসারে অনেক চাহিদা। শেষমেষ বৌয়ের পরামর্শে বিরামপুর রেলস্টেশনে আলু পরোটার ব্যবসা শুরু করি। দিন দিন চাহিদা বাড়তে থাকায় আমাকেও ব্যবসার পরিধি বাড়াতে হয়। ৪ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। আলু পরোটার জন্য ভালো মানের ময়দা, আলু, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, তিল, বাদাম, শরিষা, শুটকীমাছ, তেল ও শুকনো খড়ি প্রতিদিন কিনতে হয়। বাড়িতে সবগুলো উপকরণ পর্যায়ক্রমে আলু পরোটার জন্য ময়দার খুমির প্রস্তুত করে বিভিন্ন রকম ভর্ত যেমন আলু ভর্তা, কাঁচা মরিচ ভর্তা,বাদাম ভর্তা, তিল ও শুটকি মাছের ভর্তা নিয়ে বিকেল ৫টায় বিরামপুর ষ্টেশনের দক্ষিণ পাশে মজাদার ও সুস্বাদু আলু পরোটার দোকান বসাই। সন্ধ্যে হলেই শহরের বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লা থেকে বিভিন্ন বয়সের ছাত্র-ছাত্রী, নারী-পুরুষ সহ রেলস্টেশনে আগত যাত্রীগণ এখানে বসেই খাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বাসা বাড়ির জন্য পার্সেল নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০-৩০০ জন আলু পরোটা খেতে আসেন। প্রতিদিন দোকানে সব মিলে খরচ ১৭শ থেকে ১৮শ টাকা আর আয় হয় ২৬শ থেকে ২৮শ টাকা।
বকুলতলা মোড় থেকে আলু পরাটা খেতে আসা মরিয়ম আক্তার বলেন, সপ্তাহে ২-৩ দিন আলু পরাটা খেতে আসি, এখানকার আলু পরোটার স্বাদটাই আলাদা। টাটকপুর থেকে থেকে আলু পরাটা খেতে আসা মিলন ইসলাম বলেন, আমি এখানে প্রায় আলু পরোটা খেতে আসি। এখানকার আলু পরাটা খেতে মজাটাই আলাদা। বিভিন্ন প্রকারভর্ত্তার স্বাদটাই একেবারে অন্য রকম।
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, এখন আলু পরোটার দোকান থেকে যা আয় করি তা দিয়ে বেশ সুন্দর আমার সংসার চলে। এই থেকে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগান দিচ্ছি। আমি চেষ্টা করি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে মানসম্মত আলু পরোটা ও বিভিন্ন ভর্তা তৈরি করতে। সেজন্যই হয়তো খাবারের স্বাদে জন্য মানুষজন আলু পরোটা খেতে আসে।
|
|
|
|
ষড়ঋতুর বাংলায় শীতের জরাজীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে অপরূপ রূপে প্রকৃতিকে সাজাতে আসছে ঋতুরাজ বসন্ত। দরজায় কড়া নাড়ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের পাতাঝরা মর্মর ধ্বনিকে ছাপিয়ে গাছের ডালে ডালে ফুটেছে রঙিন ফুল আর কচি পাতার সৌরভ।
বসন্তের ছোঁয়ায় পলাশ, শিমুল, মান্দার বন রাঙা বধূর সাজে সেজে উঠেছে। আগুনরঙা ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে গাছপালা। বনে বনে ফুটেছে হাজারো বুনোফুল। সারা বছর সবার অলক্ষ্যে থাকা কোকিল পাখিও বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ডাকছে কুহু কুহু সুরে। ঋতুরাজের রূপ দেখে মোহিত প্রাণীকূল মেতে উঠেছে মিলনের আনন্দে। বসন্ত চিরকালই কবি সাহিত্যিকদের গান, কবিতাসহ নানা রচনা লেখার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে, বসন্ত ঋতুতে প্রকৃতি বসন পাল্টায়, আগামী বছর কেমন হবে তার নাকি আচ পাওয়া যায় বসন্তের রূপ দেখে।
বাংলায় অন্য কোন ঋতুকে ঘিরে উৎসব না থাকলেও প্রতি বছরই নানা সাংস্কৃতিক দল বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে থাকে। তবে নগরায়নের দাপটে প্রকৃতি থেকে বসন্ত দিন দিন তার জৌলুস হারাচ্ছে। মানুষের প্রয়োজনে এখন যথেচ্ছভাবে কাটা হচ্ছে নানা প্রজাতির গাছ। এসব গাছের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল, পলাশের মতো গাছও। একসময় শহর-গ্রাম-গঞ্জে এমনকি প্রতিটি এলাকায় শিমুল গাছ দেখা যেত, বসন্ত এলে গাছের তলা লাল হয়ে থাকতো ফুলের পাপড়িতে। ফুলের মধু খেতে আসা পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকতো সারা দিন।
কিন্তু এখন আর তেমন বেশি পরিমাণে শিমুল গাছ চোখে পড়ে না। তাই চোখ ফেরালেই বসন্তের রূপ আর ততটা দেখা যায় না। দূষণসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশে গাছ দুটি নিজেদের টিকিয়ে রেখে প্রতি বছর বসন্ত এলে জানান দেয় প্রকৃতি তার রূপ বৈচিত্র্য হারায়নি এতটুকুও। কিন্তু যেভাবে গাছ নিধন চলছে সেই সঙ্গে বায়ু দূষণ ও পরিবেশ দূষণের ফলে বৈরি আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে এসবের কারণে আগামী দিনে বসন্তের ছিটে-ফোঁটাও থাকবে তো? তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
তবে বসন্ত ঋতুর সব কিছুই ভালো এমনটা কিন্তু নয়। হাল্কা শীত হাল্কা গরম এই পরিবেশে অন্য সবের সঙ্গে খুব দ্রুত বিস্তার ঘটায় রোগ জীবাণুও। তাই বছরের এই সময় খুব বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা যায় সর্দিকাশি থেকে শুরু করে হাম ও বসন্তের মত অসুখের। তাই এই সময় সব বয়সী মানুষের শরীরের প্রতি বিশেষ যতœ নেওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। সব উৎকণ্ঠার শেষেও কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত’।
|
|
|
|
ফরিদপুর প্রতিনিধি : তিল একটি এক বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি প্রধানত তেল জাতীয় উদ্ভিদ। এর বীজ থেকে তেল তৈরী করা হয়ে থাকে। খাবার তেল হিসেবে এটি স্বাস্থ্যকর। তিল থেকে খাজা তৈরী হয় যা খুবই মুখোরচক ও সুস্বাদু একটি খাবার। এছাড়া তিল থেকে নাড়ু তৈরী করা হয়ে থাকে। প্রসাধনী শিল্পেও এখন তিল তেলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তিল চাষের জন্য জমি একটু উঁচু হতে হবে। তিল গাছ জলাবদ্ধতা একদম সহ্য করতে পারে না। তাই জমিতে নে জল জমে না থাকে এমন জমি বাছাই করতে হবে। সাধারণত বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি তিল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। সময় নির্ধরণ তিল চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সব মৌসুমেই তিল চাষ করা যেতে পারে। তবে মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিল বপন করা উত্তম। তিল বীজ বপন করার আগে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে তাহলে বীজ বপন করার পর বীজ পচে যাবে না। বীজ দুই ভাবে বপন করা যায় ছিটিয়ে বা সারিতে বপন করে। ছিটিয়ে বপন করলে বীজ ও শুকনো বালু একত্রে মিছিয়ে নিতে হবে তাহলে বীজ ফেললে সমান দূরত্বে বীজ পরে। সারিতে বপন করলে এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ২০ থেকে ২৫ সেঃমিঃ, এক গাছ থেকে আরেক গাছের দূরত্ব হবে ৫ থেকে ১০ সেঃমিঃ। বীজ ছিটিয়ে বপন করার ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে ৭/৮ কেজি বপন করা যাবে। আর সারিতে বপন করার ক্ষেত্রে ৬/৭ কেজি বপন করা যাবে। উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে একটি সেচ ও আগাছা নিধন করতে হবে। প্রতি একরে সাধারণত ৪০/৫০ কেজি ইউরিয়া, ৩০/৪০ কেজি টিএসপি, ২৫/৩০ কেজি এমপি ও ৩০/৪০ কেজি জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত তিল গাছের সবশুটি একত্রে পাকে না নিচ থেকে পাকা শুরু হয়ে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে উপরের দিকে পাঁকা শুরু করে। তাই সব শুটি একত্রে পাঁকার জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। যখন শুটি পাকা শুরু হবে তখন থেকেই সংগ্রহ শুরু করতে হবে।
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের তিল বীজ সংরক্ষণ ও বিপনন প্রতিষ্ঠানের মালিক সুকুমার সাহা বলেন, বৃষ্টির আগেই যদি তিল সংরক্ষণ করা হয় এবং মাটির উপর দিয়ে তিল স্তুপ করা যায় ও বৃষ্টির সময় তিলের স্তুপ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা যায় এছাড়া নেট/ ত্রিপল বা পলিথিনের উপর তিল মারাই করা যায় তাহলে কৃষক অধিক মুনাফা ঘরে তুলতে পারবে। তিল সাধারণত ৩ প্রকার হয়ে থাকে লাল তিল, কালো তিল, হলুদ বা বাদামি তিল। লাল তিল প্রতি মন ২৫০০ টাকা, কালো তিল প্রতি মন ৩০০০ টাকা এবং হলুদ বা বাদামি তিল প্রতি মন ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। চাষাবাদ খরচ অতি নগন্য।
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষকদের অল্প খরচে অধিক মুনাফা ঘরে তোলার লক্ষ্যে ভালো বীজ সংগ্রহ করে সঠিক নিয়মে তিল সংরক্ষণ করা হলে একটি কৃষি অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ আবুল হোসেন মিয়া বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার সকল ইউনিয়নেই তিল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা বিরাজমান। সঠিক সময়ে ভালো তিল বীজ বপন ও সঠিক পদ্ধতিতে পাকা তিল সংগ্রহের মাধ্যমে কৃষক অধিক মুনাফা লাভ করতে পারবেন।
|
|
|
|
মোঃ তারিকুর রহমান : এক সময় রাতের আঁধারে বিয়ে বাড়ি, জন্মদিন, ধর্মসভা, যাত্রাগান সহ গ্রামীণ সকল অনুষ্ঠানের আলোর একমাত্র উৎস ছিল এই হ্যাজাক লাইট যা কালের বিবর্তনে, বৈদ্যুতিক সাফল্যের কারণে আজ বিলুপ্তির পথে পুরনো ঐতিহ্যবাহী আলো দানকারী বস্তুটি। বিলুপ্ত প্রায় হারিকেন ও কুপি নামে আরো দুটি আলো দানকারী বস্তু। সবই চলত কেরোসিন তেলের মাধ্যমে। কুপির ব্যবহার কিছুটা এখনো পাওয়া যায় ক্রমাগত নদী ভাঙ্গনে চরাঞ্চলে নতুন নতুন বসতি গুলোতে যেখানে বিদ্যুতের আলো নদী ভাঙ্গনের সাথে পাল্লা দিয়ে পৌঁছতে পারেনা, সেসব বাড়িতে। এর সবগুলোই আজ নতুন প্রজন্মের কাছে যেন শায়েস্তা খাঁর আমলের ইতিহাসের মত। প্রত্যন্ত গ্রামবাংলার প্রায় অনেক ঘরেই থাকতো হ্যাজাক লাইট। বাড়িতে ছোট-বড় কোন অনুষ্ঠান হলে সকালবেলায় শুরু হত দৌড়-ঝাপ। সন্ধ্যেবেলায় আলো দেয়ার জন্য ব্যবহার হত এই হ্যাজাক লাইট, চলে তাকে জ্বালানোর প্রস্তুতি। সাধারণত সবাই এ বস্তুকে জ্বালাতে পারতো না। সেরকম বিশেষ ব্যক্তিকে সেদিন পরম সমাদরে ডেকে আনা হতো। সেদিন তাঁর চাল-চলন থাকতো বেশ দেমাগি।
এই লাইট জ্বালানোর প্রস্তুতিটাও ছিল দেখার মত, অনেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতো তার কর্মযজ্ঞ, বাড়ির কচি-কাচারা এমনকি বড়রাও হ্যাজাক লাইট প্রজ্জ্বলন প্রস্তুতি দেখতে গোল হয়ে বসত। এরপর তিনি হ্যাজাকে তেল আছে কিনা পরীক্ষা করে নিয়ে শুরু করতেন পাম্প করা। একবার একটা পিন দিয়ে বিশেষ পয়েন্টে খোঁচাখুঁচি করা হত। তারপর একটা হ্যাজাকের নব ঘুরিয়ে কিছু জ্বলন্ত কাগজ তার সংস্পর্শে আনতেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠত। তখন শুরু হতো এই লাইটের গোড়ায় বিশেষ পদ্ধতিতে পাম্প দেওয়া। ক্রমেই হ্যাজাকের মাঝখানের ম্যান্টল থেকে বেশ উজ্জ্বল আলো বেরনো শুরু হত যা দেখতে প্রায়ই এখনকার বৈদ্যুতিক এলইডি বাল্ব এর আলোর মতো মনে হতো । আলো জলার সঙ্গে সঙ্গেই একটা বুকে কাপঁন ধরানো আওয়াজ তৈরি হত। আবার মাঝে মাঝে হ্যাজাকের ওপর দিয়ে দুম করে আগুন জ্বলে উঠত। আবার কখনও বা গোটাটাই নিভিয়ে যেত। সফলভাবে হ্যাজাক জ্বালানোর পর সেই ব্যক্তির মুখে ফুটে উঠত এক পরিতৃপ্তির হাসি। আর হ্যাজাকের সেই উজ্জ্বল আলোয় কচিকাচারা চলে যেত এক আনন্দের জগতে।
গ্রামবাংলা থেকে ক্রমেই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীনতম আলোর সরঞ্জাম হ্যাজাক লাইট। বিয়ে-শাদি, পূজা -পার্বণ, যাত্রাপালা, এমন কি ধর্ম সভায়ও ভাড়া দেওয়া হত এই হ্যাজাক লাইট।
কেমন ছিল হ্যাজাক? দেখতে অনেকটা হ্যারিকেনের মতোই কিন্তু আকারে বেশ বড়। আর প্রযুক্তিও ভিন্ন রকম, জ্বলে পাম্প করে চালানো সাদা কেরোসিনের কুকারের মতো একই প্রযুক্তিতে। চুলার বার্নারের বদলে এতে আছে ঝুলন্ত একটা সলতে। যেটা দেখতে প্রায় ১০০ ওয়াটের সাদা টাংস্টেন বাল্বের মতো। এটি অ্যাজবেস্টরে তৈরি। এটা পুরে ছাঁই হয়ে যায় না। পাম্প করা তেল একটা নলের ভিতর দিয়ে গিয়ে স্প্রে করে ভিজিয়ে দেয় সলতেটা। এটা জ্বলতে থাকে চেম্বারে যতক্ষণ তেল আর হাওয়ার চাপ থাকে ততক্ষণ। তেলের চেম্বারের চারিদিকে থাকে চারটি বোতাম। একটি পাম্পার। একটি অ্যাকশন রড়। একটি হাওয়ার চাবি। আর একটি অটো লাইটার বা ম্যাচ। অ্যাকশন রডের কাজ হচ্ছে তেল বের হওয়ার মুখটা পরিষ্কার রাখা । হাওয়ার চাবি দিয়ে পাম্পারে পাম্প করা বাতাসের চাপ কমানো বা বাড়ানো হয়। একবার হাওয়া দিলে জ্বলতে থাকে কয়েক ঘন্টা আর দের থেকে দুই লিটার তেলে জ্বলত সারা রাত। বর্ষার শুরতে এবং শীতের শুরুতেই যখন নদী-নালায় পানি কমতে থাকে তখন রাতের বেলায় হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে অনেকে মাছ শিকার করে। তবে এটা চলে বছরে মাত্র মাস দুয়েক। এই বাতির ব্যবহার অতি প্রাচীন। সাধারণত বাতি বলতে বুঝায় কুপি, টর্চ লাইট, হ্যারিকেন ও হ্যাজাক। বাতি হল সেই সরঞ্জাম যা অন্ধাকার দূর করতে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীনকালে আগুনের ব্যবহারের মাধ্যমে বাতির প্রচলন হয়। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সবখানেই। ফিলামেন্ট বাতির বদলে এলইডি বাতির চলও নতুন নয়। তবে এলইডির সঙ্গেও এখন যুক্ত হয়েছে নানা রকম প্রযুক্তির বাতিও হয়েছে স্মার্ট। বাজার ঘুরে জানানো হচ্ছে বাসা-বাড়ি, অফিস, কারখানার নানারকম বাতির খোঁজ। হ্যাজাক লাইট মেরামতকারি রমেশ চন্দ্র দাস এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২০ বছর আগে হ্যাজাকের ব্যবহার যতেষ্টো ছিল। তখন হ্যাজাক লাইট ঠিক করে আয় ভাল হত।
দিনে ৪-৫টি করে মেরামত করে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করতাম। কিন্তু বর্তমানে হ্যাজাক লাইট নেই বললেই চলে। তাই এখন পেশা পরিবর্তন করে বাইসাইকেল(দিচক্রযান) এর মেরামতের কাজ করি। হ্যাজাক লাইটের ‘বানা’র কাজ হচ্ছে তেল সাপলাই দেওয়া, পিন: তেল বন্ধ করা এবং খোলা, মাটিরছিদ্র, ভেপার: তেল সাপলাই দিয়ে ম্যান্ডলে দেয়, ম্যাকজিনে ম্যান্ডল বাধা হয়, ম্যাকজিন তেল সাপলাই দেয়, চিমনি/কাচের কাজ হচ্ছে আলো বৃদ্ধি করা এবং এর নিচের অংশে সংযুক্ত স্টিলের তৈরি বিশেষ পাত্রে তেল ধরে দের থেকে দুই কেজি। এই তেল দিয়ে প্রায় সারা রাত চলে যেতো । সবার ঘরে না থাকায় অনেক সময়, প্রায় ৪০ বছর আগে এসব লাইট এক রাতের জন্য ১২৫-১৫০ টাকা করে ভাড়াও দেওয়া হত জৈষ্ঠ থেকে ফাল্গুন মাস পর্য়ন্ত মাছ শিকারের জন্য বলেও জানান- বর্তমানে হ্যাজাক ব্যবহার কারী , মজিবর রহমান( ৬০) ও আয়নাল হক( ৪৫)।
আরেকটি ছিল হারিকেন, তুলনামূলকভাবে এটি একটি ঘরে আলো দানকারী ক্ষমতার বস্তু হিসেবে প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে ছিল এর ব্যবহার, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা, ঘর আলোকিত করা, কিংবা অন্ধকারে সেকালে আলোর উৎস মানেই প্রত্যেকটা ঘরেই ছিল এই হারিকেন নামক বস্তুটি, কিন্তু তাও আজ কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে। এটাও কেরোসিন দিয়েই জালানো হত, আগুন জ্বালানোর জন্য বিশেষ মেকানিজমে তৈরি আধা ইঞ্চি থেকে ১ ইঞ্চি সাইজের ফিতা দিয়ে নিচের তেল রাখার পাত্র থেকে টেনে উপরে আলো জ্বালানোর এক পদ্ধতি। বৈদ্যুতিক পাখার রেগুলেটর এর মত এর আলো বাড়ানো কমানোর জন্য এনালগ পদ্ধতির একটি চাকাও ছিল যা দিয়ে আলো বাড়ানো যেত এবং কমিয়ে রেখে মানুষ ঘুমিয়ে পড়তো। হ্যাজাক ও এই হাড়িকেন উভয়টির ক্ষেত্রে চারিদিকে বাতাস অপরিবাহী কাচের তৈরি বিশেষ চিমনি ছিল । এই হারিকেন ও আজকাল তেমন একটা দেখা যায় না বললেই চলে।
কুপি ছিল সর্বশেষ গ্রামীণ পরিবেশের রান্নাঘরের একটা ঐতিহ্যবাহী আলো দানকারী বস্তু, এই কুপি এবং হ্যারিকেন এর মধ্যে পার্থক্য ছিল তৎকালীন গ্রামের ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে পার্থক্যকারী একটি আলোর উৎস। গ্রামীণ পরিবেশে তুলনামূলক সম্পদশালীদের ঘরে হারিকেন দেখা গেলেও কুপির দেখা মিলত দরিদ্র পরিবার গুলোতে। তবে রান্নাঘর গুলোতে গ্রামের বিত্তশালীরাও সুবিধার জন্য এই কুপির ব্যবহার করত। এটি শুধুমাত্র মাথায় সলতে দিয়ে নিচের পাত্র থেকে তেল টেনে জ্বালানোর একটা সহজ পদ্ধতির যন্ত্রবিশেষ। যুগের আবর্তে আজ এর সবগুলোই বিলুপ্ত প্রায়। শহুরে পরিবেশ গ্রামীন পরিবেশের মধ্যে বৈদ্যুতিক আলোর কারণে এখন আর তেমনটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। গ্রামে বিদ্যুৎ চলে আসার পর থেকে হ্যাজাকের কদর তেমনটা নেই, হারিকেন ও আর লাগেনা, আর কুপির ব্যবহারও নেই বললেই চলে। এভাবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে একসময়ের জনপ্রিয় প্রাচীনতম আলোর উৎস হ্যাজাক, হারিকেন ও কুপি । শায়েস্তা খানের আমলে ১ টাকায় ১ মণ ধান পাওয়া গেলে বা একটা গরু মিললেও এখন যেমন তার পুরোটাই ঐতিহাসিক ঘটনা মনে হয়, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ঠিক তেমনই মনে হবে এই হ্যাজাক, হারিকেন ও কুপির গল্পগুলোও। নতুন প্রজন্মের কাছে আজ সেগুলো সবই শায়েস্তা খাঁর আমলের মতই যেন ইতিহাস।
|
|
|
|
ইবি প্রতিনিধি : দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৃতির স্বর্গরাজ্যে অবস্থিত এই ক্যাম্পাসটি তার অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য সকলের কাছেই পরিচিত। শীত মৌসুমে রঙ-বেরঙের ফুলের সৌরভে ক্যাম্পাসটি যেন স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে। ইট পাথরের তৈরি ভবনগুলোর সামনে দ্যুতি ছড়াচ্ছে বাহারি রকমের ফুল। নজড়কাড়া এসব ফুলের স্নিগ্ধতা মুগ্ধ করছে সকলকে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, প্রশাসন ভবন এলাকা, প্রকৌশল অফিস, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এবং বিভিন্ন হল ও একাডেমিক ভবনসমূহের সামনে দেখা মিলছে বাহারি ফুলের সমারোহ। ছাত্রীহল এলাকায় রাস্তার দুই ধার দিয়ে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ফুলের সারি। এর মধ্যে রয়েছে গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, গোলাপ, রঙ্গন, জারবিরা, জবা, ঝাউ, হাসনাহেনা, বেলি, ফায়ারবল, নয়নফুল, চন্দ্রমল্লিকা, মোরগঝুটি সহ আরো আছে কসমস, জুঁই, চামেলি, টগর, বেলি, ক্রিসমাস ও পাতাবাহারসহ নানান জাতের ফুল। এসব ফুলের মন মাতানো সৌন্দর্যে সুশোভিত গোটা ক্যাম্পাস। দেখলে মনে হবে যেন শিল্পীর রঙ তুলিতে আঁকা নয়ন জুড়ানো কোনো ছবি। ক্লাস শেষে কিংবা অবসর সময় কাটাতে ফুল বাগানের পাশে খোশ গল্পে মেতে উঠছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের কেউ গল্পের অগোচরে প্রেয়সীর খোপায় ফুল গুজে দিচ্ছে আবার কেউবা প্রিয় মানুষটিকে ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন করছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের অপার এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন হাজারও পেশার মানুষ। সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা মেতে উঠছে সেলফিতে। ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রাণের এই ক্যাম্পাস ছেড়েছি ৯ বছর হলো। হৃদয়ের আর্কাইভে এখনও ক্যাম্পাসের স্মৃতিগুলো জীবন্ত। কাজের ফাকে একটু সময় পেলেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি এখানে। এই শীত মৌসুমে ফোটা ফুলগুলোর জন্য ক্যাম্পাসটা আরও সুন্দর লাগছে। লোক-প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিফা তাসনিন বলেন, ফুলের চাদরে মোড়ানো ক্যাম্পাস এক মায়াবি রূপ ধারন করেছে। ক্যাম্পাসের এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ। সারা বছর ইবির বুকে ফুটে থাকুক এমন হাজারো নয়নয়ভিরাম ফুল।
|
|
|
|
বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : মেলামাইন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও ঐতিহ্যবাহী বেতশিল্প। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো দিনাজপুরের বিরামপুরে বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদে মানুষ গৃহস্থালি কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাশের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হলেও এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হত বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে চিরচেনা চিত্র।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার চাঁদপুর, মির্জাপুর, মুকুন্দপুর, বিশ্বনাথপুর ও কেটরাহাটসহ কয়েকটি গ্রামে মাহালী পরিবার ঐতিহ্য ধরে রাখাসহ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাঁশ আর বেতের শিল্পকে আকড়ে ধরে রেখেছেন একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। সরেজমিনে দেখা যায়, মেলামাইন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর কদর দিন দিন বেড়ে যাওয়া এই কুটির শিল্পের চাহিদা এখর আর নেই। তাছাড়াও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। বাজার গুলো দখল করেছে প্লাস্টিক ও এ্যালুম্যানিয়াম। দেখা মিলে না আর বাঁশ ঝাড়। তাছাড়াও প্লাস্টিক পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ মেলামাইন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ওপর।
জানা যায়, এক সময় দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থাথী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। বাঁশ ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিনীরা তৈরি করতেন হরেক রকমের পণ্য। এসব পণ্য বিক্রি করেই চলতো তাদের জীবন যাপন। এখনো গ্রামীণ উৎসব ও মেলা গুলোতে বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি খাল, চাটাই, খালুই, ধামা, টোনা, পাল্লা, মোড়া, বুক সেল্ফ কদাচিৎ চোখে পড়ে। যেখানে তালপাতার হাত পাখারই কদর নেই, সেখানে এসব পণ্য পাওয়ায় ভাগ্যের ব্যাপার। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা। মূল্যবৃদ্ধি, বাঁশ-বেতের দুষ্প্রাপ্যতা আর অন্যদিকে প্লাস্টিক, সিলভার ও মেলামাইন জাতীয় হালকা টেকসই সামগ্রী নাগরিক জীবনে গ্রামীণ হস্তশিল্পের পণ্যকে হটিয়ে দিয়েছে। চাঁদপুর গ্রামের বাঁশ-বেত শিল্প বিক্রি করতে আসা চিত্তরঞ্জন পাহান বলেন, বাঁশ-বেত শিল্পের দুর্দিনে হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছে। অনেকে এ পেশা বদলে অন্য পেশায় গেলেও পূর্বপুরুষের হাতেখড়ি পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি ।
|
|
|
|
মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদঃ প্রকৃতির ষড় ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। এখন হলুদ চাদরে ঢাকা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপলোর মাঠ। মাঠ জুড়ে এখন হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। দুচোখ যেদিকে যায়, সেদিকে শুধু মন জুড়ানো সরিষা ফুলের মনোরম দৃশ্য। গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য গুনগুন করছে। চলছে মধু আহরণের পালা। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। মানুষের মনকে পুলকিত করছে। সরিষার খেতগুলো দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। এখন শুধু দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে। সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে তথা বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপন করা হয়। সেচ ও সার লাগে কম তা ছাড়া সরিষার পাতা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঘোড়াঘাট উজেলায় এ বছর ১১৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষকেরা। গত বছর চাষ হয়েছিল ৩৩৫ হেক্টর জমিতে।এর মধ্যে কিছু কিছু জমিতে মধু আহরণের জন্য চাষিরা মধু সংগ্রহের বাক্স বসিয়েছেন। তেল, বীজ, মধুর পাশাপাশি কৃষকরা সরিষা থেকে উন্নত গো-খাদ্যও তৈরি করতে পারবে বলে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গা, নারায়ণপুর, রামপাড়া, সাতপাড়া, গোবিন্দপুর, গুাগাছী, ঘনকৃঞ্চপুর, মারুপাড়া, ভর্নাপাড়া, চাঁদপাড়া, কুমুরিয়া, রামনগর, খাইরুল, বুলকীপুর ইউনিয়নের কৃঞ্চরামপুর, জয়রামপুর, কলাবাড়ী, বিন্যাগাড়ী, রঘুনাথপুরসহ উপজেলার ও বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠ জুড়ে হলুদে ছেয়ে গেছে।
কৃষক সামসুল ইসলাম বলেন, সরিষা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি ২ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আশা করছি এবার সরিষা চাষে লাভবান হতে পারব।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ এখলাস হোসেন সরকার বলেন, সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে তথা বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপন করা যায়। সেচ ও সার লাগে কম তা ছাড়া সরিষার ঝরে পড়া পাতা ফুল একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উপজেলার সকল প্রান্তিক চাষিদের সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজ সরিষার বীজ, সার, বিনামুল্যে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সরিষা চাষে খরচ কম হওয়ার কারণে সরিষা চাষ করে খুবই লাভবান হওয়া যায়। সরিষা থেকে ভালোমানের তেল উৎপাদন হয়। সরিষা থেকে তৈরী খৈল গরুর খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো হয়। এতে প্রচুর পুষ্টি থাকে। এবার ১১৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গতবার সরিষা চাষ করা হয়েছিল ৮৩৫ হেক্টর জমিতে। এ মৌসুমে ৩৩৫ হেক্টর জমিতে বেশী সরিষা চাষ হয়েছে।
|
|
|
|
|
|
|